কবিতা                  :          ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা
কবি                     :          শৈলেশ্বর ঘোষ
কাব্যগ্রন্থ                :          জন্মনিয়ন্ত্রণ
প্রকাশকাল             :          ১৯৬৭ ইং
রচনাকাল              :          

কবি শৈলেশ্বর ঘোষের “ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা” শিরোনামের এই রচনাটি তিনি ১৯৬২/৬৩ এর সময়ে লিখেছেন। অবদমিত যৌনতার প্রথম বিস্ফোরণ হাংরি সাহিত্যে ঘটেছিল এই রচনাটির মাধ্যমেই। এরপর ১৯৬৭ সালে ক্ষুধার্ত প্রকাশণী থেকে ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ’ গ্রন্থে কবিতাটি প্রকাশ করা হয়। বইটির দাম ছিল দুই টাকা। তারপর ১৯৬৪র সেপ্টেম্বরে এ কবিতার কারণে গ্রেফতার হন কবি শৈলেশ্বর ঘোষ। ঢোকানো হয় হাজতে। ‘অশ্লীল সাহিত্য রচনা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ’— এই ছিল অভিযোগ। তবে এ লেখার অবস্থান এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা || শৈলেশ্বর ঘোষ
ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা || শৈলেশ্বর ঘোষ

ঘোড়ার সঙ্গে ভৌতিক কথাবার্তা || শৈলেশ্বর ঘোষ


এক
বৃক্ষাকাশে কবিতা টাঙাবো না আমরা, শোবার ঘরেই গাছ সঞ্চার হয়েছে,
গাছেতে ভূমধ্যাকর্ষণ হয় চোরাচালান বোঝে— শোবার ঘরেই চলে
অহরহ বিক্ষোভ-আক্রমণ; গাছের সঙ্গেই সুদীর্ঘকাল ফলে ওঠে
ভালবাসাবাসি— কলকাতায় দশবছর খারিজ নীলাম
দরসরবরাহ নিদ্রাপ্রেমের মূল্যবৃদ্ধি— ফাটকায় হাতবদল
দিনমান হৃদয় চিৎ— দিনমানভর তেত্রিশ হিজরের গর্ভ হয়
দিনমানধরে হে ঘোড়া ভৌতিক ক্ষুধা কবিতার ।

 দুই
বহুকাল তেত্রিশ ভূতের সাথে প্রেম-সূত্রপাত বহুকাল
কোলকাতাবাংলায় খাতাপত্রে আক্ষেপ—
বহুকালধর্মলোল রাজপথে হে ঘোড়া কোথায় গেলে
একশ বালিকার বুকে তৃণগুল্ম খেয়ে কবিতা ফলন হয় !

 তিন
একশ ভাদ্রবধূ সাধ খায়, কবিতারই শুধু রক্তপাত
দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছি আমরা পেচ্ছাবখানায়
কোলকাতা গলে যায়— হৃদয়ে সঙ্গমসূত্রউৎপাত ইত্যাদি
ধোয়ামোছা হয়— ময়দা বাণিজ্য করি না হে আমরা
একশ শয়তান মিলে দিনমান ভূত হয়, কলকারখানা প্রসব করে,
একশ শয়তান মিলে কুলবধূর গর্ভপাত করে—
একশ শয়তানের বিবিধ উৎপাত তাজ্জব হয়
সারাদিনমান কবিতার হে ঘোড়া এ কি ঋতুস্রাব !

 চার
ছাব্বিশ বছরে খুব শোক হয় ছাব্বিশ বছর যেন তো নয়
ছাব্বিশ বছর নিদ্রারস পচে তবু দেখা নাই
হা লৌকিক হা অলৌকিক হা নিষ্ঠুর তবু দেখা নাই !
ছাব্বিশ বছরে কুমির ফসল নিয়ে যায়— জলপাহাড়
ফেটে যায় যানবাহন আত্মসাৎ ঘটে— ছাব্বিশ বছর
ক্ষুধাতৃষ্ণাহীন বসে আছি জুয়াচোর বেশ্যার মন্দিরে
ছাব্বিশ বছরের উপরই বলাৎকার ছাব্বিশ বছর
রক্তেই ক্রমসূত্রপাত ঘটে ভূতপ্রেত আসে
ছাব্বিশটি একান্নবর্তী বছর কোনোক্রমেই যেন নয়
হে ঘোড়া নিষ্ঠুর ছাব্বিশ বছর কেন দেখা নাই !

 পাঁচ
কোন একদিন অবাধ সংকেত বিনিময়ে
ভালবাসার নৌকায় বাদাম পরানো হয়েছিল—
২৬ বছর গুণটানা ব্যবসায়ে জেগে বসে আছি
ঘোড়া তুমি জান পরিচয় তাদের
কেননা তোমারই খুরের মারে মুছে যায় কালির ছাপ
তোমারই প্রত্যাশাময় মুখের কাছে ভেসে ওঠে,
কোনো একদিন উঠেছিল ঘাসের চুমায় বিস্মিত হৃদয়—
কোনো একদিন স্ত্রীপুরুষের চোখে মুহূর্তে লাগান হয়েছিল বলে
আজও সেই মানুষের হল না প্রস্তুতি সময়
বহুবার বহুপথে হয়েছে ফেরা তবু হায়
২৬ বাঘের মত অতিহিংস্র গর্জন শেখেনি কোন পথে
ফিরে আসা হয়— অবাধ সংকেতবিনিময়ে একদিন হয়েছিল
দেখা মার্বেল পাহাড়ের সাথে— মাদিমদ্দ দুই
বেহদ্দ বেড়ালের থাবা জানতে পেরেছিল,
পাখীই কেবল ফিরে আসে ঘরে— বারংবার ২৬ বছর
দূর থেকে ছুটে আসে পশমের বল বিছানার কাছে
দেখা যায় সমুদ্রময় গড়ে উঠছে ত্রস্ত পোতাশ্রয়
হে ঘোড়া প্রত্যাশালিপ্ত সিঁড়ির উপরেই দেখা হবে ।

 ছয়
হে ঘোড়া তোমার হৃদয়েই ছিল ভালবাসা
মেঘময় বিছানো ছিল পরমায়ুর খোল
ঘনিষ্ট চুমায় ছিঁড়ে যায় ব্লাউজশায়া ডুবোজাহাজ
ব্যভিচারবোধ ভরে তোলে ইতিহাসআদালত—
জানা গেছে বয়সকালে আমাদের ঊরুদেশময়
ভৌতিক সমুদ্র জাগে— জানা গেছে জুয়ার টেবিলেই
হয়েছিল যুদ্ধের জ্ঞান— জানা গেছে জন্মের নির্বাচন
হয়নি সফল— জানা গেছে জাহাজের পরাশ্রয়ীটান
গোয়েন্দারও কাপড় খুলে দ্যায়— হে ঘোড়া 
তোমার নিশান আমার মুখের উপর চুম্বনতিথির
মত উড়ে আসে— রক্তের অভিমান বেশ্যার পেটে
ছেলে জন্মায়— চারদিকে দন্তোদ্গম উৎসবের আলো
খুরশব্দ লিখা টেবিলে তবু সহচর জেগে বসে আছি ।

 সাত
তিন ঘণ্টা বসে আছি বেদনাপ্রধান চিঠি পকেটে
কোলকাতা চৌরঙ্গী লিখা এমন নিস্তব্ধ বন্দুক হাতে
কতদিন ঘুমজাগা প্রহরায় কাটাই— দশমনুমেণ্ট
ময়দান পকেটমারে এক একর জমির দাম !
তিন ঘণ্টা সবুজপল্লী অনুধাবনীয়তার হাতে মার খায়
হাঁস তবু উড়িয়েছিলাম গায়ে পড়া আধুনিক-জামা
পাড়াগাঁর স্ত্রীলোকের স্বামীসম্ভাষণ পূর্ণিমাগভীরে
হাজার শিশুর হাসিখেলা আক্রমণ কোলকাতা
তিনঘণ্টায় সাতসমুদ্রতল, মনুমেন্টময়দান
মেঘের পেটে যায়, বেদনাপ্রধান চিঠি পকেটে
এক একর জমির বিক্ষোভ দিনমান— বন্দুক
হাতে রাতজাগাপ্রহরায় হে ঘোড়া কতদিন কাটাই !

 আট
তিন বিধবা গর্ভ করে শুয়ে আছি পুণ্য বিছানায়
হে ঘোড়া, কোলকাতায় তিনগেলাস স্বাস্থ্যসুধাপান
পরিত্রাণহীনতা হাসে পুরুতের নামাবলীগীতা
ধাতুধর্ম সাতবার গড়াগড়ি খায়— তিন বিধবা
দক্ষিণসাগরে বায়ুসেবী বেড়াতে যায়—
তেত্রিশ দেবতা ফলভোগী— চাষা মাশুল গুণে দেয়
পুণ্যচোর সদর দরজায়— গৃহস্থের মেয়েরা সব
আইবুড়ো ঘুম জেগে সারারাত খিল তুলে দেয়
পুরাণগীতা পড়ে কুলধর্ম রক্ষা শেখে, ঘোড়া তুমি
রেশমগুটিপোকায় প্রেম দিলে হৃদয় কোথায় !
গীতাধর্ম পাঠ শুনে কুকুরের অণ্ডকোষে ধাতুমুদ্রা জমে
ঘোড়া তুমি তেত্রিশ কোটি পুণ্যের গায়
নামাবলী লেখ হৃদয় কোথায় ?
তিন বিধবা গর্ভ করে শুয়ে আছি পুণ্যধর্মহীন
রহস্য তলায় হে ঘোড়া
পরিবহনযোগ্য রাস্তা বহুদূর শূন্য পড়ে আছে !

লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন