উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান - Bangla Golpo - Kobiyal - কবিয়াল
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

1111111111111111111111

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০২)

গাড়ি ব্লাস্ট হওয়ার আগে মেহরাব বাইরে পড়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মেহরাব রাস্তায় পড়ে থাকে।সকলে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকে তখনই একটা মেয়ে দৌড়ে আসে।মেহরাব নিভু নিভু চোখে মেয়েটার চোখের দিকে তাকায়।নিকাব বোরখার আড়ালে থাকা মেয়েটার চোখ ছাড়া সারা শরীর কালো চাঁদরের আবরণে ঢাকা।
_ভাইয়ায়ায়ায়ায়া।ভায়াইইয়ায়ায়ায়ায়া।
মেহরাব বাকা হেসে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।
মেয়েটা মেহরাবকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো আচরন করতে লাগে।
_আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন??সাহায্য করুন আমাকে। ভাইয়ার কিছু হয়ে যাবে তো। 
পাশে থাকা কয়েকটা ছেলে মেয়েটার চিৎকারে এগিয়ে আসলো।
_ম্যাম উনি আপনার কিছু হন?
_আমার ভালোবাসা উনিইইইই।আমাকে সাহায্য করুন ভাইয়া। প্লিজ।আমি হাত জোড় করি।
ছেলেগুলো মেহরাবকে ওই মেয়েটার গাড়িতে উঠায়।মেয়েটা মেহরাবকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।গাড়ি চালাতে চালাতে মেয়েটা আদ্রিয়ানকে কল দেয়।
_কই তুই?
_আমি কই!!লজ্জা করে না এই প্রশ্ন করতে?তোর জন্য আমি ভাইয়াকে ফেলে বাইকে দিয়ে উড়ে উড়ে বাসায় আসলাম। এসে তোকে পাই নাই।এখন আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস আমি কই!!আর ইউ পাগল!!
_আদ্রিয়ান তুই কেন মেহরাব ভাইয়া কে একা ছাড়লি?
মেয়েটা কান্না করতে লাগলো।
_কি হয়েছে কাদছিস কেন?তিথি পাখি।কাদে না। বলো কি হয়েছে?ভাইয়া ঠিক আছে।
_আমি ভাইয়াকে  ঢাকা ক্লিনিক এ নিয়ে যাচ্ছি।তুই আরাফ বাবাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।
_তিথি।ভাইয়ার কি হয়েছে?
_এক্সিডেন্ট করেছে উনি।আল্লাহ সহায় ছিলেন তাই উনি গাড়ির বাইরে পড়ে যান। না হলে 
তিথি কান্না করতে লাগলো।
আদ্রিয়ানঃআমি আসছি।তোর আগেই আমি হাসপাতালে এসে পরবো। হাইপার হবি না।আমি কল এই আছি। 
আদ্রিয়ান বাইক এর চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ে।রাস্তায় আদ্রিয়ান অন্য ফোন দিয়ে আরাফকে কল দিলো।
আদ্রিয়ানঃআব্বু।ঢাকা ক্লিনিক এ আসো ফাস্ট।ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
আরাফঃতুমি বের হও।আমি কল দিয়ে এমারজেন্সি রেডি করাচ্ছি।
আদ্রিয়ান আমি অলরেডি রাস্তায় আব্বু।
আরাফঃআমি আসছি।
আদ্রিয়ান কল কেটে তিথির সাথে কথা বলতে থাকে।
আদ্রিয়ানঃতিথি পাখি।আমি প্রায় এসে পড়েছি।তুমি কোথায়?
তিথিঃআমি এখনো আসতে পারি নাই।মাঝরাস্তায় আদ্রিয়ান।ভাইয়ার অনেক রক্ত পড়ছে। আমি 
তিথির শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো।
আদ্রিয়ানঃতিথি পাখি।আমি আছি তো। তুমি কেন হাইপার হচ্ছো।তুমি এমন করলে ভাইয়াকে দেখবো নাকি তোমাকে। লক্ষী পাখি আমার। Stay calm.Dont be panic.
তিথি কাদতে কাদতে হেসে দিলো।
আদ্রিয়ানঃকি হলো?হাসছিস কেন?আমি কী হাসার মতো কিছু বলেছি?
তিথিঃতুই শুদ্ধ English বলেছিস।
আদ্রিয়ানঃWhat Do You Mean By That?আমি বাংলিশ বলি বলে English পারি না?Like seriously? Dont Forget!আমি ও আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করেছি।
তিথিঃতুই তাহলে বাংলিশ বলিস কেন?
আদ্রিয়ানঃতোকে হাসাতে!
কথা বলতে বলতে গাড়ির হাসপাতালে এসে পড়ে। 
তিথিঃআমি এসে পরেছি। তুই কোথায়?
আদ্রিয়ান গাড়ির দরজা খুলে মেহরাবকে স্ট্রেচার এ নেয়।ডাক্টাররা মেহরাবকে এমারজেন্সিতে নেয়।
তিথি আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। 
তিথিঃভাইয়ার কিছু হবে না তো?
আদ্রিয়ানঃকিছু হবে না।তুই কান্না করা বন্ধ কর। তোর আবার শ্বাসকষ্ট উঠে যাবে।
তিথিঃতাতে কি? তুই আবারো উলটা পালটা কথা বলে আমাকে হাসিয়ে দিবি।
আদ্রিয়ানঃছাড় আমাকে। সবাই তোকে আমার গালফ্রেন্ড ভাববে।
তিথি দূরে সরে দাড়ালো।
আদ্রিয়ান মেহরাবকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার আগে এক পলক দেখলো।
আদ্রিয়ানঃসরি ভাই।তোমাকে আমার একা ছাড়া উচিত হয় নাই।আমি তোমার সাথে থাকলে এমন কিছু হতো না।আই এম সরি ভাই।
আরাফ আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
আরাফঃমেহরাব এর কিছু হবে না।
নবনি সাদা কাচের জানালা দিয়ে মেহরাবকে দেখছে।মাথা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে।কিছু রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে গিয়েছে।
নবনিঃআমি বলছিলাম আপনাকে আরাফ।আমার মন সায় দিচ্ছে না।মায়ের মন আগেই তার সন্তান এর বিপদের টের পায়।আমার আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো এমন কিছু হবে।
আরাফ নবনিকে শান্ত করতে চাচ্ছে।কিন্তু নবনি খুব বিদ্ধস্ত হয়ে আছে।
নবনিঃআমিতো নামাজেই ছিলাম। তাহলে এমন কেন হলো আরাফ?আমার ছেলে আজ ৪ বছর পর আমার বুকে ফিরেছে।আর আমার দেখার আগেই এমন কিছু কেন ঘটলো।
আদ্রিয়ানঃনা আম্মু।আল্লাহ তোমার ডাক ঠিকই শুনেছে।এই জন্যই তো ঠিক সময়ে তিথি সেখানে পৌছায়।না হলে আমরা ভাইয়াকে হাসপাতালে আনতে পারতাম না।
আরাফঃতিথি। তুমি সেখানে কি করছিলে?
তিথিঃআমি মেহরাব ভাইয়া আর আদ্রিয়ান এর জন্য গিফট নিতে গিয়েছিলাম শপিং মলে। এক্সিডেন্ট সেখানেই হয়।আসার পথে আমি মেহরাব ভাইয়াকে দেখতে পাই।নবনি মামনির দোয়ায় ছিল যা গাড়ি ব্লাস্ট হওয়ার আগে ভাইয়া বাইরে পড়ে যায়।ভাইয়ার কিছু হবে না। মামনি। তুমি দেখো আল্লাহ তোমার ডাক ঠিকই শুনবে।
আরাফঃকিন্তু এক্সিডেন্ট হলো কি করে?মেহরাব তো অনেক স্লো ড্রাইভ করে। এক্সিডেন্ট হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

আদ্রিয়ান এর ফোনটা বেজে উঠলো।
_হ্যা ভাবী।
_আদ্রিয়ান।তোমার ভাই কোথায়?উনি এক্সিডেন্ট করেছেন।তুমি উনার কাছে যাও।উনি 
_ভাবী।তুমি কি করে জানো ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে?
_আমার সাথে কল এ ছিলেন মেহের। তারপরই ব্লাস্ট এর শব্দ পাই। তোমাকে কল দিচ্ছি। তোমার কল বিজি আসছে।আমি এয়ারপোর্টে আসে পাশে খোজ করে জানতে পারি। একটা মেয়ে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।কিন্তু কোন হাসপাতাল কেউই বলতে পারছে না। 
_ঢাকা ক্লিনিক।তিথি ভাইকে হাসপাতালে এনেছে।
_তার মানে তোমরা সবাই ওখানে?
_হ্যা।তুমি আসছো?আমি নিতে আসবো?
_না।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।তোমরা তো আছোই। আর আরাফ বাবা থাকতে আমার প্রয়োজন নেই সেখানে।

_প্রয়োজন আছে ভাবী।ভাই চোখ খুলে তোমাকেই খুজবে।
_খুজতে দাও।তুমি জানো না আদ্রিয়ান। আজকের এক্সিডেন্ট এর জন্য আমিই দায়ী।আমার জন্য পাগলামী করেই উনি আজ নিজের এই অবস্থা করেছেন।এখন হাসপাতালে আসা মানে তার করা পাগলামী গুলোকে প্রশয় দেয়া।তুমি আমাকে উনার খোজ  দিও।আর আমাদের মাঝের কথাগুলো মেহেরকে বলবে না।তোমাকে আমার কসম।
কলটা কাট হয়ে গেলো।
আদ্রিয়ানঃকি নিয়তি তোমাদের! এক জন আর এক জনকে এতো ভালোবাসে। কিন্তু এটার সাক্ষী কেবল আমি। আর এমন এক সাক্ষী যে শুধু দেখতে শুনতেই পারবে।বলতে পারবে না।
ডাক্টার বেরিয়ে আসলো।
তিথিঃভাইয়া কেমন আছে?
ডাক্টারঃHe is out of danger.আল্লাহ রহমত করছেন।ঠিক সময় নিয়ে এসেছেন আপনারা।না হয় উনাকে বাচানো যেতো না।
আরাফঃদেখা করতে পারবো?
ডাক্টারঃউনার এখনো পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে নাই। আপনারা দুই জন দুই জন করে যেতে পারেন।কিন্তু আগে পাখি নাম এর মেয়েটাকে পাঠান। উনি সেন্সলেস অবস্থায় ও পাখি পাখি করছেন।
তিথিঃপাখি কে?আমাদের এখানে পাখি নাম এর  কেউতো নেই।
নবনি আরাফ এর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়।আরাফ আদ্রিয়ান এর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।আদ্রিয়ান আরাফ কে চোখে চোখে আশ্বস্ত করে।
জবাব না পেয়ে তিথি উঠে যেতে নিলে আদ্রিয়ান হাত ধরে ফেলে।
আদ্রিয়ানঃআব্বু আম্মুকে নিয়ে যাও।আমি আর তিথি পরে যাবো।
আরাফঃনবনি। আসো। 
আরাফ নবনি ভিতরে চলে গেলে। তিথি আদ্রিয়ান এর উপর রেগে যায়।
তিথিঃকেন আটকালি আমাকে?
আদ্রিয়ানঃআম্মুর অবস্থা দেখেছিস?তুই কি করে বুঝবি। তুই তো আর মা না।যখন নিজে মা হবি তখন বুঝবি মায়ের উপর দিয়ে কি যায়!!
তিথিঃতাহলে আমি আর নবনি মামনি যেতাম।
আদ্রিয়ানঃতুই এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি রে।আব্বু ও মেহরাব ভাইয়ার জন্য ততটাই পাগল যতটা আম্মু। কিন্তু আব্বু আম্মুর মতো কান্না করতে পারে না।কিন্তু আমি আদ্রিতা আপুনি আর মেহরাব ভাই এটা ঠিকই বুঝি। আব্বু আমাদের ৩ জনকে আম্মুর মতো কি আম্মু থেকে বেশি ভালোবাসে।তোর থেকে আব্বুর ভেতরে যাওয়াটা বেশু জরুরি ছিলো।
তিথিঃহ্যা।তোরা সবই ভালোবাসিস শুধুই আমিই মেহরাব ভাইয়াকে ভালোবাসি না। তাই তো?

আদ্রিয়ানঃআপুনিকে কল দিতে হবে। তুই থাক আমি আসছি।
আদ্রিয়ান আদ্রিতাকে কল করে~
আদ্রিতাঃহ্যা আদ্রি।বল।মেহরাব ভাইয়া এসে পরেছে?
আদ্রিয়ানঃআপুনি। ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
আদ্রিতাঃকিহহহ!!!কোথায় ভাই??কেমন আছে?মেজর কোনো ইনজুরি হয় নাই তো?
আদ্রিয়ানঃনা ভাই এখন ঠিক আছে।
আদ্রিতাঃতুই ওকে কল দিয়েছিস?ও তো মেডিকেল এ পরছে।ও ভালো বুঝবে সব কিছু।
আদ্রিয়ানঃওহ হ্যা।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।রাখো আপুনি।আমি উনাকে কল দিচ্ছি। তুমি ঢাকা ক্লিনিক এসে পড়ো।
আদ্রিতাঃআচ্ছা। আমি আসছি।
আদ্রিয়ানঃআপুনি তো খুব ভালো বুদ্ধি দিলো। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ভাবী মেডিকেল এ পড়ে।এইবার দেখি তুমি কি করে না আসো।আমার ভাই তোমাকে ডাকবে আর তুমি আসবে না আদ্রিয়ান চৌধুরী তা হতে দিবে না। মাই ডিয়ার ভাবী।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন