উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৬৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬৭)
ব্রেকফাস্ট টেবিলে এক এক করে এসে বসে মিষ্টার আতিক, কাব্য আর কিরণ। মিসেস কবিতা বারণ করা সত্যেও সকাল থেকে রান্নাঘরে এটা সেটা করে তাকে সাহায্য করছে কুহু। মিসেস কবিতা রুটির প্লেট নিয়ে কিচেন থেকে ড্রয়িং রুমে আসে। আর তার পিছু পিছু সবজির প্লেট নিয়ে আসে কুহু। ফর্সা গায়ে খুব সুন্দর একটা গোলাপি রঙের রান্না শাড়ি পরা। কুহু টেবিলের উপর সবজির বাটিটা রাখতেই মিসেস কবিতা শক্ত কন্ঠে বললো
- হয়েছে তোর পাকনামি, এবার খেতে বস।
কুহু কিছু বলার জন্য মুখ একটু ফাঁক করেছে, তখনি নিচে কুহুদের ফ্লাট থেকে চিল্লাচিল্লি শব্দ হয়ে যায়। খাবার বাদ দিয়ে মিষ্টার আতিক, মিসেস মায়া, কাব্য, কুহু আর কিরণ দৌড়ে নিচে নামে। নিচে গিয়ে দেখে নিচে কুহুর চাচা মিষ্টার রফিক, চাচি মিসেস বেলি, তার দুই চাচাতো বোন রাইমা, রাইসা এসেছে। উপর থেমে মূলত তার চাচা মিষ্টার রফিকের কথাই শোনা যাচ্ছিলো। কাব্যদের দেখে তিনি আরও রেগে যায়। কুহুর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললো
- এই কালা ছেলের মধ্যে এমন কি আছে, যা আমার ছেলের মধ্যে নেই।
কুহু রেগে যায়। তার কাব্যকে তার সামনে এভাবে অপমান করা। কিন্তু যতই হোক মিষ্টার রফিক তার বাবার ভাই চাচা। তাই তাকে কিছু বলতে পারছে না, দাতে দাত চেপে দাঁড়িয়ে আছে সে। মিসেস বেলি মুখ বাকিয়ে বললো
- আরে এর থেকে তো আমাদের বাড়ির কাছের ছেলেই সুন্দর।
কুহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাইমা বললো
- আপু তোমার চয়েস একদম বাজে। না হয় ভাইয়ার মতো এতো সুন্দর ছেলে রেখে, এমন কালো কাউয়া মার্কা ছেলেকে বিয়া,,,,,,
ঠাস।
রাইমার কথা শেষ না হতেই তার গালে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চড় মারে কুহু। তাল সামলাতে না পেরে বছর পনেরোর মেয়েটা ফ্লোরে পরে যায়। ফর্সা গালে হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গিয়েছে। আর একটু হলে মনে হয় কেটে রক্ত বের হতো। গালে হাত দিয়ে রাইমা কান্না করতে করতে বললো
- ওহ মা, দেখ আমার গাল ফাটিয়ে দিল।
কুহু রাগে চেচিয়ে বললো
- আর একটা বাজে কথা আমার কাব্যের সম্পর্কে বললে তোর দাত ভেঙে, আমি দাপ্পা খেলবো।
মিসেস বেলি মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে বললো
- কেন ও তো ভুল কিছু বলেনি? সত্য কথা শুনতে গায়ে লাগছে তোমার।
কুহু মিসেস বেলির দিকে তাকিয়ে বললো
- মানুষের সুন্দর্য দেখার জন্য সুন্দর চোখের প্রয়োজন হয়। আপনাদের মতো লোভী লোকের চোখ তো শুধু চকচকা জিনিসই চেনে।
মিসেস বেলি কুহুকে বললো
- তুমি কি দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। কি মনে করেছো আমরা কিছু বুঝি না। তুমি কেন আমার ছেলেকে রেখে এই ছেলেকে বিয়ে করেছে। এই ছেলের বাবার সম্পদ অনেক, ছেলে ব্রিলিয়ান্ট। টাকা পয়সার অভাব হবে না কখনো। তাই তো তার গায়ের কালো রঙ তোমার কাছে কিছু মনে হয়নি।
কুহুর রাগ তরতর করে বেড়ে যায়। রাগী চোখে আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে সস। চোখ পরে তার একমাএ মামার ছয় বছরের মেয়ে সাথীর দিকে। ড্রায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে সে। হাতে কাটাচামিচ, সামনের, টেবিলে উপর অর্ধেক খাওয়া মিষ্টি। কুহুর বিয়ের মিষ্টিই সে ঘুম থেকে উঠে কাটাচামিচ দিয়ে খাচ্ছিল। কিন্তু কুহুর চাচারা এসে চিল্লাচিল্লি করা শুরু করে দিলে, সে খাওয়া রেখে হাতে কাটা নিয়েই তা দেখায় ব্যস্ত হয়ে যায়। কুহু ছোঁ মেরে কাটা চামিচটা নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা, রাইসাকে টেনে নিয়ে একহাতে রাইসার দুই হাতসহ নিজের সাথে চেপে ধরে, অন্য হাতে তার গলায় কাটা চামিচ হালকা চেপে ধরে। বারো বছরের মেয়ে রাইসা ভয় পেয়ে নিজের মাকে ডেকে উঠে
- আম্মু।
মিসেস বেলি কুহুর দিকে এক পা এগিয়ে বললো
- এই মেয়ে ছাড়, ছাড় আমার মেয়েকে।
কুহু রাগী কন্ঠেই বললো
- চুপ কেউ আর একটা কথাও বলবে না। চুপচাপ আপনারা তিনজন লিফটে উঠেন। আমি রাইসাকে লিফতে ছেড়ে দিব। না হয় এই কাটা চামিচ তার গলায় গাথবো। যান বের হোন চুপচাপ।
মিষ্টার রফিক ভায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
- তুই তোর মেয়েকে কিছু বলবি না।
মিষ্টার সফিক কোন কথা বলে না। না মিসেস মায়া আর না কুহুর নানুর বাড়ি কেউ। তারা সবাই মিষ্টার রফিক আর তার পরিবারের উপর রেগে আছে কাব্যকে অপমান করায়। কাব্য কুহুকে বললো
- কুহু কি করছো ছাড় ওকে।
মিসেস কবিতাও কুহুকে বললো
- কুহু মা, মাথা ঠান্ডা কর মা। মেয়েটাকে ছেড়ে দে।
স্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে মিষ্টার আতিকও বললো
- হ্যাঁ কুহু মা তোমার মার কথা শোন, বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দেও।
কুহু কারো কোন কথা শোনে না। কাটা চামিচটা রাইসার গলায় আরও একটু জোরে চেপে বললো
- বের হবেন না কি।
ব্যথা পেয়ে রাইসা চিল্লিয়ে উঠলো
- মাহহ।
মিসেস বেলি ভয় পেয়ে অস্থির হয়ে বললো
- চলে যাচ্ছি আমরা।
মেয়েকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললো
- এই চল, চল।
মিষ্টার রফিক রাগী কন্ঠে বললো
- ভালোই হয়েছে তোর এই বেয়াদব মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হয়নি। আগে যদি জানতাম তাহলে, তোর এই বেয়াদব মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ের কথাই বললাম না। থাক তুই তোর মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে নিয়ে, আমার সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ।
বলেই রাগে গটগট করে লিফটের কাছে চলে যায় মিষ্টার রফিক। কুহু লিফটের রাইসাকে ছেড়ে দেয়। রাইসা দৌড়ে লিফটের ভিতর চলে যায়। তার গলায় কাটা চামিচের তিনিটে গর্ত হয়ে লাল হয়ে আছে। কুহু শক্ত কন্ঠে বললো
- আমার কাব্যর মতো ভালো মানুষকে যে অপমান করবে তাকে আমি ছাড়বো না। সে যেই হোক না কেন।
কুহুর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই লিফট বন্ধ হয়ে যায়। কুহু এসে মিষ্টার সফিকের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বললো
- সরি বাবা। তোমার ভাইকে এভাবে বের করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ওনাকে কেউ অসম্মান করলে আমি সহ্য করতে পারি না।
মিষ্টার সফিক মেয়ের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললো
- যা করেছ ভালো করেছ। ওদেরও উচিত হয়নি এভাবে কাব্যকে বলা।
কাব্যের দিকে তাকিয়ে বললো
- কাব্য বাবা, আমার ভাইয়ের হয়ে আমি তোমার ,,,,
মিষ্টার সফিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই, কাব্য বললো
- বাবা আমি তো তোমার ছেলে। আর তাছাড়া চাচা রেগে ছিল, রাগের মাথায় কথাগুলো বলে ফেলেছে।
মিষ্টার সফিক কাব্যের মাথায়ও স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। তারপর নিজের রুমে চলে যায় মিষ্টার সফিক। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবা-মা তোও কতো আগেই মারা গিয়েছে, এই একটা মাএ ভাই'ই আছে তার। আজ সেই ভাইটাও, তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গেল। কষ্ট হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তার ভায়েরও উচিত হয়নি, তার মেয়ে জামাইকে এভাবে অপমান করা। তাই কষ্ট হলেও সে তার মেয়েকে আটকায়নি। তাও যতো অপরাধই করুক না কেন। ভাইয়ের জন্য একটা মায়া তো হচ্ছেই। সেই কষ্ট যেন মেয়ে বা অন্য কোন কারো চোখে না পড়ে, তাই সে নিজের রুমের চলে যায়। বেপারটা মিসেস মায়ার চোখে পড়লেও, সে মিষ্টার সফিককের পিছনে যায় না। এখান তার এখানে থাকা বেশি প্রয়োজন। তার মেয়ে আর মেয়ে জামায়ের পরিবারের লোক আছে বলে। যতই তারা কাছের লোক হোক না কেন, এখন এখানে তাদের একা রেখে গেলে বিষয়টা রাখাপ দেখায়।
এতোক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা কিরণ, কুহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে বললো
- আমার ভাবিই সেরা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন