উপন্যাস        :         রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা        :          নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং

লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা


৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব -৫ )


সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেই ঢুকে গেছি রান্নাঘরে।উদ্দেশ্য সবার জন্য খাবার রান্না করা....সারাদিন বসে থাকতে থাকতে টায়ার্ড একটু কাজ করলে ব্যাপাটা খারাপ হয় না...কিন্তু বিপত্তি ঘটলো রান্না শুরুর পর!!আমার একমাত্র বিপত্তি ও বিরক্তি হলো শুভ্র ভাই।এতো সকাল বেলা মুখ উঠিয়ে কোথা থেকে চলে এলেন কে জানে??বাসায় ঢুকেই সোজা কিচেনের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন-
.
কি রে রোদু...রান্না ঘরে কি করিস তুই??ব্রাস্ট টাস্ট করার পরিকল্পনা আছে নাকি???
.
রান্নাঘরে সবাই রান্না করতেই ঢুকে শুভ্র ভাই....কখনো কেউ ফুটবল খেলতে ঢুকেছে বলে তো মনে হয় না...
.
ওহহো তুই তাহলে রান্না করতে ঢুকেছিস ??তাহলে তো হলোই.... আমি বরং যাই আর্মির পেদানো খেয়ে হলেও কয়েক পাতা মেট্রো টেবলেট আনি...
.
মেট্রো টেবলেট দিয়ে কি হবে??(ভ্রু কুঁচকে)
.
তোর এই থার্ডক্লাস খাবার খেয়ে পেটের সমস্যা তো অনিবার্য।। আমি এতো রেসপন্সেবল ছেলে হয়ে তো আর ফুপ্পি ফুপাকে বাথরুমে দৌড়াতে দেখতে পারি না...তাই আগে থেকেই মেডিসিন রেডি....ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই টুস করে একটা টেবলেট গিলে ফেলবে...ব্যাস খতম...
.
উনার কথায় রেগে রগণচন্ডী রূপ ধারণ করলাম আমি।আমার রান্না থার্ডক্লাস??এতো বড় অপমান!!নাক মুখ ফুলিয়ে রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
.
আমার রান্নার কথা বাদ দেন...আপনি নিজে কি হ্যা??আপনি তো কোনো ক্লাসেই পড়েন না....এমন ক্লাসহীন মানুষেরই হাইক্লাস খাবার খেলে মেট্রো টেবলেটের জন্য দৌড়াদৌড়ি করা লাগে।। এজ লাইক ইউউউ...
.
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম আমি।।বেশি বলে ফেলেছি মনে হয়।এতোটুকু বলা মোটেও উচিত হয় নি আমার....নিশ্চয় এবার ভূবন কাঁপানো থাপ্পড় পড়বে আমার গালে।।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মুচকি হাসলেন উনি...রান্না ঘরের দরজায় ঠেস দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়েই বলে উঠলেন-
.
নিজেরটা আমার উপর চালাচ্ছিস রোদু। তোর তো আমার ক্লাস সম্পর্কে ধারনায় নাই...জানিস ভার্সিটিতে মেয়ে ....
.
উনার মুখে মেয়ে কথাটা শুনে বেখেয়ালিভাবে উনার দিকে তাকিয়েই পেঁয়াজ ছুড়লাম তেলে...সাথে সাথেই তেল ছিঁটে কি বিশ্রী অবস্থা!!!উনি তাড়াহুড়ো করে আমাকে সরিয়ে দাঁড় করিয়েই বলে উঠলেন-
.
এখনই তো পুড়ে মরতি রোদু.....ওখানেই দাঁড়া এদিকে আসবি না একদম...কোথাও লাগে নি তো??জ্বলছে কোথাও??তুই বরং এক কাজ কর...কি করতে হবে আমায় বল আমি করে দিচ্ছি...
.
উনার কথায় অবাক হলাম আমি।।ভূতের মুখে রাম নাম।।উনি আর রান্না?জীবনে রান্নাঘরে ঢুকেছেন কিনা সন্দেহ।চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলাম-
.
আপনি রান্না করবেন??পাগল নাকি??এসব আপনার দ্বারা হবে না...সরুন তো।। পরে দেখা যাবে তেল টেল ছিটিয়ে নিজেই পুড়ে যাবেন....
.
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।।যেখানে দাঁড়াতে বলছি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক।আমি পুড়লে পুড়লাম।।তুই তো পুড়বি না তাতেই হবে।।
.
আজব তো!!আপনি পুড়লে সমস্যা নেই তো আমি পুড়লে কি সমস্যা??আমার শরীর আমি পুড়াবো তাতে আপনার কি??সরুন তো...আমি রান্না করবো মানে করবো!!
.
এহহহ বললেই হলো??তোর শরীরের উপর তোর অধিকার খুবই অল্প বুঝলি??আর তাছাড়া মেয়ে মানুষ তুই...এমনি তো এটম বম...মানুষ তো তোর পাশে ঘেষতেই ভয় পায়...পরে দেখা যাবে...পুড়ে টুড়ে কয়লা হয়ে আছিস..তখন বিয়ে দেওয়া কতো কষ্টের হবে ভাবতে পারছিস??আহারে...আমার তো তোর বাপের কথা ভাবতেই স্যামপেথি স্যামপেথি ফিলিংস আসছে রে!!তাই বলছি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক...বেশি লাফালাফি করবি তো তুলে নিয়ে ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো।।সো নো নড়াচড়া...একবার নড়াচড়ার করলে দুটো করে থাপ্পড়।। দুই গালে দুটো!!একটা দিলে নাকি বিয়ে হয় না??তাই দুটো.....কুসংস্কার হলেও রিস্ক নেওয়া যাবে না।।পরে দেখা যাবে....তোর বিয়ে হচ্ছে না বলে আমিও চিরকুমার থেকে গেলাম!!নো!! নো ওয়ে...বিয়ে তো আমায় করতেই হবে...দেশের প্রডাকশন বাড়ানোর মতো একটা মহান কর্তব্য আমার পালন করতে হবে না??অবশ্যই হবে।। আমি তো ডিশিসন নিয়ে নিয়েছি বছরে বছরে একজন করে..
.
উনার কথায় আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম উনি রান্না থেকে বিয়ে...বিয়ে থেকে বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছেন।।কি সাংঘাতিক ব্যাপার।।আমি চোখ বড় বড় করে জিগ্যেস করলাম-
.
আমার বিয়ের সাথে আপনার বিয়ের কি সম্পর্ক শুভ্র ভাই।।আপনি চাইলে এখনি বিয়ে করতে পারেন....চিরকুমার থাকবেন কেন??
.
আরে এখন কেমনে?? বউ তো ছোট অনেক...ছোট বউ বিয়ে করলে তো আরেক প্যারা....এভাবে "হা" তাকিয়ে থাকিস না তো!!এসব গম্ভীর বিষয় তুই বুঝবি না... তুই তো থার্ড গ্রেডের বোকা রে রোদু।।
.
উনি আমার সাথে কথা বলতে বলতেই মাংস বসিয়ে দিলেন চুলোয়...বাহ!!এই খাটাস আবার রান্নাও পারে নাকি??আমি বিস্ময় নিয়ে সসপেনের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎই উনি চোখ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
কি রে? ঘোড়ার মতো সামনে চুল কেটেছিস দেখি।।কপালে পিম্পল হয়েছে নাকি?পিম্পল ঢাকার জন্য এই স্টাইল করেছিস??একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে....এমনি তো বাচ্চা দেখায় তোকে এখন তো একদমই....(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) একটু বড় হওয়ার ট্রাই করতে পারিস না??দিন দিন যে হারে ছোট হচ্ছিস .. ভবিষ্যতে তো তোর বাচ্চারাও কনফিউজড হয়ে যাবে....মা ডাকবে নাকি বাবু!!!ফর্সাও হয়েছিস দেখছি....তোকে না বলেছি রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে??একটা কথাও তো শুনিস না....চূড়ান্ত ফাজিল হয়েছিস তুই!!
.
উনার কথায় রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আমার।।অসীম রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই আম্মু বিস্ময় মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
এই রোদ?তুই না জোড় করে রান্না করতে এলি??এতো জোড়াজুড়ি করে এসে এখন ছেলেটাকে দিয়ে খাটাচ্ছিস??
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই শুভ্র ভাইয়া দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
ফুপ্পি?তোমার ছোট মেয়েটা যে চূড়ান্ত রকম ফাজিল হয়েছে তা কি তুমি জানো??আমি বাসায় ঢুকতেই বলে উঠলো...শুভ্র ভাই? ফুপির বাড়ি তো মানুষ মাসেও আসে না...আর আপনি তো চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন থেকে সপ্তাহে দু'বার করে চলে আসেন...এসব কি??এতো ঘন ঘন আসার জন্য আপনাকে পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত।। আর আপনার পানিশমেন্ট হলো...এখানে এসে রান্না করবেন।।ফুপ্পি?আমি ওকে বললাম তাহলে আমি চলে যাই...আর আসবো না।।আমার কথাটা শুনেই নাক মুখ ফুলিয়ে কি বললো জানো??
.
আম্মু তখন রাগের চরম পর্যায়ে।।কোনো রকম রাগ ধমন করে বললেন-"কি বললো??" সাথে সাথেই গভীর উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
ও বললো...না আসলে না আসবেন...কিন্তু আজকে রান্না না করে যেতে পারবেন না।।আগে রান্না করুন তারপর বিদেয় হোন।।তুমি বুঝতে পারছো ফুপ্পি??কতো বড় অপমান!!!
.
কিহ?এতোবড় সাহস ওর??একটা থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদপ মেয়ে।।(কাঁদো কাঁদো গলায়) আমার একমাত্র ভাইয়ের একটা মাত্র ছেলেকে তোরা এভাবে অপমান করিস??আজ তোর বাপের বোনের ছেলে আসলে তো তুলে তুলে খাওয়াতি।।আমার ভাইয়ের ছেলে বলেই এতো কথা??শুভ্র??তুই প্রতিদিন এই বাড়িতে আসবি...দেখি কে কি বলে....ফাজিল মেয়ে কোথাকার....বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখিস নি.??
.
রাগে আমার মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।। রাগী চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।।উনি মার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
.
দেখো ফুপ্পি কিভাবে তাকাচ্ছে!!আমি আর আসবো না তোমাদের বাসায়।।তুমি রোদু কে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে ফুপ্পি!!আমরা তো তাড়িয়ে দিবোই না পারলে পার্মানেন্টলিই রেখে দিবো...এভাবে কাজ করাবো না একদম....বরং আদর-যত্ন করে রাখবো হুহ।।যত্নের মধ্যে রান্না করে খাওয়াবো....আর আদর তো আদরই.. আদর তো কতো ধরনেরই হয়!!সব আদরই ফ্রী...(দাঁত কেলিয়ে)
.
মা উনার কথায় কি বুঝলেন আল্লাহ মালুম।।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
দেখেছিস কতো ভালোবাসে ও তোদের??আর তোরা??ছি ছি...এই দিনটিও দেখতে হলো আমাকে..??
.
আম্মু যখন আহাজারি করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই আমার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডান চোখ টা টিপেই বলে উঠলেন- "যাবি নাকি আদর খেতে??"
.
আমি কোনো কথা না বলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।।এখানে দাঁড়ানো আর সম্ভব নয়... কিছুতেই না....আর একটু দাঁড়ালে এই ব্যাক্তিটাকে খুনই করে ফেলবো আমি!!উফফ...কি বিরক্তিকর!!


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন