উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান


৭৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭৯)


ল্যাপটপ টেবিলের উপর ল্যাপটপটা রেখে বিছানায় বসে অফিসের কাজ করছে রিশান। ঠিক কাজ করছে না, অপেক্ষা করছে। এই কাজ তার এখন করার কোন প্রয়োজন নেই, কালকে অফিসে গিয়েও করতে পারতো। কিন্তু এখন যেহেতু নিশার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে, তাহলে শুধু শুধু অপেক্ষা করার থেকে ভালো না, কালকে অফিসের কিছু কাজ কমিয়ে রাখা। রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে পড়ে সে। তার রুমে আসার দশ পনেরো মিনিট পরেই প্রতিদিন নিশা রুমে আসে। আজকেও এসেছে। কিন্তু অন্যদিন রুমে এসে ঘুমাতে গেলেও, আজকে ঘুমাতে যায় না। রুমে এসে প্রথমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ায়, তারপর আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে। সেই যে ঢুকেছে এখন প্রায় পঁচিশ তিরিশ মিনিট হয়ে গিয়েছে বের হওয়ার নামও নেই। ওয়াসরুমের ভিতর থেকে কোন শব্দও আসছে না। এখন খুব চিন্তা হচ্ছে রিশানের। মেয়েটা এতোক্ষণ ওয়াসরুমে কি করছে? মেয়েটা আবার গোসল করছে না তো? তাহলে তো পানির শব্দ হতো! সে কি গিয়ে ডাক দিবে? কিন্তু নিশা যদি তার এই ডাকাডাকির বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে না নেয়। জুঁইদের বাসা থেকে আসার পর থেকে রিশান খুব ভেবে চিন্তা নিশার সাথে কথা বলে বা নিশার জন্য কিছু করে। মেয়েটাকে একবার খুব বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে। এই ভুল জীবনে আর দ্বিতীয়বার করতে চায় না সে। কিন্তু মেয়েটা এতোক্ষণ ধরে বাথরুমে! না আর চুপ করে বসে থাকাতে পারছে না সে। ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। ডাক দেওয়াটা ঠিক হবে কি হবে না, এই দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে যায় ওয়াসরুমের দিকে। ওয়াসরুমের সামনে দাঁড়িয়ে অনেক ভেবে চিন্তে ওয়াসরুমের দরজায় নক করার জন্য হাত উঠাবে, তার আগেই ওয়াসরুমের দরজা খুব বের হয়ে আসে নিশা। ওয়াসরুমের সামনে রিশানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে প্রশ্ন করল
- এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?
রিশান কোন উত্তর দেয় না। সে উত্তর দিবে কি নিশার করা প্রশ্নটা তার কান পর্যন্ত পৌঁছালেও মস্তিষ্কে পৌঁছায়নি। সে তো এখন ব্যস্ত তার মায়াবিনীকে দেখতে। কি অপরুপ সুন্দর লাগছে তার মায়াবিনীকে দেখতে। শ্যামা গায়ে হলুদ ও সাদা কালারের কম্বিনেশনের জামদানি শাড়ি। দু'হাতে দু'মুঠো কাঁচা হলুদ রঙের কাচের চুড়ি। কাচের চুড়ির দুপাশে একটা করে মোট চারটা সাদা রঙের জয়পুরি ঝুমকা চুরি। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। চোখে কাজল। কানে সোনার ঝুমকো। চুলগুলো খোপা করা। কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে তার মায়াবিনীকে। নিশা এবার একটু জোরেই রিশানকে জিজ্ঞেস করল
- কি হলো বলছেন না যে, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
নিশার ডাকে রিশানের ধ্যান ভেঙে যায়। চমকে গিয়ে আমতা-আমতা করে বললো
- না মানে, অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে তুমি ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছিলে না। তাই দেখতে এসেছি। তুমি ঠিক আছো নাকি আবার পড়ে টরে গিয়েছ।
- ওহ।
কথাটা বলেই নিশা বারান্দায় চলে যায়। রিশান গিয়ে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ে আর ভাবতে থাকে সে কি বাস্তবে আছে? নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে? যদি তার দেখা সত্যিই হয়, তাহলে নিশা এতো রাতে এতো সুন্দর করে সেজেছে কেন? রিশানের ভাবনার মধ্যেই নিশা তার সামনে এসে বললো
- উঠুন।
রিশান নিশার দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো উঠে দাঁড়ায়। নিশা তার হাতে থাকা কাঠগোলাপ ফুলটা রিশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- ধরুন, এটা আমার মাথায় পরিয়ে দিন।
রিশান ফুলটা না ধরে, স্থীর চোখে নিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশা পুনরায় বললো
- কি হলো, নিন পরিয়ে দিন।
রিশান একপলক ফুলটার দিকে তাকিয়ে, পুনরায় নিশার দিকে তাকিয়ে বিষ্মিত কন্ঠে বললো
- এটা তো ,,,,,
রিশানের কথা শেষ হওয়ার আগেই নিশা বললো
- আমার প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ। নিন ধরুন, পরিয়ে দিন।
রিশান আস্তেধীরে নিশার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে তার খোপায় পরিয়ে দিয়ে, চুপ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। নিশা নিজেকে সামনের আয়নায় একঝলক দেখে, রিশানের দিকে তাকিয়ে বললো
- আমাকে কেমন লাগছে?
রিশানের খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, "কাঠগোলাপ ফুলের মতোই সুন্দর ও পবিত্র লাগছে তোমাকে মায়াবিনী।" কিন্তু বললো না। যদি কথাটা নিশার পছন্দ না হয়। তাই ছোট করে বললো
- খুব সুন্দর।
নিশা হালকা হেসে জিজ্ঞেস করল
- আজকে একটা স্পেশাল দিন। বলেন তো আজকে কি হয়েছে?
রিশান কিছুক্ষণ ভেবে মনে করার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছু মনে পরলো না। তাই সে উত্তর দিল
- জানি না।
নিশা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- আপনার জানার কথাও না। এক বছর আগে আজকের এই দিনে আমি আপনাকে প্রথম দেখিছিলাম।
রিশান অবাক চোখে নিশার দিকে তাকায়। তার স্পষ্ট মনে আছে নিশাকে দেখার প্রথম দিনের কথা। দিনটি আরও দুইমাস পরে। তাহলে নিশা এই কথা বলছে কেন? তার মানে সে নিশাকে দেখার আছেই নিশা তাকে দেখেছে। নিশা পুনরায় বললো
- সকাল আটটা চল্লিশে শবনম ম্যামের ক্লাস ছিল। জানেনই তো ম্যাম কেমন। দুই মিনিট লেট হলেই ক্লাসে ঢুকতে দেয় না। জ্যামে পরে অনেকটা সময় লস হয়ে গিয়েছিল। তার একপ্রকার দৌড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। বারান্দায় দিয়ে যাওয়ার সময় আমার চোখ আপনার কেবিনের জানালায়। থমকে যায় পা জোড়া। মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকি জানালার ওপারে মনোযোগ দিয়ে বই পড়তে থাকা যুবগটিকে। কতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা। ধ্যান ভাঙে ফোনের রিংটোনের শব্দে। আমি ক্লাসে গিয়ে পৌঁছায়নি দেখে, তোয়া ফোন করছিল। আমি এক ছুটে ক্লাসে যাই। কিন্তু ততক্ষণে ক্লাস শুরু হয়ে দশ মিনিট হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ম্যাম ক্লাসে ঢুকতে দেয়নি। ক্লাসের পুরো সময়টুকু বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেদিনই আমার ভাবা উচিত ছিল, আপনার সাথে দেখা হওয়ার প্রথম দিনই এমন শাস্তি পেতে হলো। আপনাকে পেলে তো আরও শাস্তি পাবো।
কথাটা বলেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো নিশা। সেই হাসিতে রিশান খুশির পরিবর্তে কষ্টের দেখা পায়। অপরাধীর কন্ঠে সে বললো
- আমি জানি তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসাতেই পেরেছি, ভালো রাখতে পারিনি। শুধু সেদিন রাতে না, লাষ্ট ক্লাসেও আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আমার জন্য তোমার আর তোয়ার মধ্যে মনমালিন্য হয়েছে। তাও বলছি, প্লিজ নিশা এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দেও।
- মা আমাকে তার জীবন কাহিনি বলেছে। আপনি মা'র জন্য সব করেছেন।
- যেই মা আমার জন্য নিজের ফ্যামিলি, নিজের সুখ, নিজের স্বপ্ন, নিজের লক্ষ্য, নিজের ক্যারিয়ার সবকিছুর বিসর্জন দিলো। সে মায়ের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসার বিসর্জন দিতে পারবো না আমি। নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য সেই মাকে কষ্ট দিবো। তাহলে আমার আর বাবার মধ্যে পার্থক্য কোথায় হলো, বল।
- আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিয়েন। সেদিন আমার আপনার কথা শোনা উচিত ছিল। কিন্তু মানুষের এতো কথা শুনার পর নিজের আর আপনার উপর অনেক রাগ হচ্ছিল। তাই আপনার কথা শুনিনি।
- আমি তোমার উপর রাগ করিনি। সেদিন খালারা তোমাকে নিয়ে নানান কথা বলেছে তা আমিও শুনেছি। এগুলো শুনে আমারই রাগ উঠেছিল।
- আপনি যদি আমার উপর রাগ না করেই থাকেন, তাহলে আগের মতো হচ্ছেন না কেন। আমি আমার আগের সেই রিশান স্যারকে দেখতে চাই। যে আমাকে ভালোবাসবে, আবার আমার উপর অভিমান করবে। আমাকে শাসন করবে, আবার স্নেহও করবে।
রিশান অসহায় কন্ঠে বললো
- ভয় হয় যদি আবার কোন ভুল করে ফেলি।
নিশা রিশানের ডান হাত, নিজের দুই হাতে ধরে বললো
- উহু আর কোন ভুল হবে না। এখন থেকে আমি আর আপনি একসাথে থাকবো। ভালো সময়, খারাপ সময়, সুখের সময়, দুঃখের সময় সবসময় আমরা একজন অন্যজনের সঙ্গে থাকবো। একজনের ভুল হলে অন্যজন বুঝিয়ে ভুলটা ঠিক করে দিবো।
রিশানের চোখ দুটো খুশির জলে চিকচিক করে উঠলো। সে নিজের দুই হাত দিয়ে নিশার দুইহাত ধরে চুম্বন করে বললো
- ভালোবাসি মায়াবিনী।
নিশা চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো
- আমিও ভালোবাসি আপনাকে।
রিশান নিশার চোখের জল মুছে দিয়ে, আলতো করে তাকে নিজের প্রশস্ত বুকে জড়িয়ে নিলো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৮০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন