উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
1111111111111111111111
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৩)
নূর কোরআন তিলাওয়াত করছিল তখনই ওয়ারদা নূর এর রুমে প্রবেশ করলো।
ওয়ারদাঃনূর তুই জানিস কি হয়েছে!!
নূর কোরআন শরিফ বন্ধ করে নিদিষ্ট জায়গায় রাখলো।ওয়ারদা চোখে পানি দেখে নূর এর মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো
নূরঃকি হয়েছে মা?তোমার চোখে পানি কেন?
ওয়ারদাঃআমার বাবাইটার এক্সিডেন্ট হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি।না জানি কার নজর লেগেছে।এতো বছর পর ছেলেটা তোর বিয়ে খেতে এসে বিপদে পড়লো।
নূরঃউনি কেমন আছেন এখন?ঠিক আছেন মা?
ওয়ারদাঃভালো আছে।মোটামুটি। আদ্রিয়ান কল দিয়ে জানালো।তুই তো ডাক্টারি পরছিস। তুই ভালো বুঝবি রে।চল আমার সাথে।বোরখা পড়ে নে।
নূরঃআমি যাবো না।মা।আরাফ বাবা অবশ্যই ভালো ডাক্টার আনিয়েছেন। আমাকে প্রয়োজন নেই সেখানে। তুমি যাও। দেখে এসো।
ওয়ারদাঃআর কতো রেগে থাকবি ওর উপর?মরে গেলে রাগ ঠান্ডা হবে তোর?
নূরঃমায়ায়ায়ায়া।এভাবে কেন বলছো?
ওয়ারদাঃআমি জানি নূর তুই মেহরাব ঠিক ততটাই ভালোবাসিস যতটা মেহরাব তোকে ভালোবাসে।আমি জানি না নিলয় এর সাথে তোর এমন কি কথা হয়েছে যে তুই বিয়েতে মত দিয়ে দিলি।কিন্তু আমার মনে হয় তোর বিয়ের ব্যাপারটা আরো ভাবা উচিত।
নূরঃউনি কেন গেলো মা?কেন চার বছর আগে আমাকে ফেলে চলে গেলেন?আমি কত কাদলাম তবুও উনি থামেন নাই।একটা বার ফিরে তাকান নেই উনি।কি এমন করেছিলাম আমি?কি দোষ ছিলো আমার।
ওয়ারদাঃদোষটা তোর ছিলো না। না মেহরাব এর। সবকিছু তোদের নিয়তি ছিল।একটা বার ওকে দেখে আয়। তোর সব রাগ পানি হয়ে যাবে।
নূরঃএজন্যই তো আমি যাবো না মা।আমি চাই না আমার রাগ ঠান্ডা হউক।চার বছর আগে যে উনি আমাকে তিরস্কার করে চলে গিয়েছিলেন আমি চাই না তা ভুলতে।
ওয়ারদাঃওকে এতোটা শাস্তি ও দিস না যে পরে তোকে আফসোস করতে হয়।
ওয়ারদা বেরিয়ে গেলো।নূর এর মনে ওয়ারদার কথা গুলো বাড়ি খাচ্ছে।
নূরঃআমার রাগ অভিমান সাইডে রেখে আমি কবেই ছুটে যেতাম কিন্তু বাবার কাছে ওয়াদা করেছি আমি। সেই ওয়াদা কি করে সাইডে রাখবো?বাবা বিয়ে ঠিক করার আগে আমার কাছে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে যদি উনাকে এক বিন্দু পরিমান ভালোবেসে থাকি। তাহলে মেহরাব থেকে দূরে থাকতে হবে।আর এই বিয়েতে রাজী হয়ে যেতে।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বিয়েতে রাজী হয়েছি।
সবাইকে বলেছিলাম বিয়ের কথা মেহের এর কানে যাতে না যায়। কোন ফাজিলটা যে টা যে এই কাজ করলো।
নূর এর ফোনটা বেজে উঠলো।স্ক্রিনে ডক্টর আরিয়ান নামটা ভেসে উঠছে।
নূর বিরক্তি সহিত কপাল কুচকে কলটা ধরলো।
নূরঃহ্যা।ডক্টর আরিয়ান। বলেন।
আরিয়ানঃআপনার মা আমাকে কল করেছিলো।আপনার রিলেটিভ নাকি হাসপাতালে ভর্তি। রেডি হোন। একসাথে যাই।
বলে কোনো উত্তর না শুনেই কলটা কেটে দিলো।
নূরঃইয়া আল্লাহ। আমার জীবনে সব এক থেকে বড় এক দুশমন দিয়ে ভরা।না জানি কোন দুশমনে মা এর কানে মেহের এর এক্সিডেন্ট এর কথাটা দিলো।এখন মা নিজে আমাকে নিতে না পেরে ডক্টর আরিয়ানকে দিয়ে কল করালেন।এই লোককে মানা করলে ইনি বাবাকে কল দিয়ে বলে দিবে।আর বাবাতো উনার পাগলই হয়ে আছে।
এতোটাই পাগল যে উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে দিলেন।ইয়া আল্লাহ বাচাও আমাকে।চারদিক সবাই নিজের মত আমার উপর চাপিয়ে দেয়।শুধু আরাফ বাবাই আমাকে বুঝে। বাকি সব নিজের মন মর্জি চালায়।মেহরাবটা যে কেনো আরাফ বাবাই এর মতো ভালো হলো না।ধুরু উনার নাম ও নিবো না।বদ লোক।
তিথিঃকি করছিস আদ্রিয়ান? কার সাথে কথা বললি এতোক্ষন?
আদ্রিয়ানঃওয়ারদা মনি কে কল করে জানালাম।
এই বার তো নূর ভাবীকে আসতেই হবে।কারন ওয়ারদা মনি নূর ভাবীকে যে করেই হোক নিয়ে আসবে।(মনে মনে)
আদ্রিয়ান মুচকি মুচকি হাসছে।
তিথিঃভিতরে কি যাবি?নাকি আমি চলে যাবো?
আদ্রিয়ানঃহ্যা হ্যা। চল।
আদ্রিয়ান তিথি মেহরাব এর কেবিনে প্রবেশ করে।
নবনি মেহরাব এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরাফ পাশেই বসে আছে।
আদ্রিয়ানঃআম্মু। তুমি বাসায় যাও।আমি আছি ভাইয়ার কাছে।
তিথিঃহ্যা।মামনি। আমিও আছি।তুমি বাসায় চলে যাও।
আরাফঃকোনো লাভ নেই। স্বামীর কথাই শুনে না তোর মা।আর তোরা তো ডাল ভাত।বুঝলি আদ্রিয়ান বিয়ের পর বউ প্রধান মন্ত্রি আর জামাই বেচারা সেকেট্টারি হয়ে যায়।
আরাফ দুঃখি দুঃখি চেহারা বানালো।নবনি আরাফ এর দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।
আদ্রিয়ান আর তিথি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আদ্রিয়ানঃYou are So ঠান্ডা আব্বু।তোমার মতো আব্বু আর কোথাও নেই।হা হা হা।
নবনিঃআপনি বাসায় চলেন। আপনাকে বুঝাচ্ছি।কে মন্ত্রি কে সেকেট্টারি।
আরাফঃআদ্রিয়ান কিন্তু বেশি বড় হয় নেই।তুমি চাইলে আমাকে বুঝাতেই পারো।
নবনিঃবেশরম লোক।
নবনি ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলো।আরাফ পিছু পিছু গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো।
আরাফঃতোদের জন্য কত কিছু করতে হয় রে।নবনি পাখিকে এখন না রাগিয়ে দিলে ওকে এখান থেকে এক পাও নড়ানো যেত না।এখন বুড়ো বয়সে না বউ এর হাতে মার খেতে হয়।দোয়া করিস রে।তোর একমাত্র অসহায় বাপ আরাফাত চৌধুরীর জন্য।
আরাফ কথাটা শেষ করেই এক পলকে উধাও হয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান তিথি আবারো হাসতে লাগলো।
তিথিঃমামনি আর আরাফ বাবাই এর জোড়াটা বেস্ট কাপল।এক জন আর এক জনকে কতো ভালোবাসে।
আদ্রিয়ানঃএমন ভালোবাসা পেতেও কপালে লাগে।
কথাটা বলে আদ্রিয়ান বের হয়ে গেলো।বাইরে এসে চোখের পানি গুলো স্বযত্নে মুছে নিলো।তারপর ফোনে গেম খেলতে লাগলো।আদ্রিয়ান এর এভাবে বের হয়ে যাওয়ায় তিথির একটু খারাপ লাগলো আবার ভালোও লাগছে।
মেহরাবকে একা পেয়ে।
তিথিঃভাইয়া।আপনি কেন চলে গেলেন?চার বছর আগে।আপনি জানেন ও না আমি আপনাকে কত ভালোবাসি।সেই ১৩ বছর বয়সে আপনার প্রেমে পড়েছিলাম।আজ ১৭ বছর বয়সে পা দিয়েও এই প্রেম এক ফোটাও কমলো না।তখন প্রেম কি তা জানতাম না। শুধু এতটুক জানতাম আদ্রিয়ান এর সাথে ঝগড়া লাগলে আপনি সবসময় আমার সাইড নিতেন।আর আদ্রিতা আপু আদ্রিয়ান এর। ইশশ এই নিয়ে কত না ঝগড়া হতো আপনার আর আদ্রিতা আপুর মাঝে।কিন্তু আপনে আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। আপনার এই ভালোবাসা গুলো অনেক মিস করেছি।অনেক।
আদ্রিতা হাসপাতালে ঢুকতে নিলে একটা লোক এর সাথে সজোরে ধাক্কা লাগে।পড়ে যেতে নিলে লোকটা আদ্রিতা কোমর জড়িয়ে ধরে।আদ্রিতা পড়তে পড়তে বেচে যায়।আদ্রিতা ভয়ে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।
আরিয়ান আদ্রিতার ভীতু ভয়ে জড়োসরো চেহারাটার দিকে নিষ্পলক চাহনীতে তাকিয়ে আছে।
আরিয়ানঃগ্রিন কালার এর হিজাব পড়া মেয়েটার চেহারায় এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে।নূর ও তো কত সুন্দর। কই ওকে দেখেতো কখনো এমন আবেগ কাজ করে নাই।তাবে কি এটাকেই Love at First Sight বলে?
আরিয়ানঃআপনি ঠিক আছেন ম্যাম?
আদ্রিতাঃHow Dare you? আপনি কি করে টাচ করলেন আমাকে??
আরিয়ানঃনা করলে তো পড়ে যেতেন।
আদ্রিতাঃতাতে আপনার কি?ছাড়ুন আমাকে।
আরিয়ানঃসত্যিই?ছেড়ে দিবো?
আদ্রিতাঃহ্যা।ছাড়ুন।
আরিয়ান আদ্রিতাকে ছেড়ে দেয়।আদ্রিতা মাটিতে পড়ার আগে আরিয়ান আবার ধরে ফেলে।
আরিয়ানঃকি ম্যাম?ছেড়ে দিবো?
আদ্রিতা রাগী চোখে তাকায়।
আরিয়ানঃভীতু চেহারায় বেশি সুন্দর লাগে।ট্রাস্ট মি।
আদ্রিতা উঠে দাঁড়িয়ে আরিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো।
_আপনার মতো সাইকোর জন্য আমার কাছে সময় নেই।
_আমারতো অনেক আছে। প্রেম পড়েছি যে এই ভীতু চেহারাটার।এখন যে আমার ঘুমাতে উঠতে বসতে এই ভীতু চেহারাটা দেখাই লাগবে।হা হা হা।
আদ্রিতা চলে যায়।তাই কিছুই শুনতে পায় নাই।
নূরঃকার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলছেন?ডক্টর আরিয়ান?
আরিয়ানঃআচ্ছা।আমি যদি আপনাকে বিয়ে না করি তাহলে কি আপনি খুব বেশি কষ্ট পাবেন?
নূরঃহ্যা।কষ্টের ঠেলায় মরেই যাবো।
আরিয়ানঃসত্যিই?
নূরঃকি আজগবি কথা বার্তা বলছেন?আপনি ভালো করে জানেন আমি শুধু বাবার জন্য রাজী হয়েছে।কিন্তু আপনি কেন রাজী হলেন?এটা তো আমার জানা নেই।
আরিয়ানঃসব রহস্য এখনই খোলাসা করব দিলে বিয়েতে কি জানবেন?
নূরঃসব সময় এমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলে কেন?সোজা সোজা বলতে পারেন না?
আরিয়ানঃপারি। বাট বলার মুড নাই।
নূর আরিয়ান এর হাত ধরে মেহরাব এর কেবিনে প্রবেশ করলো।
আরিয়ানঃআরে আরে। করছেন কি? নূর শুনেন তো।
মেহরাব এর কেবিনে প্রবেশ করতেই আরিয়ান এর সামনে প্রথমেই যে চেহারা ভেসে উঠলো তা ছিল আদ্রিতার।
আরিয়ানঃলে হালুয়া।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন