উপন্যাস : আজ ওদের মন ভালো নেই
লেখিকা : নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ইং
লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “আজ ওদের মন ভালো নেই” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আজ ওদের মন ভালো নেই || নৌশিন আহমেদ রোদেলা |
২৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আজ ওদের মন ভালো নেই || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ২৭)
দরজার পাশে একটা মৌমাছি উড়ছে ৷ সাব্বির দরজার সামনে গাড়লের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মৌমাছির নানান কার্যকলাপ দেখছে। সম্ভবত এটা একটা পুরুষ মাছি। মৌমাছিদের জগতে নারী মৌমাছিরা যত্রতত্র উড়াউড়ি করে না। এসব অকাজের উড়াউড়ি পুরুষদের বিষয়। স্থাপত্য, পরাগ সংগ্রহে এদের রুচি নেই৷ এদের মাথাভর্তি কেবল সঙ্গমের চিন্তা। কী করে রাণী মৌমাছির কাছে ঘেঁষা যাবে, এই তাদের জীবনের প্রধান ভাবনা। রাণী মৌমাছির দেমাকও ভরপুর। সে তার পাখায় নিয়ে ঘুরে অমোঘ মৃত্যু। কোনো পুরুষ তার সাথে মিলিত হলেই সে তাকে উপহার দেয় ড্রামাটিক্যাল ডেথ। তারপরও পুরুষরা ওই রাণীকেই চায়। ওই মৃত্যুর জন্যই তাদের আমৃত্যু বাসনা। সাব্বিরের মাথায় দুষ্ট মৌমাছিদের মতো দুষ্ট চিন্তা না থাকলেও তার পরিস্থিতি মোটামুটি একই। তার রাণীও দু'চোখে আগুন নিয়ে বসে আছে। তাকে বাধ্য হয়েই সেই আগুনের মধ্যে প্রবেশ করতে হচ্ছে। সাব্বির দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বাড়ি ভর্তি মানুষ। এখানের কাউকে সে ঠিক করে চিনে না। তবে তাকে সম্ভবত সকলেই চিনে। সকালের ঘটনাটাও এতোক্ষণে সারা বাড়ি চাউড় হয়ে যাওয়ার কথা। ফলাফল স্বরূপ যার সাথেই দেখা হচ্ছে সে-ই সমবেদনার চোখে তাকাচ্ছে। কোথাও গিয়ে দু'দন্ড একলা বসবে সেই সুযোগ নেই। সাব্বিরকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চাকর প্রজাতির এক ভদ্রমহিলা সিঁড়ির গোড়ায় থমকে দাঁড়াল। চোখে-মুখে সমবেদনার সাগর আর অসীম কৌতূহল নিয়ে সাব্বিরের দিকে স্থির তাকিয়ে রইল। এই ধরনের দৃষ্টি খুবই বিব্রতকর। সাব্বির কয়েক সেকেন্ড কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পুরুষ মৌমাছির মতো ড্রামাটিক্যাল সুইসাইডেই সম্মত হলো। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে দরজা ঠেলে মিথির ঘরে ঢুকে গেল। ঘরের ভেতরটা আশ্চর্য রকম নীরব। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। মিথি বিছানার সামনে উবু হয়ে নিঃশব্দে ব্যাগ গোছাচ্ছে। দরজায় শব্দ হতেই মুখ তুলে একবার সাব্বিরকে দেখল। সাব্বির হঠাৎ করেই কোনো কর্তব্য স্থির করতে পারল না। একটা মানুষ তাকে প্রবলভাবে ঘৃণা করছে জানার পরও তাকে কী করে সম্ভাষণ জানানো যায় তা তার জানা নেই। সাব্বির তার জীবনটাকে ছোট্ট একটা গন্ডীর মধ্যে আটকে রেখেছিল। এই সত্যর গন্ডী পেরিয়ে কেউ তাকে ভালো যেমন বাসেনি। ঘৃণাও করেনি। মিথি তার জীবনে এই দুটোই বয়ে এনেছে এই প্রথমবারের মতো। দুটোই! নিজের ভাবনায় চমকে গেল সাব্বির। মিথি কী ঘৃণার সাথে সাথে তবে ভালোবাসাও এনেছিল? বুকের ভেতর থেকে কেউ একজন জানাল, আলবাৎ এনেছিল! সেদিন সন্ধ্যার কথা এতো সহজে ভুলে গেলে তুমি? মনে করে দেখো, সে তোমায় কী তীব্রভাবেই না চেয়েছিল! চেয়েছিল। চেয়েছিল বইকি! কিন্তু সবাই কী ভালোবেসেই কাছে চায়? আর যদি চায় তবে এই ভালোবাসাটাও তো ভারি অন্যায়! মিথি! প্রতীমার মতো মিথিকে কী করে ছুঁতে পারে সাব্বির? ছিঃ! তাই কী হয়?
‘ সাব্বির সাহেব?’
সঙ্গীতের রাগের মতো মোলায়েম একটা কণ্ঠে সচেতন হলো সাব্বির। এতোক্ষণ সে শূন্য দৃষ্টিতে মিথির ব্যস্ত হাতের দিকে তাকিয়ে ছিল। এবার চোখ তুলে মিথির মুখের দিকে তাকাল। মিথির ঢলঢলে পানপাতা মুখে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতার ছাপ। এই কয়েক ঘন্টাতেই চোখের নিচে পড়েছে দুশ্চিন্তার কালো দাগ। সাব্বিরকে তাকাতে দেখে মিথি একটু হাসার চেষ্টা করল। ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ একটু আগে আপনার সাথে ওইরকম ব্যবহারের জন্য আমি খুবই লজ্জিত সাব্বির সাহেব। কেন যে হঠাৎ ওরকম একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম! আপনি চাইলে আমি সকলের সামনে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি।’
খাবার টেবিলে মিথির থেকে ওমন অপ্রত্যাশিত অপমান পেয়ে যেমন বাক্যহীন হয়ে পড়েছিল; মিথির অকস্মাৎ এই হৃদয় পরিবর্তনেও তেমনই বাক্যহীনের মতো তাকিয়ে রইল সাব্বির। মিথি ব্যাগ গোছানোর কাজে সাময়িক ইস্তেফা দিয়ে কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জানালার বাইরে। ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,
‘ এই জোরজবরদস্তির সম্পর্কে সবথেকে বেশি অসুবিধা আপনারই হচ্ছে। তারওপর আমিও আপনার সাথে কী রকম অভদ্র ব্যবহার করে ফেললাম বলুন তো!’
সাব্বির প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না। জানালার সফেদ পর্দা ভেদ করে সোনালী রোদ্দুর এসে পড়ছে মিথির কাঁচা হলুদ গায়ে। নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম আর বৈশাখের গরম হাওয়ায় উড়তে থাকা চূর্ণ চুল – সামনে দাঁড়ানো রমণীটিকে করে তুলেছে কী ভীষণ স্বর্গীয়! মিথি জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে সাব্বিরের দিকে তাকাল। মৃদু হেসে বলল,
‘ এই দেখুন না, আবারও সেই আপনার কাঁধে এসেই চেপে বসতে হচ্ছে। দাদাজানকে তো জানেন? উনাকে পরাস্ত করার ক্ষমতা বিধাতা বৈ আর কারো আছে বলে মনে হয় না। উনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে স্বামীর ঘরে পাঠাবেন, তো পাঠাবেন। আমি নিজ ইচ্ছায় না গেলে তিনি নানান উপায়ে সেই কাজ করিয়ে ছাড়বেন। আমার জীবনে এমনিতেই সমস্যার শেষ নেই। ঘুরেফিরে যদি আপনার বাড়ি গিয়েই উঠতে হয় তাহলে এতো জলঘোলা করে লাভ কী বলুন তো? তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্ব-ইচ্ছাতেই যাব। আমি জানি, আপনার জন্য একটু সমস্যা হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি আরও কিছুদিন আমাকে একটু বরদাস্ত করেন তাহলে…’
সাব্বির এবার বাক্য ফিরে পেল। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ওভাবে বলবেন না মিথি। সম্পর্কটা যেভাবেই হোক, আপনি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আমার বাড়িতে থাকার অধিকার আপনার আছে। আমি নিষেধ করবার কে?’
মিথি হাসল। বিষণ্ণ হাসি। তারপরও আশ্চর্য এক মুগ্ধতায় স্থবির হয়ে গেল সাব্বিরের চোখ। বলতে ইচ্ছে হলো,
‘ আপনি যে অসম্ভব রূপবতী তা কী আপনি জানেন, মিথি?’
বলা হলো না। মিথি আনমনা হয়ে বলল,
‘ ওরকম জোরজবরদস্তির আইনি অধিকারে আমার বিশ্বাস নেই, সাব্বির সাহেব। আমি নাহয় কোনোরকম অধিকার ছাড়াই যাব আপনার বাড়ি। অতিথির মতো কয়েকটা মাস থাকব। হাতের কাজটা শেষ হলেই ফিরে আসব। জন্মের পর অনেকদিন অন্যের গলগ্রহ হয়ে ছিলাম। এখন আর পারি না। কারো গলগ্রহ হয়ে থাকতে আমার দমবন্ধ লাগে।’
সাব্বির প্রত্যুত্তরে নীরবে চেয়ে রইল। মিথির কণ্ঠের বিষাদে বুকের ভেতর করুণ বেহালার মতো বাজতে লাগল অচেনা এক বেদনা। উত্তরে হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিয়ে গেল মিথির মোলায়েম শাড়ির আঁচল। উড়ল সাব্বিরের গুছিয়ে রাখা চুল। কেবল স্থির দাঁড়িয়ে রইল ওরা দুটি প্রাণ। নিশ্চুপে চেয়ে রইল একে-অপরের চোখে। সেই চোখে দু'জন দু'দিক থেকে তুলে দিয়েছে বাধ্যবাধকতার দেওয়াল। সেই দেওয়াল ভেঙে গুড়িয়ে তারা কী কোনোদিন পৌঁছাতে পারবে তাদের নিজস্ব ঠিকানায়?
_____________
বৈশাখের বিকেল। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ছিন্ন মেঘ। নাহিদ বসে আছে বেইলি রোডের একটা বইয়ের দোকানে। দোকানের মালিক ফজলু ভাই নাহিদের পরিচিত। লালন আর বাউল গান নিয়ে তার অগাধ পড়াশোনা। ফজলু ভাইয়ের সাথে নাহিদের পরিচয় হয়েছিল বেইলি রোডে থিয়েটার দেখতে এসে। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই আসা হয় এখানে৷ লেখক-সাহিত্যিক-
সাংবাদিক-অভিনেতা- বুদ্ধিজীবী কত ধরনের মানুষের আড্ডা যে জমে ফজলু ভাইয়ের দোকানে! তাদের সবার সাথে ফজলু ভাইয়ের খাতির৷ খাতির নাহিদের সাথেও। নাহিদকে তিনি ডাকেন ‘হ্যান্ডসাম হ্যাঙ্ক’ বলে। সুন্দর চেহারার জন্য নাহিদকে তিনি বহুবার থিয়েটারে ঢুকে পড়ার প্ররোচনা দিয়েছেন৷ নাহিদ কর্ণপাত করেনি। আজ এই অবেলায় নাহিদকে দোকানে দেখে তিনি খুব বিস্মিত হলেন। অনেকটাক্ষণ অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বিস্ময় নিয়ে বললেন,
‘ তোমার চেহারার একি হাল হয়েছে!’
প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসল নাহিদ। ফজলু ভাই শুধালেন,
‘ কোত্থেকে আসা হলো?’
নাহিদ একটা টুল টেনে বসে বলল,
‘ ডিরেক্ট ময়মনসিংহ থেকে। আপনাদের কথা খুব মনে পড়ছিল বুঝলেন? ভাবলাম, বাসায় যাওয়ার আগে একটু আড্ডা দেওয়া যাক৷ সৌধও এসেছে। সামনের দোকান থেকে ফাস্টফুড কিনতে গিয়েছে। সৌমিক, পল্লব ওরাও আসবে সম্ভবত।’
ফজলু ভাই বাসি খবরের কাগজে চোখ রেখেই মাথা ঝাঁকালেন। নাহিদ শুধাল,
‘ তারপর ব্যবসা কেমন চলছে?’
এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ফজলু ভাই। দোকানের ছেলেটাকে চা আনতে বলে খবরের কাগজটা ভাঁজ করতে করতে বললেন,
‘ আর ব্যবসা! ফেব্রুয়ারি ছাড়া সারা বছরে পুলক জাগানোর মতো বিক্রি তো হয় না ভাই। তবে এবার ভাবছি নতুন লেখক নিয়ে কাজ করব। এই মেয়েটির লেখা দেখো! দারুণ লেখে। একে পেলে…’
শেষ কথাটুকু হাওয়ায় ভাসিয়ে রেখে খবরের কাগজটা নাহিদের দিকে এগিয়ে দিলেন তিনি। সাহিত্যে নাহিদের আগ্রহ নেই। বই-টই খুব একটা পড়া হয় না। নাহিদ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে দায়সারাভাবে নজর বুলাল কাগজের পাতায়। চায়ে চুমুক দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘মৌনি আহসান!’
ফজলু ভাই মাথা নাড়লেন।
‘ এই মৌনিকে তো আমি চিনি৷’
‘ চিনো? কী করে? তোমাকে দেখে ঠিক সাহিত্যপ্রেমী মনে হয় না।’
নাহিদ একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল,
‘ আমার বোন হয় মৌনি। মৌনি আহসান।’
ফজলু ভাই বিস্ময় নিয়ে বললেন,
‘ তোমার বোন? সত্যি নাকি!’
নাহিদ হেসে ফেলে বলল,
‘ মিথ্যা মিথ্যা কোনো মেয়েকে আমি বোন বানাই নাকি ফজলু ভাই? মিথ্যা বললে বলতাম বউ লাগে।’
ফজলু ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন এবার। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
‘ মৌনি তোমার বউ লাগে বললে বোধহয় আমার জন্য বিশ্বাস করা আরও সহজ হতো। এই শহরে তোমার বউয়ের অভাব আছে নাকি? নাটকের নায়িকা থেকে শুরু করে স্কুলের বাচ্চা মেয়ে। কাকে তুমি বাদ রেখেছ বল তো? সেদিন সামনের স্কুল থেকে এক মেয়ে এসে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করছে। এমন চলতে থাকলে ঢাকা শহরে একশো বাচ্চার মধ্যে দশজন বাচ্চার বাপের নাম হবে নাহিদ আহমেদ।’
ফজলুর কথায় মৃদু হাসল নাহিদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুবান্ধবের দল এসে উপস্থিত হলো দোকানে। হৈ-হুল্লোড়, আলাপ-আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড় উঠল। অন্যান্য দিন সবথেকে প্রাণবন্ত নাহিদ আজ এক কোণে নীরব শ্রোতার মতো নিশ্চুপ বসে থেকে একের পর এক সিগারেট ফুরাতে লাগল। সিগারেটের প্যাকেটে যখন মাত্র একটা সিগারেট অবশিষ্ট তখন সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। নাহিদ সিগারেট কেনার অজুহাতে বেরিয়ে এলো বইয়ের দোকান থেকে। কয়েক সেকেন্ড নীরবে ধূসর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট কিনে হাঁটতে লাগল একদম উল্টো পথ ধরে। বৈশাখের গরম এখন একটু থিতিয়ে এসেছে। গায়ে লাগছে সন্ধ্যার নরম হাওয়া। নাহিদ কিছুদূর হেঁটে দৌঁড়ে উঠে গেল একটা ভিড় ঠেলাঠেলি লোকাল বাসে। বাসের এক কোণে নীরবে বসে থাকা একটি মেয়েকে অনেকটা মিষ্টির মতো দেখাচ্ছে। গোধূলির আলো আঁধারি খেলা করছে মেয়েটির চিবুকের কাছে। মিষ্টির চিবুকটাও বোধহয় অনেকটা এরকম। তবে এই মেয়েটা মিষ্টি হওয়ার কথা না। এই সময়ে মিষ্টি এখানে থাকবে না। মিষ্টিকে আজ বিকেলেই টিএসসিতে দেখে এসেছে নাহিদ। ময়মনসিংহের বাড়িতে মন টিকছিল না বলে সকালের পর পরই সৌধকে নিয়ে ঢাকার গাড়িতে উঠে বসেছিল৷ হাউজ বিল্ডিং নেমে দুপুরের খাবার খেয়ে প্রথমেই চলে গিয়েছিল টিএসসির দিকে। বিকেলের দিকে ওদের বন্ধুদের আড্ডা বসে টিএসসি অথবা বেইলি রোডে। রাত্রির দশটা পর্যন্ত আড্ডা চলে। আজকেও ওরকম একটা পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে টিএসসিতে যেতেই দেখা হয়ে গেল মিষ্টির সাথে। মিষ্টি একটা কালো মতোন ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিল। ছেলেটি মিষ্টির হাতের পৃষ্ঠে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ফেলল নাহিদের সামনেই। আর ঠিক তখনই মিষ্টির চোখ পড়ল নাহিদের চোখে। তাদের মধ্যে কোনো কথা হলো না। সৌজন্যতা হলো না। শুধু চোখে চোখে দেখা হলো। এটাকে নিশ্চয় দেখা হওয়াই বলে? নাহিদ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টিকে আর লজ্জায় ফেলতে চায়নি। তারওপর সৌধ ছিলো তার সাথে। ভাগ্যিস সৌধ খেয়াল করেনি মিষ্টিকে! নাহিদ বলা মাত্রই ওখান থেকে সরে এসেছে বেইলি রোডের দিকে। বাসের ভিড়টা একটু হালকা হয়ে কয়েকটা সীট ফাঁকা হতেই জানালার পাশে একটা সীট দেখে বসে পড়ল নাহিদ। আনমনা হয়ে চেয়ে রইল ধূসর আকাশের দিকে। মনটা ঠিক স্থির নেই তার। ভাবনা-চিন্তায় অদ্ভুত এক হয়বরল লেগে গিয়েছে। কিছু ভাবছে নাকি ভাবছে না সে কথাও ঠিক করে খেয়াল করে উঠতে পারছে না। একটা সিগারেট ধরানো গেলে ভালো হতো। নাহিদ পকেট হাতড়ে সিগারেটের সন্ধান করতেই পাশ থেকে একটা শিশু কণ্ঠ ভেসে এলো,
‘ বাবা!’
নাহিদ পাশে ফিরে না তাকিয়েই বুঝল, বাবুন। ছেলেটা আজকাল বড় জ্বালাচ্ছে। আগে কেবল স্বপ্নে এসে হানা দিতো। আজকাল স্বপ্নের বাইরেও হাঁটাচলা করতে শুরু করেছে। নাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীটে গা এলিয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে বসে রইল দীর্ঘক্ষণ। বাবুন বাবার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করা গলায় শুধাল,
‘ বাবা, তোমার কী মন খারাপ?’
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন