উপন্যাস       :         উজল প্রাতের আরশি
লেখিকা        :         সাদিয়া খান সুবাসিনী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনীর “উজল প্রাতের আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী Bangla Golpo - Kobiyal
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী


উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী (পর্ব - ০১)

"আবিয়াত্তা মাইয়া তার আবার চার মাসের পেট। এই মাইয়্যা আমাগো মুখ দেখাবার জু রাখলো না।কোন থনে পেট বান্ধাইয়া আইছে কিছু কয় না।খালি চাইয়া থাকে।কই আরে ও লো মুখপুরী বুঝি তোর বিয়ার বয়স হইছে বুঝি আমরা তো চেষ্টা করতাছি। তাই কইয়া এই কাম করবি?"

দাদীর কথা শুনেও কোনো রা ফুটলো না শর্মীর মুখে।সে পাশ ফিরে শুয়ে রইল চুপ করে।গতকাল রাতে বাপ- ভাইয়ের মারের চোটে এখন ব্যথা করছে।বস্তির চারপাশে নানান ধরনের শব্দ। তাদের এদিকটা একটু বসবাস যোগ্য।প্রায় একদিন হয়ে এলো তার পেটে কোনো খাবার পড়েনি।ক্ষিধেয় গলার কাছটায় শব্দ হচ্ছে। রান্নাঘরে ভাবী নিশ্চয়ই ডাল চালে  খিচুড়ি রান্না করছে। হুট করেই পেটের ভিতরটা গুলিয়ে উঠলো তার।সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।কলতলায় যেতে না যেতেই হরহর করে বমি করে দিলো। 

বস্তির এই জায়গাটা তার বাবার নামে। অনেক বছর আগে যখন তার দাদা দেশের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল দাদীর হাত ধরে তখন কিনেছিল এই একটু জমি। শহরে এসে তারা বুঝতে পারে এখানে জীবন যুদ্ধ কতোটা কঠিন।নিজেদের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে থাকা আনসার আলী দুই সন্তানের বেশি জন্ম দেন নি।তার কথা ছিল খালি জন্ম দিলেই হবে না খাওন ও দিতে হবে।আর এই শহরে খাওন এতো সহজ নয়। মেয়ে বিয়ে দেয়, সে এখন ভালোই আছে। এরপর ছেলে রমিজ আলীকে বিয়ে করায়।রমিজ আলীর এক ছেলে  আউয়াল এবং মেয়ে শর্মী। রমিজ আলী একটা বেকারীর সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। এক্সিডেন্টে পা হারানোর পর এখন তার ছেলে সেই কাজ করে। সে গলির মাথায় সবজির দোকান করে। আর মেয়ে, ছেলের বৌ সেই বেকারীতে কাজ করে। এই রাক্ষুসে শহরে কাজ না করলে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। 


কাজে যেতে দেরি হচ্ছে বলে আউয়াল তার স্ত্রী ইতির উদ্দেশ্যে বলল " তাড়াতাড়ি খেতে দে।আমার দেরি হইতেছে।"
"এত তাড়াতাড়ি করো ক্যান আমরাও তো যাব।"

"শর্মীর যাওয়ার দরকার নাই।ও বাড়িতে থাকুক। ইজ্জত থাকবো?আজ রাতে ওরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।বাচ্চা ফালায় দিতে হইবো।"
"এখন আর সম্ভব না। চার মাস চলে ওর। এ মইরা যাইবো।"
"আর এই বাচ্চা না মরলে ও মইরা যাবো।"

"ওর এইখানে দোষ কই? ও কী ইচ্ছা করে এসব করছে?আমার সাথেই যায় আসে। সেদিন ক্যান তুমি ওরে দেইখা রাখো নাই?"

খাবারের থালায় হাত থেমে যায় আউয়ালের।সত্যি তো, সেদিন বৃষ্টির রাতে সে যদি ভুলে না রেখে আসতো তার বোনকে তাহলে হয়তো এই অঘটন ঘটতো না। শর্মীর এলোমেলো হয়ে ফিরে আসা কিংবা চুপ হয়ে যাওয়া নিয়ে কেউ তো তখন প্রশ্ন করেনি।এই কয়েক দিন যাবত পেট স্ফীত দেখাচ্ছে।আশেপাশে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। তার সহকর্মীও যখন কথাটা বলল তখন ফেলে দিতে পারেনি। বাসায় এসে বোনকে পাশের হাসপাতালের আয়ার বাড়িতে নিয়ে গেল।আয়া জানালো তার বোনের পেটের বাচ্চা কমছে কম চার মাসের।বাড়ি ফিরে মেরেছে ইচ্ছে মতো গতকাল।এরপর না শর্মী জানালো সে ধর্ষণ হয়েছে। আজ থেকে চার মাস আগের সেই বৃষ্টির রাতে। 


সেই রাতের কথা চিন্তা করে এখনো ঘুমাতে পারে না মেয়েটা। তার কেবল মনে পড়ে পুরুষালী শক্ত একটা হাত। কড়া সুগন্ধি এবং কোনো একটা গাড়ি।দুই চোখ এবং মুখ বেঁধে নিয়েছিল কি না নরপিশাচটা! দেখবে কি করে? মসলিনের মতোন নরম তার দেহটায় যেন জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।নাক, বুক কিংবা উরুতে অজস্র আঘাত করেছিল।এক সময় জ্ঞান হারায় সে।যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করে বেকারির পিছনে।পূর্ণ পোশাক পরিহিত, চুলগুলোও আঁচড়ানো।তার জুতো জোড়াও তো ছিল তার পাশেই।অসহনীয় দৈহিক যন্ত্রণা নিয়ে হেঁটে ফিরে আসে বাড়িতে।বাড়িতে আসার পর টানা কয়েক দিন জ্বরে ভুগেছিল।বলতে চেয়েছিল তার মাকে সবটা।কিন্তু সাহস হয়নি।হবে কি করে?তাদের বস্তিতেই যে কয়েক দিন আগে ধর্ষণ হওয়ার অভিযোগে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল এক দশ বছর বয়সী মেয়েকে।কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না বলে বাড়ির সামনেই সে রাতে শুয়ে ছিল। আর সেই রাতেই পুনরায় কে বা কারা যেন তাকে পুনরায় রেপ করেছিল।পরদিন ডোবায় ভেসে উঠেছিল তার লাশ।যদি তাকেও বের করে দেওয়া হয়?কোথায় যাবে সে?

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যি তার মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই।সে নিজেও জানে না এই সন্তানের বাবা কে। তার ভীষণ মায়া হয় এই চার মাসে পেটে ধরে রাখা বাচ্চাটার জন্য।কেমন একটু একটু করে বড় হচ্ছে।দাদী বলল নাজায়েজ ওলাদ।আচ্ছা সবাই তো সৃষ্টিকর্তার দান। সে কী পারবে না এই বাচ্চাটাকে একা মানুষ করতে?


অথচ পনেরো বছর বয়সী শর্মী সত্যিই ভুলে গেল যে সব ইচ্ছে পূর্ণতা পায় না।বাচ্চাটা জন্মালে সে তার জন্য নিয়ে আসবে কেবল অসম্মান, অপমান এবং অবহেলা।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনী সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন