উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৭৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭৮)


হাত-পা বাঁধা থাকলেও মুখ বাঁধা হয়নি শুভ্র, দীপ্তি আর চন্দ্রার। সেই মুখকেই কাজে লাগিয়ে দীপ্তির হাতের বাঁধন খুলে ফেলে শুভ্র। হাতের বাঁধন মুক্ত হতেই দীপ্তি দ্রুত হাতে নিজের পায়ের বাঁধন খুলে ফেলে। তারপর শুভ্রের হাতের বাঁধন খুলে দেয়। হাতের বাঁধন খোলা হলে, শুভ্র নিজের পায়ের বাঁধন খুলতে থাকে। এর মধ্যে দীপ্তি গিয়ে চন্দ্রার হাতের বাঁধন খুলতে থাকে। শুভ্র পায়ের বাঁধন খুলে, উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকে। সামনের সাটারের ওপারে লোক পাহারায় থাকতে পারে। তাই পিছিনের দরজা দিয়ে পালানোটাই ঠিক মনে করে। শুভ্র পিছনের দরজার দিকে পা বাড়ায়। চন্দ্রার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দীপ্তি আর চন্দ্রা উঠে দাঁড়ায়। তখনই সাটারের খুলে ভিতরে ঢুকে ইমতিয়াজ আর দুজন লোক। শুভ্রদের বাঁধন মুক্ত অবস্থায় দেখে প্রথমে কপালে ভাঁজ ফেললো। তারপর মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- বাহ, বাহ তোরা তো বেশ কাজের আছিস।
শুভ্র ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো
- ইমতিয়াজ আংকেল আপনি এমন কেন করলেন? আপনি না বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। আমাকে নিজের ছেলের মতো আদর করতেন!
ইমতিয়াজ মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো
- ছেলের মতোন না। ছেলে করেই রাখতাম তোকে। যদিও তা সৎ ছেলে। তবে বিশ্বাস কর আমি তোকে আপন ছেলের মতোই যত্ন করে মানুষ করতাম।
চন্দ্রা ইমতিয়াজের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে, ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
ইমতিয়াজ মুখে বিশ্রী হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- মানে!
তার পাশে রাখা চেয়ারে আরাম করে বসে বললো
- প্রথম থেকেই বলি। শুভ্র, তুই হয়তো জানিস আমি আর তোর বাপ একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। এমন কি একই হলেও থাকতাম। তোর বাপের থেকে আমি কোন দিক দিয়ে কম ছিলাম না। উল্টো তোর বাপের থেকে আমার ফ্যামিলি ছিল আরও বেশি শিক্ষিত, ধনী। বাবা ডাক্তার, মা স্কুল টিচার। আমিও খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম। কিন্তু তাও, তাও সিনিয়র-জুনিয়র স্টুডেন্ট, টিচার্স সবাই আসিফ বলতে পাগল ছিল। ভার্সিটির বেশিরভাগ মেয়েদের ওর জন্য পাগল ছিল। আমি ওর জনপ্রিয়তা কমাতে একটা মেয়ের সাথে ওকে ফাসাবো বলে প্ল্যান করি। মেয়েও ঠিক করে ফেলি। কিন্তু প্ল্যান অনুসারে কাজ করার আগেই আমার বাবা ব্রেইন টিউমারে ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য আমাদের যা কিন্তু ছিল সব বিক্রি করতে হয়। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো যায় না। মারা যায় বাবা। সাথে করে দিয়ে যায় আমাকে ফকির। টাকা দিতে পারিনি বলে মেয়েটা আর প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করলো না। দেখতে দেখতে লেখাপড়া শেষ হয়ে গেল। চাকরি নিলাম এস কে কোম্পানিতে। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু কোথা থেকে যেন সেখানেও তোর বাপ এসে জয়েন করলো। তাও আমার সিনিয়র হয়ে! আবার ভার্সিটির মতো এখানেও ও কয়েকদিনে ফেমাস হয়ে গেল। কিন্তু শান্তি ছিল একটাই যে তোর বাপ বিবাহিত ছিল, এক ছেলের বাপ ছিল। অফিসের সুন্দরী মেয়েরা তার হতে পারবে না। তারপর অফিসের একটা পার্টিতে দেখা হয় তোর মায়ের সাথে। এতো সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে চোখেই দেখিনি আর এতো সুন্দর মেয়ে ওর বউ! উপায় খুঁজছিলাম পরিকে নিজের করে পাবার। তোর বাপের সাথে আগের চেয়ে বন্ধুত্বটা আরও শক্তপোক্ত করলাম। কিন্তু তোর মা বাবা একে অপরকে যে পরিমাণ ভালোবাসে সহযে তাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি করানো সম্ভব না। একটা সঠিক সুযোগের জন্য বছরের পর বছর ঘুরতে থাকলাম। অবশেষে পেলাম সেই সুযোগ। একদিন আমি তোর বাপকে বড় স্যারের কেবিনে ঢুকে কিছু পেপার চুরি করতে দেখে ফেলি। তোর বাপ এই কথা জানালে সে আমাকে কোম্পানির ইলিগাল বিজনেসের কথা বলে, সাথে এও বলে যে সে সব প্রমাণ যোগাড় করে রিটায়ার্ড প্রাপ্ত আর্মি অফিসারদের কাছে দিবে। বেস আমার লক্ষ পুরোন করার পথ পেয়ে গেলাম। সাথে বেশি আয়ের উৎসও। আমি গিয়ে শিমুল খন্দকারকে সব বলে দিলাম। শিমুল খন্দকার তোর বাবাকে আর ওই দুজন আর্মি অফিসারকে মেরে দিল। আমাকে তার ইলিগাল কাজে যুক্ত করে নিল। সবই আমার প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছিল। শুধু তোর মা'টা মরে গিয়ে আমার প্ল্যানটা মাটি করে দিল।
রাগে শুভ্র নিজের দুই হাত শক্ত করে মুঠো করে বললো
- এতোদিন আমার কষ্ট হতো, মা'ও কেন আমাকে ছেড়ে বাবার সাথে চলে গেল। কিন্তু আজকে আমার মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে মা মরে গিয়েছে। তোর মতো বাস্টার্ডের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আল্লাহ যা কিছু করে ভালোর জন্যই করে।
তখনই শিমুল খন্দকার দোকানের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বললো
- তাহলে তোমার বাবার মৃত্যুটাও ভালোর জন্য হয়েছে, এটা মেনে নেও। শুধু শুধু আমার আমার পিছন লেগে নিজের জীবন শেষ করার কোন মানে হয়, বল। এর থেকে ভালো আমার সাথে হাত মিলাও। তোমাদের মতো ইয়াং, এডুকেটেট, ব্রেব ছেলেমেয়েরাই তো আমার ব্যবসার এর উন্নতি করবে। আমিও তোমাদের ঠোকাবো না।
শিমুল খন্দকারকে দেখে ইমতিয়াজ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে যায়। দীপ্তিরা তিনজন ছাড়া বাকি সবাই ভয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে শিমুল খন্দকারের দিকে তাকিয়ে বললো
- বিশ্বাস! যার তো পুরো ব্যবসাই দুনাম্বারী। তাকে বিশ্বাস করবো!
শিমুল খন্দকার শুভ্রকে বললো
- এটা তোমার ভুল ধারণা। যারা দুনাম্বারী ব্যবসা করে তারা কিন্তু নিজের কাজে বেশি সৎ হয়ে থাকে।
দীপ্তি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
- আফসোস তারা এই সততাটা যদি ভালো কাজে লাগাতো, তাহলে নিজের আর দেশের উন্নতি করতে পারতো।
হঠাৎ পিছনের লোহার দরজার নিচ দিয়ে ধোঁয়া আসতে থাকে। তা দেখে শিমুল খন্দকার চেঁচিয়ে বললো
- এতো ধোঁয়া কোথা থেকে আসছে। দেখ বাহিরে গিয়ে।
ইমতিয়াজের সাথে আসা লোক দুজন এই ধোঁয়ার মধ্যেই বাহিরে বের হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ধোঁয়া কমে যায়। শিমুল খন্দকার আর বাকিরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনে তাকায়। কিন্তু সামনে তাকাতেই তারা অবাক হয়ে যায়। তাদের সবাইকে হাতে বন্দুক উচিয়ে ঘিরে রেখেছে দশ-বারোজন পুলিশ সাথে মুরাদ, অভ্র আর আহানও আছে। শিমুল খন্দকার ইমতিয়াজের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- ইমতিয়াজ ওদের ফোন নিসনি পুলিশ কোথা থেকে এলো?
ইমতিয়াজ কিছু বলার আগেই মুরাদ উত্তর দিল
- ফোন ইমতিয়াজ ঠিকই নিয়েছে। কিন্তু তোর পাপের ঘড়া যে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই খবরটা আমরা বাতাসের মাধ্যমে পেয়ে গিয়েছি।
ইমতিয়াজ শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- বুঝলি না তুই। বাবার মতো বোকা হলি। আমি তোকে ছাড়বো না।
শুভ্র রাগী কন্ঠে বললো
- আমার বাবার সন্তান আমি। তোদের মতো বাস্টার্ডদের সন্তান না, যে নিজের সার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করবো।
আহান ইমতিয়াজকে বললো
- যা আগে জেলে গিয়ে নিজের মেয়ের সাথে দেখা কর, পরে বাকিদের দেখিস।
মুরাদ পুলিশ অফিসারকে বললো
- অফিসার ওকে নিয়ে যান।
অভ্র রাগী কন্ঠে দীপ্তিদের উদ্দেশ্যে বললো
- কোন সাহসে তোরা আমাদের না জানিয়ে ইমতিয়াজের সাথে দেখা করতে গিয়েছিস। আজকে যদি তোদের কিছু হতো।
চন্দ্রা, দীপ্তি, শুভ্র তিনজনই অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার বাবার পরে যদি দীপ্তি কাউকে ভয় পায় তাহলে তা হলো শুভ্র। আর যেখানে গ্রুপের লিডার দীপ্তি অভ্রকে এতো ভয় পায় সেখানে চন্দ্রা আর শুভ্র কিভাবে কথা বলার সাহস পাবে। দীপ্তি নম্র কন্ঠে বললো
- সরি ভাইয়া।
দীপ্তি সরি বলায় সাহস পেয়ে চন্দ্রা আর শুভ্রও বললো
- সরি ভাইয়া।
অভ্র আবার আগের মতো রাগী কন্ঠে বললো
- তোর বাপকে বলেছি তোদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দিবো না। ওরা যদি তোদের মারধর করতো, তাহলে তোদের বাপ খালুকে আমি কি জবাব দিতাম ভেবেছিস। ভাগ্য ভালো রোদ ভাইয়া আমাদের সব জানিয়েছে।
দীপ্তি কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল
- রোদ! উনি কি করে জানলো?
অভ্র দীপ্তির করা প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গিয়ে বললো
- সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো তোরা তিনজন এমন কাজ কিভাবে করলি?
দীপ্তি শান্ত কন্ঠে বললো
- ইমতিয়াজ আসিফ আংকেলের অনেক ভালো বন্ধু ছিল। তাই ,,,, আমরাদের ভুল হয়ে গিয়েছে এমন আর হবে না। শিক্ষা হয়ে গিয়েছে।
মুরাদ অভ্রকে শান্ত করার জন্য বললো
- আহা অভ্র ওদের আর বকিস না। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ওরা এভাবে ধরা না পড়লে ইমতিয়াজকে এতো সহজে ধরা যেত না। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাদের।
💞
দুঃখিত আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন স,,,,,,
যান্ত্রিক এতোটুকু কথা শুনেই কান থেকে ফোন নামিয়ে কলটা কেটে কান্না করতে থাকে অনু। এই পর্যন্ত এই নিয়ে সতেরো আঠারো বার শুভ্রকে কল করেছে অনু। কিন্তু প্রতিবারই ফোনের ওপাশ থেকে যান্ত্রিক মেয়েলি কন্ঠস্বর ফোন বন্ধ বলছে। আজকে বিকেলে তাকে ছেলেপক্ষ দেখে গিয়েছে। মিষ্টার হাছিবের ছেলে খুব পছন্দ হয়েছে। পাশের গ্রামের ভালো পরিবারের ভদ্র ছেলে। পেশায় ডাক্তার, দেখতে শুনতেও বেশ ভালো। পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই। ছেলের বাড়ির লোকেরাও কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলেছে তাদের অনুকে পছন্দ হয়েছে। কথাটা শোনার পর থেকে শুভ্রকে কল করছে সে। শুধু এই কথাটা জানাতে যে, তার পক্ষে কোন ভাবেই শুভ্রকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। শুভ্র তাকে বিয়ে না করলেও না।"


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৭৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন