উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
২৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৬)
ফাইজানের জ্বর কমে পরদিন সকালের দিকে।এক দিনের জ্বরে ফাইজানের শরীর ভেঙে গেছে।বুকের ভেতর যন্ত্রণার লুকায়িত পাহাড় রেখেই ফাইজান হাসার চেষ্টা করে বন্ধুদের সাথে।
এই ব্যস্ত শহরে একটা মমতার হাত কই পাবে ফাইজান যে একটা বার কপালে হাত রেখে বলবে তোমার তো অনেক জ্বর!
কতো দিন মা এভাবে বলে না ফাইজানকে। অসুস্থ হলেই যেনো মা'কে বেশি মনে পড়ে।
আচ্ছা, বিয়ের পর তরু ও এরকম করে ফাইজানের জ্বর দেখবে?
তরুর কথা মনে হতেই মনে হলো বুকে জমে থাকা যন্ত্রণার পাহাড় বুঝি কেউ আলগোছে সরিয়ে দিলো।তরু যেনো মধ্যরাতের শিউলি ফুল, যার সুবাস ফাইজানকে উজ্জীবিত করে, ফাইজানকে স্বপ্ন দেখায়।
মেসের খালা নাশতা বানিয়ে রেখেছে। ফাইজান এক টুকরো রুটি ছিড়ে মুখে দেয়।রুটি সেঁকতে গিয়ে খালা মনে হয় অন্য ভুবনে হারিয়ে গিয়েছিলো।রুটির প্রায় ৭০% পুড়ে গেছে। ফাইজানের মুখটাও তেতো হয়ে আছে।
আবারও তরুকে মনে পড়লো।কি আশ্চর্য!
ফাইজান হেসে ফেললো। তার মন তাকে বলছে খালা রুটি পুড়িয়ে ফেলেছে বলে খেতে পারছিস না,তরু যখন পোড়া রুটি দিবে তখন তো সোনামুখ করে খাবি।
নিজের হাসিতে নিজেই চমকায় ফাইজান।আজকাল তরুকে বারবার বউ বলে ভাবতে ইচ্ছে করছে ফাইজানের।
কেনো ইচ্ছে করছে কে জানে!
মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো গতকালের কথা। ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর থেকে আর কিছুই ভালো লাগছে না ফাইজানের।আব্বা মা এতোটা নিষ্ঠুর!
ফাইজানের ভাবনার মধ্যে সাজেদা কল দিলো। মায়ের কল পেয়ে ফাইজানের মনটা কেমন বিষিয়ে উঠে।
মা তো তার সন্তানকে সবচেয়ে ভালো বুঝে।অথচ তার মা কেনো বুঝে না!
অবশ্য মায়ের দোষ কি,এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তো নারীকে সেভাবেই বশ করে রেখেছে যে স্বামীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ভুল হলেও তাই মেনে নিতে হবে।
মা কিভাবে সেই আওতার বাহিরে যাবে।
কল রিসিভ করতেই শুনতে পায় বড় আপা পান্না কান্না করছে।
ফাইজান চমকে উঠে জিজ্ঞেস করে, "আপা,কি হয়েছে? "
পান্না কান্না করতে করতে বলে, "ফাইজান ভাই,তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়।মা'য়ের অবস্থা খুব খারাপ ভাই। গত পরশু থেকে মায়ের শরীর খারাপ। তুই না-কি রাগারাগি করেছিস বাড়িতে সেসব নিয়ে ভেবেই মা অসুস্থ হয়ে গেছে। এখন তো মায়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ভাইরে মা মনে হয় বাঁচবে না।"
ফাইজান ভীষণ চমকায়।কি বলছে আপা এসব?
মা'য়ের কিছু হতে পারে না।
মা বাবার সাথে সেদিন কথা কাটাকাটির পর থেকে ফাইজান আর বাড়িতে কল করে নি।বাবা মা ও কল করে নি তাকে।
ফাইজানের এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের উপর। কেনো এরকম করলো সে!
কেনো পরে আবার কল করে মা'য়ের সাথে কথা বলে নি।মা'য়ের যদি কিছু হয়ে যায় ফাইজান কি কখনো নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারবে?
বাবা মা হাজার ও অন্যায় করলেও কি সন্তান তাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে?
ফাইজান কেনো পারছে না তাহলে?
কেনো বারবার মা'য়ের মমতার হাতটার কথা মনে পড়ছে?
ফাইজান ব্যাগে একটা দুটো টিশার্ট আর দুটো প্যান্ট নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।
শরীর ভীষণ কাঁপছে। বের হবার আগে তরুকে কল দিলো ফাইজান।গতরাতে তরুর ফোনের চার্জ শেষ হয়েছে। যেহেতু ফাইজান যোগাযোগ করে নি তাই তরুও রাগ করে ফোন চার্জে দেয় নি।
একবার, দুইবার,তিনবার...
বারবার তরুর ফোন বন্ধ পাচ্ছে ফাইজান।কপালের রগগুলো ভীষণ দপদপ করছে আবারও।
তরুর সাথে কথা না বললে ফাইজান যে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে তরু কি কখনো বুঝতে পারবে এই কথা?
বের হয়ে বাসে উঠে ফাইজান তরুকে ফোনে বারবার ট্রাই করতে থাকে।
ফাইজান বাড়িতে যেতে যেতে বিকেল হয়ে গেলো। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো ফাইজান।
মা ঠিক আছে তো?
বড় আপাকে আরো এক বার কল দিয়েছে ফাইজান কিন্তু আপা কল রিসিভ করে নি।চিন্তায় ফাইজানের হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে।
মা'য়ের যাতে কিছু না হয়।ফাইজান এই জন্মে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না নয়তো!
বাড়িতে ঢুকেই ফাইজান চমকে উঠে লতাকে দেখে। লতা উঠানে বসে বসে কানে হেডফোন গুঁজে সম্ভবত গান শুনছে।ক্যাটক্যাটে একটা লাল রঙের শাড়ি পরে বসে আছে লতা।ফাইজানের বুকের ভেতর কেমন খচ করে উঠলো।
লতা ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ফাইজান ভেতরে গেলো না আর।
দ্রুত বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। একটা রিকশা ডেকে নিয়ে সোজা স্টেশনে চলে গেলো।
একটা হোটেলে বসলো গিয়ে। সারাদিনের না খাওয়া সে।পেটের ভেতর ক্ষুধার রাক্ষস বেশ খানিকক্ষণ ধরে তোলপাড় করে চলেছে।
খালি পেটে মাথায় যে ভালো বুদ্ধি আসবে না তা তো অজানা নয়।
একটা ভাত,ডাল,ভর্তা নিয়ে ফাইজান খাওয়া শেষ করলো।জ্বর মুখে খাবার সব তিতকুটে লাগছে।
খাবার পর ফাইজান বাড়ির পাশের এক বন্ধুকে কল দিলো। কল দিয়ে বললো, "আমাদের বাড়িতে যা একটু।গিয়ে একবার ঘুরে আয়।আমাকে জানাবি কার কি অবস্থা। বিশেষ করে আমার আব্বা কি করছে।"
ইচ্ছে করেই মা'য়ের কথা না বলে আবনার কথা বললো ফাইজান।
নাজিম আর ফাইজান দুজনেই স্কুল ফ্রেন্ড। ইন্টারের পর নাজিম পড়া বাদ দিয়ে ব্যবসায় করা শুরু করে।
ফাইজানের কথা মতো নাজিম ফাইজানদের বাড়িতে যায়।গিয়ে দেখে কালাম হোসেন আর একজন শার্ট প্যান্ট পরা লোক বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।উঠানে ফাইজানের বোনেরা বসে গল্প করছে।
এই বাড়িতে আসলে নাজিম চাচীর হাতের পান খেয়ে যায় তাই ভেতরে গিয়ে সাজেদাকে ডেকে বললো, "চাচী,একটা পান খাওয়ান।"
সাজেদা বললো, "নাজিম নিব্রে,অনেক দিন পর আইলি বাবা।আসছ না এখন আর।আমার ফাইজান ও নাই,তোগোরে ও দেহি না।"
নাজিম হেসে বললো, "চাচী,ব্যবসা নিয়াই ব্যস্ত থাকি।আজকে মনে পড়লো চাচীর হাতের একটা পান খাইয়া যাই।"
সাজেদা নাজিমকে পান দিয়ে লতা কে ডেকে আনেন।নাজিমকে সালাম দিতে বলেন। লতা সালাম দিয়ে চলে যায়। সাজেদা ফিসফিস করে বললো, "মেয়েটারে দেখকি নাজিম?কেমন দেখতে?"
"দেখতে তো খারাপ না চাচী,ভালোই তো আছে।"
"আমাগো ফাইজানের হবু বউ বুঝলি।"
নাজিমের ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে।ফাইজানের হবু বউ এখানে।ফাইজান তাকে পাঠিয়েছে বাড়ির খবর নিতে।
নাজিম চাচীর সাথে কথা বলে বের হয়ে গেলো।
বাহিরে গিয়ে ফাইজানকে কল দিলো।ফাইজান বাস কাউন্টারে বসে আছে।নাজিমের কলের অপেক্ষা করছে বসে বসে।
নাজিম কল দিয়ে সব জানায় ফাইজানকে।
ধন্যবাদ দিয়ে ফাইজান কল কেটে দেয়।তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সিলিং এর দিকে তাকায়।দুই চোখ কেমন টলমল হয়ে উঠছে।বার দুয়েক চোখের পলক ফেলে ফাইজান নিজেকে সামলে নেয়।
এই সংসার নামক জীবন যুদ্ধের খেলায় কেউ আপন নয়।বাবা মা-ই সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।
পাঁচ ঘন্টা জার্নি করে ফাইজান এসেছে শুধু একটা নাটক দেখতে।
বাবা মা এতটা স্বার্থপর ও হতে পারে!
সন্তানের ইমোশন নিয়ে এভাবে নাটক করে!
একটা বার ভাবলো না এই খবরটা শুনে ছেলের কেমন লাগবে?
কোনো সন্তানের কাছে কি সহ্য হয় বাবা মায়ের অসুস্থতা?
বাস এসে গেছে।বাসে বসে ফাইজান তরুকে আবারও কল করে। এবার তরুর ফোন অন আছে।রিসিভ করতেই ফাইজান আহত স্বরে বললো, "তরু,আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি তরু।এই দুনিয়ার সব কিছুর বিপরীতে গিয়ে ও আমি তোমাকে চাই।তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না তরু।"
ফাইজানের উপর জন্ম নেওয়া সব রাগ,ক্ষোভ,অভিমান মুহূর্তেই জল হয়ে গেলো তরুর।একটা ভালোবাসি শব্দ যেনো হাজারটা আঘাতের চাইতে ও শক্তিশালী।
একটা ভালোবাসি শব্দের সামনে সব কষ্ট শূন্যে মিলিয়ে যায়।
ফিসফিস করে তরু বললো, "আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন