উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৯)

ঘড়িতে রাত এখন ১১টা ১৭।ফাইজান কল দিলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে।
ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা কল রিসিভ করতে কিছুটা সময় নিলো।ফোনটা তার হাতের কাছেই ছিলো কিন্তু তবুও বুকের ভেতর কেমন কেঁপে উঠলো কল আসায়।
রিসিভ করতেই অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে মনে।
ফাইজানের অভিমানী সুর,"কোথায় ছিলে তরু?আকে না বলে কেনো চলে গেলে এভাবে?"
তরু হাসে।বড় তৃপ্তির হাসি তার।একটা মানুষ তার হারিয়ে যাওয়ায় চিন্তা করে এটা বারবার তরুকে আন্দোলিত করে।
মন বারবার বলে তোর এখন একটা নিজের মানুষ আছে তরু।আর ভয় নেই তোর।
তরু ভয় পায় না।
ফিসফিস করে বলে, "না গেলে তো জানতে পারতাম না আপনি আমার জন্য এতটা দিওয়ানা।আমি সবগুলো চিঠি পড়েছি জানেন।একটা চিঠি পড়ি আর আমার বুকটা আনন্দে ভরে উঠে। আমার মায়ের পর আর কেউ-ই আমার জন্য কখনো এতো চিন্তা করে নি আপনি ছাড়া। "
"আমি তোমাকে ভালোবাসি তরু।"
তরু চোখ বন্ধ করে ফেলে।দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে।রাতে খাবার দিয়ে আসার সময় তরু কাগজে নিজের ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে এসেছিলো ফাইজানকে।
বাকি রাত দুজন কাটিয়ে দিলো গল্প হাসি গানে।
প্রেয়সীকে খুশি করতে নিজের বেসুরো গলায় গান গেয়ে শোনালো ফাইজান।
তরু খিলখিল করে হাসলো খুব।
পরদিন সকালে স্কুল যাওয়ার সময় তরুর সাথে লতা কথা বললো না। তরুও পাত্তা দিলো না আর।
বিকেলে লতা স্কুল থেকে ফিরে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমেনা,আলমগীর মেয়ের মাথায় পানি দিলো।লতা চোখ খোলে না।তরু হাতে পায়ে তেল মালিশ করতে লাগলো লতার।
ফাইজান পড়াতে এসে এই অবস্থা দেখে বললো, "ডাক্তার ডাকবো আংকেল?"
আমেনা হাউমাউ করে কাঁদতেছে।এরই মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় লতা বলতে লাগলো, "মেরে ফেলবো,একদম মেরে ফেলবো তোরে।কাউকে বাঁচতে দিবো না আমি।"
আমেনা সরু চোখে তাকায়।তরু ফাইজানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে ফাইজান বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমেনা বললো, "ও লতার বাপ,লতা এসব কি বলে! ওরে মনে হয় ভূতে ধরছে।"
আলমগীর ও সায় দিলো স্ত্রীর কথায়।লতা আবারও বললো, "ফাইজান কই, ফাইজান!
আমি ফাইজানকে ছাড়া বাঁচবো না।আমি আর ফাইজান সামনের বাঁশ গাছে উঠে দোল খাবো।"
আলমগীর আমেনার দিকে তাকালো। আমেনা ফাইজানের দিকে। ফাইজান তাকিয়ে আছে তরুর দিকে। কি হচ্ছে এসব!এই মেয়ে এসব কি বলছে?
আমেনা বললো, "ওরে তো মনে হয় সত্যিই ভূতে ধরছে। "
তরুর সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে। ও ইচ্ছে করে এসব করছে।তরু লতার হাতে তেল মালিশ করতেছিলো।সবার অলক্ষ্যে লতার বাম হাতে কনিষ্ঠ আঙুল নখ দিয়ে চেপে ধরলো।
লতা অনেকক্ষণ ধরে অজ্ঞান হওয়ার ভান করে শুয়ে অনেক এলোমেলো কথা বলতেছিলো।হঠাৎ করে আঙুলে ব্যথা লাগতেই চেষ্টা করতে লাগলো সহ্য করার।এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো।
তরু বিড়বিড় করে বললো, "এতো এতো মানুষ থাকতে আমার জনরে নিয়াই তোর বাঁশ গাছে ঘর করতে ইচ্ছে করে না!আমি বেঁচে থাকতে এতটা সোজা হবে না তোর স্বপ্ন পূর্ণ করা।"
লতা সোজা উঠে বসে গেলো।বাম হাতের আঙুল যেনো অবশ হয়ে গেছে তার।
তরু মুচকি হেসে তাকালো ফাইজানের দিকে।
আমেনা লতার দিকে তাকিয়ে বললো, "কিরে,এতোক্ষণ এসব কি আবোলতাবোল বকলি?"
লতা না জানার ভান করে বললো, "কই কি বলছি?"
"তোর মনে নাই?"
"না মা,মনে নাই।"
আমেনা স্বামীর দিকে তাকালো। আলমগীর স্ত্রীর মতো মোটা বুদ্ধির মানুষ না।মেয়ে মাস্টারের উপর দুর্বল সেটা বুঝতে তার দেরি হয় নি।
কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললেন, "ওঝা আনা লাগবে মনে হয়। "
লতা মনে মনে খুশি হলো। ওর অভিনয় তাইলে ভালো হয়েছে। তরু ছাড়া কেউ বুঝে নি তাইলে!
সবাই চলে যাওয়ার পর লতা পড়তে বসলো। ফাইজান গম্ভীর হয়ে পড়াচ্ছে।লতা বিরক্ত হয়ে বললো, "এরকম রোবটের মতো থাকেন কেনো স্যার?মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর আপনার ফাঁসি হবে তাই এভাবে আছেন।"
"ফাঁসি তো আরো ভালো, তোমাকে তো আমার তার চাইতে ভয়ংকর মনে হয়। কিছুক্ষণ আগে যেই নাটক দেখালে তুমি!
যদিও অভিনয় খুবই কাঁচা তবুও উপস্থাপন ভালো ছিলো।"
"আমি যা করেছি আপনাকে পেতে করেছি।আমি আরো ভয়ংকর সব করতে পারি স্যার।"

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন