গল্প               :        ধাওয়া
লেখক          :         নাজিম উদ দৌলা
গ্রন্থ              :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১৬ মে, ২০২০ ইং

ধাওয়া || নাজিম উদ দৌলা
ধাওয়া || নাজিম উদ দৌলা
লেখক নাজিম উদ দৌলার “ধাওয়া” শিরোনামের এই গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য এটি হুবহু প্রকাশিত হল। লেখক অনবদ্য এ গল্পটি ২০২০ সালের ১৬ মে লিখেছেন।

ধাওয়া || নাজিম উদ দৌলা

সিএনজিটা বাসার গলির সামনে আসতেই থামতে বললাম। বাসা যদিও গলির শেষ মাথায়। তারপরও ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লাম। সিএনজি নিয়ে এখন গলির ভেতরে ঢুকতে গেলে ভাড়া দশটাকা বেশি চাইবে, কি দরকার বাজে খরচ করার? এই দু’মিনিট রাস্তা আমি হেঁটেই যেতে পারবো।

ঘড়িতে সময় দেখলাম- কেবল বাজে ১০টা, অথচ রাস্তা-ঘাট নির্জন হয়ে গেছে! গলির ভেতর দুইটা বেওয়ারিশ কুকুর ঘোড়াফেরা করছে। এছাড়া কোনো প্রাণী নেই। অনেক বাড়ির আলোও নিভে গেছে! নাহ! এই এলাকাটা ছাড়তে হবে।
বেশ গরম পড়েছে। দু’মিনিট হাঁটতেই ঘেমে অস্থির আমি, ভেজা শার্ট শরীরে লেপ্টে গেছে। যেদিন অফিস থেকে আগে আগে ফিরবো ভাবি, সেদিনই বেশি দেরি হয়! কিন্তু কি করবো? অফিসে কাজের খুব প্রেসার যাচ্ছে!

বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে গেলাম। দাড়োয়ান মতি মিয়াকে কোথাও দেখছি না, কোন চিপায় গিয়ে পড়ে আছে কে জানে? এই দিকে বাড়ির ভেতর ডাকাতি হয়ে গেলেও মনে হয় না টের পাবে! বাড়িওয়ালার কাছে মতি মিয়ার ব্যাপারে নালিশ করতে হবে।

আমি বিল্ডিং এর কেচি গেট দিয়ে ঢুকলাম। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। আমি থাকি দোতালায়। স্বামী-স্ত্রীর নির্ভেজাল সংসার। কেউ আসে না, আমরা তেমন কোথাও যাইও না। আমার স্ত্রী সিনথিয়া অবশ্য একটু নির্জনে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। কিন্তু আমার ভালো লাগে না। এই এলাকা ছাড়তে হবে, মনটা আর টিকছে না।

দরজার সামনে এসে চমকে উঠলাম। দরজা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে। কি ব্যাপার? দরজা তো এভবে খোলা থাকার কথা নয়! যে কেউ ঢুকে যেতে পারে ভেতরে। আমি আস্তে করে হাত দিয়ে দরজা খানিকটা ফাঁক করলাম। ভেতরে পা রাখলাম। আলো জ্বলছে বেডরুমে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম সেদিকে।

ঠাস করে কিছু একটা পড়ে ভাঙার শব্দ হলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। পা ঘষে ঘষে হাঁটার শব্দ পাচ্ছি। অমঙ্গল আশংকায় আমার বুকটা দুরু দুরু করছে। আবার পা টিপে টিপে এগিয়ে এলাম। উঁকি দিলাম বেডরুমে। এবার ভীষণভাবে চমকে উঠলাম! যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!

বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আমার স্ত্রী সিনথিয়া। মাথাটা ঝুলে পড়েছে বিছানার কিনারায়। দুচোখ খোলা। বুকে আমূল গেঁথে আছে একটা ছুরি। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানার সাদা চাদর। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একজন কালো টি-শার্ট আর জিন্স পড়া লোক। মুখটা কালো মুখোশে ঢাকা। বোঝাই যাচ্ছে এই লোক ডাকাত!

আমাকে দেখতে পেয়ে লোকটাও চমকে উঠলো। সে হয়তো আশা করেনি এই সময়ে কেউ চলে আসবে বাসায়। লোকটা ব্যস্ত হয়ে আশে পাশে তাকালো। সিনথিয়ার বুক থেকে ছুরিটা একটানে বের করে আনলো, তেড়ে এলো আমার দিকে।

আমি ততক্ষণে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়েছি। একপাশে সরে গেলাম মুহূর্তেই। ডাকাতের ছুরির কোপ মিস হয়ে গেলো। সে ভারসাম্য হারিয়ে দুই-তিন কদম এগিয়ে গেলো। ঐ অবস্থায় তার পিঠে গায়ের জোরে লাথি মারলাম আমি। লোকটা প্রায় উড়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে ধাক্কা খেলো। মেঝেতে পড়ে গেলো সে। আমি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তার টিশার্ট আঁকড়ে ধরলাম দুই হাতে। কিন্তু লোকটার গায়ে খুব জোর। সে জোরে একটা ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। দৌড় দিলো দরজ লক্ষ্য করে। আমি পেছনে দৌড় দিলাম। কিছুতেই পালাতে দেবো না আমি ওকে!

ধুপ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নামছে ডাকাত। আমিও তার পেছনে দ্রুত নামার চেষ্টা করছি। কিন্তু পেরে উঠছি না, লোকটার গতি আমার চেয়ে অনেক বেশি। এক লাফে তিন ধাপ নামতে গিয়ে আমার ডান পা-টা বেকায়দা ভঙ্গিতে পড়ে মচকে গেলো। তীব্র যন্ত্রণায় চোখে অন্ধকার দেখলাম। এদিকে ডাকাত কেচি গেট দিয়ে বের হয়ে এক দৌড়ে বাড়ির সামনের জায়গাটা পার হয়ে গেলো। কুত্তারবাচ্চা মতি মিয়ার এখনও কোনো দেখা নাই!

ডাকাত বেরিয়ে গেলো মেইন গেট দিয়ে, আমিও তার পিছু নিলাম। কিন্তু মচকানো পা নিয়ে সুবিধা করতে পারছি না। মাটিতে পা ফেললেই সমস্ত শরীরে ব্যাথার কামড় খাচ্ছি! কিন্তু ডাকাতকে আমি পালাতে দেবো না, কিছুতেই না! খুব কষ্টে আমি ডাকাতকে ধাওয়া করতে থাকলাম।

ডাকাত লোকটা সর্ব শক্তিতে দৌড়াচ্ছে। পৌঁছে গেছে গলির শেষ মাথায়। আমি মচকানো পা নিয়ে অনেক পেছনে পড়ে গেছি। আর দৌড়াতে পারছি না। ব্যথায় দু’চোখে পানি চলে এসেছে আমার! আর পারছি না। ডাকাত যদি গলি থেকে মেইন রোডে উঠে যায়, তাহলে আর কিছুতেই তাকে আটকানো যাবে না!

আমি শেষ চেষ্টা হিসেবে রাস্তার পাশ থেকে একটা ভাঙা ইটের টুকরো তুলে নিলাম। প্রাণপণে ছুড়ে দিলাম পলায়নরত ডাকাতের দিকে। আমার হাতে নিশানা এমনিতে ভালো। ইটের টুকরোটা উড়ে গিয়ে পড়লো ডাকাতের ডান কানের উপরে। ধপ করে একটা আওয়াজও হলো। ডাকাত মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো মাটিতে। আমি দৌড় থামালাম। খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে গেলাম তার দিকে।

ডাকাত মাথা তুলে আমার দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। হাতে উঠার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে গেলো আবার। জায়গা মতো আঘাত পেয়েছে!

ডাকাত কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, “ভাই, আমারে মাফ কইরা দেন!”

আমি কিছু বললাম না। দুই হাত কোমরে রেখে দাঁড়িয়ে থাকলাম ডাকাতের সামনে।

ডাকাত আবার দুই হাতে ভর দিয়ে রাস্তা থেকে ওঠার চেষ্টা করছে। কোনোমতে উঠে বসলো সে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “ভাই, আমি কাউরে কমুনা! বিশ্বাস করেন!”

ডাকাতের কথায় আমার মন গললো না। আমি দুই হাতে ডাকাতের মাথা ধরলাম। গাঁয়ের জোরে ঘোরাতেই মট করে ঘাড়ের হাড় ভাঙার আওয়াজ হলো। ডাকাতের মাথাটা ছেড়ে দিলাম। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো নিথর দেহ। রাতের আঁধারে নির্জন গলিতে কি ঘটে গেলো, কেউ টের পেলো না!

এবার আমি দেহটা টানতে টানতে মূল রাস্তায় নিয়ে গেলাম। রাস্তার মাঝখানে লাশটা রেখে অপেক্ষায় থাকলাম। অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। মিনিট পাচেকের মধ্যে একটা ট্রাক ফুল স্পিডে ধেয়ে এসে ডাকাতের দেহটা কয়েক টুকরো করে দিয়ে গেলো।

এবার আমি মোবাইল বের করলাম পকেট থেকে। ফোন করলাম রমনা থানায়-

“হ্যালো স্যার! একজন ডাকাত আমার স্ত্রীকে মেরে পালাচ্ছিলো, পালাতে গিয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়েছে…”

ফোন রেখে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম!

যাক! যা হওয়ার ভালোই হয়েছে। আমার পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী সিনথিয়াকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছি। কিন্তু লাশটা কীভাবে সরাবো বুঝতে পারছিলাম না! এখন একটা গতি হলো। ডাকাত ব্যাটাও ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ঢোকার উচিত শাস্তি পেয়েছে!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


....সমাপ্ত....


লেখক সংক্ষেপ:
নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘অ্যানালাইজেন’-এ কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প ‘কবি’ প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস ‘ইনকারনেশন’। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ‘ব্লাডস্টোন’ তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ১টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী চরিত্র ‘মাসুদরানা’ নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। এছাড়াও ‘শান’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সহ বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। অবসর সময় কাটে বই পড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ এক হয়ে দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন