উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৬৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৫)
রুমের দরজা খুলে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে, অবাক চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য। নিজের বাসর ঘরে ঢুকে এমন একটা দৃশ্য দেখবে তা জীবনেও ভাবনি সে। তার সদ্য বিয়ে করা বউ ব্যঙের মতো লাফাচ্ছে। শুধু পার্থক্য এটুকুই যে ব্যঙ চারপায়ে লাফায় আর তার বউ দুই পায়ে লাফাচ্ছে। যদিও কুহুর মতে এখন সে খুশিতে ডান্স করছে। কিন্তু কাব্যের কাছে এটাকে ব্যঙের লাফালাফি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। নাচতে নাচতে হঠাৎ কুহুর চোখ পড়ে দরজার দিকে। সাথে সাথেই নাচ বন্ধ করে দেয় সে। আস্তে-ধীরে হেটে গিয়ে খাটের ঠিক মাঝখানে বসে। মেহেদী রাঙা সাদা রঙের কাচের চুড়ি আর সোনার মোটা বালা পরা হাত দিয়ে পাশ থেকে লাল বিয়ের ওড়নাটা নিয়ে, মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা টানে। ভাবখানা এমন যে, সে কখন থেকে লক্ষী বউয়ের মতো মাথায় ঘোমটা টেনে স্বামীর জন্য অধীর আগ্রহের সাথে বসে আছে। কাব্যের হাসি পায় কুহুর কান্ডকারখানা দেখে। কিন্তু সে হাসে না। হাসলে আবার যদি তার বউ রণচন্ডীর রুপ নেয়। দরজা লক করে গিয়ে, বিছানায় কুহুর সামনে বসে শান্ত কন্ঠে বললো
- আসসালামু আলাইকুম।
বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে কুহু। দূর ঘোড়ার ডিম। খুশির ঠেলায় নাচতে গিয়ে সালাম দেওয়ার কথাই ভুলেই গিয়েছে সে। নিজের বিরক্ত পাশে রেখে শান্ত কন্ঠে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু।
কাব্য আস্তে করে কুহুর ঘোমটা উঠায়। ফর্সা গায়ে সাদা রঙের বেনারসি শাড়ি। চোখে মোটা করে কাজল দেয়া। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। গলায় খুব সুন্দর ডিজাইনের একটা হার। কানে দুই থাকের ঝুমক। নাকে ছোট টপ। মাথার বাম সাইডে ঝুলছে ঝুমুর আর সোজা সিঁথিটা ঢেকে আছে টিকলি। খোপায় পেঁচানো বেলি ফুলের সাদা মালা। কাব্য মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো
- মাশাল্লাহ।
কাব্যর বলা এই একটা শব্দই যথেষ্ট ছিল, সেই হতছাড়া লজ্জাটা এসে কুহুকে চেপে ধরার জন্য। আর আজ যেন হতছাড়া লজ্জাটা সময়ের সাথে সাথে দ্বিগুণ তিনগুণ করে বেড়েই চলেছে। কুহুর লাজুকতা আর কাব্যের মুগ্ধতার মাঝেই কেটে যায় কিছু প্রহর। কাটায় কাটায় বারোটা বাজতেই দেয়ালে ঝুলানো বড় ঘড়িটা ঠং ঠং শব্দ করে বেজে উঠে। শব্দে ঘোর কাটে কাব্যর। চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো
- এতো সুন্দরী একটা মেয়ে হয়ে আমার মতো কালো ছেলেকে কিভাবে এতোটা ভালোবেসে ফেললে। আমার মতো ছেলের ঘরে কি তোমার মতো ,,,,,,,,
আর বলতে পারলো না কাব্য। তার আগেই কুহু তার শেরওয়ানি খামছে ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে, রাগে কটমট করতে করতে বললো
- যা কিছু সুন্দর তাই কুহুর। আর যা কিছু কুহুর তাই সুন্দর। এই কুহুর পছন্দ নিয়ে আর কোনদিন যেন এসব উল্টোপালটা কথা না শুনি।
ঝট করে কুহুর কপালে ঠিক টিকলির নিচ বরাবর নিজের ঠোঁট ছুয়িয়ে দিল কাব্য। কাব্য এমন কিছু করবে তা কল্পনায়ও ভাবতে পারেনি কুহু। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে কাব্যের দিকে। কাব্য মুচকি হেসে বললো
- যা বলবেন কুহুরানী।
কুহুর কাব্যের শেরওয়ানি ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে ভাবতে থাকে, সে কি বাস্তবে আছে, না কি স্বপ্নে? কাব্য তাকে কি,,,, কি,,,,, কিস করেছে! কাব্য! তার কাব্য! যে কোনদিন তার হাতটাও ধরেনি সেই কাব্য, আজকে তাকে ডায়রেক্ট কি,,, কিস করলো। আচ্ছা, কাব্য কি তাকে ভালোবেসে কিস করেছে? না কি সে এখন তার স্ত্রী দেখে তাকে কিস করেছে? কাব্য তো এখনো তাকে বলেনি যে সে, তাকে ভালোবাসে। তাকে বিয়ে না করলে সে উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলবে, এই ভয়ে আবার তাকে বিয়ে করেনি তো? আচ্ছা সে কাব্যের উপর নিজেকে চাপিয়ে দিল না তো? কাব্য কি বাদ্য হয়ে এই বিয়ে করেছে? কুহুর ভাবনার মাঝেই কাব্য বললো
- তোমার পা দুটো সামনে দেও তো কুহুরানী।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে কুহু প্রশ্ন করে
- কেন?
কাব্য উত্তর না দিয়ে একটু টেনে বললো
- আনোইই না।
কুহু আস্তে ধীরে নিজের পা জোড়া আনতেই, কাব্য কুহুর পায়ের রুপোর নুপুর জোড়া খুলে ফেলে। কুহু অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- নুপুর খুলছো কেন?
কাব্য উত্তর না দিয়ে শেরওয়ানির পকেট থেকে একটা লাল রঙের বক্স বের করে। বক্সটা কুহুর হাতে দিয়ে বললো
- খোল।
- এতে কি আছে?
- খুলে দেখ।
কুহু বক্সটা খুলে দেখে তার মধ্যে খুব সুন্দর একজোড়া সোনার নুপুর। কুহু নুপুর জোড়া হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। কাব্য জিজ্ঞেস করল
- পছন্দ হয়েছে?
- হুম্ম। খুব সুন্দর।
কাব্য কুহুর হাত থেকে নুপুর জোড়া নিয়ে, কুহুর বাড়িয়ে রাখা পায়ে পরিয়ে দেয়। কুহু গোল গোল চোখ করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। এর আগে কাব্যকে দিয়ে তার জন্য নুপুর কিনালেও, পায়ে পরিয়ে দেওয়ার কথা কাব্যকে বলতে পারেনি। যদি কাব্য পছন্দ না করে। তাই নিজের এই শখটাকে মাটিচাপা দিয়েছিল সে। তার এই মাটিচাপা দেওয়া সখটা যে, হঠাৎ কাব্য পূরণ করবে স্বপ্নেও তা ভাবেনি কুহু। কাব্য একটা লাল গোলাপ কুহুর সামনে ধরে বললো
- লাল রং ভালোবাসার প্রতিক। তাই লাল গোলাপ দিয়েই তোমাকে বলছি, ভালোবাসি কুহুরানী।
এতো বছর যে কথাটা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল, আজকে কাব্যের থেকে সেই প্রত্যাশিত লাইনটা শুনে নিজেকে আর দরে রাখতে পারলো না কুহু। যে মেয়ে বিদায়ের সময়ও কান্না করেনি। সেই মেয়ে এই একটা লাইন শুনে, হুহু করে কেঁদে দেয়। কাব্য পরম যত্নে কুহুকে নিজের বুকে আগলে নিল। যে মেয়েটা তার কাছে ছিল স্বপ্নের রাজকন্যার মতো। যাকে তার মতোন কৃষ্ণ কুমারের ধরা ছোয়া ছিল অসম্ভব। সেই রাজকন্যাটা আজকে থেকে তার রানী। শুধুই তার রানী। কাব্যের ভালোবাসাময় স্পর্শে কুহুর কান্নার পরিমাণ বৃদ্ধি পেল। কাব্যকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে সে। তবে এই কান্না দুঃখের না, এই কান্না সুখের। অবশেষে সে পেয়েছে। সে পেয়েছে। তার ভালোবাসার মানুষ তার কাব্যকে নিজের করে। কাব্য দোয়া পরে কুহুর মাথায় ফু দেয়। তারপর আস্তে আস্তে কুহুয় মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত কন্ঠে বললো
- কুহুরানী এমন একটা খুশির মুহূর্তে এভাবে কান্না করে না।
কুহু কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্না থামিয়ে নিজেকে শান্ত করে ফেলে। কিন্তু কাব্যের বুক থেকে মাথা তুলে না। কতো কিছুর পর এই জায়গায় মাথা রাখার অধিকার পেয়েছে সে, ছাড়তে কি মনে চায় তার। কাব্যও খুব যত্নে জড়িয়ে রেখেছে তার কুহুরাণীকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কাব্য নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কুহু নামাজ পড়তে পারবে?
কুহু সেই অবস্থায় থেকেই ছোট করে উত্তর দিল
- হুম্ম।
- তাহলে উঠো ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা নামাজ পরে নেই।
কুহু কাব্যকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। কাব্য উঠে গিয়ে কেবিনেট খুলে একটা শপিং ব্যাগ নেয়। ব্যাগটা কুহুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নেও, চেঞ্জ করে এটা পরবে।
কুহু শপিং ব্যাগটা হাতে নিলে, কাব্য আবার বললো
- তুমি রুমেই চেঞ্জ করো আমি ওয়াসরুমে ফ্রেস হতে যাচ্ছি। তোমার চেঞ্জ করা হলে বলো আমি বের হয়ে আসবো।
কথাটা বলেই কাব্য কেবিনেট থেকে একটা ধূসর রঙের টি-শার্ট আর একটা নীল রঙের টাউজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। কুহু ড্রেসিং টেবিলের পাশে ফ্লোরে শপিং ব্যাগটা রেখে। পায়ের নুপুর আর হাতের বালা জোড়া ছাড়া বাকি সব গহনা খুলে ফেলে। তারপর শপিং ব্যাগটা নিয়ে খুলে দেখে তার মধ্যে বাদামি সুতোর কাজ করা লাল রঙের একটা ওয়ান পিস, একটা বাদামি রঙের প্লাজু, একটা বাদামি রঙের জরজেটের ওড়না আর একটা সাদার মধ্যে ছোট ছোট কালো ফুলের হিজাব। কুহু ড্রেস চেঞ্জ করে, ওয়াসরুমে নক করে। কাব্য চেঞ্জ করে অযু করে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল কুহুর ডাকের। তাই কুহু ডাকতেই কাব্য বের হয়ে যায়। আর কুহু ওয়াসরুমে ঢুকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন