উপন্যাস        :         বৌপ্রিয়া
লেখিকা         :          আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি


২৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৬)


কুসুম ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল। এ কেমন অনুভূতি? উপরে আকাশ, নিচে সমুদ্রে, সমুদ্রে পাখির ন্যায় উড়ে বেড়ানো ওরা দুজন। আশপাশে কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু না। পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে কুসুমের কাছে অদৃশ্য হয়ে গেছে। চোখের সামনে ভাসছে রাতের তারাময় বিশাল কালো আকাশ, কানে আসছে সমুদ্রের গান। কুসুমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,

‘ ই-ইটস ম-ম্যাজিকাল। ‘ ‘

উচ্ছ্বাসের ঠোঁটে মৃদু হাস। কুসুমের এইটুকু খুশি উচ্ছ্বাসের বড্ড পাওয়ার ছিল। উচ্ছ্বাস কুসুমের কোমরে রাখা হাতের বাঁধন শক্ত করল। ভেজা গায়ে উচ্ছ্বাসের অনুভুতিপ্রবণ হাতের স্পর্শে কেমন নেতিয়ে গেল। থরথর কাপুনি স্পষ্ট লক্ষ্য করল উচ্ছ্বাস। হাতের বাঁধন আরো একটু শক্ত করতেই কুসুম মাথা নিচু করে তাকাল। কুসুমের চোখ-ঠোঁট বেয়ে পানি গড়িয়ে পরল উচ্ছ্বাসের মুখের উপর।
উচ্ছ্বাসের চোখে চোখ রাখে কুসুম। একটু একটু করে এগিয়ে আসে উচ্ছ্বাসের মুখের দিকে। কুসুমের এইটুকু এগিয়ে আসা উচ্ছ্বাসকে তাক লাগানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল। কুসুম হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাসের দু গাল আলতো করে ধরল। উচ্ছ্বাস বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেছে যেন। কুসুম আরো একটু নত হল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,

‘ ভ-ভালোসেন আ-আমায়? ‘

কুসুমের ভাঙা স্বর। উচ্ছ্বাস মোহনীয় চোখে কুসুমের চোখের দিকে চেয়ে আছে। কুসুম ঠান্ডায় কাপছে। ঠোঁট তিরতির করছে তার। কুসুম আবার জিজ্ঞেস করল,

‘ উ-উত্তরটা? ‘

উচ্ছ্বাস কুসুমের এমন আবেদনময়ী দৃশ্য এই প্রথম দেখল। আবেগে তার গলায় কথা আটকে আসছে। সে কুসুমের ভেজা মুখের দিকে চেয়ে থাকল। খানিক পর সম্মোহনের ন্যায় উত্তর দিল,

‘ হু, বাসি। ‘

কুসুম হাসল। উচ্ছ্বাস তখনো সম্মোহনের ন্যায় কুসুমের দিকে চেয়ে আছে। কুসুম হাসি ঠোঁটে রেখেই আবার প্রশ্ন করল,

‘ কতুটুকু? ‘
‘ অ-অনেক। ‘
‘ কখনও ছেড়ে দিবেন? ‘
‘ নে-নেভার। ‘
‘ আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি? ‘
‘ আ-আমি তোমাকে প্রচন্ড ব-বিশ্বাস করি। ‘

কুসুমের হাসির রেখা আরো বড় হল। উচ্ছ্বাসের গালে রাখা দুহাতের বাধন আরো একটু দৃঢ় হল। উচ্ছ্বাসের এবার দম বন্ধ বোধ হল। সেও কুসুমকে আরো শক্ত করে ধরল। কুসুম মাথা নামিয়ে আনল। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেবার আগে শেষবারের মত বলল,

‘ আমি আপনাকে প্রচন্ড বিশ্বাস করি। বিশ্বাস থেকেই ভালোবাসার উদয়। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হাসল। অতঃপর এক গভীর ঠোঁট চুম্বন। দুজনের কাছে আসার প্রথম ধাপ। উচ্ছ্বাসের বোধ হল, সে নিজে এগিয়ে করা চুম্বনে এতোটা সুখ পেত না, যতটা সুখ কুসুমের এগিয়ে এসে করা ঠোঁট চুম্বনে অনুভব হচ্ছে। সেদিনের চুম্বন এতটা গভীর ছিল না। উচ্ছ্বাস শুধুমাত্র ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে এসেছিল। তবে আজ সকল অনুভূতি ছাপিয়ে এই ভালোবাসার চুম্বনটাই সত্য মনে হচ্ছে। বাকী সব মিথ্যা, একমাত্র কুসুম-উচ্ছ্বাস সত্য, তাদের প্রগাঢ় ভালোবাসা সত্য, আর শেষ সত্য তাদের এই ঠোঁট চুম্বন।
_________________________
হোটেলে আসার পর থেকেই কুসুমের আগের রূপ আর খুঁজে পাওয়া গেল না। সরে সরে আছে উচ্ছ্বাসের থেকে। মেয়েটাকে খুবই অদ্ভুত লাগে উচ্ছ্বাসের কাছে। একসময় ভালোবাসার এক পরিপক্ব রাজকুমারী মনে হয়, আরেকবার মনে হয় ঘন জঙ্গলের নীল রঙা হৃদ এর পাশে গজে উঠা সবুজ রঙের লজ্জাবতী পাতা। উচ্ছ্বাস দুজনের জন্যে হোটেল রুমেই ভাত অর্ডার করল। সমুদ্রে এত সময় ভেজার ফলে দুজনের শক্তিই শেষ। এই মুহূর্তে ভাত না খেলে জীবন উদ্ধার হয়ে যাবে। খাবার রুমে এলে উচ্ছ্বাস টেবিলে খাবার বাড়ল। কুসুম এখনও জানালার দিকে চেয়ে দাড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যে আড়চোখে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকাচ্ছে। উচ্ছ্বাস দিব্যি সেটা বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে দেখেই মাঝেমধ্যে হেসে হেসে উঠছে। উচ্ছ্বাসের হঠাৎ হঠাৎ হাসির শব্দে কুসুম আরো যেন লজ্জায় জমে যাচ্ছে। উচ্ছ্বাস চেয়ারে বসল। পাশের চেয়ার টেনে কুসুমের উদ্দেশ্যে বলল,

‘ কিস করল যদি পেট ভরত তাহলে ট্রাস্ট মি কুসুম, আমি তোমাকে খেতে বলতাম না। কিন্তু এখন বাস্তব ধর্ম মেনে দুজনেরই পেট খালি। দ্রুত আসো। খেয়েদেয়ে তারপর আবার লজ্জা পেও। ভাত ঠাণ্ডা হচ্ছে। ‘

কুসুম কি করবে বুঝতে পারছে না। উচ্ছ্বাসের চোখের দিকে তাকানো বোধহয় এই জনমে আর সম্ভব হবে না কুসুমের পক্ষে। কুসুম কি করে বসল সেটা? নিজে নিজে…. উফ! ভাবতে পারছে না কুসুম। কি হয়ে গিয়েছিল তার তখন? উচ্ছ্বাসের একটুখানি স্পর্শে নিজেকে এভাবে হারিয়ে ফেললো? লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে কুসুমের। উচ্ছ্বাস আরেকবার ডাকলে কুসুম না চাইতেও পাদুটো টেনে চেয়ারে গিয়ে বসল। মাথা নত করে খেতে মশগুল হল। এখন পর্যন্ত উচ্ছ্বাসের দিকে একবারও তাকাল না। উচ্ছ্বাস খেতে খেতে বারবার কুসুমকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কুসুম এসব দেখে লজ্জায় খাবার ছেড়ে উঠে যেতে মন চাইছে। একটা মানুষ জেনেবুঝে কি করে কুসুমকে এতটা লজ্জায় ফেলতে পারে?

খাবার কোনরকম শেষ করে কুসুম উঠে দাঁড়াল। উচ্ছ্বাস হোটেল বয়কে ফোন করে টেবিল পরিষ্কার করিয়ে ফেলল। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে দুজনেই। উচ্ছ্বাস নিজে বিছানায় এসে শুয়েছে। অথচ কুসুম এখনো বাথরুমে আছে। অনেক সময় হয়ে গেল কুসুম আসছে না। উচ্ছ্বাস উঠল। বাথরুমের সামনে গিয়ে বলল,

‘ বাথরুমে বিছানা বালিশ পাঠাব কুসুম? ঘুমিয়ে যাও সেখানে। ‘

কুসুম কি করবে আর? এই ছেলে আর এমন করছে কেন? উফ! অবশেষে কুসুম বেরিয়ে এল বাথরুম থেকে। উচ্ছ্বাস কুসুমকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলার ভান করে বলল,

‘ সত্যি বের হয়েছ? আমি তো ভেবেছিলাম আজকে তুমি বাথরুমেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছ। ঘুমাও নি? হায় হায়। ‘

কুসুম চোখ রাঙানি দিল। উচ্ছ্বাস শব্দ করে হেসে ফেলল। কুসুম ধীর পায়ে বিছানায় এসে বসল। উচ্ছ্বাসের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে শুবে তার আগেই উচ্ছ্বাস কুসুমের কোমরে হাত রেখে হেচকা টান দিয়ে নিজের পাশে নিয়ে এল। কুসুম চমকে গেল। কুসুমের পিঠ উচ্ছ্বাসের বুকের সঙ্গে লেগে। কুসুম শরীর শক্ত করে শুয়ে আছে। উচ্ছ্বাস কুসুমের ঘাড়ে মুখ এনে ফিসফিস করল,

‘ আমি কিন্তু এগিয়ে যাইনি কুসুম। তুমি কাছে এসেছ। শুরুটা তুমি করেছ, সারাজীবনের চালিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ত্ব আমার। ‘

কুসুম কি বলবে! চুপ করে লেগে আছে উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে। উচ্ছ্বাস কুসুমের শক্ত করে শুয়ে থাকতে দেখে বলল,

‘ শরীর ছাড়ো। সারারাত আমার সঙ্গেই লেগে ঘুমাবে। এভাবে শক্ত গায়ে শুয়ে থাকলে সকালে শরীর ব্যথা করবে। ‘

কুসুম বড়বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে শরীর ছেড়ে দিল। উচ্ছ্বাস কুসুমের পেটে হাত জড়িয়ে আরো গভীর ভাবে তাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল। খানিক পর উচ্ছ্বাস কৌতুক স্বরে বলল,

‘ কি ছলচাতুরী করে আমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথা বের করলে কুসুম? আ’ম ইমপ্রেসড। ভেবেছিলাম ভালো মুহূর্ত দেখে কথাটা জানাব তোমাকে। অথচ তুমি…তর সয় না মেয়ে? এত অস্থির তুমি, উফ। ‘

কুসুম হেসে ফেলল এবার। কুসুমকে হাসতে দেখে উচ্ছ্বাসও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। এতক্ষণে কুসুম সহজ হয়ে এসেছে। উচ্ছ্বাস বলল,

‘ হাসবে না কুসুম। তুমি জানো, তুমি খুবই ধূর্তবাজ একটি মেয়ে। উপরে উপরে সরল দেখলেও ভেতর ভেতর তুমি খুব প্যাচ জানো। ‘

কুসুম হালকা রাগ দেখানোর ভান করে বলল,

‘ মিথ্যা কথা। আমি কোনো প্যাচ জানি না। আমি উপরে যেমন ভেতরেও তেমন। ‘

‘ মিথ্যা না, সত্য কথাই। প্যাচ না জানলে, আমাকে কিভাবে প্যাঁচে ফেলে বুকের চাপা কথা মুহূর্তেই বের করে ফেললে। আমি হলে সেটা কখনোই পারতাম না। আমার ভেতর কোনো প্যাঁচ নেই। খোলা বইয়ের মত আমি। ‘

কুসুম কি বলবে। আসলেই সে ইচ্ছে করে এটা করেছে। উচ্ছ্বাসের মুখ থেকে ভালোবাসি কথা শোনার সত্যি তর সয় নি তার। তাই সমুদ্রে ওমন ম্যাজিকাল মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে উচ্ছ্বাসের মুখ থেকে বহু প্রতীক্ষিত কথাটা বের করেছে। কিন্তু কুসুম কি কখনো তা স্বীকার করবে? উহু! নাহলে দেখা যাবে, দিনরাত উচ্ছ্বাস কুসুমকে এই কথা বলে বলেই লজ্জায় মেরে দিবে। আসলেই। কুসুমের ভেতর বড্ড প্যাচ। ভালোবাসা অর্জন করার প্যাচ।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন