উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৬)

তরু আজকে স্কুলে আসে নি।সকাল থেকেই পেট ব্যথা ভীষণ। নজরুল রাবেয়াকে ডেকে বললো, "ওর আজকে স্কুলে যাওয়ার দরকার নাই। বাড়িতে থাক,খেয়াল রাখিও মেয়ের।"
ছোট্ট একটা কথা অথচ রাবেয়াকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিলো।কেমন আদর আদর লাগছে শুনতে। তরু নজরুলের মেয়ে না তবুও নজরুল যখন তরুকে মেয়ে বলে কথা বলে রাবেয়ার মনে হয় দুনিয়ার সব সুখ বুঝি সে পেয়ে গেছে।
তরু মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইলো। রাবেয়া মেয়ের পেটের উপর গরম সেঁক দিচ্ছে। নজরুল খানিকক্ষণ পরে আবারও এলো একটা পেপারে মোড়ানো প্যাকেট হাতে নিয়ে। কোনো কথা না বলে প্যাকেটটা রেখে চলে গেলো।
রাবেয়া দেখার আগেই তার শাশুড়ী আর ননফ ছুটে এলো নজরুল চুপিচুপি কি এনেছে তা দেখার জন্য। ভেতর থেকে ফ্রিডম স্যানেটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট বের হতেই সালেহার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবেয়ার এতো হাসি পেলো। কিন্তু হাসলো না।
নাজমা মা'কে বললো, "দেখলা মা তোমার পোলা কেমন ভেড়া হয়ে গেছে? এখন এসব প্যাড ও কিনে।লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে আছে।"
তরু বললো, "প্যাডকে এরকম নেগেটিভলি নিচ্ছেন কেনো আন্টি?একটা মেয়ের জন্য কতো গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস এটা আপনি জানেন না?"
সালেহা বললো, "খবরদার মাইয়া,গলা উঁচাইয়া কথা কইবা না।তোমাগো মা মাইয়ার লাজ লইজ্জা না থাকতে পারে আমাগো আছে।ছি ছি!
মাইয়ার শরীর খারাপের এইসব জিনিস ও আমার পোলার হাতে কিনাইতে তোমার শরম করে না?এতো বেহায়া তুমি? "
রাবেয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এরকম অপবাদের জবাব দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই।যেখানে সে কিছু বলেই নি নজরুলকে।
তরু চুপ রইলো না।উঠে বসে বললো, "আপনি আমার মা'কে এভাবে অপমান করছেন কেনো?কিসের ভিত্তিতে? আপনি কি শুনেছেন আমার মা'কে এসব কিছু আনার কথা বলতে?
না জেনে কেনো অপদস্থ করছেন তাহলে?
আর প্যাডকে আপনার কি মনে হয়?প্যাড কি যৌন উত্তেজক কিছু যে এর কথা প্রকাশ্যে বলা যাবে না?
আপনাদের মানসিকতা এতো নিচু কেনো?প্যাড একটা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। তাছাড়া আংকেলকে আমরা কেউ-ই বলি নি।আংকেল আপনাদের মতো নোংরা মানসিকতার মানুষ নয় বলেই বুঝতে পেরেছে আমার অসুবিধা কি।
উনিও একজন বাবা,আর যাদের বাবা অথবা মা যেকোনো একজন থাকে তাদের কাছে তিনি উভয়ের দায়িত্ব পালন করতে হয়।আংকেলের নিশ্চয় নাজিয়ার জন্য ও কিনতে হয়েছে যেহেতু আন্টি নেই।আংকেল নিজেই তাই মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন।আর এজন্যই উনি এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এখানে দোষের কি আছে?"
নাজমা বললো, "মা দেখলা?তেজ কি দেখলা?"
সালেহা এগিয়ে এসে বললো, "এই তেজ পানি কইরা দেওন ওয়ান টুয়ের কাম আমার বুঝলি।
পাংখা গজাইছে,অপেক্ষা কর দুইটা দিন।কা**ইটা দিমু।"
তরু চমকে গেলো শুনে। এরা কি ভয়ংকর লেভেলের নিচু মনের মানুষ। রাবেয়ার কেমন বুক কেঁপে উঠলো। এরা তরুর কোনো ক্ষতি করবে না তো?
রাবেয়ার হঠাৎ করে মনে হলো তরুর এখানে না থাকাই ভালো হবে।এরা নয়তো তার মেয়েকে শান্তি দিবে না।
ব্যাপারটা তরুও বুঝলো।এরা তাকে সহ্য করতে পারছে না।
তরু সিদ্ধান্ত নিলো দুই এক দিনের মধ্যে চলে যাবে।এমনিতেই তরু এখানে পাকাপাকিভাবে থাকতে আসে নি।এখানে তরু এসেছে মা'কে দেখতে, বেড়াতে।
কিন্তু এরা ভেবেছে তরু বুঝি স্থায়ী হতে এসেছে। যার জন্য এরা ভয় পাচ্ছে।
তরু না থাকলে যদি মায়ের সংসার সুখী হয় তবে তরু তাই করবে।মায়ের সুখ ছাড়া তরুর চাওয়ার কিছু নেই।
ফাইজান স্কুল ছুটির সময় তরুর স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মনকে কিছুতেই মানাতে পারছে না।লতার কথা মন বিশ্বাস করতে চাইছে না।তাই চলে এসেছে তরুকে দেখতে।
একে একে সবাই বের হতে লাগলো। লতাকে দেখে ফাইজান একটু আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। লতার তবুও চোখ গেলো ফাইজানের দিকে।
হেসে ফেললো মনে মনে লতা।ভাগ্য তার সহায় আছে।তা না হলে আজকে তরুও স্কুলে আসে নি আর ফাইজান ও এসেছে তরুর জন্য।
একে একে স্কুল খালি হয়ে গেলো। ফাইজান স্কুলের সামনে একটা দোকানের বেঞ্চে ধপ করে বসে পড়লো। বুকের বাঁ পাশে কিসের অচেনা এক ব্যথা তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে চিনচিন করে।
ফাইজানের কেমন একে লাগছে নিজেকে।তরু কি একেবারেই হারিয়ে গেলো!
তবে কি তরু ফাইজানকে ভালোই বাসে নি কোনো দিন?
কেনো এরকম করলো তরু?
এভাবে কেনো ছেড়ে চলে গেলো?
ফাইজান কিছুতেই তরুকে হারিয়ে ফেলাটা মেনে নিতে পারছে না।
জীবনের প্রথম এবং শেষ তো তরুকে নিয়েই ভেবেছিলো ফাইজান,তরুকে নিয়েই স্বপ্ন সাজিয়েছিলো।সেই সব স্বপ্ন তরু এভাবে ভেঙে দিলো?
নজরুল সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরলো কয়েক রকম খাবার নিয়ে। রাবেয়ার হাতে দিয়ে বললো সবাইকে দিতে।
রাবেয়া খাবার টেবিলে মোগলাই, বার্গার, জালি কাবাব সবার প্লেটে সাজিয়ে সবাইকে নাশতা করতে ডাকলো।
সালেহা আর নাজমা মুখ ভোঁতা করে এসে বসলো খেতে।
নজরুল মা বোনের মুখ অন্ধকার দেখে রাবেয়ার দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় জানতে চাইলো কিছু হয়েছে কি-না!
রাবেয়া ঠোঁট উল্টিয়ে জানালো সে জানে না।
তরু খাওয়া শেষ করে বললো, "আংকেল আমি আগামীকাল বাড়িতে চলে যাবো।অনেক দিন তো বেড়ালাম।"
নজরুল অবাক হয়ে বললো, "বাড়ি যাবে মানে?এটা কি তোমার বাড়ি না তরু?"
তরু হেসে ফেললো শুনে। তারপর বললো, "ওটা যে আমার বাবার বাড়ি আংকেল। আমার বাবার সব স্মৃতি ওখানেই আছে।"
নজরুল নরম স্বরে বললো, "এটাও তো তোমার মায়ের বাড়ি।তুমি জানো না হয়তো এই বাড়িটি এবং আমার আরো কিছু সম্পদ আমি তোমার মায়ের নাম দলিলপত্র করে দিয়েছি।তাহলে তুমি কেনো হীনমন্যতায় ভুগছো তরু?"
তরু বললো, "না আংকেল,হীনমন্যতা না।আমার মা আমাকে নিয়ে একটা সময় অনেক কষ্ট করেছে,অনেক আঘাত সয়েছে।
আল্লাহ আমার মায়ের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন হয়তো। আমার মা সেই পরীক্ষায় জয়ী হয়েছে বলে সম্ভবত আপনাকে পেয়েছে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে।
আমার এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না কিন্তু তবুও জানেন আংকেল,আমার বাবার বাড়ি আমার জন্য সব কিছু।ওখানে আমার কেউ না থাকতে পারে কিন্তু আমার বাবার সব স্মৃতি আছে। তরু না থাকলে যে আমার বাবাকে কেউ মনে রাখবে না।
এই যে কতো দিন বাবার কবর দেখতে যাই না আব্বা নিশ্চয় মন খারাপ করে আছেন।
বাবার কবরটা দেখলে কি যে শান্তি লাগে আংকেল।মনে হয় এই যে এই এখানে বাবা ঘুমিয়ে আছে।ঘুম ভাঙলেই তরুকে খুঁজবে। "
তরুর কথা শুনে নাজিয়ার দুই চোখ টলমল করতে লাগলো। মা'কে মনে পড়ছে ভীষণ। নতুন মা যতই আদর করুক তবুও দিন শেষে মনে হয় নিজের মা তো নেই।
কি এক অদ্ভুত ব্যপার এই দুনিয়ায় সব কিছুর বিকল্প হয় শুধু মা বাবার বিকল্প হয় না।
রাবেয়া আলগোছে চোখ মুছে নেয়।
নাজমা দেখে বলে, "দেখলেন মা,আমার ভাইয়ের ঘর করে আর আগের স্বামীর লাইগা কান্দে।বেহায়া মেয়েলোক।"
নজরুল রাগ করে বললো, "নাজমা,মুখ সামলে কথা বল।রাবেয়া তোর ভাবী হয়,সম্মান দিয়ে যদি কথা বলতে না পারিস তবে কথা বলবি না তবে ওকে অপমান করবি না।আমি এসব বরদাস্ত করবো না।"
সালেহা বললো, "বউয়ের গোলামী করতেছিস?এরকম ভেড়া তো আমার কোনো পোলা হয় নাই।তুই এরকম হইলি ক্যান?"
নজরুল হেসে বললো, "বউয়ের পাশে থাকা যদি গোলামী করা হয় তাহলে না হয় হলাম মা।যাই হোক তরু,যেখানে তোমার বাবার আবেগ জড়িয়ে সেখানে আমি আর কিছু বলার নেই।তবে অনুরোধ করবো মাঝেমাঝে এসে তোমার মা'কে দেখে যাবে।তোমার মা তোমাকে ছেড়ে কতটা মানসিক কষ্টে থাকবে তা তুমি নিশ্চয় জানো।কোনো কিছুকে মনে না রেখে যখন ইচ্ছে হবে চলে আসবে।"
তরু মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন