উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪৫)


তরুর এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তিন দিন হলো।রাবেয়ার শরীর অসুস্থ। খাওয়া দাওয়া কিছুই করতে পারে না বমির জন্য। নাজিয়া যতটা পারছে মায়ের খেয়াল রাখছে।
মর্নিং সিকনেসের জন্য রাবেয়ার ওজন ও বেশ কমে যাচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হতেই তরু মা'য়ের কাছে চলে এলো।
নাজিয়ার একার উপর বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। রাবেয়া কোনো কিছুর গন্ধই সহ্য করতে পারে না। বেশ কিছুদিন ধরে নাজিয়াই রান্নাবান্না করছে।রাবেয়া নাকে কাপড় বেঁধে দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকে।
কালাম হোসেন যখন জানতে পারলো রাবেয়ার বাচ্চা হবে তখনই কালাম হোসেনের মাথায় আগুন ধরে গেলো। সে উল্টো ভেবেছে রাবেয়ার সম্পদের মালিক তরু হবে।কিন্তু রাবেয়ার যদি এই ঘরে সন্তান হয় তাহলে আর তরু তো সব পাবে না।
তার উপর তরু তার মায়ের কাছে গেছে শুনে কালাম হোসেন তাৎক্ষণিক রাবেয়াকে কল দিলেন।
রাবেয়ার সকাল থেকে মাথা ধরা। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। নজরুল বিকেলে সিএনজি নিয়ে আসবে।
মন মেজাজ ভীষণ খিটখিটে হয়ে আছে রাবেয়ার।
বেয়াইয়ের কল দেখে প্রথমে রিসিভ করলো না।কালাম হোসেন দ্বিতীয় বার আবারও কল দিলেন।রাবেয়া কল রিসিভ করে সালাম দিলো।
কালাম হোসেন সালামের জবাব দিয়ে বললো, "কেমন আছেন আপনে?"
রাবেয়া বললো, "জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। "
কালাম হোসেন সাজেদাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।সাজেদা এসে ফোন নিয়ে বললো, "মোবাইল এইদিকে দেন,আমি কথা কই বেয়াইনের লগে।আমার কথা আছে।"
রাবেয়ার বুক কেঁপে উঠে সাজেদার কথার ভঙ্গিতে।
সাজেদা ফোন নিয়েই বললো, "ছি: বেয়াইন,এগুলো কি শুনতেছি? আমাগো তো মান ইজ্জত কিছুই আর রাখলেন না।"
রাবেয়া চমকে উঠে। মান ইজ্জত রাখলো না মানে কি?
নাজিয়া আর তরু দুজনে মিলে পেয়ারা মাখা করলো।তারপর রাবেয়ার রুমে এলো রাবেয়াকে দেয়ার জন্য।
তরু মায়ের ফ্যাকাসে মুখ দেখে নাজিয়ার দিকে তাকায়। নাজিয়া এগিয়ে গিয়ে রাবেয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখে তরুর শ্বশুর বাড়ির ফোন।নাজিয়া স্পিকার অন করে দেয়।
ওপাশ থেকে সাজেদা বলছে,"আপনাগো কি আক্কেল জ্ঞান কিছুই নাই?মান ইজ্জত কি সব খাইয়া ফেলছেন?আপনি এই বুড়া বয়সে বাচ্চা নিছেন ক্যান?আপনার কি চোখের শরম ও উঠে গেছে বেয়ান?
সতী নারীরা জীবনে ও জামাই মরলে দ্বিতীয় বিয়া বসে না।তারা স্বামীর স্মৃতি নিয়াই বাঁচে।আপনার শরীরের এতো জ্বালা যে নিজের বিয়ার উপযুক্ত মাইয়া রাইখা বিয়া বসছেন।
বিয়া বসছেন ভালো কথা, বাইচ্চা নিছেন কোন আক্কেলে?
আপনার মাইয়ার এখন বাইচ্চা নেওনের বয়স।আপনে এখন নিজেই পেট বাধাইয়া বইসা আছেন।
এলাকায় আমরা মুখ দেখাইতে পারি না লজ্জায়।মানুষ ছি ছি করে কয়,কিগো ফাইজানের শাশুড়ীর না-কি পোলাপান হইবো।
কেমন শরমের কথা ভাবেন আপনে?
ফাইজানের বউয়ের এখন শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা করার সময়, এখন সে আপনার সেবা করতে গেছে।মায়ের পোলাপান হইবো, সেই মায়ের সেবা করতে গেছে। কেমন বেহায়া, বেলাজ মাইয়া।"
তরুর হাত পা কাঁপছে থরথর করে এসব শুনে। একটা মানুষ এতটা জঘন্য হয় কিভাবে?
রাবেয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে এসব অপমান শুনে।নাজিয়া ক্রুদ্ধ হয়ে এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বললো, "আমার মা কোনো অন্যায় করে নি,আমার মা যা করছে সেটা কোনো পাপ না।আল্লাহ খুশি হয়ে আমাদের ভাই বোন দিতেছে।আপনারে কে এতো বড় সাহস দিছে আমার মায়েরে এসব কথা বলার?
আপনি কে?আপনার মতো জঘন্য, অসভ্য মহিলা এই দুনিয়াতে আল্লাহ দ্বিতীয়টা বানায় নি।আপনি কতো বড় অভদ্র হলে আমার মা'কে এসব কথা বলার জন্য কল দিতে পারেন তা আমাদের বুঝা হয়ে গেছে। আরেকটা কথা, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই শাশুড়ীর পায়ের নিচে না।আপনার সেবা যত্ন কেনো আপনার বাড়ির বউদের করতে হবে?আপনার ছেলে মেয়ে নাই?ওদের দায়িত্ব আপনার সেবা করার।বাড়ির বউদের না।আপনারা এসব তো জানবেন না।অশিক্ষিত মানুষ এসব জানে না।আর একটা দিন যদি আমার মা'কে কল দিয়ে এই ধরনের কথা বলছেন তাহলে দেখবেন আপনাদের কি করি।!"
তরু দরজার সামনে লুটিয়ে বসে পড়লো। শেষ পর্যন্ত সাজেদা তার মা'কে ও অপমান করতে ছাড়লো না।
নাজিয়া এগিয়ে গিয়ে রাবেয়ার পাশে বসে।রাবেয়ার হাত ধরে বললো, "তুমি কান্না করতেছো কেনো আম্মা।কি হইছে?এই সব কুত্তা বিলাইয়ের কথা গায়ে মাখো ক্যান?
আমরা তো জানি আমাগো ভাই/বোন কতটা দরকার। কে কি কইলো তাতে আমাগো কি?যেখানে আমাদের দুই বোনের অসুবিধা নাই,আব্বা খুশি তোমার তো তাতেই খুশি হওন দরকার।
জানো না কুত্তা কোনো দিন হাটুর উপরে কামড়ায় না।এগো কথা কানে নিয়ে লাভ নাই।"
তরু মা'য়ের পা চেপে ধরে বললো, "আমাকে ক্ষমা করে দাও মা।আমার জন্য তোমাকে অপমানিত হতে হলো।আমার জন্যই তো ওরা এতো সাহস পেয়েছে। "
রাবেয়া নিজের চাইতে মেয়ের জন্য বেশি চিন্তিত। চোখ মুছে রাবেয়া বললো, "মা রে,তুই আমার জন্য ভাবিস না।আমি এসব ভুলে যাবো।কিন্তু তুই এদের সাথে কিভাবে থাকবি?এরা যে মানুষ না।এই হায়েনার দলের সঙ্গে ভালো মানুষ থাকতে পারবে না।এরা তোর জীবনটা শেষ করে দিবে।এখনো সময় আছে মা।ভেবে দেখ।"
তরু মা'য়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি ফাইজানকে ভালোবাসি মা।ওকে ভরসা করে আমি সামানে এগিয়েছি।ও যতদিন ঠিক থাকবে ওর বাবা মা'য়ের এসব আমার কিছু করতে পারবে না।আমি ভাববো সেদিন, যেদিন ফাইজানকে ও দেখবো বদলে গেছে।তার আগে আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই আর।"
সাজেদা বেগমের নাকের পাটা ফুলে উঠেছে। সাজেদা কালাম হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললো, "শুনছেন আপনি? ফাইজানের বউয়ের কথা শুনছেন?"
কালাম হোসেন বুঝতে পেরেছেন এটা তরুর আওয়াজ না।কিন্তু আগুনে ঘি ঢালতে তিনি স্ত্রীকে তা জানান নি।সাজেদা ভেবেই নিয়েছে এসব তরু বলেছে।সাজেদা সিদ্ধান্ত নিলো তরুকে এর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দিবে।
তাৎক্ষণিক ফাইজানকে কল দিলো সাজেদা।
ফাইজান অফিসে এসেছে। বস তাকে কয়েকটা ফাইল চেক করতে দিয়েছে। মনোযোগ দিয়ে তা দেখছে।মা'য়ের কল দেখে ফাইজান কল কেটে দিয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো।মা'য়ের কল মানেই তরুর নামে বিচার আজকে নতুন কিছু না।মা বাবার উপর জিদ করেই ফাইজান তাই তরুকে তাদের বাড়িতে যেতে নিষেধ করে উল্টো তরুর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ফাইজান জানে তরুকে একা পেলে বাবা মা ওকে প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত করে দিবে।
নিজের বাবা মায়ের উপর ফাইজানের এক আকাশ বিতৃষ্ণা। তাই বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ ও কমিয়ে দিয়েছে ফাইজান।
ফাইজান কল কেটে দেওয়ায় সাজেদা আরো রাগান্বিত হয়ে গেলো। মনে মনে কসম কাটলো ফাইজান আর তরুকে একেবারে কঠিন একটা শিক্ষা দিবে সে।
এমন কষ্ট দিবে যে আজীবন মনে থাকবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন