উপন্যাস        :         তুমি অপরূপা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৮ই জানুয়ারী, ২০২৩ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অপরূপা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ৮ই জানুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান Bangla Golpo - Kobiyal
তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান


৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০৯)

টানা ১২ দিন বৃষ্টি হওয়ার পর আজকে বৃষ্টি থেমেছে। আকাশের মুখ ভার যদিও,সূর্য মামার দেখা নেই এখনো। 
সকাল না সন্ধ্যা তাও বুঝার উপায় নেই। 
রূপা খুব সাবধানে ঘরের কাজকর্ম করতে লাগলো মায়ের সাথে। 
সালমার আচার আচরনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। শান্ত নদীর মতো নিরিবিলি থাকা মানুষটাকে দেখলে মনে হয় খরস্রোতা নদী। যেকোনো মুহূর্তে একূল ওকূল সব ভেঙে চুর/মার করে দিবে।

যেই মুখে এতোদিন ছিলো স্নিগ্ধতা সেই রূপ বদলে দিন দিন সেখানে রূঢ়তা দেখা দিচ্ছে। 
সুরাইয়া বেগম ও কি-না আজকাল মুখে একটু লাগাম টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
রূপার স্কুলে যাওয়া সালমার পছন্দ না।কোনো মতেই রূপাকে পড়তে দিতে রাজি না সে।রূপা এতে মায়ের দোষ দেয় না।মা'কে মাঝেমাঝে রূপার অপ্রকৃতস্থ লাগে।কেমন যেনো কোথাও সুর কেটে গেছে। আজীবন দেখে আসা মানুষটার সাথে আজকের সালমার বড়ো বেশি অমিল।

পরপর দুই বোন যখন একই কান্ড ঘটায় তখন রূপাকে অবিশ্বাস করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রূপা জানে সে এমন না,কিছুতেই এরকম সে করবে না।
বাবার পরাজিত চেহারা রূপা দেখেছে।কেমন নিস্তেজ, নিষ্প্রাণ, হতভাগ্য মানুষের মতো বাবা সেদিন বারান্দায় বসে পাথরের মূর্তির ন্যায় সকলের সব অভিযোগ শুনে গেছেন।
শাহেদের বাবা মায়ের বলা ঘৃণ্য, নোংরা কথাগুলো বাবা কেমন করে হজম করে গেছেন তা রূপা দেখেছে। এরপরে ও যে বাবা তাকে বিশ্বাস করছে,পড়তে দিচ্ছে তারজন্য রূপার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বাবার কাছে। রূপা জানে স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় বাবা ও তাকে ঠিক এভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। রূপা কিছুতেই বাবাকে ডুবে যেতে দিবে না।


সালমা নাগা মরিচ,শুটকি, পেঁয়াজ একটা বাটিতে করে রূপাকে দিয়ে বললো, "ভর্তা বানিয়ে ফেল এগুলো দিয়ে। "
রূপা এক নজর তাকিয়ে মুচকি হাসলো। প্রচন্ড ঝাল এই নাগা মরিচ এক সময় মা তাকে গাছ থেকে ছিঁড়তে ও দিতো না।বলতো কোনোক্রমে যদি হাতে একটু লেগে যায় তবে হাত জ্ব/ল/বে।

অথচ এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আজ রূপার প্রতি মায়ের অবহেলা চূড়ান্ত পর্যায়ে। 
রূপা কথা না বাড়িয়ে সাবধানে ভর্তা করতে লাগলো। ভর্তা করে রূপা আর দাঁড়ালো না। রুমে গিয়ে দ্রুত স্কুল ড্রেস পরে দৌড়ে বের হলো স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। 
সালমা পিছন থেকে চিৎকার করে বললেন,"যাস না রূপা, আমি কইতাছি যাবি না।গেলে আজকে আর ঘরে জায়গা নাই তোর।খু**ন কইরা ফেলমু আজ তোরে আমি।"
রূপা ততক্ষণে অনেক দূর চলে গিয়েছে। 

ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চুলে দুই ঝুঁটি করে মিতা ধীরেসুস্থে বের হলো ঘর থেকে।তারপর ডেকে মা আর নানীর থেকে বিদায় নিয়ে স্কুলের পথে পা বাড়ালো।
সুরভি মেয়েকে বিদায় দিয়ে সালমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো, "আল্লাহ মানুষের ঘরে কু**ত্তা, বি**লাইয়ের ছাও দেয় এডি,বাপ মা'র কথা না ভাইবা না**গরের কথা ভাবে।বাপ মা'র মুখ ডুবায়।

মাইয়া তো আল্লাহ আমাগোরে ও দিছে কই কোনোদিন দেখি নাই এসব করতে।এলাকার দশজনে কতো সুনাম করে। পোলাপানের কি দোষ, গাই যেমন বাছুর তো তেমনই অইবো।"
সালমা নিরবে সব শুনলো।সুরভির কথার তীক্ষ্ণ ফলা ছু/রির ন্যায় আঘাত করলো সালমার বুকে।
না না,সুরভি তো মিথ্যে বলে নি। সত্যি তো সে খারাপ বলেই মেয়েরা এরকম হয়েছে। 
লজ্জায়,অপমানে সালমার ইচ্ছে করলো ম/রে যেতে।


শাহেদ বাড়িতে এসেছে আজ দুই দিন।ছেলেকে ছাড়া রোজিনা বেগম থাকতে পারছিলেন না।একমাত্র ছেলে তার।এরইমধ্যে খবর পেয়েছেন ছেলে একটা চালের আড়তে চাকরি নিয়েছে, মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনের। 


রোজিনা হিসেব কষে দেখলো বাড়িতে যদি শীঘ্রই না আনা হয় ছেলে আর বউকে তবে এভাবেই ছেলের হাতের বাহিরে চলে যাবে তার।
শাহেদ খালার বাড়ি গিয়ে উঠেছে। শাহেদের খালা কল করে রোজিনাকে জানিয়েছে যে,শাহেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজারে এক রুমের একটা বাসা খুঁজে নিবে।তারপর অনামিকাকে নিয়ে সেখানেই থাকবে।

রোজিনা হিসেব করে দেখলো ১২ হাজার টাকায় ওদের সংসার স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যাবে।
বুকের ভেতর সাথে সাথে রাগ,জেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। এতো বছর ধরে ছেলে পেলেপুষে কিনা বউ আসতে না আসতে ছেলের কামাই বউ খাওয়া শুরু করে দিবে আর তিনি লবডঙ্কা! 

এ কিছুতেই হতে পারে না। 
এতোই যখন বিয়ের শখ হইছে ওই মেয়েরে মজা বুঝাবে রোজিনা। এই মেয়ের জন্য ৩ লাখ টাকা হাতছাড়া হয়ে গেছে এর ফল তাকে পেতেই হবে।
হাসানুজ্জামানকে সব বুঝিয়ে বলতে হাসানুজ্জামান ও বুঝলো ব্যপারটা। দুজনে মিলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলো। তারপর রোজিনা বোনের বাড়ি গিয়ে ছেলে আর বউকে নিয়ে বাড়ি এলো। 

শাহেদ বাড়ি এসেই অনামিকাকে বললো, "অনামিকা, পরিস্থিতি কেমন তুমি বুঝতাছো।আব্বা আম্মা দুজনেই যে এখনো রাইগা আছে সেটা বুঝতে পারছো নিশ্চয়। 
আমি তো সারাদিন থাকমু না,আম্মা কিছু নিয়ে রাগারাগি করলে মন খারাপ কইরো না।নিজের মা ভাইবা সব ভুইলা যাইও।মানাইয়া নেওনের চেষ্টা নিও সবকিছু। "

অনামিকা মাথা নাড়িয়ে সাঁয় দিলো।শাহেদ সকালে উঠে নাশতা করেই চলে গেলো আড়তের উদ্দেশ্যে। অনামিকা উঠে কি করবে ভেবে পেলো না। রোজিনা কিছু বলছেন না,গাল ফুলিয়ে বারান্দায় থম মেরে বসে রইলেন।অনামিকা ঝাড়ু হাতে নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিলো।
হাসানুজ্জামান বারান্দায় বসে গলা চড়িয়ে বললো, "কই,তোমার পুত্রবধূ কই?নবাবজাদী কি এখনো ঘুমায় নি!


ভাগ্য কইরা বউ পাইছো রোজিনা,যাও বউয়ের লাইগা নাশতা বানাইয়া গিয়া তুনুমুনু কইরা ঘুম থাইকা তোলো।
নবাবজাদি আসছে আমার ঘরে। তার সেবাযত্নের যেনো কোনো ত্রুটি না হয় বুঝলা।"
রোজিনা ঠোঁট টিপে হেসে কড়া গলায় জবাব দিলো, "হ আমি তো বান্দি,বান্দিগিরি করার লাইগা আইছি এই সংসারে।এক জীবন গেছে তোমার বান্দিগিরি কইরা আর এখন করমু তোমার ছেলের বউয়ের বান্দিগিরি। আল্লাহ আমারে তুইলা নেয় না ক্যান?"

অনামিকার ভয়ে হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। দুচোখের পানি মুছে অনামিকা ঘর ঝাড়ু দিয়ে বের হয়ে এলো। তারপর রোজিনা বেগমকে বললো, "কি রান্না করতে হইবো আম্মা?আমাকে কয়েকদিন আপনে দেখাইয়া দেন একটু।"

রোজিনা ঠোঁট উল্টে বললো, "লাগবো না কারো আমার সংসারের কাম করন।"
অনামিকা ভয়ে চুপ করে রইলো। তারপর আরো নরম স্বরে বললো, "আম্মা কি করন লাগবো আমারে কন,আমি কইরা দিতাছি।"
রোজিনা চুপ করে রইলো। অনামিকা জবাব না পেয়ে কালির হাড়ি পাতিল,বাসি প্লেট নিয়ে ধুঁতে গেলো পুকুরে। 


দুই চোখ মুছে অনামিকা কাজে মন দিলো।মনে মনে বললো, "আমারে মাফ কইরা দিয়েন আব্বা আম্মা।আবেগের বশে কি থাইকা কি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি জানি না।আমারে মাফ কইরা দিয়েন।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন