উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৬)
লতার আব্বা আলমগীর দেশে আসবে আগামীকাল। আমেনা রাবেয়াকে দিয়ে পুরো বাড়ি পরিস্কার করিয়ে নিলো।
উঠানে থাকা লাকড়ি,সুপারি পাতা,খোল সব ছাদে তুললো। তরুর স্কুল না থাকায় তরুও মা'কে কাজে সাহায্য করতে এলো।
রাবেয়ার মাথায় লাকড়ির বোঝা তুলে দেয় তরু।বারবার রাবেয়া ছাদে উঠানামা করে। তরুর এতো কষ্ট হলো মাকে এরকম কষ্ট করতে দেখে।
এই জীবন মায়ের প্রাপ্য ছিলো না। তরু চোখ মুছে সিদ্ধান্ত নিলো সে কিছুতেই মায়ের কথা শুনবে না।এক মাসের মধ্যে মা'কে বিয়ে দিবে।
রাবেয়া ছাদ থেকে নেমে ঢকঢক করে এক মগ পানি খেলো।তরু বললো, "মা এবার তুমি আমার মাথায় তুলে দাও,আমি ছাদে নিয়ে যাই।"
।রাবেয়া রাজি হলো না কিন্তু মেয়ে নাছোড়বান্দা। তাই তরুর মাথায় লাকড়ির বোঝা তুলে দিলো।
মাথায় নিতেই তরুর মনে হলো দুনিয়া ঘুরছে বুঝি।এতো কষ্ট হচ্ছে হাঁটতে।
অথচ মা কেমন করে সব কাজ একা একা করে। একটা বার প্রতিবাদ করে না।
তরু চোখ মুছতে লাগলো। ফাইজান নিজের রুমে থেকে সব দেখছে।এই বাড়িতে তার অনেক দিন হয়ে গেছে। অনেক কিছুই বুঝে এখন ফাইজান।
তরু মেয়েটাকে দেখে আর অবাক হয় ফাইজান।দুজন একই বাড়ির মেয়ে,অথচ দুজনের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
তরুর দিকে তাকালে ফাইজানের কেমন একটা শান্তি শান্তি লাগে।মনে হয় এই উত্তপ্ত দুপুরে তরু যেনো শীতল ছায়া। যার দিকে তাকালেই মনটা শান্ত হয়ে যায়।
বুকের এক কোণে একটা সুখের মতো ব্যথা অনুভব হয়।
যদিও এসব অনুভূতি ফাইজানের এক পাক্ষিক। কাউকে বলা যায় না এসব।ফাইজান নিজেকে বুঝতে পারে না।মাঝেমাঝে মন বিদ্রোহ করে। ছাদে যখন তরু পাথরের মতো মুখ করে জামাকাপড় নাড়তে আসে ফাইজানের ইচ্ছে করে একটা বার তরুর মুখোমুখি দাঁড়ায়।
তরুকে গিয়ে বলে মাঝেমাঝে একটু হাসলেও তো পারো তরু।
ফাইজানের ইচ্ছে করে তরুকে বলতে খাবার দিতে এলে একটু দাঁড়ায় যাতে।
অনেক কিছুই বলার আছে কিন্তু বলা যায় না।নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত না করে ফাইজান কিভাবে বলবে?
তরুর একটা লাকড়ির বোঝা নামিয়ে হাঁপাতে লাগলো। এরকম কাজ তরুর করতে হয় নি।মা সবসময় তরুকে কাজ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছে। নিজে সব সয়ে গেছে।
সারা বাড়ি ঝকঝকে তকতকে করে পরিস্কার করে ফেললো রাবেয়া।
ছাদ ঝাড়ি দিলো,ছাদের সব পাতা কুড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে রাখলো রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে বলে।
ফাইজান সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। উনি তরুর মা।সবসময় নিরবে থেকে সবটা করে যান।
রাতে রাবেয়া রান্নাঘরে বসে একা হাতে ৫ রকমের রান্না করলো।রাতের ১১টায় রান্না শেষ হলো। আলমগীর সকালেই আসবে।
সকালে উঠে আবার নাশতা করতে হবে সবার জন্য। রাবেয়ার সারা শরীর ব্যথা করছে।
তরু শুয়ে পড়েছে রাত ১০টার আগেই।খায় ও নি মেয়েটা।
রাবেয়া মেয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আল্লাহ পুতুলের মতো মেয়ে দিয়েছে তাকে।এই পুতুলের জন্য রাবেয়াকে সব সহ্য করতে হবে।
সারাদিন খাটার পর রাতে বিছানায় শুয়ে রাবেয়া টের পেলো গা গরম গরম লাগছে।মুখের ভেতরে কেমন তিতকুটে অনুভূতি।
রাতে জ্বর এলো রাবেয়ার। সারা রাত জ্বরে পুড়ে রাবেয়াকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে রাবেয়া গোসল করে নিলো।একটা কালো রঙের সুতি কাপড় পরে নিলো রাবেয়া।অনেক আগের শাড়ি এটা তার।আমেনা চার রকমের পিঠা বানাতে বলে গেলো রাবেয়াকে।তারপর গোসল করে একটা লাল রঙের শাড়ি পরলো আমেনা।তরুর বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে আমেনার জীবনে সুদিন আসতে লাগলো। রাজ্য,রাজত্ব সব পেয়ে গেলো বিনা পরিশ্রমে।
সাথে পেলো ফ্রি বাঁদি।
সকাল থেকে রাত অবধি রাবেয়া নিরবে সব কিছু করতে থাকে।
আমেনা আরাম করে শুয়ে বসে থাকে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে থাকতে শরীর স্থুলতা বেড়ে গেছে আমেনার। কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না এখন আর।
শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। নিজের রুমের বিছানার চাদর, বালিশের কাভার পালটেছে আমেনা।এতেই হাঁপ ধরে গেছে তার।
বসে বসে হাঁপাতে লাগলো আমেনা এটুকুতেই।শরীর ও এখন জমিদার হয়ে গেছে।
আলমগীর উঠানে নেমে চারদিকে তাকালো।বাড়িঘর কেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। পাঁচ বছর পর আলমগীর দেশে এসেছে।
আমেনা,লতা,লাবিব বের হয়ে এলো। লাবিব এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। আলমগীর সন্তানদের বুকে টেনে নিলো।তারপর আমেনা সহ ঘরের দিকে গেলো।
রাবেয়া রান্নাঘরে বসে সব সাজিয়ে রাখছে নাশতা। এখনো ৪ পদ রান্না করতে হবে তাকে।ঘামে পুরো শরীর জবজবে হয়ে আছে। মেয়েটা সকালেও কিছু খায় নি।রাবেয়ার সামর্থ্য নেই মেয়েকে টিফিনের জন্য টাকা অথবা খাবার দেওয়ার। সারাদিন মেয়েটা স্কুলে অনাহারে থাকবে ভেবে রাবেয়ার বুক জ্বলতে লাগলো।
যদিও আজ স্কুলে যেতে নিষেধ করেছিলো রাবেয়া মেয়েকে।তরু বললো , "লতার বাবা আসবে মা,ও স্কুল না গেলে চলবে ওর আনন্দের মুহূর্ত এখন।আমার তো বাবা আসবে না,আমার বড় চাচা আসবে।আমার জন্য এটা স্পেশাল না মা।"
রাবেয়া এরপর আর মেয়েকে কিছু বললো না। ইদানীং মেয়েটা ঝামেলা করে রাবেয়ার সাথে। রাবেয়াকে আবারও বিয়ের কথা বলে। রাবেয়ার এসব ভালো লাগে না। স্বামীর আদর ভালোবাসা যদি তার ভাগ্যে থাকতো তাহলে আল্লাহ এতো তাড়াতাড়ি বিধবা করতো না।এভাবেই ভালো আছে মেয়ে নিয়ে রাবেয়া।রাবেয়া বিয়ে করলে স্বামী পাবে কিন্তু মেয়ে তো বাবা পাবে না।
ভাবতে ভাবতে রাবেয়া চোখ মুছে নেয় আঁচল দিয়ে।
আমেনা এসে দেখে রাবেয়া কাঁদছে। মুহূর্তেই আমেনা ঝগড়া লেগে গেলো। ঝগড়া না,রাবেয়াকে গালাগাল দিতে লাগলো। আমেনার ধারণা রাবেয়া হিংসা করছে আমেনার স্বামী আছে বলে,আমেনার স্বামী দেশে আসছে বলে। এজন্য কাঁদছে।
রাবেয়া জবাব দিলো না। এসব ওর গা সওয়া হয়ে গেছে। এখন আর ভালো লাগে না।
ফাইজান সবটা শুনলো।আশ্চর্য হলো রাবেয়ার এরকম নির্লিপ্ততা দেখে।
রাবেয়া টেবিলে নাশতা দিত্ম্যে আলমগীরের সাথে দেখা করতে গেলো।আলমগীর তার ভাসুর হয়।ভাসুরকে সালাম দিলো রাবেয়া।আলমগীর প্রথমে চিনতে পারলো না রাবেয়াকে।লতাকে জিজ্ঞেস করতেই লতা বললো, "উনি ছোট চাচী আব্বা।"
আলমগীর চমকালো। রাবেয়া!
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আলমগীর রাবেয়ার দিকে।রাবেয়া চলে যাওয়ার পর আলমগীর একটা হিসেব কষে ফেললো।
আমেনা আর আলমগীর সন্তানদের নিয়ে নাশতা করতে বসলো। রান্নাঘরে রাবেয়া খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বসে রান্নার কাজ করতে লাগলো। জ্বরে সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে যেনো রাবেয়ার।
ইচ্ছে করছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে অথচ উপায় নেই।
তরু বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে দেখে আলমগীর বাহিরে একটা চেয়ারে বসে ফাইজানের সাথে কথা বলছে।তরু চাচাকে সালাম দিলো। তারপর সোজা নিজেদের রুমে চলে গেলো। ফাইজান দেখলো তরুর নির্লিপ্ত মুখ।
মেয়েটার কিসের এতো কষ্ট!
ফাইজান কি পারবে এই মুখে হাসি ফোটাতে?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন