উপন্যাস        :         পদ্মমির 
লেখিকা         :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
Bangla Golpo পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ

পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব - ১)

ভয়াতুর ষোড়শী মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল, 'কে আপনি? খালি বাড়িতে কেন ঢুকেছেন?' কালো ছায়াটি থেকে কোনো জবাব না পেয়ে পুনরায় ভেজা কন্ঠে বলল, 'বলুন না, কে আপনি?'

হঠাৎ একটি ম্যাচের কাঠি জ্বলে উঠল। সেই আলোয় দুটি গভীর কালো চোখ বিভ্রম নিয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। শীতল, স্পষ্ট কণ্ঠে চোখের মালিক বলল, 'আমির হাওলাদার।'

দৈবাৎ দমকা হাওয়ায় আগুনের শিখা নড়ে ওঠে। হলুদ আলোয় আমির আবিষ্কার করে, পদ্মজার দুই চোখ বেয়ে রক্ত নির্গত হচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার পূর্বে কতগুলো কালো হাত অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরে পদ্মজাকে; টেনে নিয়ে যেতে থাকে অন্ধকার গহব্বরে। আমির পিছু নিতে গিয়ে টের পেল কেউ তাকে ধরে রেখেছে। সে প্রাণপণে ছোটার চেষ্টা করে। গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে, 'পপদ্মাবতী'।

ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আমির। ওর হৃৎপিণ্ডের কম্পন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চলছে। শরীর থেকে দর দর করে ঘাম ঝরছে। বিন্দু বিন্দু ফোঁটার মতো ঘাম জমাট বেঁধে রয়েছে চিবুকে! অসহিষ্ণু চোখে ডানে-বামে তাকিয়ে নিজেকে একটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে আবিষ্কার করল। স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে পেল, দুই সপ্তাহ ধরে ও কুয়েতে আছে। এতক্ষণ তাহলে দুঃস্বপ্ন দেখছিল! আমির দুই হাতে মুখ ঢেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুকের ভেতর কী এক অঙ্কিতা বিরাজ করছে! কেমন আছে পদ্মজা?

আমির হাত বাড়িয়ে বালিশের নিচ থেকে একটা ছবি বের করল। ছবিতে - ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে বই পড়ছে পদ্মজা, তার লম্বা বিণুনি মেঝে ছুঁইছুই। পরনের শাড়ি গোলাপি রঙের। কত সুন্দর নারী সে; কী ভীষণ মায়াবী!


ছবিটির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমির সিদ্ধান্ত নিল, দুইদিনের মধ্যে দেশে ফিরবে। আরো এক সপ্তাহ কুয়েত থাকার কথা ছিল কিন্তু পদ্মজার শূন্যতা ক্রমে তাকে উম্মাদ করে তুলছে। হুটহাট বিষণ্ণ হয়ে পড়ছে। আর দূরে নয়, দ্রুত ফিরতে হবে।

তখন মধ্যরাত। দুটি বেডরুম ও ডাইনিং, ড্রয়িং নিয়ে
এপার্টমেন্টটি। আমির যে রুমটিতে আছে, সেটি সাদা
রঙের; রুমে বিশাল ডাবল বেড। বিছানার চাদর সাদা। রাতে এপার্টমেন্টে ফিরে গোসল সেড়ে রোব পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। জাগল দুঃস্বপ্ন দেখে। সিগারেট হাতে নিয়ে কাচের বিশাল জানালার নিকটে গিয়ে দাঁড়াল আমির। তখন দরজায় টোকা পড়ে, উর্দু ভাষায় ভেসে আসে, 'আসতে পারি?'

আমিরের অনুমতির অপেক্ষা করল না নারীটি। দরজা ঠেলে ভেতরে চলে এলো। রুমে তখন আবছা আলো। তার পরনে ঘুমের ছোট পোশাক। পোশাক বললেও ভুল হবে, এক টুকরো কাপড়। রক্ত উষ্ণ করে দেয়ার মতো সুন্দর সে। তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, সে বিখ্যাত ইয়াকিসাফির রক্ষিতা। 

ইয়াকিসাফি ঔষধ শিল্পের সেরা দশ ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন। তার কোম্পানির শাখা রয়েছে একশোরও অধিক দেশে। এ সবকিছুর আড়ালেও রয়েছে তার আরেকটি রাজত্ব; বিশ্বের বৃহৎ মাদক ল্যাব। যেখানে মাদক প্রস্তুত করা হয়। তার অনেকগুলো ল্যাবের মধ্যে প্রধান ল্যাবটি তৈরি করা হয়েছে একটি দ্বীপের বহু বছরের পুরনো বাড়ির বেজমেন্টে। সেখানে কাজ করে ছয়শ'রও অধিক কর্মচারী।

ইয়াকিসাফি দেখতে মাঝারি আকারের। চওড়া কাঁধ। গায়ের রং ফর্সা, খাড়া নাক, ধূসর চোখে ঠিকরে পড়ে বুদ্ধিমত্তা। অপরাধ জগতের মানুষ তাকে হাস্তান নামে চেনে। খুব কম মানুষই তার আসল নাম এবং পরিচয় জানে। যারা জানে, তারা ইয়াকিসাফির বিশ্বস্ত ও পছন্দের। তিনি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মাদক প্রস্তুত করা কর্মচারীদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিটি ল্যাবে একটি করে হেরেমের ব্যবস্থা করবেন। সেখানে থাকবে অসংখ্য সুন্দরী নারীরা। যাদের এই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজীবনের জন্য চলে আসতে হবে। কখনো সেই ল্যাব থেকে ফিরতে পারবে না। যেচে কোনো নারী এই শর্ত মেনে নিবে না। ইয়াকিসাফির প্রয়োজনের কথা কানে যেতেই বেশ কয়েকটি দেশের নারী ব্যবসায়ী এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে একজন আমির হাওলাদা। বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা কি অবহেলা করা যায়?

কুয়েত আসতে তার কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। ফলস্বরূপ সুযোগটি অন্য আরেকজন প্রায় ছিনিয়েই নিচ্ছিল কিন্তু শেষ অবধি নিজের বুদ্ধিমত্তা ও চতুরতা দিয়ে সুযোগটি নিজের করে নিয়েছে। ইয়াকিসাফির সঙ্গে এটা তার পঞ্চম ডিল!

আমির কিছু বলার পূর্বে মেয়েটি তার কাছে এসে, বুকে এক হাত রেখে কামুক চোখে তাকাল। আমির সিগারেট জ্বালাতে অন্যদিকে ফিরতেই মেয়েটি পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল ঘাড়ে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।

 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন