উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান Bangla Golpo - Kobiyal - Romantic Golpo
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান


৬৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৪)

হাজার খুশির মাঝেও প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে কষ্ট দেয়। আজকে এতো খুশির মধ্যেও কুহু আর তূবার কষ্ট হচ্ছে। আর এই কষ্টের কারণ হচ্ছে দোলা। এই খুশির খবর শুনে কতো খুশি হতো দোলা। তাদের সাথে কতো আনন্দ করতো মেয়েটা। কিন্তু ভাগ্য। মেয়েটা আজকে কোথায় আছে, তাও জানে না তারা। মনটা খারাপ হয়ে যায়, দুই বান্ধবীর। কিন্তু কুহুর এতো স্পেশাল দিনে দোলার কথা মনে করে কষ্ট পেয়ে চুপচাপ বসে থাকবে, তা তো তোয়া হতে দিবে না। তাই কুহুর ধ্যান অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য, বিছানার উপর কোলে বালিশ নিয়ে বসে তার সামনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল শুকাতে থাকা কুহুকে বললো
- খুশির ঠেলায় আন্টির সাধের সোফা ভাঙলি। এখন আবার রাগে দুঃখে ৩০-৪০ হাজার টাকার জিনিস ভাঙছিস। বাহ! তোরে তো সুখে-দুঃখে ভাঙারি উপাধি দেওয়া উচিৎ।

 কুহু চুলগুলো আরও একটু ছড়িয়ে দিতে দিতে বললো
- খুশির ঠেলায় ভাঙগিনি। মার পুরানো দাত ভাঙা সোফা এমনেই ভেঙে গিয়েছে।
- হ ছাপ্পান্ন কেজি ওজনের বুইড়া দামড়া মাইয়া, সোফার উপর উঠে লাফালাফি করলে তা ভাঙবে না!

কুহু তূবার দিকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুই কি আমারে ইনডাইরেক্টলি মুটি বললি। আমি কিন্তু মটেও মুটি না। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি হাইটের মাইয়ার জন্য, এই ওয়েট পারফেক্ট।


- হুম। এতোই পারফেক্ট যে, বেচারা সোফা অকালে অক্কা পেল। সোফাটা যদি এখানে থাকতো আর কথা বলতে পারতো। তাহলে তোর নিয়ে এই গানটা ধরতো,
বোঝে না, মুটি বোঝে না
সে যে কতো মোটা, তা সে বোঝে না
বোঝে না, বোঝে না, বোঝে না
কুহু তূবার দিকে তেড়ে যেতে যেতে বললো
- দাঁড়া তুই।

তূবা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কুহুও তার পিছনে ছুটে। তূবা দৌড়ে ড্রাইনিং রুমে যায়। সেখানে বড় একটা প্লেটে খাবার সাজাচ্ছিল মিসেস মায়া। এতো তাড়াতাড়ি পঁচিশ তিরিশজন মানুষের রান্না করা সম্ভব না। তাই সব খাবার কিনে আনা হয়েছে। কিন্তু জামাইকে তো আর বাকিদের মতো করে খাবার দেওয়া যায় না। সেই জন্য মিসেস মায়া ঠিক করে, এই কিনে আনা খাবার থেকেই বড় বড় তিন প্লেটের একটায় পোলাও মাংস, একটায় মিষ্টি জাতীয় খাবার আর একটায় ফল দিয়ে সাজিয়ে দিবে। সেই পোলাও মাংসের প্লেটটিই সুন্দর করে সাজাচ্ছেন তিনি। তার পাশে দাঁড়িয়ে মিসেস মিতালী ফলের প্লেটটা সাজাচ্ছে। ওপর পাশে মিসেস সোনালী দাঁড়িয়ে মিষ্টির প্লেটটা সাজাচ্ছে। আত্নীয় স্বজন সবাই ঢাকা শহরের বাহিরে থাকে। বিকেলের আগে কেউ এসতে পারবে না। তূবা আর তার মা আর শাশুড়ী ছাড়া আর কেউ এখনো আসেনি। তাই তারাই জোর করে মিসেস মায়াকে হাতে হাতে সাহায্য করছে। তূবা দৌড়ে এসে মিসেস মায়ার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বললো
- আন্টি বাঁচাও এই ঝগড়াটে বউ থেকে।

মিসেস মায়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
- এই ফাজিল মেয়ে। তুই তো আমার মান সম্মান সব ডুবাবি। বিয়ের দিন বউ এমন দৌড়াদৌড়ি করে।
পাশ থেকে মিসেস সোনালী বললো
- ওকে বকা দিচ্ছ কেন। দোষ তো এই ফাজিলের। কোথায় বান্ধবিকে সাজাবে। তা না খেপাচ্ছে বসে বসে।


পাশ থেকে মিসেস মিতালী বললো
- আহ আপা, ছোট মানুষ একটু দুষ্টমি করবে। বকছো কেন?
তূবা মিষ্টি হেসে কুহুকে বললো
- বুঝচ্ছিস কুহু। আমাদের ভাগ্য হলো উল্টো। মানুষে মা থাকে ভালো। শাশুড়ী থাকে পাজি মহিলা। আর আমাদের শাশুড়ী হচ্ছে ভালো। আর মা হচ্ছে পাজি মহিলা।
মিসেস সোনালী মুখে নকল রাগ ঝুলিয়ে বললো
- আমি পাজি মহিলা, তাই না।

তূবা মিসেস সোনালীর কাছে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে টুপ করে ডান গালে একটা চুমু দিয়ে বললো
- না তো। কে বলেছে। তুমি তো আমার লক্ষী, পক্ষী মা।

তূবার কান্ড কারখানা দেখে সবাই হেসে দিল। তখনি মিসেস মায়ার দেওয়া কুহুর বিয়ের জামা কাপড়ের ট্রলি করে নিয়ে, বাসায় ঢুকে মিষ্টার সফিক। বাসায় ঢুকে মেয়ের হাসিমাখা মুখটা দেখে, এতক্ষণের অপরাধবোধটা পুরোপুরি চলে যায় মিষ্টার সফিকের। তার নিজের আপন ভাইকে সে তার মেয়ের বিয়ের কথা জানায়নি। জানালেই ঝামেলা করবে। প্রশ্ন তুলবে, কেন তার আপন ভাইয়ের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে, বন্ধুর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে? নিজের আপন ভাইয়ের থেকে কি বন্ধু বেশি? নাকি তার ছেলে অযোগ্য? মিষ্টার সফিকের কাছে তার আপন ভাইয়ের থেকে বন্ধু বেশি না হলেও, কমও না। সেই ছোটবেলা থেকে তাদের বন্ধুত্ব। স্কুল শেষে একসাথে অচেনা ঢাকা শহরে আসা। একসাথে ব্যাচেলার থেকে টিউশনি করে নিজেদের লেখাপড়া শেষ করা। একসাথে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া, একসাথে ইন্টারভিউ দেওয়া। একসাথে টাকা জমিয়ে এই জমি কিনে বাড়ি বানানো। রাতে একসাথে বসে ব্যর্থতার গল্প করা। সফল হলে একসাথে আনন্দ উল্লাস করা। জীবনের বেশিরভাগ সময় এই বন্ধুটার সাথেই কাটিয়েছে সে। আর ছেলেদের কথা যদি বলা হয়। তাহলে সে দুজনকেই যোগ্য বলে মনে করেন। কাব্যর শুধুর গায়ের রঙটাই কালো। বাকি সব দিক দিয়ে মাশাল্লাহ। লাক্ষে একটা ছেলে। কতো আফসোস হয় তার, যদি তারও এমন একটা ছেলে থাকতো। নিরবও খারাপ না। দেখতে মাশাল্লাহ। নায়কদের মতো চেহারা। লেখাপড়ায় যদিও কাব্যের মতো এতো ব্রিলিয়ান্ট না। তবে খারাপও না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট থেকে মাষ্টার্স শেষ করেছে। এখন চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছে সে। ভালো স্টুডেন্ট পেয়েও যাবে কিছু মাসের মধ্যে চাকরি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। চারিত্রিক দিক থেকে কাব্য অনেক ভালো। কিন্তু নিরবের নামেও কখন খাবার কিছু শোনেনি। কাব্যের মতো নিরব তার কাছে না থাকলেও গ্রামেও তার নামে কেউ খাবার কিছু বলেনি। সবদিক বিবেচনা করে, তার কাছে দুজনই সমান। যদি তাকে বলা হতো কাব্য আর নিরবের মধ্যে বাছাই করতে, তাহলে তা তার পক্ষে ঠিক করা কঠিন হতো। যখন তার ভাবি তাকে নিরবের জন্য কুহুর বিয়ের কথা বলেছে আর তার স্ত্রী কাব্যের সাথে কুহুর বিয়ের কথা বলেছে, সাথে এটাও বলেছে যে কুহু কাব্যকে পছন্দ করে। তখন সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল, যদি তার বন্ধু কাব্যের সাথে কুহুর বিয়ের কথা বলে তাহলে সে তার স্ত্রী আর কুহুর সাথে আলোচনা করে ঠিক করবে। কিন্তু এখন যেহেতু কুহু কাব্যকে পছন্দ করে, তার জন্য পাগলামি করছে। সেহেতু সে তার মেয়ের খুশির জন্য, মেয়ের সুখের কথা ভেবে কাব্যের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজী হয়েছে। কারো সাথে কোন আলোচনা ছাড়া। তার ভাই যদি জানতে পারে, কুহুর সাথে কাব্যের বিয়ের কথা। তাহলে এখানে এসে রাগারাগি করবে, ঝামেলা করবে, বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করবে। তাই সে ডিসিশন নিয়েছে বিয়েটা হয়ে গেলে তার ভাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলবে। কিন্তু তারপরও কেমন যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল তার মধ্যে। আপন ভাই বলে কথা। কিন্তু এখন মেয়ের এই হাসিমুখ দেখে মনে হচ্ছে, সে ভুল কিছু করেনি। তার ভাই এখন এই মূহুর্তে এইখানে থাকলে হয়তো তার মেয়ের মুখে এই হাসিটা থাকতো না। একজন বাবা হিসেবে মেয়ের সুখই তার কাছে সবার আগে।


ট্রিং ট্রিং শব্দ করে রিং হয়ে হচ্ছে। কিন্তু ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি কল রিসিভ করে না। আবার কল করে, এবারও কলটা কেটে যায়। এভাবে আরও দুইবার কল করে, কিন্তু ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি কল রিসিভ করে না। আবার কল করতেই, ওপাশের ব্যক্তি কলটা রিসিভ কেটে দেয়। তখনি একটা মেসেজ আসে ফোনে। মেসেজে লেখা -
" আর একবার ফোন দিলে নাম্বার ব্লাক লিষ্টে যাবে। "

ভয়ে আর কল করে না অভি। ছোট করে একটা মেসেজ লেখে -
" সরি, রানী সাহেবা। অনেক ভালোবাসি তো তোমায়। তাই হারানোর ভয়ে, এই কাজ করে ফেলেছি। "

ঘন্টা পেরিয়ে যায় অথচ কোন রিপ্লাই দেয় না তোয়া।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৬৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন