উপন্যাস : রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা : নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং
লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ৪)
লম্বা একটা ঘুম দিয়ে.... শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি শুভ্র ভাই হাজির।হাতে মস্ত এক লাল বালতি।আমাকে দেখেই উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
এই রোদু তুই নাকি দুঃখভরা পোষ্ট দিয়ে আকাশে বাতাসে দুঃখ ছড়াচ্ছিস??তাই এই বালতিটা আনলাম বুঝলি?
.
আমি মাথা নাড়লাম যার অর্থ আমি বুঝি নি।দুঃখের সাথে বালতির কি সম্পর্ক হতে পারে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।বিস্ফারিত চোখে বলে উঠলাম-
.
দুঃখের সাথে বালতির কি সম্পর্ক শুভ্র ভাই?
.
উনি বিরক্ত মুখে বলে উঠলেন-
.
আহ্ রোদ...তুই তো দেখি নিম্নশ্রেণীর বোকা।আরে...বালতিটা কিনেছি তোর দুঃখ জমিয়ে রাখার জন্য...এভাবে আকাশে বাতাসে দুঃখ না উড়িয়ে জমিয়ে রাখ বুঝলি?বাংলাদেশে কখন কি মার্কেট পেয়ে যায় বলা মুশকিল....দেখা গেলো দুঃখ বেঁচে তুই বিল গেটস টাইপ কেউ একজন হয়ে গলি।।বালতিটা কিন্তু আর. এফ. এল এর...ফাটাফাটির কোনো ভয় নেই বুঝলি?নির্ভয়ে কষ্ট জমা।।তুই একটা কাজ করতে পারিস...একটা টার্গেট ঠিক করে ফেলতে পারিস যে প্রতিদিন ঠিক কতো লিটার করে কষ্ট জমাবি...
.
আমি নাক মুখ কুঁচকে দাড়িয়ে আছি।এই মানুষটা যে আমাকে পচাঁনো ছাড়া ভালো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাড়িতে পা রাখতে পারে না তা প্রমানিত!!আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
কি রে?এমন পাবদা মাছের মতো "হা" করে তাকিয়ে আছিস কেন? বালতি পছন্দ হয় নি?
.
না পছন্দ হয় নি।আপনার কি মনে হচ্ছে না শুভ্র ভাই?আমার কষ্টের তুলনায় বালতিটা একটু বেশিই ছোট!!
.
বলিস কি রে?বেশি ছোট হয়ে গেছে?দোকানের সবচেয়ে বড় সাইজের বালতিটাই তো আনলাম!!দোকানদার কি আমায় ঠকিয়ে দিলো রে রোদু?
.
নাহ শুভ্র ভাই!!দোকানদার আপনাকে ঠকায় নি....আপনার উচিত ছিলো একটা টাংকি কেনা.... বিশাল টাংকি..বুঝলেন??
.
টাংকি?? ফাজলামো করিস তুই আমার সাথে?টাংকিটা রাখতি কোথায় তুই?তোর বাপের টাকে??এনিওয়ে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে রেখেছিস কেন??খোল বলছি...দেখতে তো পুরাই পেত্নী পেত্নী লাগছে তোকে!!হুমায়ুন আহমেদের একটা কথা আছে-" মেয়েরা যদি জানতো মাথায় তোয়ালে জড়ানো অবস্থায় তাদের পেত্নীর মতো লাগে তাহলে মিনিটে মিনিটে ফিট খেতো।"
.
উনার কথা শুনে আমি হতবাক।।মেয়েরা ফিট খেতো কিনা জানি না তবে উনার কথা শুনে হুমায়ুন আহমেদ যে ফিট খেতো তা আমি নিশ্চিত...আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলাম-
.
এমন কোনো কথা হুমায়ুন আহমেদ বলে নি শুভ্র ভাই...উনি খুব সুন্দর কিছু বলেছিলেন।যেমন ধরো " মেয়েরা যদি জানতো মাথায় তোয়ালে জড়ানো অবস্থায় তাদের সব চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে তাহলে বিয়ের দাওয়াতগুলোতেও মেয়েরা মাথায় তোয়ালে জড়িয়েই যেতে" এমন টাইপ কিছু একটা বলেছিলেন উনি।।আর আপনি তো পুরো ব্যাপারটাকেই ঘুরিয়ে দিলেন।
.
তোকে দেখে যে ফিলিংসটা হলো সেটাই হুমায়ুন আহমেদের উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করলাম বুঝলি??তুই যদি এমন পেচিয়ে পুচিয়ে বিয়ে বাড়ি যাস তো সব ছেলের বুকই কেঁপে উঠবে,,,সেন্সও হারাতে পারে....পেত্নী দেখে কে না ভয় পায় বল??সবাই তো আর আমার মতো সাহসী নয়!!
.
উনার কথায় গা জ্বালা করছে আমার।।এখনই যে মাথা ব্যাথাটা শুরু হবে তাও বুঝতে পারছি।।শুভ্র ভাই যতোবার আসেন ততোবারই মাথা ব্যাথার উপসর্গটা দেখা দেয় আমার....উনি হলেন একজন জ্বলজ্যান্ত মাথা ব্যাথা!!হঠাৎ করেই ওঠে এসে আমার ঠিক সামনে দাঁড়ালেন উনি...মাথা থেকে টাওয়ালটা একটানে খুলে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন-
.
খুব টায়ার্ড লাগছে রে?ভেজা টাওয়ালে মুখ মুছলে ক্লান্তি ২ মিনিটে ৪০% কমে যায়....
.
কথাটা বলে টাওয়াল টা বাম হাত থেকে ডান হাতে রেখে বাম হাতে আমার কিছু চুল নাকের কাছে নিয়ে জোড়ে একটা শ্বাস টেনে নিয়েই চোখ বন্ধ করলেন উনি।চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চোখটা মেলেই বলে উঠলেন-
.
কি মারাত্মক ব্যাপার রে রোদু!!তোর চুলে কি দুর্গন্ধ!!করোনা রোগীদের শ্বাস কষ্টের মূলীভূত কারণ যে তোর দুর্গন্ধ চুল তা তো জানা ছিলো না।।তোর এই চুলের গন্ধ শুকলে তো বিনা নোটিশে হার্ট আট্যাক।
.
উনার কথায় রাগে পিত্তি জ্বলে গেলো আমার।।মাত্র শ্যাম্পু করে বেরোলাম আর মহাশয় বলছে আমার চুলে গন্ধ!! তাও যেন তেন গন্ধ নয় হার্ট আট্যাক টাইপ গন্ধ... ভাবা যায়??রাগী কন্ঠে বলে উঠলাম আমি-
.
এতোই যেহেতু গন্ধ তো আপনি এখনো ঠিক আছেন কিভাবে??আপনার হার্ট আট্যাক হলো না কেন শুনি??শ্বাস কষ্ট হচ্ছে বলেও তো মনে হচ্ছে না...
.
আমার কথা শুনে হালকা টলে উঠে...কাঁপা গলায় বলে উঠলেন-
.
কে বললো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে না?ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে.... দেখ? দাঁড়িয়েই থাকতে পারছি না....বুকেও তো ব্যাথা করছে রে!!এবার বুঝি আমি শেষ...
.
কথাটা বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন উনি।।চোখদুটো বন্ধ।আমি চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি। কি ড্রামাবাজ লোক রে বাবা।বেশকিছুক্ষণ পরও কোনো নড়নচড়ন না দেখে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।।উনার উপর ঝুঁকে পড়ে চোখের উপর হাত নাড়লাম....কিন্তু নাহ! নো রিয়েকশন!!পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নেবো বলে সোজা হতে নিলেই বাম হাতে উনার উপর পড়া আমার ভেজা চুলগুলো আবারও টেনে ধরলেন উনি....ডানহাতে পকেট থেকে টিপের পাতা বের করে তার থেকে ছোট্ট কালো টিপটা লাগিয়ে দিলেন আমার ভেজা কপালে।।আমি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি।।উনি স্বাভাবিকভাবেই উঠে বসে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-"পেত্নী লাগছে তোকে" চুপচাপ বসে আছি আমি....মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার।।পকেট থেকে আরো দুটো টিপের পাতা বের করে পাশে রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি।।রুম থেকেই কানে আসছে স্বাভাবিক ঝরঝরে কন্ঠে আম্মুর কাছ থেকে কফি চাইছেন তিনি।তাহলে আমার শরীরটা কাঁপছে কেন??কেন জানি মনে হচ্ছে কালো টিপটাই খুব সুন্দর লাগছে আমায়।।কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করছে না...থাকুক না একটু কৌতূহল .... মাথারা ব্যাথাটা শুরু হয়ে গেছে আবার....ইশশ কি যন্ত্রণা...শুভ্রময় যন্ত্রণা..
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:
- আজ ওদের মন ভালো নেই
- মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
- রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
- তপোবনে যখন সন্ধ্যা নামে
- আরশিযুগল প্রেম
- নীল চিরকুট
- প্রিয়দের কাল্পনিক সাক্ষাৎ
- প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প
- আজি এই সন্ধ্যাক্ষণে
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন