উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান


৮০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮১)


দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বারো বছর বয়সে ছোট শুভ্র। ঢাকায় যে বাসায় সে তার বাবা-মা'য়ের সাথে থাকতো সে, সেই বাসার দরজা এটা। তার সামনে দিয়ে তার মা হাটু গেরে বসে, হাত গালে নিজের হাত হাত রেখে আদর করে বললো
- নিজের খেয়াল রাখিস, সোনা।
পাশে দাঁড়ানো তার বাবাও তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
- ভালো থাকিস বাবা।
তারপর তারা চলে যাচ্ছে। সে খুব করে চাইছে তার বাবা মা'য়ের সাথে যেতে কিন্তু পারছে না। কোন কিছু যেন তার পা আটকে রেখেছে। সে তাদের ডাকতে চাচ্ছে। কিন্তু তার কন্ঠ দিয়ে যেন কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। সে তার বাবা মায়ের দিয়ে হাত উচিয়ে রেখে আর তার চোখ দিয়ে অঝোরে পড়ছে নোনা জল। তার বাবা-মা দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতেই সে সেখানে হাটুতে মুখ রেখে কান্না করতে থাকে। কতক্ষণ কান্না করছে তা তার জানা নেই। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে ছোট অনুর কন্ঠ। শান্ত মিষ্টি কন্ঠে অনু তাকে ডাকছে
- শুভ্র ভাইয়া।
মাথা তুলে তাকায় শুভ্র। তার সামনে সেই সাদা ফ্রকটা পরে দাঁড়িয়ে আছে সাত আট বছরের সেই ছোট অনু। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সে এখন তাদের সেই ভাড়া ফ্লাটে না। সে বসে আছে কোন একটা মাঠের মধ্যে থাকা একটা বড় আম গাছের নিচে। অনু মিষ্টি হেসে নিজের ডান হাত শুভ্রের দিকে বাড়িয়ে দেয়। শুভ্র হাতটা না ধরে অনুর হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবেই স্থীর থেকে বড় হয়ে যায় তারা। অনুর হাসিমাখা মুখটা আস্তে আস্তে মলিন হয়ে যায়। শুভ্র বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। আস্তে ধীরে সে হাত বাড়ায় অনুর দিকে। অনুর হাত আর তার হাতের দূরত্ব যখন মাএ এক সেন্টিমিটার, ঠিক তখনই দূর থেকে একটা পুরুষ কন্ঠস্বর ডেকে উঠলো
- অনু।
কন্ঠস্বর অনুসরণ করে অনু পিছনের দিকে তাকায়, শুভ্রও সামনের দিকে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। তবে উনি কন্ঠস্বর অনুসরণ করে সেদিকে দৌড়াতে থাকে। শুভ্র উঠে অনুর পিছন পিছন দৌড়ে বললো
- অনু দাড়া। অনু! যাসনা, অনু। দাড়া আমার জন্য।
কিন্তু অনু দাঁড়ায় না। কিন্তু অনু দাঁড়ায় না। এমনকি পিছনে ঘুরেও তাকায় না। শুভ্র পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ডাকে
- অনু!
ফট করে চোখ খুলে তাকায় শুভ্র। বাহিরের তীব্র আলো জানান দিচ্ছে যে সকাল হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। সময় দেখার জন্য সামনের দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে তাকায় সে। এখন সময় দশটা বেজে তিরিশ মিনিট। উঠে বসে সে। আজকে কোন কাজ নেই তার। একমাস পর মাস্টার্স লাষ্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা তাই, আপাতত পড়া ছাড়া আর কিছুতে মনোযোগ দিচ্ছে না সে। আজকে কোন ক্লাসও নেই। তাই একটু বেলা করেই উঠেছে সে। ফ্রেশ হওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামবে, এমন সময় ড্রেসিং টেবিলের উপর চার্জে থাকা তার ফোনটা বেজে উঠে। এখন তাকে আবার কে ফোন করলো? কথাটা ভাবতে ভাবতে উঠে এগিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে। চার্জ থেকে ফোনটা খুলতে খুলতে তাকায় স্কিনের দিকে। সেখানে ভেসছে বাংলা ফর্মেটে লেখা "চাচা" শব্দটি। তার চাচা খুব বেশি তাকে কল করে না। তার চাচিই দুইদিন অন্তর অন্তর তাকে কল করে তার শরীর-স্বাস্থ্য, খাওয়া-দাওয়ার খবর নেয়। অন্য সময় হলে সে সকাল সকাল তার চাচার কল দেখে অবাক হতো সে। কিন্তু আজকে সে অবাক হয় না। সে জানতো আজকে তার চাচা তাকে কল করবে। কারণ গত দুই সপ্তাহ পর, শিমুল খন্দকারের আন্ডারে কাজ করা সবাইলে ধরার পর গতকাল রাত থেকে টিভিতে শিমুল খন্দকারের গ্রেপ্তার আর তার কথা সব অপকর্মের কাহিনী দেখানো হচ্ছে সব নিউজ চ্যানেলে। সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই খবর। যদিও আজকে সকালের খবর কাগজ শুভ্র দেখিনি। তবে তার পূর্ণ বিশ্বাস আজকের সব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে ছাপা হয়েছে এই খবর আর সকালের পেপার পড়তে গিয়েই সেখান থেকে এই খবর জেনেছেন তার চাচা মিষ্টার হাছিব সাহ। কলটা রিসিভ করে নম্র কন্ঠে শুভ্র বললো
- আসসালামু আলাইকুম চাচা।
ফোনের ওপাশ থেকে মিষ্টার হাছিব শান্ত কন্ঠে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। খবর দেখেছিস?
- হ্যাঁ চাচা।
শুভ্র শান্ত, স্বাভাবিক কন্ঠস্বরের উত্তর শুনে মিষ্টার হাছিব কিছুটা অবাক হয়। এমন একটা খবর শুনে যেখানে তার মতো স্বল্পভাষী, শক্তপোক্ত মানুষও স্থীর থাকতে পারেনি, সেখানে শুভ্র কিভাবে এতো শান্ত! কিন্তু সে তো আর জানে না লীস্থে জয়েন করার জন্য তাকে অনেক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তার মধ্যে একটা পরীক্ষা ছিল নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরীক্ষা। যত কষ্ট হোক না কেন নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ না করার পরীক্ষা। দীর্ঘ এক বছর সে এর উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। দীপ্তি আর চন্দ্রার সাথে এই ফ্লাটে বসে কতো প্যাকটিস করেছে সে। মিষ্টার হাছিব শুভর শান্ত থাকা নিয়ে কিছু বলে না। সএ ভাবে হয়ত তার সাথে কথা বলছে দেখেই এখন সে শান্ত। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি তার চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল
- এখন কোন পরীক্ষা আছে তোর?
শুভ্র ছোট করে উত্তর দেয়
- না, চাচা।
- তাহলে সামনের বৃহস্পতিবার বাড়িতে এসে পড়িস। শুক্রবার কিছু গরিব মানুষকে খাওয়াবো। আর শনিবার, পাশের গ্রামের সালাউদ্দিন হাওলাদার আছে না।
পাশের গ্রামের সবথেকে সম্ভ্রান্ত পরিবার হলো এই হাওলাদার পরিবার। সে যেহেতু বারো বছর সেই গ্রামে থেকেই কলেজ পর্যন্ত পড়েছে, তাই সেও সে পরিবারকে খুব ভালো করে চিনে। তাছাড়া সেই পরিবারের মেঝো ছেলের বড় ছেলে পারবেজ হাওলাদার তার স্কুলের সিনিয়র ছিল। তাই সে খুব ভালো করেই তাদের চিনে। ছোট করে সে বললো
- হ্যাঁ।
- তার বড় ছেলে পারবেজ এর জন্য অনুকে পছন্দ করেছে তারা। আমি যতটুকু খোঁজ খবর নিজেছি ছেলে ভালো, ডাক্তার। তোকে তোর চাচি জিজ্ঞেস করেছিল। তুইও বলেছিস ছেলে ভালো। তাই আমি তাদের বলেছি সামনের শনিবার এসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে যেতে।
অনুর বিয়ে! কথাটা শুনেই বুকের মধ্যে কষ্ট হতে থাকে শুভ্রর। অনু নামক এই শ্যামারঙা, শান্ত, লাজুক, স্বল্পভাষী মেয়েটাকে সে ভালোবাসে, বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু কখনোই তা প্রকাশ করে না। কারণ তার চাচা চাচি। তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এই চাচা চাচিই তার গার্জিয়ান। তারাই তাকে খায়িয়ে, পড়িয়ে নিজে মানুষ করেছে। সেদিন যদি তার চাচা তাকে এই বাড়িতে নিয়ে না আসতো, তার দ্বায়িত্ব না নিতো। তার চাচি যদি তাকে নিজের ছেলের মতো আদর যত্ন করে বড় না করতো, তাহলে আজছে সে তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারতো না। আর না তার বাবা মা'য়ের খুনিকে শাস্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারতো। সে নিজের অনুভূতি প্রকাশ না করলেও, অনুর অনুভূতি স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার। চাচা বা বাহিরের মানুষের কাছে না হলেও তার আর চাচির কাছে একদম পরিষ্কার। চাচি নিশ্চয়ই চাচাকে বলেছে অনুর পছন্দের কথা। তারপরও যেহেতু তার চাচা তার সাথে অনুর বিয়ের কথা বলেনি, তাহলে নিশ্চিত তার চাচা চায় না তার সাথে অনুর বিয়ে হোক। এমনটাই তো স্বাভাবিক। পারবেজের তুলনায় কি আছে তার। পারবেজ ধনী পরিবারের ছেলে, নিজেও পেশায় সরকারি ডাক্তার। অন্যদিকে সে চাচা-চাচির আশ্রয়ে বেঁচে থাকা এক এতিম ছেলে। শান্ত কন্ঠেই শুভ্র বললো
- ঠিক আছে চাচা আমি বৃহস্পতিবারই চলে যাবো।
- সাবধানে আসিস।
- আচ্ছা।
ওপাশ থেকে মিষ্টার হাছিব কলটা কেটে দিলে, শুভ্র ফোনটা আবার ড্রেসি টেবিলের উপর রেখে দেয়। আলমারি খুলে আলমারিতে ভাঁজ করে রাখা পেন্টের নিচ থেকে এক পেকেট সিগারেট বের করে সে। মূলত চন্দ্রা আর দীপ্তির ভয়েই সে এই সিগারেট এখানে লুকিয়ে রেখেছে। এই দুজন তাকে একটুও সিগারেট খেতে দেয় না। সেও তেমন একটা খায় না। তবে মাঝে মাঝে বেশি কষ্ট হলে তো খেতেই হয় একটা দুটো। কিন্তু তাদের এই কথা বুঝানো গেলে তো। তাদের মতো আরও একজন এই সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না। মেয়েটা মুখ ফুটে তাকে তেমন কিছু না বললেও, শ্যামাঙ্গিনীর মুখে বিরক্তির ভাব দেখে সে তা বেশ বুঝতে পারে। হয়ত মেয়েটা মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল, তাদের বিয়ের পর জোর করে তার সিগারেট খাওয়া বন্ধ করবে। কিন্তু আফসোস তা আর হবে না।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৮২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন