লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
২৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৭)
উচ্ছ্বাস কুসুমকে এতটা রেগে যেতে দেখে কিছুটা ভরকাল। খানিক দমে গিয়ে উত্তর দিল,
কুসুম কি আর বলবে। চুপ করে সরে বিছানায় বসল। উচ্ছ্বাস কিছুক্ষণ সেখানেই দাড়িয়ে থাকল। খানিক পর এগিয়ে এল। কুসুমের পাশে বিছানায় বসল। কুসুম সরে গেল। উচ্ছ্বাস আরো একটু গা ঘেঁষে বসল। এবারেও কুসুম সরে যেতে চাইলে উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে কুসুমের কোমর আকড়ে ধরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে বসিয়ে রাখল। কুসুম কথা বলল না, সরেও গেল না। চুপচাপ বসে আছে। উচ্ছ্বাস খানিক পর কুসুমের কানের কাছে ফিসফিস করে শুধাল,
‘ সারপ্রাইজ রেডি করার জন্যে বেরিয়ে ছিলাম। সমুদ্র দেখতে এসে বউকে সারপ্রাইজ দেয় না কোন নরাধম? তাড়াহুড়োয় ফোন কখন সাইলেন্ট হয়েছি বলতে পারিনি। সরি। ‘
কুসুম এতেই যে গলে গেল। মৃদু হেসে পরপরই মুখ শক্ত করে থাকল। উচ্ছ্বাস তবুও বুঝতে পারল, কিছুটা কাজ হয়েছে। তাই সে উঠে দাঁড়াল। সোফার উপর রাখা দুটো প্যাকেট হাতে নিয়ে কুসুমের দিকে এগিয়ে দিল। কুসুম মাথা তুলে তাকাল। উচ্ছ্বাস বলল,
‘ রাগ কমেছে? কমলে প্লিজ দ্রুত তৈরি হয়ে নাও। এত কষ্ট করে করা সারপ্রাইজ নষ্ট করো না প্লিজ, বুকে লাগবে। ‘
কুসুম এতটা কাতর কণ্ঠ শুনে নেতিয়ে গেল। চুপ করে উঠে দাঁড়াল। শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। উচ্ছ্বাস নিজেও রুমে তৈরি হয়ে নিল। ঘড়ি দেখে নিল কয়েকবার। তারপর বাথরুমে টোকা দিয়ে বলল,
উচ্ছ্বাস আরো একবার ঘড়ি দেখল। তারপর রুম জুড়ে পায়চারি করতে লাগল। কুসুম বের হল গুনেগুনে আধা ঘন্টা পর। উচ্ছ্বাস তখন সোফায় বসে মোবাইল দেখছে। কুসুম বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আরেকটা প্যাকেট থেকে গয়নার বাক্স বের করল। ছোট একটা সাদা রঙের ডায়মন্ডের নোজপিন, দুটো ছোট আকারের কানের দুল, আর একটা চিকন চেইন। কুসুম নোজপিন পরবে, তবে উচ্ছ্বাস এসে আটকে দিল। হাত বাড়িয়ে কুসুমের হাত থেকে নোজপিন নিজের হাতে নিল। কুসুম দেখল সব। উচ্ছ্বাস নিজ হাতে কুসুমকে নোজপিন পরিয়ে দিল। পরানোর সময় কিছু কথা আওড়াল,
‘ ডায়মন্ড এর নোজপিনটা কিনেছিলাম বিদেশে থাকতে। পার্টটাইম জব করার টাকা জমিয়ে জমিয়ে কেনা। নিজের টাকায় তখন এই ছোট নোজপিনটাই এফোর্ড করতে পেরেছিলাম। এটা কেনার সময় একটা কথা ভেবেছিলাম। ‘
কুসুম মন্ত্রমুগ্ধের মত প্রশ্ন করল, ‘ কি ভেবেছিলেন? ‘
উচ্ছ্বাস হালকা হাসল। উত্তর দিল, ‘ বিয়ে করা বউ খুব ছোট ছিল। হঠাৎ বিয়ে হবার কারণে প্রেমে পড়তে পারিনি। বউকে ভালো করে উপলব্ধি করার আগেই বিদেশে পাড়ি। তাই এই নোজপিনটা কেনার সময় ভেবেছিলাম যেদিন আমি আমার বউয়ের প্রেমে পরব, সেদিন তাকে উপহার স্বরূপ নিজের প্রথম কষ্ট করে উপার্জন করা টাকায় এই ডায়মন্ডের নোজপিন দেব। শুধু উপহার দেব না, নিজ হাতে তাকে পরিয়েও দেব। ভাবনাটা খুব দ্রুতই সত্যি হয়ে গেল, তাইনা?’
কুসুম মাথা নত করে সামান্য হাসল। উচ্ছ্বাসের এই কথাগুলো তার কি ভীষন ভালো লেগেছে সেটা সে নিজে মুখে বলতে পারবে না। উচ্ছ্বাস বাকি গয়নাগুলো কুসুমকে নিজে পরিয়ে দিয়ে আয়নার মুখোমুখি করাল। কুসুম মাথা নত করে দাড়িয়ে আছে। মুখে লজ্জার আভা। উচ্ছ্বাস আয়নায় কুসুমের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। পরপর সম্মোহনের ন্যায় বলল,
‘ তুমি খুব বেশি সুন্দর, কুসুম। তোমাকে যেভাবেই দেখি সেভাবেই আমার মারাত্মক সুন্দর লাগে। কেন বলো তো? ভালোবাসি তাই বলেই কি? ‘
কুসুম খুশিতে চিৎকার করে বলল, ‘ এমন ভালো লাগা আমি কখনোই পাইনি। উফ, চারপাশ কি সুন্দর দেখাচ্ছে। কিভাবে করলেন এসব? এত এত ফানুস, এত এত আলো। উফ!কি করেছেন এসব? ‘
উচ্ছ্বাস শব্দ করে হেসে ফেলল। সে খুব একটা বেশি কিছু করেনি। শুধু ফানুস উড়িয়েছে। এতেই কুসুম খুশিতে কেঁদে দেবার উপক্রম। যারা এত ছোট ছোট বিষয়ে খুশিতে পাগল হয়ে যায়, এদেরকে বারবার ছোট ছোট আনন্দের বিষয়গুলো দেখিয়ে খুশি করতে মন চায়। উচ্ছ্বাস পেছনে থেকে কুসুমকে জড়িয়ে ধরল। কুসুমের কানের কাছে মুখ এনে বলল,
‘ কুসুম, নিজ হাতে ফানুস উড়াবে? ‘
কুসুম ঘাড় কাত করে পাশ ফিরে তাকাল। উচ্ছ্বাসের থুতনি কুসুমের ঘাড়ে। উচ্ছ্বাসের এটুকু স্পর্শে কুসুম আপাতত নেতিয়ে। কুসুম মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
কুসুম আর কিছুই বলল না। এমনিতেও এই ভালোবাসার অনুভূতি ওকে শেষ করে দিচ্ছিল। এখন আবার বাসর! লজ্জায় কুসুম মরে যাচ্ছে না কেন? ইশ! কুসুম পালাতে চাইল। এদিক ওদিক চেয়ে বলল,
‘ আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। ‘
কুসুম বাথরুমের দিকে চলে যাবে তার আগেই উচ্ছ্বাস কুসুমের হাত টেনে ধরল। কুসুমকে টেনে নিজের বুকে উপর মিশিয়ে নিয়ে বলল,
‘ আজকে আর বাথরুমে রাত কাটাতে দিচ্ছি না। আজকে আমরা স্বপ্নের রাত কাটাব। ‘
উচ্ছ্বাস ডান চোখ আলগোছে বুজে চোখ টিপে দিল। কুসুমের দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। ভাঙা স্বরে বলল,
‘ ফ-ফ্রেশ হ-হব না? ‘
উচ্ছ্বাস কুসুমকে পাজকোলে তুলে নিল। বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল, ‘ ফ্রেশ হবে তো। কাল সকালে আমরা দুজন একসঙ্গে ফ্রেশ হব। আমি ফ্রেশ করিয়ে দেব তোমায়। ডোন্ট ওরি মিসেস উচ্ছ্বাস। ‘
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
২৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন