উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৭)

আমেনা বসে আছে উঠানে।হাতে ঝাড়ু।হাঁফ ধরে গেছে তার উঠান ঝাড়ু দিতে গিয়ে। এতো বড় উঠান ঝাড়ু দিতে গেলে আমেনার দম বন্ধ হয়ে আসে।
আগে রাবেয়া থাকতে সকাল বিকাল দুই নার ঝাড়ু দিতো।
উঠান বাড়ি সব ঝকঝক করতো। যতোই হোক,রাবেয়ার নিজের সংসার, মায়া ত্যাগ করা কি এতোই সোজা।
সেজন্যই বোধহয় না বললেও নিজেই ঘরদোর সব মুছে পরিস্কার করে রাখতো।
এখন অবস্থা পাল্টেছে।আমেনার শরীর এবং ধৈর্য কোনোটাই কুলোয় না।
কাজ দেখলে উল্টো মাথা গরম হয়ে যায়।
কাজ করানোর জন্য কাউকে পাচ্ছে ও না।আমেনা আজ তিন দিন পর উঠান ঝাড়ু দিচ্ছে আমেনা।
স্কুল থেকে তরু ফিরলো আজ বাড়িতে। সকালে নজরুল তাকে স্কুলে দিয়ে গেছে।
রাতে নজরুল তরুকে একটা মোবাইল এনে দিয়েছে।
এতো দামী মোবাইল তরু এই প্রথম ছুঁয়ে দেখলো।
লতার কাছে ও একটা স্মার্টফোন আছে কিন্তু তরু কখনো ছুঁয়ে ও দেখতে চায় নি।অন্যের জিনিসের উপর তরুর কখনোই কোনো আগ্রহ নেই।
এই প্রথম নিজের ফোন পেয়ে তরুর কেমন আনন্দ হচ্ছে। নজরুল সকালে আসার সময় বললো, "তোমার মা'কে প্রতিদিন ভিডিও কল দিও,তাহলে তোমার মায়ের ভালো লাগবে তোমাকে দেখলে।তোমার মোবাইলে নগদ একাউন্ট খুলে দিয়েছি,অল্প কিছু টাকা ও আছে তোমার হাত খরচ। আমি জানি আমি তোমার বাবা হতে পারবো না তরু,কিন্তু তোমার আংকেল হিসেবে,আমি আমার সাধ্যমতো তোমার জন্য কিছু করতে চাইলে আশা করছি তুমি নিষেধ করবে না।
ভেবো না আমি আবার এসব ফ্রি-তে করতে চাচ্ছি, তোমার মা আমার নাজিয়ার যেভাবে যত্ন করে তার তুলনায় আমার এসব একেবারেই নগন্য তবুও একটু চাচ্ছি যে আমার সংসার সুখী রাখছে তার মনটা যাতে আমি খুশি রাখতে পারি।তাই তুমি এসব নিয়ে কখনো কিছু মনে করো না।
আর আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো যদি তুমি যেকোনো প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাও।আমি তাহলে ভেবে নিবো একটু হলেও তোমার বাবার মতো হতে পারছি।"
তরু মুগ্ধ হয়ে শুনলো নজরুলের কথা। নিজের এতো আনন্দ হলো তরুর।ও তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নি।মা নিশ্চয় সুখী হবেন।
স্বামী একজন মেয়ের সবচেয়ে বড় সাপোর্ট, নজরুল আংকেল ঠিক থাকলে ওনার মা বোন যতোই যা করুক অসুবিধা নেই।
আমেনাকে সালাম দিলো তরু।আমেনা চমকে উঠলো তরুকে দেখে। বিড়বিড় করে বললো, "তুই এখানে? চলে এলি কেনো?"
তরু হেসে বললো, "কি বলেন চাচী,আমার বাড়ি এটা।আমার বাপের নিজের রক্ত পানি করা টাকায় করা এই বাড়ি,আমার বাড়িতে আমি আসবো। কেনো আসবো,না আসবো না তা কি আমার আপনার কাছে অনুমতি চাইতে হবে না-কি?
আপনারা উল্টো আমার কাছে পারমিশন নিবেন,আমি কেনো নিবো?"
লতা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। লতার মাথা ভীষণ গরম হয়ে গেছে তরু যখন বললো আজকে বাড়িতে চলে আসবে।
লতার চিন্তা ফাইজানকে নিয়ে। তরুর এসব চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে লতার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তরুকে ধাক্কা দিয়ে বললো, "কি বললি তুই তরু?বেশি চালাক হয়েছিস না-কি? আমার মা'য়ের সামনে দাঁড়িয়ে তুই এরকম বেয়াদবি করছিস কোন সাহসে?"
লতার হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে তরু বললো, "সাহসে না পাগল, অধিকারে।এই বাড়ির উপর সম্পূর্ণ অধিকার একমাত্র আমার বুঝলি।তোরা বলতে পারিস এক টাইপের রোহিঙ্গাদের মতো, যতোই তোরা এখন জোর জবরদস্তি করে থাকছিস দিনশেষে কাগজে কলমে সবকিছুর একমাত্র মালিক আমি সেটা ভুলে যাস না।তাই আমার অধিকার আছে কথা বলার আর অধিকার আছে বলেই আমি সাহস দেখাচ্ছি। আমাকে ঘাটাতে আসিস না কেউ,আমি ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে নই আমার মায়ের মতো। আমার মা ভয় পেতো সবাইকে তবে আমি পাই না মনে রাখিস।যেভাবে আছিস সেভাবে থাক,আমার সাথে ত্যাড়া কথা বলতে আসিস না কেউ নেক্সট টাইম। "
তরু চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। আমেনা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। তরু এসব কি বলে গেলো?
দিন দিন এই মেয়ের ভীষণ সাহস বাড়ছে।
তরু যাওয়ার সময় রুমে তালা দিয়ে গিয়েছিলো।যদিও তার রুমে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নেই তবুও দিয়েছে সবাইকে বুঝানোর জন্য যে সে খুব একটা ছাড় দেওয়ার মানুষ না।
তালা খুলতে গিয়ে তরুর হঠাৎ করেই কেমন মন খারাপ হয়ে গেলো। আগে স্কুল থেকে ফিরে প্রথমেই রুমে ঢুকে মা'কে ডাকতো তরু।মা বেঁচে আছে,অথচ তরু এখন আর চাইলেই মা'কে ডাকতে পারবে না।এতো কষ্ট হচ্ছে ভাবতেই তরুর।
কয়েকদিন আবদ্ধ থাকায় রুমের ভেতরটা কেমন ভ্যাপসা লাগছে।তরু ঢুকতেই দেখতে পায় দরজার নিচ দিয়ে ফাইজানের দেওয়া অনেকগুলো চিঠি।
মুহুতেই তরুর চেহারার রঙ পালটে যায়।এতোক্ষণ ঝগড়া করে বিক্ষিপ্ত হওয়া মনটায় কেমন প্রশান্তি নেমে আসে এক মুহূর্তেই।
বুকের ভেতর জ্বলতে থাকায় আগুনে যেনো কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে। তাকে ভালোবাসার জন্য একটা মানুষ আছে এই কথাটা ভাবলেই অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়।
সবগুলো চিঠি কুড়িয়ে নিলো তরু।প্রায় ১০-১২ দিন দেখা হয় নি,কথা হয় নি। একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো দু'জনে।
তরু মনে মনে ভাবতো তার যেমন সময় অসময়ে ফাইজানকে মনে পড়ে তেমন কি ফাইজানের ও মনে পড়ে তাকে?
তরুর বিরহে ফাইজানের ভালোবাসা কি বাড়ছে না-কি তরুকে ভুলেই গেছে কে জানে।
সঠিক মানুষকে ভালোবেসেছে তো তরু?
এখন মনে হচ্ছে না সে সঠিক মানুষকেই ভালোবেসেছে।
সবগুলো চিঠি তরু নিজের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখলো।তারপর জামাকাপড় চেঞ্জ করে রুমটা ঝাড়পোছ করতে লাগলো।
গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে তরু কাজ করছে।
তরুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে আগুন হচ্ছে লতা।কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তরুর ফিরে আসা।ফাইজানকে অন্য কেউ পেয়ে যাবে এটা লতা কিছুতেই মানতে পারবে না।
কাজ শেষ করে তরু খেতে গেলো।নিজ হাতে গিয়ে আজ খাবার বেড়ে নিলো।আমেনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমেনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে তরুর হাসি পেলো খুব।আরেকটু রাগাতে তরু আজকে মুরগির রান নিজের পাতে তুলে নিলো।সবসময়ই লতা আর লাবিব দু'জন খায় রান।
তরু জানে রান হোক বা অন্য পিস মাংস তো মাংস ই,তাতে এতো ভেদাভেদ কিসের।একটা হলেই হলো। কিন্তু আজকে জেনেও তরু ইচ্ছে করে কাজটা করলো যাতে আমেনা একটু হলে ও বুঝে যে তরু ভাগ ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে না,আর মেনে নেওয়ার ও মেয়ে না।
প্লেট নিয়ে তরু চেয়ারে বসলো। তারপর মোবাইলের ক্যামেরায় গিয়ে ভিডিও রেকর্ডার অন করে ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে মোবাইলটা একটু দূরে সরিয়ে রাখলো।
তরু জানে আমেনা এতোটা স্পর্ধা সহ্য করতে পারবে না।বিশেষ করে তার সন্তানদের খাবারে তরু ভাগ বসিয়েছে এতটা মানতে পারবে না আমেনা।
আমেনা থমথমে স্বরে বললো, "রানের এই টুকরো লাবিবের জন্য রাখছি তরু,তুই নিলি ক্যান?"
"ওরা তো সবসময়ই খায় চাচী,আমার ও অধিকার আছে রান খাওয়ার। আজকে লতা খাচ্ছে অন্যদিন রান্না করলে লাবিব একটা খাবে আমি একটা খাবো সহজ হিসাব।"
আমেনা আর সহ্য করতে পারলো না। ভারী শরীর নিয়ে থপথপ করে এসে তরু চুল চেপে ধরে বললো, "সাহস বাড়ছে খুব তোর খা**কীর মাইয়া।এতসাহস হইছে তোর আমার উপ্রে কথা কস,আমারে জ্ঞান দেস?"
তরু শান্ত রইলো। আস্তে করে আমেনার হাত ছাড়িয়ে বললো, "আমি বড় হইছি চাচাই,আমার গায়ে হাত দেওয়ার বয়স এখন আর নেই আপনার। "
আমেনা তরুর ভাতের প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো, "দুইদিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন।খুব পাখনা গজাইছে তোর মা**।আমেনারে এখনো চিনতে পারোস নাই তোরা।"
তরু মোবাইল নিয়ে আমেনার দিকে ধরলো। এরপর ভিডিও অফ করে বললো, "তুমি এতোক্ষণ যা যা করেছো আর বলেছো সব আমার কাছে রেকর্ড করা রইলো। এগুলো সব পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে চাচী।আমাকে এতো হালকাভাবে নেওয়া তোমার উচিত হয় নি।আমি ছাড় দেওয়ার মেয়ে না মনে রেখো।এতো দিন শুধু মায়ের জন্য চুপ থাকতে হয়েছে। আমার মা ভীতু মহিলা আমি না মনে রেখো।"
আমেনা থ হয়ে গেলো তরুর কথা শুনে। ভিডিও করে রেখেছে তরু?কেনো করেছে?
কি করবে এসব দিয়ে?
লতা এই নাটক দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো। কি হচ্ছে এসব?
তরুর এরকম তেজী রূপ তো লতা কখনো ভাবতেও পারে নি।
লতা বুঝতে পারলো ফাইজানকে পাওয়ার লড়াই খুব একটা সহজ হবে না তার।কঠিন হোক তবুও লতা ছাড়বে না কিছুতেই।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন