উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২০)

সালেহা পানি পড়া এনে নজরুলের রুমের পানির জগের পানির সাথে মিশিয়ে দেয়।সময় সুযোগের অভাবে যাবে যাবে করেও যাওয়া হয় নি। এখন দেখলো আর দেরি করা যাবে না।
নজরুল নতুন বউ বলতে অজ্ঞান যেনো।সালেহা নাজিয়াকেও নিজের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
নাজিয়া দাদীকে সোজা বলে দেয়,"আমার মা মারা যাওয়ার পর এতো দিন গেছে কোনো দিন তো আপনি বা ফুফু কেউ একবার আমারে এসে জিজ্ঞেস করেন নি নাজিয়া তুই কেমন আছিস।
মা'র জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছি তখনও আপনারা কেউ এসে আমাকে সান্ত্বনা দেন নি।
কতো দিন না খেয়ে ছিলাম কেউ এক বারের বেশি দুই বার বলেন নি খাচ্ছি না কেনো। এখন যখন আমার নতুন মা এলো,মা প্রতিবেলায় নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দেয়।
আমার মন খারাপ দেখলে বুকে জড়িয়ে নেয়।
নিজে বসে থাকে আমার পড়ার সময়।
আমি মা'য়ের বিরোধিতা কেনো করতে যাব দাদী?কেনো অযথা আব্বাকে বল্পতে যাবো নতুন মা আমাকে জ্বালায়?"
সালেহার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নাতনির এসব কথা শুনে। বিরক্ত হয়ে বললেন,"বোকা মাইয়া,সৎ মা কোনো দিন আপন মা হয় না।তুই বুঝতেছস না,এই মহিলা তোর বাপের সব অর্থ সম্পদ দখল করে নিবো।তোর জন্য কিচ্ছু থাকবো না।"
"দাদী,আমার জন্য আব্বা আগেই জায়গা জমি দিয়ে রাখছে।তাই এসব নিয়ে আমার চিন্তা নাই।আর সৎ মা যেমন আপন মা হয় না এইটা যেমন ঠিক কথা তেমন এইটা ও তো ঠিক যে সৎ মেয়ে কোনো দিন আপন মেয়ে হয় না।আমি যদি ওনার সাথে সৎ মেয়ের মতো ব্যবহার না করি তাহলে আমার আর নতুন মা'য়ের সম্পর্ক আপন মা মেয়ের চাইতেও ভালো থাকবে। ওনাকে আমি দেখি নি এখনো আমার কোনো ব্যাপারে হিংসা করতে।ওনার মনটা ভীষণ নরম,আমি চাই সারাজীবন যাতে ওনাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসা দিতে পারি। আমার সাথে এসব কথা আর কখনো বলতে আসিয়েন না দাদী।"
সালেহা সেই থেকে রেগে আছে।
গতকালই মেজো বউ রিনাকে সাথে নিয়ে সেই কামেল তান্ত্রিকের আস্তানায় হানা দিয়ে নিয়ে আসে পানিপড়া।সাধক বাবা সারাক্ষণই চোখ বন্ধ করে থাকেন।ওনার সহযোগী আছে।বাবা শুধু পানিতে আর চিনিতে ফুঁ দেন।এই পানি পড়া নাপাক অবস্থায় ধরা যায় না।
সালেহা পানি মিশিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে অপেক্ষা করছে নজরুলের আসার।ছেলে এই পানি পান করলে আস্তে আস্তে বউকে অপছন্দ করতে শুরু করবে।
নজরুলের দোকান তিন চার এলাকার সবার চেনা।ভীষণ সদালাপী, হাসিখুশি নজরুলকে সবাই পছন্দ করে।
বিকালে দোকানে এলো তান্ত্রিকের সহযোগী সাদেক।নজরুলের সাথে কথা বলতে বলতে এক ফাঁকে বললো, "আইজকা খালাম্মা গেছে আমাগো সাধক সাহেবের আস্তানায়। আপনার নাম কইয়া দেখলাম পানি পড়া আনছে।এই সব গোপন কথা যদিও আপনেরে কওন আমার উচিত হয় নাই কিন্তু আপনি মানুষ ভালা।আপনার ক্ষতি হইবো ব্যাপারটা মানতে কষ্ট হয় তাই কইলাম।একটু চোখ কান খোলা রাইখেন,সাবধানে থাইকেন।"
নজরুল হতবাক হয়ে গেলো এসব কথা শুনে। এমনিতেও নজরুল প্রতিদিন চার কুল পড়ে শোয়,ফজরের আর মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে।
এসব পানি পড়া তেল পড়া নজরুল বিশ্বাস করে না।সে বিশ্বাস করে আল্লাহর রহমতের চাইতে বড় কেউ নাই।আল্লাহ যারে রক্ষা করার তারে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।
রাতে বাড়ি আসার পর আজকে সালেহা নিজে ছেলের জন্য শরবত বানিয়ে আনে।
নজরুল শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বললো, "কি ব্যাপার মা,রাবু কই?তুমি শরবত নিয়ে এলে যে?"
"ক্যান,বিয়া করছস দেইখা এখন কি মা'য়ের হাতে খাইতেও ইচ্ছে করে না না-কি বউ নিষেধ করে দিছে?"
সালেহার চোখের পানি দেখে নজরুল অপ্রস্তুত বোধ করে। সে এরকম কিছু উদ্দেশ্য করে বলে নি। আর মা ও কখনো নজরুলের জন্য শরবত আনে নি তাই একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
শরবত মুখে নিতেই নজরুলের মনে পড়ে গেলো মায়ের আজকে চিনি পড়া,পানি পড়া আনার কথা।
হেসে ফেলে নজরুল।হেসে মা'কে বললো, "তুমি খাও মা।আমি বাহিরে থেকে আখের রস খেয়ে এসেছি। "
নজরুল শরবতের গ্লাসটা মায়ের মুখের কাছে নিয়ে গেলো।সালেহা আৎকে উঠে সরে গেলো।
নজরুল হেসে তিন ঢোকে সবটা খেয়ে নিয়ে মা'কে বললো, "শরবত খুব ভাল হয়েছে মা।"
সালেহা খুশি হয়।রাতে খাবার টেবিলে বসে নজরুল পকেট থেকে একটা স্বর্ণের রিং বের করে রাবেয়াকে পরিয়ে দিলো।
সালেহা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। নজরুল বললো, "দোকানে দেখে খুব পছন্দ হয় মা।মনে হলো রাবেয়ার হাতে খুব সুন্দর মানাবে।"
সালেহা মনের কষ্টে আর খাবার খেতে পারলো না। দাদীর মুখখানা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে দেখে নাজিয়া হেসে ফেললো।
আলমগীর সকাল সকাল ফাইজানের আব্বাকে কল দিলো। বেশ খানিকক্ষণ কথা বলার পর আলমগীর নিজ থেকেই বললো, "ভাইজান,মেয়ে বড় হয়েছে। ভালো সম্বন্ধের সন্ধান পেলে আমাদের জানাইয়েন।আমার তো আল্লাহ দিলে জায়গা জমি, সম্পদের অভাব নেই।বাজারেও দোকান আছে।দোকান থেকে ভাড়াও পাই ভালোই।আমার সব কিছুর মালিক তো ছেলে মেয়ে দুজনেই।"
কল রাখতেই আমেনা বললো, "আপনি সোজাসাপটা ফাইজানের কথা বললেন না ক্যান?"
"আরে পাগল, আমরা নিজে থেকে কি ওদের ছেলের জন্য নিজের মেয়ের প্রস্তাব দিবো না-কি! টোপ দিয়েছি,মাছ নিজেই এসে ধরা দিবে।"
ফাইজানের বাবা ফাইজানের মা'কে ডাকলেন।ডেকে আলোচনা করলেন আলমগীরের কল এসেছে। দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলো ছেলে মেয়েদের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন