উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


২৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৫)

সারাদিন ফাইজান কল দেয় নি তরুকে।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফাইজান বড় ভাই ফয়সালকে কল দিলো।
ফয়সাল কিছুটা অবাক হলো ছোট ভাইয়ের কল পেয়ে।ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক কিছুটা শীতল ওদের।অন্যান্য ফ্যামিতে যেমন এক ভাইয়ের জন্য অন্য ভাইয়ের জান প্রাণ থাকে ফাইজানদের পরিবারে তা নেই।
অবশ্য ছোট বেলা থেকে বাবা মা সন্তানকে সেভাবে বড় করে নি বিধায় ভাইদের ও সেভাবে বন্ডিং গড়ে উঠে নি।আর তারপরও যেটুকু টান ছিলো কালাম হোসেনের কর্মকান্ডে তাও বিলোপ হয়ে গেলো।
ফাইজান ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বললো, "আমার একটা কথা বলার ছিলো ভাই।"
"হ্যাঁ বল।"
"আমি একজনকে ভালোবাসি ভাই।আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি।আব্বা ব্যাপারটা মানতে চাচ্ছে না। উনি আমার বিয়ে প্রায় ঠিক করেই ফেলেছে। আমি যেই স্টুডেন্টকে পড়াতাম ওই মেয়েটার সাথে আব্বা আমাকে বিয়ে দিতে চায়।
আমি যাকে ভালোবাসি তার বাবা নেই।মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে। আর কোনো ভাইবোন নেই।আব্বাকে তো জানেন,আব্বা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। "
"আব্বা রাজি হবে?তুই কি ভুলে গেছিস সব ফাইজান?
রুমার কথা মনে নেই তোর?তোর ক্লাসমেট ছিলো রুমা।আমি ও তো ওকে ভালোবেসেছি।কিন্তু কি লাভ হয়েছে বল।শুধু ভালোবাসা বললে ভুল হবে,রুমাকে আমি বিয়ে ও করেছি।রুমা আমার বাচ্চার মা হতো ফাইজান।শুধু আব্বা দিলো না।আব্বা আর আম্মা রুমাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে আমার বাচ্চাটাকে দুনিয়ায় আসার আগেই শেষ করে দিলো।
তারপর ওকে দিয়ে আমাকে ডিভোর্স করিয়েই ছাড়লো।
সব ভুলে গেলি তুই?
আমি কি কিছু করতে পেরেছি বল?
এতো ভালোবেসে ও কোনো প্রতিবাদ করতে পারি নি আমি।
আমাকে আবারও বিয়ে করতে হয়েছে আব্বার পছন্দ করা মেয়েকে।মেয়ের বাবার অঢেল অর্থসম্পদ আছে।আব্বা মানুষ না ফাইজান,আব্বা একজন নরপিশাচ। যিনি সন্তানের সুখ কেড়ে নিয়ে খুশি হন।"
ফাইজানের কপালের রগ দপদপ করতে লাগলো। রুমার সাথে বড় ভাইয়ের প্রেমের কথা ফাইজান জানতে পারে। মেট্রিক পরীক্ষার পর থেকে ফাইজান মেসে থাকে বলে বাড়ির এসব কাহিনি সে জানতো না।আব্বা মা তাকে জানিয়েছে রুমা অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ফয়সালকে ডিভোর্স দিয়েছে। ফাইজান তখন ইন্টারে পড়ে। প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কিত এসব ব্যাপার অতটা ভালো বুঝতো না বলে জানে না ভেতরে ভেতরে কি ঘটেছিলো। বাড়িতে না থাকায় নিজের চোখে ও দেখে নি কিছু।
বাবা মা বোনেরা যা বলতো তাই বিশ্বাস করতো।
মাথার চুল খামচে ধরলো ফাইজান।রাগে সারা শরীর কাঁপছে তার।নিজের বাবা মা'কে এতটা নিকৃষ্ট ভাবতে ও তার ঘৃণা হচ্ছে।
গমগমে গলায় বললো, "ভাই,আমি তরুকে ভালোবাসি।এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় সত্যি।আমি তরুকেই বিয়ে করবো।আপনি আমার বড় ভাই।আমি আব্বা আমাকে জানিয়েছি। আব্বা আম্মার পর আপনি পরিবারের বড় ছেলে তাই আপনাকেও আমি জানিয়ে রাখলাম।"
"আমি বড় ছেলে হতে পারলাম কই ভাই?আমাকে তো ভেড়া বানিয়ে রেখেছে আব্বা মা।আমার কি কোনো মতামত আছে কোনো বিষয়ে?
মতামত দেওয়ার জন্য আব্বা আম্মা আর আমার বোনেরাই যথেষ্ট। সব কন্ট্রোল তো ওদের হাতে।তবে আমি মন থেকে খুশি হবো তুই যদি তোর ভালোবাসার মানুষকে নিযের করে নিতে পারিস। আব্বার লোভী মনটাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আব্বার নাকের ডগা দিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে বউ করে নিয়ে আসতে পারিস যদি আমি সবচেয়ে খুশি হবো।টাকা পয়সা যা-ই লাগুক আমি আছি।"
"টাকা পয়সা লাগবে না ভাই।আমার তরুকে আমি জানি।ও শুধু ভালোবাসা পেলেই খুশি।দোয়া করবেন আমার জন্য। "
কল কেটে দিয়ে ফাইজান বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড মাথা ব্যথায় ফাইজানের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। কিছুক্ষণ পর ফাইজান টের পেলো তার গা কাঁপিয়ে জ্বর আসছে।
প্রচন্ড শীত লাগছে তার।দুই চোখ যেনো ইটের ভাটার মতো জ্বলছে লাল হয়ে।
উঠে গিয়ে একটা চাদর নিয়ে গায়ে দিবে সেই শক্তি ও পাচ্ছে না সে।
প্রচন্ড জ্বরে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে রইলো ফাইজান।
বাবা ছাড়া এই দুনিয়া কতটা কঠিন তরু প্রতি পদে পদে অনুভব করছে আজকাল। বারবার অভিমান হচ্ছে বাবার উপর। এতো তাড়াতাড়ি কেনো চলে গেলো বাবা!
মেয়েদের জীবনে বাবা হয় সবচেয়ে বেশি আপন।বাবার কাছেই সব আবদার করে মেয়েরা অথচ তরুর তো তেমন কেউ নেই।
বাবা বলে ডাকার যে তীব্র আকাঙ্খা তরুর এই জীবনে বুঝি তা আর ঘুচবে না।চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাঠঘাট ফেটে যেমন চৌচির হয়ে যায় তরুর ছোট্ট হৃদয়টাও তেমনই ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
বুকের ভেতর যন্ত্রণার আগুন তরুকে শ্বাস নিতে দিচ্ছে না ঠিক করে।
বুকের বাম পাশে কেমন দমবন্ধ করা যন্ত্রণা তরুকে পাগল করে দিচ্ছে।
অন্ধকার রুমে বসে তরু একমনে ভেবে যাচ্ছে তার ভাগ্য কেনো এরকম হলো!সারাদিন ফাইজান কল করে নি তাকে।সকালে তরু নিযে কল দিয়ে ওয়েটিং পেলো।
অভিমান করে তরু আর কল দেয় নি।ফাইজান ও আর কল করে নি তরুকে।
এই অন্ধকার রজনীতে তরু নিজের দুই চোখের পানি নিজের থেকে আড়াল করতে চাইলো।
নিজেকে নিজে বললো, "শক্ত হও তরু।তোমাকে লড়তে হবে।তুমি একজন ফাইটার তরু।এই দুনিয়ায় যাদের বাবা থাকে না তাদেরকে ফাইটার গার্ল হয়ে উঠতে হয়।
বাবা ছাড়া এই দুনিয়া মরুভূমির মতো। প্রেম ভালোবাসা সেখানে মরীচিকা ছাড়া কিছু না।
তুমি কাঁদলে কেউ তোমার চোখের পানি মুছে দিবে না।তুমি কাঁদলে মা আরো কষ্ট পাবে তরু।তাকে বুঝতে দিও না ভেতরে কোনো প্রলয় ঘটে যাচ্ছে। সে বেচারা তার নতুন সংসারে এসেছে। এখনও তোমাকে নিয়ে ভাবতে হয় যদি তবে তা এক প্রকার অন্যায় হবে তার সাথে। "
নাজিয়া আর তরু একসাথে শুয়েছিলো।হুট করে নাজিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো।তরুকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠে নাজিয়া।জড়িয়ে ধরে তরুকে জিজ্ঞেস করে, "তরু,তোর কি হয়েছে? কেনো কাঁদছিস তুই?"
কান্নার দমকে তরু কথা বলতে পারছে না।কিভাবে বুঝাবে তরু যাকে ভালোবেসেছিলো মন দিয়ে সে ভীষণ নিকৃষ্টভাবে তরুকে ছেড়ে দিয়েছে।
কিভাবে বলবে একটা প্রেমিক পুরুষ তাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো,অথচ এখন চোখ বুজলেই সে দেখতে পায় শুধু যন্ত্রণা।
নাজিয়া শক্ত করে ধরে রাখলো তরুকে।পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, "কাম ডাউন তরু।কাঁদিস না বোন।কিচ্ছু হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।এই যে আমি আছি,আমি তোর বোন তরু।তুই আমাকে বল,আমি সব ঠিক করে দিবো।তুই একা নোস এখন আর।"
তরু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাজিয়াকে।মায়ের পর,ফাইজানের পর এই প্রথম বুঝি কেউ তরুকে এতো ভালোবেসে আগলে রাখলো।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন