উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫)
সন্ধ্যায় তরু জানতে পারলো ছাদে লতার মাস্টার থাকে।আগের দিন এসেছে। তরু অবাক হলো না। এই বাড়িতে তারা মা মেয়ে আগাছার মতো। যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ উপড়ে ফেলতে পারে।
সেখানে এই বাড়িতে কে আছে না-কি নেই সেটা ওদের জানার কথা না।
ফাইজান পড়াতে এসেছে। একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট পরনে।বডি স্প্রের হালকা স্মেলে লতার কেমন অস্থির লাগতে লাগলো।
কোন বডি স্প্রে এটা!
ফাইজান লতার বইয়ের পাতা উল্টে যেই পেইজে অংক সেই পেইজে এসে দেখে L+F লিখে রেখেছে লতা।
ফাইজানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো দেখে।এই মেয়েটা কি এটা ফাইজানকে ভেবে লিখেছে?
পরক্ষণে মনে হলো এই দুনিয়ায় একে তো তার নাম F দিয়ে না।আরো অনেক নাম আছে।হতেও তো পারে লতার কোনো বান্ধবীর নামের ফার্স্ট লেটার এটা।
নিজের ভাবনার জন্য লজ্জা পেয়ে নিজেই হাসতে লাগলো ফাইজান।
লতা মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।ফাইজান যাতে কিছু না বলে।
ফাইজানকে হাসতে দেখে লতার কেমন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেলো মনে হচ্ছে। ফাইজান কি লতার মনের কথা বুঝতে পেরে হাসছে!
লতার মনের বাগানে মুহূর্তেই অসংখ্য কোকিল কুহু সুরে ডাকতে শুরু করলো।
পড়ানোর ফাঁকে ফাইজান একবার ভাবলো লতাকে জিজ্ঞেস করবে ছাদে দেখা মেয়েটার কথা। পরে আবার মনে হলো কি দরকার অযথা এসব কথা বলার!
লতাকে হোমওয়ার্ক দিয়ে ফাইজান চলে গেলো।
ফাইজান চলে যাওয়ার পর লতা ছুটে নিজের রুমে গেলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। ফাইজানের কি তাকে পছন্দ হয়েছে!
লতা দেখতে খারাপ না,মোটামুটি সুন্দরী বলা চলে।
রাতে খাবার সময় লতা মা'কে বললো, "মা,ফাইজান ভাইকে খাবার দিয়ে আসি?"
আমেনা টিভির সামনে বসে ভাত খাচ্ছে। মেয়ের কথা শুনে বললো, "না তোর যাওয়া লাগবো না।তরুরে বলছি দিয়ে আসতে।"
লতার বুক কেঁপে উঠলো শুনে। তরু যাবে!
কেনো?
তরুর যদি ফাইজানকে ভালো লেগে যায়!
উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "মা কি বলতেছো,আমার স্যার আমি গিয়ে দিয়ে আসি।"
আমেনা বিরক্ত হয়ে বললো, "কি কস এসব তুই? ওরা মা মেয়ে কাজ করবে, তুই কেনো যাবি?বেশি কথা বলবি না।"
লতা বুঝতে পারছে না কি বলবে মা'কে। তরু এসে বললো, "চাচী,কি করতে হবে বলেন। আমার পড়া বাকি আছে।"
আমেনা বললো, "ওই ট্রে নিয়ে উপরে যা।ফাইজানরে খাবার দিয়ে আয়।আবার গিয়ে নিয়ে আসবি।"
তরুর এতো রাগ লাগলো শুনে। কিন্তু কিছু বললো না। খাবার ট্রে নিয়ে গেলো তরু।
দরজা বন্ধ করে ফাইজান পড়ছে।দরজায় নক করতেই ফাইজান বিরক্ত হলো। এই বাড়িতে ফাইজানের ভীষণ বিরক্ত লাগছে সবকিছু।
দরজা খুলে দেখে বিকেলে দেখা মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজান কিছু বলার আগে তরু বললো, "আপনার খাবার। খাওয়া শেষ হলে বাহিরে রেখে দিবেন সব।আমি এসে নিয়ে যাবো।"
দ্রুত পায়ে তরু চলে গেলো। ফাইজান বুঝতে পারছে না হিসেব।একই বাড়ির দুই মেয়ে,দুজনের ব্যবহার দুই রকম।
রাতে রাজীব কল দিলো রাবেয়াকে। মোবাইলের শব্দ পেয়ে তরু উঠে বসলো বিছানায়। মা'কে বললো, "কে কল করেছে মা?রিসিভ কর না যে!"
রাবেয়া কল কেটে দিয়ে বললো, "তোর বড় মামা।এখন ভালো লাগছে না দিনে কথা বলে নিবো।"
তরু বললো, "রিসিভ কর না মা।আমি ও কথা বলবো।কতো দিন কারো সাথে কথা হয় না।"
রাবেয়া কল দিলো ভাইকে।তরু লাউড স্পিকার অন করে কথা বলতে লাগলো। রাবেয়া কথা বললো না আর।তরু বুঝতে পারলো মা বিব্রত হচ্ছে।
তরু মায়ের হাত ধরে বললো, "মা,একটা কথা বলি?"
রাবেয়ার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।তরুর কথা শুনে উঠে বসে বললো, "কি হইছে?"
"মা,আমার আর এই সংসারে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমার একজন বাবা দরকার মা।তুমি আরেকটা বিয়ে করতে রাজি হও।"
রাবেয়া ভীষণ চমকালো তরুর কথা শুনে। রাবেয়ার ফ্যাকাশে মুখটার দিকে তাকাতেই তরুর বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো।
এই দুনিয়াকে মনে হয়েছে সবচেয়ে নিষ্ঠুর।
রাবেয়া গম্ভীর হয়ে বললো, "এসব কি বলছিস তুই তরু?মাথা খারাপ হয়ে গেছে! "
তরু বললো, "দেখো মা,ভুল কিছু বলি নি। এই জীবনের থেকে তোমার আরো অনেক কিছু পাওয়ার আছে।তুমি কেনো তোমার জীবন এভাবে নষ্ট করবে!আমার জন্য কেনো তুমি জীবনের সব শখ আহ্লাদ ত্যাগ করবে?
আর এমন তো না আমি এখনো ছোট বাচ্চা।
আমি এখন নিজের ভালো খারাপ বুঝতে পারি মা।"
রাবেয়া বিরক্ত হয়ে বললো, "বেশি কথা বলিস না তরু।তুই এখনো এতটা ও বড় হয়ে যাস নি যে নিজের ভালো বুঝবি।"
তরু বললো, "কিন্তু এতটুকু বড় হয়েছি যে বুঝতে পারি আমার মায়ের জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হয়ে যাবে।আমার জন্য তো জীবনের অনেকটা সময় ত্যাগ করেছো এবার নিজের জন্য বাঁচো মা।"
রাবেয়া মেয়েকে বুজে জড়িয়ে ধরে বললো, "তুই তো আমার জীবন। আমি তোর জন্যই বেঁচে আছি মা।আমি তোর বাবার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি।আমার কাউকে চাই না।"
তরু বুঝলো সময় লাগবে মা'কে বুঝাতে।
পরদিন সকালে তরু স্কুলে যাওয়ার পর মামা আর ছোট খালা আবারও এলেন।তরু মামাকে বললো তার মায়ের জন্য পাত্র দেখতে।
রাজীব তরুর কথা শুনে খুশি হলো।
বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে লতা তরুকে দিয়ে অংক করিয়ে আনলো।ফাইজান সন্দেহ নিয়ে তাকালো লতার দিকে কিন্তু কিছু বললো না।
লতাকে পড়াতে ফাইজানের ইচ্ছে করছে না। এই মেয়েটা যখন পড়তে বসে একা পড়ে ওর রুমে।
তার উপর কেমন অদ্ভুত সাজগোজ করে পড়তে বসে।ফাইজানের এসব ভালো লাগে না।
বাবা মায়ের উপর ফাইজানের রাগ হয় ভীষণ। তার উপর মেয়েটার পড়ায় কোনো মনোযোগ নেই।ফাইজানের অন্য স্টুডেন্টরা সবাই ভীষণ মেধাবী। ফাইজান বলছে না যে মেধাবী না হলে সে পড়ায় না।সে চায় স্টুডেন্ট তার থেকে পুরোপুরি পড়া আদায় করে নিক,ফাইজানকে প্রশ্ন করুক,একবার না বুঝলে বারবার জিজ্ঞেস করুক।কিন্তু এই মেয়েটা শুধু ফাইজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এতো সাজগোজ করে আসে যেনো এখান থেকে কোনো পার্টিতে জয়েন করবে।
এসব ফাইজানের বিরক্ত লাগে।লতার উৎকট সাজগোজের দিকে তাকিয়ে ফাইজানের মনে পড়ে গেলো আগের দিনের মেয়েটার কথা। একটু কাজলের ছোঁয়ায় যাকে মনে হয়েছে সবচেয়ে মায়াবী।
রাতে তরু ফাইজানের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলো সেই মুহূর্তে লতা এসে তরুর থেকে ট্রে টা কেড়ে নিয়ে বললো,"এদিকে দে।আমি যাচ্ছি স্যারের খাবার নিয়ে। মা'কে কিছু বলিস না।"
তরু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো লতার দিকে। লতা কেমন সেজেগুজে বের হয়েছে। কেউ কিছু বলতে হয় নি,তরুর নিজে থেকেই মনে হলো কোনো একটা ব্যাপার আছে মনে হয়। ভাবতে ভাবতে তরু ভেতরে চলে গেলো। আমেনা লতাকে ডাকতে এসে না দেখে তরুকে জিজ্ঞেস করলো, "লতা কই?"
তরু সত্যি কথা বলবে না ভেবেও বলে দিলো।তা না হলে আমেনা আবার তরুকে গালাগাল দিবে।
সত্য বলে ও তরু নিস্তার পেলো না।আমেনা অকথ্য ভাষায় তরুকে গাল দিতে লাগলো তার মেয়েকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে বলে।
তরু হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো চাচীর দিকে।
লতা খাবার নিয়ে সোজা ভেতরে চলে গেলো। ফাইজানের রুমের দরজা খোলাই ছিলো। ফাইজান বসে নোট করছে।লতা ফাইজানের ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে গেলো ফাইজান কি করছে।
চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো ফাইজান।এই মেয়েটার কোনো কমনসেন্স নেই!
লতা হেসে বললো, "ভয় পেয়েছেন না-কি! "
বিরক্ত হয়ে ফাইজান বললো, "তুমি এখানে কেনো?"
"আপনার খাবার নিয়ে এসেছি। আপনি খেয়ে নিন,আমি অপেক্ষা করছি। এরপর প্লেট নিয়ে যাবো।"
"তুমি যাও, আমি দিয়ে আসবো। আমার খেতে দেরি হবে।"
"সমস্যা নেই,আমি অপেক্ষা করি।"
ফাইজানের রাগ উঠতে লাগলো। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে একটা চ//ড় মারতে এরকম হ্যাংলামি করার জন্য। কিন্তু পারছে না।
সেই মুহূর্তে নিচ থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে ফাইজান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো লতার দিকে।
লতার মা কাউকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে। লতার কেমন লজ্জা লাগতে শুরু করলো মায়ের চিৎকার শুনে। ফাইজান কি মনে করবে কে জানে!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন