উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৮)

লতাকে পড়াতে বসেছে ফাইজান।বিমর্ষ হয়ে আছে চেহারা। এভাবে একটা মানুষ বলা কওয়া ছাড়া হারিয়ে যেতে পারে!
একটা বার ও মনে পড়লো না ফাইজানের কথা তার?
ভালোবাসা, কমিটমেন্ট সব কিছু এতো ঠুনকো!
তরু তার ভালোবাসা এভাবে ইগনোর করলো!
তরু জানে এই সময়টা ফাইজান লতাকে পড়ায়।চুপিসারে তরু এসে লতার রুমের দরজার বাহিরে কান পাতলো।
লতা আজ সাহস দেখালো কিছুটা। ফাইজান এখনো জানে না তরু এসেছে। লতা ফাইজানের হাতের উপর হাত রাখতেই শক খেলো যেনো ফাইজান।চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিলো।
ভীষণ বিরক্ত হলো লতা।এতো ঢং কিসের এই লোকের?
লতা যেনো তার বস্ত্রহরণ করেছে এমন করে চমকে উঠছে কেনো!
চেহারায় কষ্টের ছাপ ফুটিয়ে লতা বললো, "এভাবে মন খারাপ করে থাকেন কেনো ভাইয়া?পড়াতে বসে আপনার এরকম মনঃকষ্ট আমার ভালো লাগে না। জানেন আমার ইচ্ছে করে আপনার সব মন খারাপ দূর করে দিতে।আমার সব সুখ আপনাকে দিয়ে আপনার মুখে হাসি দেখতে চাই আমি।"
ফাইজান নিজের রাগ সংবরণ করে বললো, "তোমার এই উদারতা কি সব ছেলেদের জন্য হয় না-কি লতা!অন্য কারো যদি দরকার হয় তবে তাদের কষ্ট দূর করে দাও, আমার লাগবে না।আমার ভালোবাসার মানুষের সামনে এরকম হাজারটা লতা ফিঁকে লাগে আমার কাছে। এতটা সাহস দেখাতে চেও না লতা।আমার হাত ধরার মতো স্পর্ধা আর দেখিও না।আজকে হাত সরিয়ে দিলেও পরের বার যে আমার হাতের থাপ্পড় খাবে না তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না।"
লতার মুখ অপমানে লাল হয়ে গেলো।
ফাইজান উঠে দাঁড়ায়। চেয়ার টান দেবার শব্দ শুনে তরু দ্রুত সরে যায়। ফাইজান উঠে চলে যায়। আজকে আর পড়াবে না।মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে।
ফাইজান চলে যাওয়ার পর থেকে লতা বসে বসে নিজের ডান হাত দেখছে।এই হাতটা আজকে সারাদিন লতা আর ধুবে না।এই হাতে ফাইজানের স্পর্শ লেগে আছে,ফাইজানের ঘ্রাণ লেগে আছে।
লতা ডান হাতটা বুকের উপর নিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
তরুর ভীষণ রাগ হলো লতার উপর। এই মেয়েটা এতো বেহায়া কেনো?
অন্যের জিনিসের উপর নজর এদের কি যাবে না?
মনে মনে তরু বললো," যেই হাত দিয়ে আমার মানুষের গায়ে হাত দিয়েছিস দেখ সেই হাতের কি করি আমি!"
প্রায় ২০ মিনিট পর তরু এলো লতার রুমে। লতা তখনো খাটের উপর বসে কল্পনার রাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে ফাইজানকে নিয়ে। তরু হেসে বললো, "লতা কি করছিস?"
লতা মুচকি হেসে বললো, "কিছু না।"
তরুও মুচকি হাসলো। তারপর বললো, "শোন না,তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি আমি।"
কৌতূহলী হয়ে লতা তাকালো তরুর দিকে। দুই চোখে কৌতূহল উপচে পড়ছে তার।তরু মুচকি হেসে বললো, "চোখ বন্ধ কর,সারপ্রাইজ। "
লতার সরল মন বিশ্বাস করে নিলো তরুর কথা। চোখ বন্ধ করলো।তরু লতার ডান হাত টেনে নিজের কোলে রেখে টিস্যু পেপার থেকে একটা জিনিস লতার হাতের মুঠোতে ছেড়ে দিয়ে মুঠো বন্ধ করে দিলো।
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "এবার চোখ খোল।"
লতা চোখ খুলতেই তরু বললো, "সারপ্রাইজ! "
হাতের মুঠো খুলে লতা লাফিয়ে উঠলো। তরু লতার হাতের মুঠোয় একটা মরা টিকটিকি এনে দিয়েছে।লতার সারা শরীর কেমন ঘিনঘিন করতে লাগলো। চিৎকার করে লতা ছুটলো বাথরুমের দিকে। তরু এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তরু মনে মনে বললো, "আমার মানুষের সবকিছুই আমার। তার হাত ধরার অধিকার কারো নেই,আমি এক চুল ও ছাড় দিবো না আর কোনো কিছুতে।এবার বসে বসে টিকটিকির স্পর্শ অনুভব কর তুই।"
লতা কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিলো।তবুও কেমন গা গুলিয়ে আসছে তার।
হাত ধুতে ধুতে লতা থমকে যায়।তরু এই কাজটা কেনো করলো?
লতা তো ফাইজানের স্পর্শ অনুভব করছিলো অথচ এখন সেই হাতে টিকটিকির স্পর্শ!
তাহলে কি তরু জানে ঘটনা?
কিন্তু কিভাবে?ফাইজানের সাথে তরুর কথা হয় নি লতা শিওর তার মানে তরু কি লতাকে পাহারা দিচ্ছিলো!
রাগে লতার কপালের রগ দপদপ করছে।
তরু এতো চালাক!
কখনো তো বুঝতে পারে নি লতা।
রাতের বেলা ফাইজানের খাবার বেড়ে আমেনা লতাকে বললো, "যা তোর স্যারকে খাবার দিয়ে আয়।"
লতা বললো, "তরুকে বলো আমি পারবো না।"
তরু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো লতার দিকে। উদ্দেশ্য কি লতার?
আমেনার বলা লাগলো না তরু নিজেই ট্রে তুলে নিলো হাতে।তরু যাওয়ার পর মুহূর্তেই লতা উঠে গেলো তরুর পেছন পেছন। লতা ১০০% শিওর হতে চায় ফাইজান আর তরুর ব্যাপারটায়।
তাই তরুকে পাঠিয়েছে।
দরজায় নক হতেই ফাইজান বললো, "দরজা খোলা।"
তরু ভেতরে ঢুকে টেবিলের উপর ট্রে রাখতেই ফাইজান চমকে তাকায়।
তরু এসেছে!
স্বপ্ন দেখছে না তো!
দুই চোখ কচলে নেয় ফাইজান।
না সত্যি তরু এসেছে।
এক মুহূর্ত দেরি না করে শক্ত করে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় তরুকে ফাইজান।তরু বাঁধা দিলো না।
অভিমানী সুরে ফাইজান বললো, "কেনো হারিয়ে গেলে এভাবে তরু?আমাকে এতো কষ্ট কেনো দিলে?কেনো বলে গেলে না?"
"এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে কোন প্রশ্নের উত্তর দিবো বলুন? "
লতা সন্তর্পণে উঠে এলো ছাদে।তরু কান খাড়া করে রইলো।মৃদু একটু শব্দ কানে আসতেই তরু ফাইজানকে ছেড়ে দিলো।একটা কাগজ ফাইজানের টেবিলের উপর রেখে বের হয়ে এলো।
লতা দেয়ালের সাথে কান পেতে রাখলো ভেতরের কথা শোনার জন্য। হুট করে দরজা খুলে তরু বেরিয়ে আসায় লতা কি করবে ভেবে পেলো না।
তরু এগিয়ে এসে বললো, "তুই এখানে কি করছিস?"
আমতাআমতা করে লতা বললো, "স্যারের কাছে এসেছি।"
"তো চাচী যখন খাবার নিয়ে আসতে বলেছিলো তখন এলি না কেনো?"
লতা বললো, "আমি একটা অংক বুঝতে এসেছি এখন।"
তরু হেসে বললো, "বই খাতা কলম কিছুই তো নেই তোর কাছে। নাকি সব মুখস্থ করে নিয়েছিস প্রশ্ন সহ?"
লতার মুখ অপমানে লাল হয়ে গেলো। লতা এই কাজটা করতো পরীক্ষার সময়। অংক মুখস্থ করে নিতো।তরু তাই তাকে লজ্জা দিচ্ছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন