উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৪)

মা মেয়ের মিলন দেখে নজরুলের মনটা ভরে গেলো।বিষিয়ে গেলো সালেহার মন।এজন্যই ছেলের বিয়েতে তেমন একটা আগ্রহ ছিলো না সালেহার।ইচ্ছে ছিলো ছোট মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে দিবে ছেলেকে আর বিয়ে করাবেন না।পরের বাড়ির মেয়ে এসে সংসার দখল করবে,সংসারে রাজত্ব করবে এটা সালেহার ভালো লাগে না।
এর চাইতে নিজের ছোট মেয়ে নাজমা এখানে থাকবে,রান্নাবান্না করবে এটাই ভালো ছিলো কিন্তু ছেলে কেনো জানি হঠাৎ করেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলো।
সালেহা থু শব্দ করে এক দলা থুথু নিক্ষেপ করলো।বেডা মানুষ মরার আগের দিন ও বিয়ে করতে চায় এইটা চরম সত্যি কথা।
রাবেয়া তরুকে বললো, "উনাকে সালাম কর,উনি তোর দাদী।"
তরু কখনো দাদা দাদীকে পায় নি।সালেহাকে সালাম করতেই সালেহা মুখ ভোঁতা করে সেখান থেকে চলে গেলো। নজরুলের ভীষণ খারাপ লাগলো দেখে। মা কেনো এরকম করছে নজরুল বুঝতে পারছে তবে মা বুঝতে পারছে না নজরুল একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তার এখনো জীবনের অনেকটা বাকি।
আর জীবনসঙ্গী ছাড়া নজরুলের চলতো না।একজন জীবনসঙ্গী শুধু বেড পার্টনার তো না,লাইফ পার্টনার ও।
শুধু যে রাতের বেলায় দরকার তা তো না।একজন জীবনসঙ্গী থাকা মানে একটা নির্ভরশীলতা থাকা,একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার মানুষ থাকা।
অন্ধকারে আলো জ্বেলে দেওয়ার মানুষ থাকা।
অথচ মা কিছুতেই বুঝতে চায় না।
নজরুল বললো, "রাবু,তরুকে খেতে দাও।ও সম্ভবত এখনো খাবার খায় নি,স্কুল থেকে ফিরতেই তো আমি নিয়ে এলাম।পথেও কিছু খেতে চাইলো না।"
রাবেয়া তরুকে নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলো। এই প্রথম রাবেয়ার মনে হলো বিয়ে হয়ে খুব একটা খারাপ হয় নি। এই যে নিজেই মেয়্রকে খেতে দিতে এসেছে তা কি এতোগুলা বছর সম্ভব ছিলো রাবেয়ার পক্ষে?
আমেনার দিকে তাকিয়ে থাকা লাগতো।অথচ এখন কেনো জানি মনে হচ্ছে সব কর্তৃত্ব রাবেয়ার।সালেহা যতই হম্বিতম্বি করুক ছেলের পেছনে দিনশেষে রাবেয়াই সব।
রাবেয়া তরুকে ভাত বেড়ে দিলো।প্লেটে গরুর কলিজা ভুনা,মাংস, সেদ্ধ ডিম।
তরু মা'কে দেখছে।রাবেয়া কিছুক্ষণ পর পর চোখের পানি মুছছে।
তরু খেতে বসলো। তার আসলেও ক্ষিধে পেয়েছে খুব।খেতে খেতে তরু বললো, "তুমি কেমন আছো মা?"
রাবেয়া একটু চমকালো মেয়ের প্রশ্ন শুনে। তারপর মুচকি হেসে বললো,"এই যে তুই আমার কাছে আছিস এখন,এখন আমি সবচেয়ে বেশি ভালো আছি।তুই কিন্তু আমার সাথেই থাকবি এখানে তরু এখন থেকে।ওই বাড়িতে আর যেতে হবে না।ওখানে তোর কেউ নেই।"
তরু মুচকি হেসে বললো, "তা কি হয় মা?ওটা আমার বাড়ি।আমার বাবার বাড়ি যে।ওই বাড়ির সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক, আমার জন্মের সম্পর্ক। এতো তাড়াতাড়ি কি সম্পর্ক চুকিয়ে দেওয়া যায়?"
রাবেয়া হতবাক হয়ে বললো, "কি বললি তুই তরু?তুই আমার কাছে থাকবি না?"
"মাঝেমাঝে বেড়াতে আসবো মা,কিন্তু একেবারে থেকে যাওয়া সম্ভব না। আমার বাবার বাড়ি ছেড়ে কিভাবে থাকবো মা?আমার বাবার যে আমি ছাড়া আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়। তার শুধু তার তরু আছে,তরুকেই তো বাবার বাড়ি থাকতে হবে যতদিন সম্ভব। তা না হলে যে আমার বাবার নামটাও বিলীন হয়ে যাবে ওই বাড়িতে।"
রাবেয়ার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো। প্রাক্তন স্বামীর কথা মনে পড়ে গেলো। কেনো মনে পড়ছে?
মেয়েটা যে স্বামীর অংশ।তরু ঠিকই বলেছে,তরুর মাধ্যমেই তো ওর বাবার নাম বেঁচে থাকবে।
কিন্তু তরু কি একা বাবার মেয়ে?এতগুলো বছর বুকে আগলে রেখেছে রাবেয়া মেয়েকে, তার কি কোনো অধিকার নেই?
মেয়ে তার কথা ভাবছে না?রাবেয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো।
নজরুল ঘরে গিয়ে বসেছে। সালেহা থমথমে মুখে সেখানে গিয়ে বললো, "তুই কি শুরু করলি?ওই মেয়েরে এইখানে আইনা উঠাইলি ক্যান তুই?"
"ওই মেয়ে কি মা?মেয়েটার সুন্দর একটা নাম আছে।তরু ওর নাম।"
"আরে রাখ তরু মরু,ওই মাইয়া এখানে আসছে ক্যান?"
"এখন থেকে এখানেই থাকবে ও মা।তাই এসেছে। আমি নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছি।ওখানে ওর মা নেই,বাবা তো হারিয়েছে অনেক আগেই।
রাবেয়ার ও এখানে মেয়েকে ছাড়া ভালো লাগবে না,মন টিকবে না।ক দরকার মা মেয়ে দুজনের কষ্ট পাওয়ার। ভালো করেছি না মা?"
"কিসের ভালো? দিন দিন কি আক্কেল কমতেছে তোর?একটা মানুষের খরচ কি কম?তুই কি কিছু বুঝস না?ওইটা ওই মেয়ের বাপের বাড়ি,এইটা ওর কার বাড়ি?"
"এটা ওর মায়ের বাড়ি মা।"
সালেহা হতবাক হয়ে গেলো শুনে। কাল আসতে না আসতে আজকে এই বাড়ি ওই মেয়ের না-কি!
ছেলে কি বিয়ে করে পুরো পাগল হয়ে গেছে!
সালেহা বললো, "কি বললি তুই?এইটা কি রাবেয়ার বাড়ি?"
"হ্যাঁ মা,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বাড়িটা আর বাজারের দুইটা দোকান আমি রাবেয়ার নামে লিখে দিবো।ওর তো ভাগ্যটাই খারাপ। যাতে আমি মারা গেলে ওকে আবার আগের বারের মতো মানুষের লাথি উষ্টা খেয়ে না থাকতে হয়।আমার মেয়ে দুইজন যে তাদের সৎ মা'কে আজীবন দেখবে তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই মা।আমার ভাইয়েরাও যে রাবেয়াকে বের করে দিবে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
একটা মানুষের জীবন আজীবন একই রকম কষ্টে কাটবে কেনো বলো?"
"তুই তোর বউয়ের নামে বাড়ি ঘর লিখে দিবি?তুই কি পাগল হইছস নাকি নজরুল? বউয়ের নামে কেউ জায়গা জমি দেয়?বিয়ে হইছে দুদিন হইছে মাত্র।"
নজরুল হেসে বললো, "রাগ কইরো না মা।তোমার নামেও কিন্তু আমার বাপের অনেক জায়গা জমি কিনছে।যেগুলোর আয় এখনো তোমার দখলেই আছে।আমার বউ দুই দিন হইছে আসছে দেখে কি সে বউ না?কবুল বলার সাথে সাথে রাবেয়া আমার মানুষ হয়ে গেছে মা আজীবনের জন্য। রাবেয়া যদি প্রতারণা করে তো তার জবাব সে আল্লাহর কাছে দিবে।আমি আল্লাহকে বলতে পারবো আমি আমার দিক থেকে কোনো কমতি রাখি নি।"
সালেহা কি বলবে ভেবে পেলো না। ছেলের মাথা যে পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে বুঝতে পারছে সালেহা।
মনে মনে বললো, "এই পেত্নী তো ভালো করে আছর করছে আমার ছেলেরে।এই পেত্নী তাড়ানোর ঔষধ আমার জানা আছে।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন