উপন্যাস : আজ ওদের মন ভালো নেই
লেখিকা : নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ইং
লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “আজ ওদের মন ভালো নেই” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
আজ ওদের মন ভালো নেই || নৌশিন আহমেদ রোদেলা |
২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আজ ওদের মন ভালো নেই || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ২৮)
কলাবাগানের পুরোনো দু’তলা বাড়ি। বৈশাখের অতর্কিত বৃষ্টিতে বিষণ্ণ প্রেয়সীর মতো নিঃসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশান কোণে অভিমানের কাজল। সাব্বিরের হাতে দুটো কদম ফুল৷ কদমফুল হাতে সে শক্ত হয়ে বসে আছে মিথির পাশে। রিকশার মুখে পেঁচানো প্লাস্টিকের উপর নিরন্তর বৃষ্টি ঝরছে, ঝমঝম! ঝমঝম! তাদের সামনের রিকশায় দাদাজানের খাস পেয়াদা, মোহন চাচা। তার রিকশাতে মিথির লাগেজ আর দাদাজানের পাঠানো যাবতীয় উপঢৌকন। উপঢৌকনের ভারে রিকশায় তার জায়গা সংকুলান হয়নি। তিনি এতোক্ষণ নির্বিকার মুখে বসে থেকেছেন উপঢৌকনের বোরার ওপর। একসময় রিকশা থেমে গেল। মোহন চাচা রিকশা থামিয়ে সাব্বিরদের রিকশার কাছে নেমে এলেন। বৃষ্টিতে ভিজে জবজব করছে তার মলিন পোশাক, আধ পাকা চুল। তিনি হাতের পৃষ্ঠে ভেজা মুখটা মুছে ফেলে বিনয়ী হেসে বললেন,
‘ জামাই বাবা, এইটাই তো বারো নম্বর বাড়ি। এখানেই জিনিস নামাব বাবা?’
সাব্বির রিকশার সামনে থেকে প্লাস্টিকের পর্দাটা অল্প সরিয়ে বাইরেটা দেখল। অপরিসর রিকশায় মিথির ওমের মধ্যে বসে থেকে এতোক্ষণ ভারি দমবন্ধ লাগছিল। সন্তপর্ণে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ জি, চাচা।’
মোহন চাচা তার সঙ্গে আসা চ্যাংড়া ছেলেটিকে জিনিস নামানোর জন্য তাড়া দিয়ে দ্রুত পায়ে একটা ছাতা নিয়ে এলেন। ছাতাটা মেলে সাব্বিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ জামাই বাবা, আপনি আর আম্মাজান ছাতা নিয়া ভিতরে চইলা যান। অসময়ের বিস্টিতে ভিইজেন না। আমরা জিনিস নামাইয়া নিয়া আসতেছি। দুশ্চিন্তা করবেন না।’
জিনিস নিয়ে সাব্বিরের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সে নিজের হাতের কদমফুল দুটোর দিকে একবার তাকিয়ে ফুল দুটোর জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। মোহন চাচার হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে রিকশা থেকে ধীরেসুস্থে নেমে দাঁড়াল। মিথি তখনও বসে আছে প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের আড়ালে। সাব্বির আচ্ছাদন সরিয়ে মিথিকে নামার জায়গা করে দিতে দিতে মৃদু কণ্ঠে শুধাল,
‘ মিথি! এই কদমফুল দুটো কী আমি আপনাকে দিতে পারি?’
মিথি নামতে গিয়েও থমকাল। চোখ তুলে সাব্বিরের দিকে তাকাল। সাব্বিরের এক হাতে ছাতা অপরহাতে ফুল আর প্লাস্টিকের আচ্ছাদন। সে আচ্ছাদনটা সরিয়ে রেখে ফুল দুটো মিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনাকে আমার বাড়িতে স্বাগতম মিথি।’
মিথি ম্লান হাসল। সহজ কণ্ঠে বলল,
‘ ধন্যবাদ, সাব্বির সাহেব।’
সাব্বির হাসল। ছাতা থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে মিথির ডান গালের ওপর। কাঁচা হলুদ ঢলঢলে পানপাতা মুখটাতে ওই একফোঁটা জল দেখাল মুক্তোর মতো৷ বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে পশ্চিম দিকে হেলে পড়া জেদি সূর্যর কনে দেখা আলোয় সূর্যমুখীর মতো উদ্ভাসিত দেখাল মিথির শান্ত, কোমল মুখখানা। সাব্বির সেই মুখের দিকে বিবশ হয়ে তাকিয়ে রইল অনেকটাক্ষণ। বলতে ইচ্ছে হলো,
‘ এতো রূপ আমি আগে কখনও দেখিনি, মিথি। আপনি.. আপনি বর্ষার কদম ফুলের থেকেও সুন্দর।’
____________
আকাশে ঘন কালো মেঘ। পাহাড়ের মাথায় ঝরছে অবিশ্রাম অশ্রু। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ট্রেনিং সেন্টারের ঘাসগুলোও ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে অশ্রু ঝরা জলের নিচে। সেই জল এবং বৃষ্টির ঝমঝম ধ্বনিকে সচকিত করে মাঠের একপাশ ধরে দৌঁড়াচ্ছে একটি যুবক। পরনে তার মিলিটারি গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট। মাথায় কদম ছাঁটার মতো ছোট ছোট চুল। বৃষ্টির জলে ধুয়ে বড় স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তার তামাটে মুখ। হাত পায়ের পেশি ফুলে উঠেছে অতিরিক্ত পরিশ্রমে। এক, দুই, তিন করে পঞ্চাশটা চক্কর দিয়ে বৃষ্টি ডুবা মাঠে অর্ধ শরীর ডুবিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল সে। ঘাড়ের কাছে ঘাসের ডগার সুড়সুড়ি উপেক্ষা করে সে নির্বিকার তাকিয়ে রইল মেঘলা আকাশের দিকে। প্রশস্ত বুক তখনও প্রবলভাবে উঠানামা করছে শারীরিক ক্লান্তিতে। দূর থেকে আরও এক জোড়া পা জমাট পানিতে হুল্লোড় তুলে এসে থামলো তার পাশে। তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ হাও ওয়াজ দ্য পানিশমেন্ট, মাই ফ্রেন্ড? উঠে আসো। এবার যদি তোমার কিছু সুবুদ্ধি আসে।’
ইমাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে হাসল শাওন। হাত ধরে উঠার বদলে টেনে তাকে পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ পানিশমেন্টে প্রেম নামে ইমাদ?’
ইমাদ শাওনকে এক পলক দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
‘ নামা উচিত। তুমি জানো না? সামরিক অফিসারদের অতো রোমান্টিক হলে চলে না? রোমান্টিক হবে কবিরা। আমরা হব নিষ্ঠুর। আমাদের হৃদয়ে থাকবে শুধু একটাই প্রেম, দেশপ্রেম। নারীর জন্য আবার প্রেম থাকতে হয় নাকি? তার জন্য…’
বাক্যটা শেষ না করে হাওয়ায় ঝুলিয়ে রাখল ইমাদ। চোখ টিপে দুষ্ট হেসে বলল,
‘ মেয়েরা প্রেমে আকৃষ্ট হয় না, মাই ফ্রেন্ড। তারা আকৃষ্ট হয় পৌরুষে।’
শাওন ইমাদের ছেলেমানুষি কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকাল। ইমাদও শাওনের পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ এখানে আমার কিছু বন্ধু আছে। মেয়ে বন্ধু। তার মধ্যে তোমার জন্য আমার একজনকে খুব মনে ধরেছে। আমি তোমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। শী ইজ ড্যাম হট। আমি শিওর, তার সঙ্গ তোমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিবে। বাইরের জন বাইরে থাকুক। লেটস্ হ্যাভ সাম ফান! বিষে বিষক্ষয় হয়। তোমার মৌনি রোগ ওর এক চুমুতে উড়ে যাবে।’
‘ ইজ শী আ হোর?’
ইমাদ আশ্চর্য হয়ে তাকাল। চোখে অবিশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ আর ইউ ম্যাড শাওন! হোয়াই ওড শী বি আ হোর? ডু ইউ থিংক আই উইল হুক ইউ আপ উইদ আ প্রস্টিটিউট? আই হ্যাভ আ ক্লাস। ইট’স জাস্ট আ ম্যাচুয়াল ইঞ্জয়মেন্ট। অনেকটা, ফ্রেন্ডস্ উইদ বেনিফিট টাইপ? তবে মৌরিনকে এতো সহজেও পাওয়া যাবে না। ইউ হ্যাভ টু ইমপ্রেস হার।’
‘ হোয়াই ওড আই?’
‘ ফর আ রাইড। রিল্যাক্সিং রাইড!’
বলে চোখ টিপল ইমাদ। পরমুহূর্তেই হতাশ হয়ে বলল,
‘ যদিও ট্রেনিং চলাকালীন সে সুযোগ পাবে না। তবু মৌরিনকে পটাতে পারলে সে তোমাকে কাছাকাছি অনুভূতি দিতে পারে। আর এই মুহূর্তে তোমার এটা দরকার আছে। সারাদিন মৌনি মৌনি করে তোমার মাথা আউলে গিয়েছে। ট্রেনিং-এ মনোযোগ দিতে পারছ না। এই সপ্তাহে তিনবার পানিশমেন্ট পেলে। জাস্ট গ্রো আপ শাওন!’
শাওন উত্তর দিল না। এই প্রচন্ড বৃষ্টিতেও আকাশের দিকে স্থির তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ ইউ গ্রো আপ ইমাদ। শরীরের উত্তাপে আমার প্রেম নামানোর চেষ্টা বন্ধ করো। তোমার সো কল্ড ‘হ্যাভ সাম ফান’ এর জন্যও আমার মৌনিকে লাগবে। ওকে ছাড়া আমার মন, মাথা, শরীর কিছুই কাজ করবে না। সো, জাস্ট শাট আপ এন্ড লেট মি সী।’
ইমাদ অসন্তোষ নিয়ে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ সী, হোয়াট?’
শাওন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলল,
‘ মৌনি। দেখো, ওই মেঘগুলোকে ঠিক মৌনির মতো দেখাচ্ছে। গাঢ় কাজল চোখে মৌনি ঠিক এভাবেই তাকায়। আচ্ছা ইমাদ? মৌনির কী কখনও আমাকে মনে পড়ে? আমি কী পাগল হয়ে যাচ্ছি?’
ইমাদ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল। জমাট পানিতে মাথার অর্ধেকটা ডুবিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তুমি পাগলই। তোমার মানসিক চিকিৎসা দরকার।’
শাওন হেসে ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ ইমাদ তুমি জানো আমি ডিফেন্সে কেন এসেছি?’
ইমাদ অনুরোধের স্বরে বলল,
‘ নাও ডোন্ট ছে ইউ আর হেয়ার ফর মৌনি। তুমি এই কথা বললে আমি সুইসাইড করে ফেলব।’
শাওন উচ্চস্বরে হেসে ফেলল এবার। হাসতে হাসতেই বড় করে দম নিয়ে স্বপ্নালু কণ্ঠে বলল,
‘ ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ছিল, আমি আর্কিটেক্ট হব। আমার ভাগ্য দারুণ, বড় হওয়ার পর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্ট পড়ার সুযোগও পেয়ে গেলাম। প্রথম বছর দারুণ রেজাল্ট হলো আমার। একেবারে ডিপার্টমেন্ট টপার। মৌনি আমার কাজিন হওয়ার পাশাপাশি ছোটবেলার বন্ধু। মাঝে মাঝেই ওর সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যেতাম। একদিন কোনো এক কাজে আমরা গেলাম ক্যান্টনমেন্টে। আশেপাশে সামরিক অফিসারদের দেখে মৌনি খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ল। একজন জুনিয়র অফিসার আমাদের সামনে দিয়ে বাইসাইকেল করে চলে যেতেই মৌনি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ফেলে বলল, ‘ছেলেগুলো কী দারুণ বলো তো! দেখলেই চুমু খেতে ইচ্ছে হয়। চলো না, একটা অফিসারকে পটানোর চেষ্টা করি৷ কষে একটা চুমু খেয়েই ভেগে যাব।’
বলতে বলতে নিজেই হেসে ফেলল শাওন। ইমাদও হেসে ফেলে বলল,
‘ তুমিও পাগল। তোমার মৌনিও পাগল।’
শাওনের বুকে যেন সুখের হাওয়া বয়ে গেল। এই পৃথিবী কক্ষনও জানবে না, মৌনির কথা বলতে পারাতেও যে কত সুখ! শাওন স্বপ্নালু কণ্ঠে বলল,
‘ সেই বিকেলে, ক্যান্টনমেন্টের নীরব চত্বরে হাঁটতে হাঁটতে আমি তার ঠোঁটের দিকে তাকালাম। মৌনির ফুলো ফুলো, ভরাট ঠোঁট। সেই ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের ভেতর জমতে লাগল এক টুকরো তৃষ্ণা। আমি বাড়ি ফিরে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেলাম। জগের পর জগ ফুরালো। আমার তৃষ্ণা মিটলো না। আমি বুঝে গেলাম, এই তৃষ্ণা পানির নয়। এই তৃষ্ণা একটি চুমুর। আমি কেবল একটি চুমুর স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজের পড়াশোনাকে বাদের ঘরে ফেলে ডিফেন্সের জন্য চেষ্টা করতে শুরু করলাম। ইমাদ, এই তৃষ্ণা এখন আমার অস্থিমজ্জায় ছুটে। ওকে একবার পাওয়ার জন্য আমি দশবার মরে যেতে পারি। এসব পানিশমেন্ট আমার জন্য কিছু না। দিনে দশবার যার ছবি মুখস্থ করে অভ্যাস আমার। সেই মেয়েটিকে আমি এক মাস ধরে দেখি না। এই মানসিক ব্যথার কাছে এসব শারীরিক কষ্ট কিচ্ছু না। ওরা আমার ল্যাপটপ নিয়ে নিয়েছে, ফোন নিয়ে নিয়েছে। আমার এই তৃষ্ণাটুকু কেন নেয় না ইমাদ? আমার থেকে থেকে দমবন্ধ লাগে। ট্রেনিংয়ের টাস্ক পূরণ করতে গিয়ে হুটহাট আমার মাথা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়। আমার মন শরীর তীব্রভাবে মৌনিকে চাইতে থাকে। আমি তখন কিচ্ছু ভাবতে পারি না। ট্রেনিং না, পানিশমেন্ট না, পৃথিবী না। কিচ্ছু না। আমার তখন কেবল মৌনিকে চাই। আমি খুব চেষ্টা করছি ইমাদ। এই তীব্র ব্যথাটাকে সয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি৷ পারছি না। আমার ধারণা, আমি শেষপর্যন্ত ট্রেনিংটা শেষ করে উঠতে পারব না৷ হয় পালিয়ে যাব৷ নয়তো মরে যাব। আমার মৃত্যু হবে তীব্র ব্যথা নিয়ে। সেই ব্যথা মৃত্যুর ব্যথা থেকেও যন্ত্রণার।’
একটি মেয়ের জন্য শাওনের এই কাতরতায় ইমাদ তাকে তীব্র ভর্ৎসনা করতে গিয়েও থেমে গেল। শাওনের যন্ত্রণা কাতর মুখটির দিকে তাকিয়ে কোমল হয়ে এলো মন। সামরিক বাহিনীর কঠিন ট্রেনিংকে সহজেই টেক্কা দিয়ে ফেলা দীর্ঘদেহী এক যুবক তার প্রেয়সীর বিরহে কাঁদছে। চোখের বেরিগেড ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার তীব্র প্রেম। সেই প্রেম বৃষ্টির জলে ধুয়ে যেতে পারছে না। আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রেমে চির অবিশ্বাসী ইমাদের এই দৃশ্যটি দেখতে ভালো লাগছে। প্রেমের রঙকে এতো গাঢ় হতে সে আগে কখনও দেখেনি।
_____________
বৃষ্টিতে আঁচল ভিজিয়ে, শাড়ির কুঁচি সামলে মিথি যখন উঠে এলো বাড়ির বারান্দায় ঠিক তখনই সিঁড়ি গোড়ায় চোখে পড়ল সুন্দর দেখতে একটি মেয়ে। পাট করা শাড়ি আর চোখে গাঢ় কাজল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিষণ্ণ মূর্তিটিকে মিথি চিনে। মেয়েটি বৃষ্টি। প্রকৃতির মতো বৃষ্টির মুখেও আষাঢ়ের কালো মেঘ। চোখদুটোতে তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে সে তাকিয়ে আছে মিথির দিকে। মিথির দৃষ্টিতে যে খুব সোহাগ আছে তেমনও নয়। অনতিদূরে দাঁড়িয়ে দুই যুযুধান একে অপরকে মেপে নিচ্ছে এরকমই তাদের হাবভাব। দুই রমণীর এহেন দৃষ্টিযুদ্ধের মধ্যে ছাতা বন্ধ করে মিথির পাশে এসে দাঁড়াল সাব্বির। মিথির দৃষ্টি লক্ষ্য করে উপরে তাকিয়ে সিঁড়ি গোড়ায় বৃষ্টিকে খেয়াল করল। সহজ সামাজিকতা থেকে শুধাল,
‘ কেমন আছ, বৃষ্টি?’
স্বামীর এই দুঃসাহসে এক মুহূর্তের জন্য হৃৎপিণ্ড জ্বলে গেল মিথির। পরমুহূর্তেই একটা বিষণ্ণতার ঝাপটা এসে নিভিয়ে দিল সে তেজ। থেকে গেল কেবল ধূসর রঙের অভিমানের ছাপ। বৃষ্টির প্রতিক্রিয়া হলো ঠিক উলটো। সেদিনের সেই ঘটনার পর সাব্বির তার সঙ্গে নিজ থেকে কথা বলবে এই রকম প্রত্যাশা সে রাখেনি। অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সে কিছুটা হকচকিয়ে গেল। শুকনো কণ্ঠে বলল,
‘ ভালো। অনেকদিন পর! শ্বশুর বাড়ি থেকে আসছেন নাকি?’
সাব্বির একটু অপ্রস্তুত হলো। ছোট্ট করে বলল,
‘ হু। হঠাৎ একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।’
বৃষ্টি সরু চোখে তাকাল। সাব্বিরের কথার ধরন দেখে বোধ হচ্ছে, বৃষ্টি যে তার অসুস্থতার কথা জানে সেই কথা তার খেয়াল নেই। তবে কী সুস্থ হওয়ার পর সেইদিনের কথা ভুলে গিয়েছে সাব্বির? মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেল বৃষ্টি। মিথি থমথমে কণ্ঠে বলল,
‘ ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ঘরের চাবিটা আমাকে দিতে পারেন সাব্বির সাহেব? দরজাটা খুলব। আমার চেঞ্জ করা দরকার। আপনি আমাকে চাবিটা দিয়ে তারপর গল্পে মশগুল হলে সুবিধা হতো।’
মিথির রূঢ় কণ্ঠে কেশে উঠল সাব্বির। মনে পড়ে গেল, বৃষ্টিকে মিথির অপছন্দের কথা। তাড়াহুড়ো করে ঘরের তালা খুলে দিয়ে ভেতরে ঢুকতে অনুরোধ করে বলল,
‘ প্লিজ!’
মিথি ভেতরে ঢুকল। কয়েকদিন তালাবন্দী থাকায় ঘরের ভেতরটায় বদ্ধ গন্ধ। সাব্বির দরজা লাগিয়ে সুইচবোর্ড খুঁজে জ্বালিয়ে দিলো ঘরের সমস্ত আলো। মিথি কাঁধের ব্যাগটা বেতের সোফার উপর রেখে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
‘ আমার জন্য আপনাদের বিশেষ আলাপে ব্যাঘাত ঘটলো। সেজন্য আমি খুবই লজ্জিত এবং দুঃখিত। মোহন চাচা চলে গেলে, বৃষ্টিকে আপনি চায়ের দাওয়াত দিতে পারেন। আমি আমার ঘরে দোর দিয়ে রাখব। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টির মতো বৃষ্টির সাথে গালগল্প আপনার শুভ হোক। আশা রাখছি, আমি আপনাদের বিরক্তির কারণ হব না।’
সাব্বির মিথির এই শীতল মেজাজে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন