উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৫)

সকালে নজরুল দোকানে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। নিজের বাইকটা বের করে তরুকে আর তার মেয়ে নাজিয়াকে ডাকলো।নজরুলের একটা মাত্র মেয়ে প্রথম স্ত্রীর ঘরে। নাজিয়া বাড়ির কাছাকাছি একটা স্কুলে পড়ে ক্লাস ১০ এ।
প্রতিদিন নিজেই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসে।আজ থেকে দুই মেয়েকে দিয়ে আসবে।
নজরুল ব্যবসায়ী মানুষ, খুব যে বোকা লোক তা না।নজরুল ব্যালেন্স করে চলতে চায়।সৎ মা যে সবসময় ভালো হবে তার গ্যারান্টি কই?
এজন্য মেয়ের নামে কিছু সম্পদ লিখে দিয়েছে নজরুল।
ব্যবসায় করে অর্থসম্পদ কম করে নি।
আল্লাহ তাকে সফলতা দিয়েছে সব ক্ষেত্রেই।সর্বক্ষেত্রে তাই নজরুল শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর।
নাজিয়ার স্কুলের বেশ কিছুটা পরে তরুর স্কুল।আলমগীর দুই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেলো।আলমগীরের মন আজ খুব খুশি।রাবেয়াকে আজকে কেমন আনন্দিত লাগছে।তরুকে ছাড়া দুনিয়ার সব সুখ রাবেয়ার পায়ের নিচে এনে দিলেও রাবেয়া এতটা খুশি হতো না।
সকালে কি সুন্দর নিজ হাতে দুই মেয়েকে খাইয়ে দিয়েছে রাবেয়া।নজরুলের কি যে শান্তি লেগেছিলো তখন।
নজরুল বের হয়ে যেতেই সালেহা মেজো ছেলের ঘরে গেলেন।নজরুলেরা চার ভাই,নজরুল সবার ছোট। বাকি তিন ভাইয়ের তুলনায় নজরুলের অঅর্থসম্পদ বেশি তাই সবার মনে একটা চাপা হিংসা কাজ করে নজরুলের জন্য।
সালেহা গিয়ে মেজো ছেলেকে বললো, "ঘটনা দেখছস সুরুজ?নইজ্জা কি কাম করছে?"
সুরুজ আলীর ফলের ব্যবসা। আস্তেধীরে বের হবে দোকানের দিকে।মায়ের কথা শুনে বললো, "কাহিনি বুঝো না মা?নতুন বউরে খুশি করতে এরকম করে। বউ হইছে পা মোছার পাপোশ। এরে মাথায় তোলনের তো কিছু নাই।তোমার পোলায় তো দুই কলম লেখাপড়া করছে, তবুও মাথায় জ্ঞানবিদ্যা নাই।ওরে পড়ালেখা না করাইয়া একটা কলাগাছরে পড়াইলেও ভালো হইতো।আমাগো কি বউ নাই?"
সুরুজ আলীর বউ রিনা বললো, "বুঝেন না ক্যান আরিফের বাপ,এখন সুন্দরী বউ পাইছে তো তাই এরকম তোয়াজ করে। নাজিয়ার মা রুবি তো ছিলো কালো মানুষ এখন পাইছে ধলা চামড়া। মাথা কি ঠিক আছে না-কি আপনার ভাইয়ের?"
সালেহা হাপিত্যেশ করে বললো, "এখন কি করমু ক তো বাপ।চাইছিলাম বিয়ে করাইলেও একটা বাঁজা মাইয়া করামু যাতে পোলাপান না হয়,এই মাইয়া তো বাঁজা না।যদি কোনো পোলা হয় এই ঘরে তো বুঝস নইজ্জা সব সম্পদ তোগো তিন ভাইয়ের হাত ছাড়া হই যাইবো?
ও নাকি বউয়ের নামে জায়গা জমিও দিবো কইতাছে।"
রিনা ফিসফিস করে বললো, "আম্মা,আমি খুব কামেল একটা তান্ত্রিকের সন্ধান জানি।কামরূপ কামাখ্যার থেকে আসছে উনি।ওস্তাদি কাম তার সব।"
সালেহা গলার স্বর নিচু করে বললো, "তাইলে দেরি কিসের মেজো বউ,কাইল পরশুর মধ্যে চলো যাই।"
এরপর সালেহা,রিনা,নাজমা মিলে কিছুক্ষণ বৈঠক করলো কিভাবে কি করা যায় তা নিয়ে।
রাবেয়া রান্নাঘরে বসে রান্না করছে।পুকুর থেকে বড় বড় রুই মাছ ধরা হয়েছে। মাছ ভাজতে বসে রাবেয়ার মনে পড়ে গেলো আমেনার কথআ।কম তো অপমান সইতে হয় নি আমেনার। মেয়েকে একটা মাছ দেওয়ায় কতো কথা বলেছে সেসব রাবেয়া কখনো ভুলবে না।
আনমনে কেঁদে দিল রাবেয়া।
অথচ আজ সব তরুর জন্য করতে পারছে রাবেয়া।নজরুল তরুকে এতো যত্ন করছে,রাবেয়া চেষ্টা করে তার চাইতে বেশি নাজিয়ার খেয়াল রাখার জন্য। যাতে নজরুলের মনে ও কখনো কষ্ট না যায়,নাজিয়া যাতে কখনো বলতে না পারে ঘরে সৎ মা দেখে যন্ত্রণা সইতে হয় তাকে।তরু,নাজিয়া দুজনেই রাবেয়ার কাছে সমান।
ফাইজানের কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। তরু হঠাৎ করেই কেনো এভাবে হারিয়ে গেলো?
মায়ের কাছে যাচ্ছে একটা বার কি ফাইজানকে বলে যেতে পারলো না?
কেমন অভিমান জন্মালো ফাইজানের তরুর উপর। তবে কি তরু এখনো ফাইজানকে নিজের কেউ ভাবতে পারে নি?
বন্ধুদের প্রেমিকারা খেতে গেলেও তো তাদের কাছে বলে যায়।ফাইজান ভেবে পায় না তরুর মনে কি চলছে।
বিকেলে পড়তে বসে লতাকে ফাইজান বললো, "তরু নেই বাসায়?"
লতা ঠোঁট গোল করে হাসলো।তরুর জন্য কি কষ্ট হচ্ছে না-কি!
লতার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে তরু না থাকায়।কোনো বাঁধা নেই এবার আর।
ফাইজানের গা গুলিয়ে উঠলো এরকম বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করা হাসি দেখে।
লতার ব্যবহার কেমন যেনো মনে হচ্ছে। যেনো বেপরোয়া হয়ে গেছে ও।যা খুশি করে ফেলতে পারে।
লতা বললো, "তরু তো চলে গেছে ওর মায়ের কাছে। আর আসবে না এখানে।ওখানেই থাকবে।স্কুল ও চেঞ্জ করে ফেলেছে ওর।আমাদের স্কুলে ও তো আসে না এখন আর।"
ফাইজান চমকালো।এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ ফাইজান জানে না?
তরুর দরকার মনে হলো না ফাইজানকে জানানোর?
জানাবেই বা কি করে। তরুর কাছে তো ফাইজানের ফোন নাম্বার ও নেই।
ফাইজান ভেবেছিলো আগামীকাল তরুর স্কুলে গিয়ে দেখা করবে।এখন কিভাবে দেখা হবে যদি স্কুল চেঞ্জ করে ফেলে?
ভীষণ রাগ হলো ফাইজানের।
লতাকে অংক করাতে গিয়ে বারবার ভুল করতে লাগলো তারপর রাগ করে চলে গেলো।
লতা খাটে গিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগলো। তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। এতো পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে কেনো তার বুঝতে পারছে না।
কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। তরুকে এভাবেই আস্তে আস্তে দূরে সরিয়ে দিবে লতা ফাইজানের মন থেকে,জীবন থেকে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন