লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
৩০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩১)
আগামীকাল হলুদের সমস্ত আয়োজন করে মাত্রই বাড়ি ফিরেছে কুসুম। রুমে এসে দেখে উচ্ছ্বাস ল্যাপটপে কাজ করছে। কুসুমকে দেখে উচ্ছ্বাস কুসুমের দিকে চায়। মৃদু হেসে বলে,
‘কেমন কাটল দিন, মিস বৌপ্রিয়া?’
কুসুম ক্লান্ত নজরে চাইল। ক্লান্তিতে কুসুমের দু চোখ ভেঙে আসছে। উচ্ছ্বাসের আশকারা পেয়ে কুসুম হেঁটে এসে উচ্ছ্বাসের পাশে সোফায় বসে তার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে। কুসুমের শান্তি দরকার এই মুহূর্তে। আর তা দিতে পারবে শুধুমাত্র উচ্ছ্বাস। কুসুম এসে কোলে শুলে, উচ্ছ্বাস বুঝতে পেরে ল্যাপটপ সরিয়ে ফেলল। আলতো হাতে কুসুমের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ভেজা চুল আবারও বেঁধে রেখেছিলে? বিকেলে গোসল করেছ, এখনো চুল ভেজা। চুলের যত্ন নাও, কুসুম। তোমার এই চুল আমার ভীষন প্রিয়।’
কুসুম উচ্ছ্বাসের কোলে মাথা রেখে চোখ খুলে ঠিক উচ্ছ্বাসের চোখে চোখ রাখল। মিষ্টি হেসে বলল,
‘ক্লান্ত ছিলাম সারাটাক্ষণ। আপনাকে দেখে সকল ক্লান্তি মুছে গেছে।’
উচ্ছ্বাস মৃদু হাসল। কুসুম দু চোখ জুড়িয়ে শুধু চেয়েই রইল উচ্ছ্বাসের পানে। উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে কুসুমের খোঁপা খুলে দিয়ে চুল মেলে দিল। কুসুমের চুলে উচ্ছ্বাসের হাঁটু ঢেকে পা অব্দি ছড়িয়ে গেল চুল। কুসুমের এত লম্বা চুল যে উচ্ছ্বাস মাঝেমধ্যে কিছু ব্যাপারে এই চুল নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পরে। এই যেমন, সারা রাত ভালোবাসায় কাটানোর পর সকালে গোসলের পর কুসুম প্রায় কেদেই ফেলে চুলের ঝামেলায়। লম্বা চুল শুকাতে চায় না, হেয়ার ড্রায়ার উচ্ছ্বাস ব্যবহার করতে দেয়না। তারপর বিকেল অব্দি এই ভেজা চুল নিয়ে ঘরময় হেঁটে বেড়াও। কেমন বিচ্ছিরি অবস্থা তৈরি হয় ভেবেই কুসুমের গলা শুকিয়ে যায়। উচ্ছ্বাস কুসুমের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
কুসুম উচ্ছ্বাসের কথা শুনে চমকে তার দিকে তাকাল। পরপরই হেসে বলল, ‘এত শখ?’
উচ্ছ্বাস মুখ এগিয়ে এনে কুসুমের কপালে গাঢ় চুমু বসাল। ফিসফিসিয়ে বলল, ‘বুড়ো হলেও তোমাকে নিয়ে আমার শখ মিটবে না, বৌপ্রিয়া!’
কুসুম খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। এমন হৃদয় চুরমার করা হাসিতে উচ্ছ্বাসের হৃদয় ছিন্নভিন্ন হল। ঘোরলাগা দৃষ্টি ছেয়ে গেল উচ্ছ্বাসের চোখে। কুসুমের চোখ পরল উচ্ছ্বাসের চোখে। চোখে চোখ আটকে গেল। কুসুম উচ্ছ্বাসের চোখের দৃষ্টি বুঝল। কুসুমের নিজের মধ্যেও অনুভূতি কাজ করছে। কুসুম ভাঙা স্বরে বলল,
‘গো-স-ল করে আসি? ঘা-মে ভি-জে আছি।’
হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ইয়াহিয়াকে জোরপূর্বক লুঙ্গি-সেন্ডো গেঞ্জি পরিয়ে রাখা হয়েছে। ইয়াহিয়া নিজের রুমে বসে ঊষার সঙ্গে কথা বলছে। ঊষার কণ্ঠে খুশি উপচে পরছে যেমন। মেয়ে খুশি আটকে রাখতে পারছে না। দম বন্ধ করে বিয়ের পরে নিজে পরিকল্পনা একে একে বলছে ইয়াহিয়াকে। ইয়াহিয়া খুব ধৈর্য্য নিয়ে শুনছে এসব। মাঝেমধ্যে হেসে তাল মেলাচ্ছে। ঊষাকে ডেকে নেওয়া হল বাইরে। ঊষা কল রাখলে ইয়াহিয়া বেরিয়ে আসে ঘর ছেড়ে। হলুদ ছোঁয়ানো হয় তাকে। কুসুম ইয়াহিয়ার হলুদ মাখা মুখের ছবি তুলে ঝটপট ঊষাকে পাঠিয়ে দেয়। ঊষা উত্তর দেয় ছবির,
‘বিশ্রী লাগছে তোর ভাইকে।’
কুসুম হেসে উঠে। ফিরতি উত্তর দেয়, ‘কি আর করার,এই বিশ্রী ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে আপা।’
ঊষা বারবার ইয়াহিয়া হলুদে মাখা ছবি দেখে যাচ্ছে। চোখের পাতা কাপছে তার। মানুষটা এত সুন্দর কেন? ঊষার বুকের ভেতরটা তাকে দেখে বারবার ছটফট করছে। ঊষা আলগোছে চুমু খায় ইয়াহিয়ার ছবিতে। ফিসফিস করে আওড়ায়,
‘আমাদের প্রথম ঠোঁট চুমুর খুব করে অপেক্ষায় আমি, ইয়াহিয়া। কবে কাছাকছি আসব আমরা? কবে এত অপেক্ষার অবসান ঘটবে? আমার সময় যাচ্ছে না যে আর।’
রাত অনেক হয়েছে। অথচ এখন অব্দি উচ্ছ্বাস বাড়ি ফিরেনি। না কোনো কল, নাইবা ছোট্ট মুঠোবার্তা। না জানিয়ে উচ্ছ্বাস কোথায় গেছে কুসুম জানে না। আজকে তাদের ডেইটে যাবার কথা ছিল। অথচ সে হারিয়েছে কোন অজানায়! কুসুম বারবার কল করছে উচ্ছ্বাসকে। উচ্ছ্বাসের ফোন বন্ধ আসছে এবার। কুসুম রাগে ফোন ছুঁড়ে ফেলল বিছানায়। শরীরের সকল সাজসজ্জা খুলে, মাথার চুল খামচে ধরে বসে থাকল বিছানায়। রাগ হচ্ছে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে। কোথায় গেল সে? বলে যায়নি যে কুসুমকে।
উচ্ছ্বাস যখন ফিরেছে তখন ভোর চারটা বাজে। কলিং বেল বাজায় নি সে। কুসুমকে কল করে বলেছে দরজা খোলার কথা। উচ্ছ্বাসের কল পেয়েও একপ্রকার ছুটে নিচে গিয়ে দরজা খুলে কুসুম। দরজার ওপাশে আহত অবস্থায় উচ্ছ্বাসকে দেখে পিলে চমকে যায় কুসুমের। হেলে পরতে গিয়েও নিজেকে সামলায় কুসুম। দ্রুত এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসকে ধরে। এ কি অবস্থা হয়ে গেছে তার? কপালে ব্যান্ডেজ, ব্যান্ডেজের উপরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ! শার্টের হাতাতেও তেমন করেই রক্তের দাগ ভেসে আছে। কুসুমের চোখ জল ছলছল করছে। উচ্ছ্বাসকে কোনরকম ধরে উপরে রুমে নিয়ে আসল। দৌড়ে গিয়ে শরবত করে এনে উচ্ছ্বাসের হাতে ধরাল। উচ্ছ্বাস শরবত খেল না। বরং হাত বাড়িয়ে কুসুমের হাত চেপে দুর্বল কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
‘অ-পে-ক্ষা;য় ছিলে? আ-মি খুব স-রি! ঠি-কসময় আসতে পা-রিনি।’
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
৩২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন