উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৭৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮০)
আজকে আবার আহাম্মেদ বাড়ি সেজে উঠেছে। নানান সাইজের নানান রকমের লাইট, ফুল আর রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়ি। বাগানে বড় করে স্টেজ করা হয়েছে। সেই স্টেজে রাখা আছে দুটো রাজকীয় চেয়ার। সেই রাজকীয় চেয়ারে বউ সেজে বসে আছে তোয়া আর তূবা। হ্যাঁ আজকে তূবা আর তোয়ার বিয়ে। সেদিন রাতে তোয়ার সম্মতি পেয়ে সকালেই বাবা-মা'কে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় অভি। তোয়া আর অভির মধ্যের সম্পর্ক যে ভাইয়ের বন্ধু বা বন্ধুর বোনের থেকেও বেশি ছিল তা তিনি জানতেন। একমাত্র তূবা ছাড়া বাকি সব ছেলেমেয়েদের উপরই সবসময় কড়া নজর রেখেছেন তিনি। শুধু তূবাকেই তিনি অভ্রের ভরসায় ছেড়ে দিয়েছে। মুখে যাই বলুক না কেন অভ্রকে তিনি যথেষ্ট ভরসা করে আর ভালোবাসে। তাই তিনি তূবার সব দ্বায়িত্ব অভ্রকেই দিয়ে দিয়েছে। তবে অভ্র শুধু তূবার খেয়ালই রাখিনি বড় ভাই হিসেছে দীপক, দীপ্তি, তোয়া এমনকি চন্দ্রারও খেয়াল রেখেছে। কিন্তু অভ্রের একটা কাজ তার পছন্দ হয়নি। তা হলো হুট করে তূবাকে বিয়ে করা। তূবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখতে পারতো। তাদের সাথে কথা এখন এনগেজমেন্ট করে রাখতো। কিন্তু তা না করে ডায়রেক্ট বিয়ে করে ফেললো! বড় মেয়েটাকে লেখাপড়া শেষ না হতেই, তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে হয়েছে। ছোট মেয়ে দুটোকে অন্তত লেখাপড়া শেষ করিয়ে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু অভ্রের এই কাজের জন্য তা আর হলো কোথায়। তাই বাদ্য হয়েই দুই মেয়েকে এখনই বিয়ে দিতে হচ্ছে তাকে। দুইজনকেই দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। দুইজন বিয়ের লেহেঙ্গার পরেছে, তবে রঙ ভিন্ন। তোয়া পড়েছে খয়েরি রঙের লেহেঙ্গার আর তূবা পড়েছে অভ্রের প্রিয় রং বেগুনি রঙের লেহেঙ্গার। দুজনের গায়েই ডায়মন্ডের গহনা। দুজনের মুখেই খুব হালকা মেকাপ, ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। তোয়ার মাথা চুলগুলো খোপা করা, কিন্তু তূবার লম্বা চুলগুলো বেনি করা। অপূর্ব সুন্দর লাগছে তাদের দুজনকেই। বাগান ভর্তি মেহমান সবাই বউ সেজে বসে থাকা এই বোনদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অতিথি বলতে কাছের কিছু আত্নীয়-স্বজন, আশেপাশের কিছু পাড়াপ্রতিবেশি, অফিসের ইম্পটেন্ট কিছু এমপ্লয়ি, দু-চারজন নামি ধামী ব্যবসায়ী আর ওদের চার ভাই-বোনের বন্ধু-বান্ধব। স্টেজে তূবার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে এটা সেটা বলে খেপাচ্ছে কুহু। তূবা আর কুহুকে দেখে হাসছে তোয়া আর নিশা। রিশান দূরে দাঁড়িয়ে এক কলিগের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে তার মায়াবিনীকে দেখছে। চেয়ারে বসে কাব্যর সাথে কথা বলতে বলতে সেদিকে চোখ পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে যায় অতুলের। আজকে দোলা থাকলে সেও বান্ধবীদের সাথে আনন্দ করতো। কাব্যও কথার পাশাপাশি তার কুহুরানীকে দেখছে। মিষ্টি রঙের শাড়িতে মেয়েটাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। একই অবস্থা হয়েছে আহানেরও, বউয়ের দিক থেকে চোখই সরাতেই পারছে না। আর আয়ান তো বউয়ের পিছন পিছনই ঘুরছে। রোদও অতিথিদের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে দীপ্তির দিকে তাকাচ্ছে। বোনদের বিয়ের উপলক্ষে মিষ্টার আফরান দীপকে আজকে ভোরে বাসায় আসতে বলেছে। কিন্তু বাড়িতে এসে বিয়ে বাড়ির এতো ব্যস্ততার জন্য দু-একবার চোখের দেখা ছাড়া, নীলার সাথে কথা বলার সময় পাচ্ছে না সে। আহাম্মেদ ভিলার সামনে এসে পর পর থামে লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো দুটো সাদা গাড়ি। একটা থেকে নামে বেশুনি রঙের শেরওয়ানী পরে বর সাজা অভ্র আর একটা থেমে নামে খয়েরি রঙের শেরওয়ানী পরে বর সাজা অভি।

রুমে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই দেখে দরজার সামনে দীপ্তি, চন্দ্রা, শুভ্র, নীলা আর মুরাদ দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- তোরা আমার রুমের দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
মুরাদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
- ডাক্তারির বই ছাড়া আর কিছুই করিসনি জীবনে, জানবি কিভাবে যে বাসর ঘরে ঢুকার আগে বন্ধু আর ছোট ভাই-বোনদের টাকা দিয়ে ঢুকতে হয়।
অভ্র অবাক হয়ে বললো
- আমার রুমে আমি ঢুকবো, তোদের টাকা দিবো কেন?
মুরাদ উত্তর দিল
- কারণ এটা আদিকাল থেকে চলে আসা একটা নিয়ম।
দীপ্তি মুরাদের কথায় সায় দিয়ে বললো
- হুম। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত রুমে যেতে পারবে না। দেও, দেও।
অভ্র দীপ্তির দিকে তাকিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- গেইটে ঝগড়া করে নিলি তিরিশ হাজার টাকা, স্টেজে চেয়ার দেওয়ার জন্য নিলি দশ হাজার টাকা, পায়ের থেকে জুতা কেড়ে নিয়ে নিলি দশ হাজার টাকা, খাওয়ার পর হাত ধোয়ার জন্য নিলি দশ হাজার টাকা। মোট ষাট হাজার টাকা নিয়েছিস আমার কাছ থেকে। অভির কাছ থেকেও ষাট হাজার টাকা নিয়েছিস। দুজনের থেকে এক লাক্ষ বিশ হাজার টাকা নিয়েছিস। এখন আবার টাকা চাইছিস! বাচ্চা মানুষ, এতো টাকা দিয়ে কি করবি তোরা?
শুভ্র হাসিমুখে বললো
- বাচ্চা মানুষেরই তো টাকা প্রয়োজন ভাইয়া৷ বাচ্চারা টাকা দিয়ে ঘুরবে, খাবে, আনন্দ করবে।
অভ্র চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
- আমি আর কোন টাকা পয়সা দিবো না।
চন্দ্রা দাত বের করে হেসে বললো
- তাহলে তোমার রুমে ঢোকাও হবে না।
অভ্র দরজার দিকে তাকিয়ে, রুমের ভিতরে থাকা তূবার উদ্দেশ্যে বললো
- এই তূবা দরজা খোল।
চন্দ্রা দাত বের করে হেসে বললো
- কাজ হবে না। তোমার বউ বলেছে তোমার থেকে টাকা নিয়ে, তাকে ভাগ দিতে।
অভ্র অনুতাপ করে বললো
- কোন দুঃখে যে খালাতো বোন বিয়ে করলাম। কতোক্ষণ জ্বালায় শশুড় আর কতোক্ষণ জ্বালায় শশুরের ছেলেমেয়েরা। বল কতো চাস?
দীপ্তি উত্তর দিল
- বিশ হাজার টাকা দিলেই হবে।
অভ্র পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে বললো
- দশের এক পয়সাও বেশি পাবি না।
মুরাদ টাকাটা নিতে নিতে বললো
- এতো কিপ্টামি করলে হয়।
অভ্র দরজার দিকে তাকিয়ে বললো
- যা ইচ্ছে বল আমি এর বেশি দিবো না আর তূবা দরজা খোল। তুই কিন্তু সারাজীবন এই রুমে থাকতে পারবি না। এখন দরজা না খুললে, পরে বের হলে কিন্তু তোর খবর আছে।
মুরাদ বাকা চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- কপাল ভালো তূবা তোকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। না হয় তোর কপালে বউ জুটতো না।
অভ্র চোখ দুটো ছোট ছোট করে মুরাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আনিকাকে ফোন করবো?
মুরাদ তড়িঘড়ি করে বললো
- যা ভাই যা, তুই। আমরা এই টাকাতেই খুশি। তুই রুমে যা। এই তূবা ভাবি দরজা খোল।
মুরাদের অবস্থা দেখে সবাই হেসে দিল আর অভ্রের হুমকি শুনে তূবা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেয়।

চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুনে আছে তোয়া। তার পাশেই হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের লেখা হ্যামলেট গল্পটা পড়ছে অভি। চোখ দিয়ে দেখে মুখ দিয়ে বইয়ের কালো কালো অক্ষরগুলো বললেও, মনে মনে বলছে অন্য কথা। খুব আফসোস হচ্ছে তার। কেন যে সে সেদিন আরও ভেবে কথা বললো না। তাহলে আজকে এই সুন্দর বাসর রাতে তাকে বসে বসে গল্পের বই পড়তে হতো না। তাও আবার হ্যামলেট! এই গল্পটা তার অপছন্দের না। কিন্তু এই গল্প সে আরও অনেকবার পড়েছে। এটা তোয়ার প্রিয় গল্প বলে। কোন নতুন রোমান্টিক গল্প পড়তে বলতো। তাহলে একটু ভালো লাগতো তার। রুমে ঢুকার জন্য ভাই নিলো বিশ হাজার টাকা আর রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আসতেই বোন লাগিয়ে দিলো বই পড়াতে। শালা, এই ভাই-বোনের জ্বালায় জীবনটা পুদিনা পাতা হয়ে গেল। যা দেখতে সুন্দর হলেও আসলে তিতা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন