উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৮১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৮২)
রেস্টুরেন্টের স্বচ্ছ কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে কাব্য। যদিও তার আরও দশ পনেরো মিনিট পরে আসার কথা। কিন্তু সে আগে আগেই চলে এসেছে। তার আজকে কোন কাজ নেই, তাই আগে আগে রওনা দিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় জ্যামও ছিল না। তাছাড়া কোন মেয়ে তার জন্য একা অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবে, বিষয়টা কাব্যের কাছে ভালো লাগলো না। তাই কাব্য আগে এসে পরেছে। হ্যাঁ, কাব্য পৃথার সাথে দেখা করতে এসেছে। আসলে পৃথাই গতকাল ফোন করে তার সাথে কফি হাউজে দেখা করার জন্য রিকোয়েস্ট করেছে। পৃথা তার খুব কাছের বন্ধু না হলেও, ভালো বন্ধু। তাই তার অনুরোধ ফেলতে পারেনি কাব্য। রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসার জন্য আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সিট খুলছিল কাব্য। আশেপাশে চোখ বুলতেই সে অবাক হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টের এক কর্ণারের একটা চেয়ারে বসে আছে পৃথা। মেকাপ বিহীন মুখটা মলিন। কাজল কালো চোখ দুটো দূর নীল আকাশে স্থীর। যত্নে বেড়ে উঠা চুলগুলো খুব সুন্দর করে খোপা করা। পাতলা হালকা গোলাপি রঙের ঠোঁটে জোড়া গাঢ় লাল হয়ে উঠেছে, লিপস্টিকের কৃত্রিম রঙে। ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের শাড়িতে মেয়েটাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে। মেয়েটাকে দেখে একটু কষ্টই হচ্ছে তার। মেয়েটার এমন বিরহিণী মুখ আগে কখনো দেখেনি সে। একটা শ্বাস ফেলে পৃথার কাছে যায় কাব্য। পৃথার পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে ডাকলো
- পৃথা।
কাব্যর ডাক পৃথা শুনে, তাও না শোনার ভাণ করে আগের মতো চুপ করে বসে থাকে সে। শুধুমাত্র প্রিয় মানুষটির মুখ থেকে নিজের নামটা পুনরায় শোনার জন্য, সে এই না শোনার অভিনয়টা করে। কাব্য আবার শান্ত কন্ঠে ডাকে
- পৃথা।
এবারও পৃথা আগের মতোই বসে থাকে। কাব্য এবার চেয়ার টেনে পৃথার সামনে বসে চিন্তিত কন্ঠে বললো
- পৃথা, এই পৃথা।
এবার পৃথা ঘুরে তার সামনে বসা কাব্যের দিকে তাকায়। তার সামনে কালো গায়ে কালো রঙের শার্ট পরে চিন্তিত মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে কাব্য। মলিন মুখে হাসির হালকা রেখা ফুটিয়ে পৃথা জিজ্ঞেস করল
- কেমন আছো তুমি?
কাব্য চিন্তিত কন্ঠে বললো
- আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ঠিক আছো? না মানে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি। কিন্তু তুমি শুনছিলে না। তাই জিজ্ঞেস করছি।
পৃথা কোন উত্তর দেয় না। শুধু কাব্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে। টেবিলের উপর থাকা মেনু কার্ডটা কাব্যের দিকে এগিয়ে দিকে পাল্টা প্রশ্ন করল
- কি নিবে?
কাব্য স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল
- তোমার যা ইচ্ছা তাই অর্ডার কর।
পৃথা কাব্যকে খাবার পছন্দ করার জন্য জোর করে না। দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেসও করে না। সামনের দিকে তাকিয়ে তাদের থেকে কিছুটা দূরে থাকা ওয়েটারকে ডাকে
- ওয়েটার।
ওয়েটার এসে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে নম্র কন্ঠে বললো
- জ্বি ম্যাম।
পৃথা ওয়েটারকে বললো
- দুই কাপ ব্লাক কফি আর দুটো চকলেট ডোনাট দিবে।
ওয়েটার মাথা নেড়ে বললো
- আচ্ছা ম্যাম।
ওয়েটার চলে গেলে পৃথা কাব্যর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- তা তুমি ইউ এস কি যাচ্ছো?
কাব্য ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
পৃথা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কবে?
কাব্য পুনরায় প্রশ্ন করল
- সামনের মাসের পঁচিশ তারিখে।
পৃথা ছোট করে বললো
- ওহ।
কাব্য এবার প্রশ্ন করল
- তোমার কি প্ল্যান?
পৃথা শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- বুয়েট থেকেই এমএসসি করবো। তারপর দেশেই কিছু একটা করবো।
ওয়েটার কফি আর ডোনাট দিয়ে যায়। কাব্য কফির কাপে চুমুক দিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- আংকেল আন্টি কেমন আছে?
পৃথা ছোট করে উত্তর দিল
- ভালো।
কাব্য অপরাধীর কন্ঠে বললো
- সরি।
পৃথা কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- সরি! কেন?
কাব্যের সরল কন্ঠে উত্তর দিল
- আমি তোমার প্রপোজ একসেপ্ট করতে পারিনি তাই।
পৃথা মলিন হেসে জিজ্ঞেস করল
- খুব ভালোবাসো কুহুকে তাই না?
পৃথা কুহুর কথা বলতেই কাব্যের মনে পড়ে যায় আসার সময় গোমড়া করে রাখা কুহুর মুখটার কথা। কুহুকে সে কালকে রাতেই পৃথার সাথে দেখা করার কথা জানিয়েছে। কুহু যদিও তাকে পৃথার সাথে দেখা করতে আসতে বারণ করেনি, তবে তার যে বিষয়টি ভালো লাগেনি তা তার মুখ দেখেই বুঝে ফেলেছে কাব্য। মেয়েটা তাকে বড্ড ভালোবাসে যে, তাই তার আশেপাশে কোন মেয়েকে সে সয্য করতে পারে না সে। কাব্য স্বাভাবিক কন্ঠে পৃথাকে উত্তর দিল
- নিজের থেলেও বেশি।
কিছুসময় দুজনেই নিরব থাকে। কিছুক্ষণ পর পৃথা হাতের ডোনাটটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে। যদি আমি কুহুর জায়গায় থাকতাম আর কুহু যদি আমার জায়গায়তে থাকতো। তখনও কি তুমি কুহুকে ভালোবাসতে?
পৃথা কথাটা শেষ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কাব্যের মুখে দিকে তাকায়। কাব্য নিজের হাতের কফির কাপটা রেখে, পৃথা দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- কুহু আমার বউ। আল্লাহ ওকে আমার জন্য সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই ও থাকুক না কেন। কোন না কোন ভাবে ওর সাথে আমার দেখা হতো আর ও আমারই হতো। তোমার জন্যও সৃষ্টিকর্তা কাউকে সৃষ্টি করেছে। একদিন তুমিও তার দেখা পারে।
পৃথা শক্ত কন্ঠে বললো
- দোয়া কর তার সাথে আমার যেন দেখা না হয়। আমি তোমার না হলে, যেন অন্য কারো না হই।
- দেখ পৃথা ,,,,,,
কাব্যকে থামিয়ে দিয়ে পৃথা বললো
- প্লিজ, কাব্য ডোন্ট সে এনিথিং। আই ডোন্ট ওয়ানা হেয়ার এনিথিং আবাউট দিস মেটার।
ছোটবেলা থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়, প্রয়োজন ছাড়া শুদ্ধ বাংলা ছাড়া ইংলিশে কথা বলে না পৃথা। তবে ও যখন খুব সিরিয়াস হয় বা খুব রাগ হয়, তখন ও ইংলিশে কথা বলে। যেহেতু লেখাপড়া নিয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় পড়ে থাকতে হয় তাকে, তাই আনমনে বা রাগের মাথা ইংলিশে কথা বলে ফেলে। কাব্য এটা জানে, তাই সে আর এই বিষয়টা নিয়ে কথা বাড়ায় না। পৃথা নিজেকে শান্ত করে, শান্ত কন্ঠে বললো
- সরি।
কাব্য স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো
- ইট'স ওকে।
পৃথা পুনরায় ওয়েটারকে ডাকল
- ওয়েটার।
ওয়েটার এবারো এসে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে নম্র কন্ঠে বললো
- জ্বি ম্যাম।
পৃথা ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বললো
- বিলটা নিয়ে এসো।
ওয়েটার মাথা নেড়ে বললো
- আচ্ছা ম্যাম।
কথাটা বলেই ওয়েটার চলে যায় বিল নিয়ে আসতে। ওয়েটার চলে গেলে পৃথা নিজের ব্যাগ থেকে রেপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো একটা পেকেট বের করে কাব্যের দিকে ধরে বললো
- এটা তোমার জন্য। প্লিজ না বলোও না। মনে করো এটা তোমার কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর পক্ষ থেকে ফেয়ারওয়েল গিফট।
কাব্য চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না। চুপচাপ পৃথার হাত থেকে গিফটটা নিতে নেয়। পৃথা কাব্যকে পুনরায় বললো
- খুলে দেখ, পছন্দ হয় নাকি?
কাব্য পেকেটটা খুলে দেখে এর মধ্যে রোলেক্স ঘড়ি দামী একটা ঘড়ি। কাব্য অবাক চোখে পৃথার দিকে তাকায়। পৃথা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- পছন্দ হয়েছে?
- খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু ,,,,,
কাব্যকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে পৃথা অনুনয়ের কন্ঠে বললো
- হাতে পড়বে প্লিজ।
কাব্য ঘড়িটা পরে। পৃথা সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ওয়েটার এসে বললো
- ম্যাম বিলটা।
পৃথা ওয়েটারের হাত থেকে বিল ফেল্ডারটা নেয়। কাব্য পৃথাকে বললো
- আমি দেই।
পৃথা ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে বললো
- উহু। আজকে আমি দিব, প্লিজ।
বিল মিটিয়ে দুজনেই রেস্টুরেন্টের বাহিরে চলে আসে। পৃথাকে রেস্টুরেন্টের ভিতর থেকে বের হতে দেখেই, রাস্তার পাশে তার গাড়ি পার্ক করে বসে থাকা তার গাড়ির ড্রাইভার, গাড়ি নিয়ে তার সামনে চলে আসে। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পৃথা কাব্যকে বললো
- থ্যাংকস আসার জন্য। চলি।
পৃথা গাড়িতে উঠার জন্য গাড়ির দরজার হ্যান্ডেলে হাত দিতে, তার পিছন থেকে কাব্য ডাকল
- পৃথা।
পৃথা ঘুরে কাব্যের দিকে তাকালে, কাব্য বললো
- তুমি খুব ভালো মেয়ে। দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমাকে সব সময় ভালো রাখে।
পৃথা কিছু বলে না, শুধু মুখে কষ্ট মাখা মলিন হাসির রেখা ফুটিয়ে গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ি ছুটে যায় পৃথার গন্তব্যে।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কাব্যও রিকশায় ডেকে তাতে উঠে পড়ে। রিকশা এসে থামে কাব্যদের বাসার গেটের সামনের রাস্তায়। কাব্য রিকশা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেয়। রিকশা চলে যায়। গেটের সামনে লতিফ মিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য হাসিমুখে লতিফ মিয়াকে বললো
- ভালো হয়েছে চাচা তোমার সাথে আমার কথা ছিল।
লতিফ মিয়া হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল
- কি কথা বাবা?
কাব্য উত্তর দিল
- কিছু দরিদ্র লোকদের খাওয়ার কথা বলছিল মা। আয়োজনটা একটু বড় করেই করবো। আমার রেজাল্ট, বিয়ে, কুহুর এক্সাম, বিদেশে যাওয়া সব কিছু মিলিয়েই হুজুর ডেকে দোয়া পড়াবো। আমি ভাবছি খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের কিছু জামা কাপড়ের ব্যবস্থাও করবো। ভালো হবে না?
কাব্যের কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ লতিফ মিয়ার চোখ পরে একটা ট্রাকের উপর। ট্রাক খুব দ্রুত আসছে। একটু খেয়াল করে দেখতেই তার মনে হলো ট্রাকটা যেন তাদের দিকেই খুব দ্রুত আসছে। লতিফ মিয়া কাব্যকে গেইটের দিকে ধাক্কা মারলো। কিন্তু তাতে তেমন একটা লাভ হলো না। তার মতো রোগা পাতলা মানুষের পক্ষে কি আর কাব্যকে নাড়ানো সম্ভব। ফলসরুপ দুজনকেই ধাক্কা মেরে ট্রাকটা চলে যায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮৩তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন