উপন্যাস        :         রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা        :          নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং

লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা


৬০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ৬১)


আমার জীবনের শুরুটা ছিল পাখির মতো। নানা অবাধ্যতাকে সাঙ্গ করে ডানা ঝাপটাতে আমার সেকি আনন্দ! এতো চঞ্চলতা; এতো উচ্ছ্বাস! কোথাও কোনো শেকল নেই। বাঁধা নেই। নিরন্তর ছুটে চলা। তবুও বুনো পাখির মতো বড়ো বিদ্রোহ জাগতো মনে। যে বিশাল আকাশটা আমার নামে লিখে দেওয়া হয়েছিল? যে শুভ্র মেঘেরা আলতো আলতো আদরে চেয়ে চেয়ে দেখতো আমায়। তাদেরকে মনে হতো আমার স্বাধীনতার অন্তরায়। আকাশটাকে লাগতো বিশাল এক বন্দী খাঁচা। বন্দী খাঁচা ছিলো বৈকি! কিন্তু ততদিনে আমিও তো বন্দী খাঁচায় পোষ মানা বন্দী পাখি। নয়তো যখন স্বেচ্ছায় সরে গেল শুভ্র মেঘের দল ; আমি কী করে এতো নিশ্চুপ হলাম? ডানা ঝাপটাতে ক্লান্ত ঠেকল। বিশাল নীল আকাশ পেয়েও উড়তে ইচ্ছে হলো না। শুভ্র মেঘের প্রয়োজন কিনা জানি না; তবে সূর্যটাকে বড়ো তীক্ষ্ণ ঠেকল। উপলব্ধি হলো, বন্য পাখি পোষ মেনে গেলে তার আর উড়ার উপায় থাকে না। বোধ করি, সেজন্যই আমার আর দ্বিতীয়বার উঠে দাঁড়ানো হলো না। আমার প্রচন্ড জেদ; চাইলেই সকল দুঃখকে বিদীর্ণ করে উঠে দাঁড়াতে পারতাম। কিন্তু কেন জানি ইচ্ছেই হলো না। দ্বিতীয় বার উঠে দাঁড়ানোর জেদ হলো না। জেদটা আমার বেঁচে থাকার প্রধান গৌরব ছিলো। হাসিটা ছিলো জ্যোতি। কিন্তু জেদটা যখন হারিয়ে ফেললাম তখন যেন হারিয়ে ফেললাম নিজেকেই। নিজের কাছে হেরে যাওয়া খুব খারাপ ব্যাপার। এক বিন্দু প্রতিবাদ না করে, সব দায় ছেড়ে দিয়ে নিজের সাথে এই খারাপ ব্যাপারটাই ঘটতে দিলাম। নিজের প্রতি এটা বোধহয় আমার শাস্তি ছিল। কীসের শাস্তি জানা না থাকলেও বুঝলাম, এই চুপচাপ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার শাস্তিটা আমার প্রয়োজন ছিলো। মনের ভেতরের আগুন নিভে যাওয়ার মতোন বড়ো শাস্তি সৃষ্টিকর্তা বোধহয় আর দিতে পারতেন না।
তখন পৌষ মাস। মাঘের চৌহদ্দি ছুঁই ছুঁই। শীতের দাপট বাড়ছে। আবহাওয়া রিপোর্টে তাপমাত্রার পারদ হুহু করে নেমে যাচ্ছে। দুই একদিন ঝড়-বৃষ্টিও হলো। ক্যালেন্ডারের পাতায় সেদিন দোসরা জানুয়ারি। ঘড়ির কাটাটা বারোর ঘরে আসতেই পরিচিত মহলে শুভেচ্ছার ছড়াছড়ি। আমারও আগ্রহের সীমা নেই। যে জন্মতিথিটা আমি একদমই চাইনি? সেই জন্মতিথির প্রথম প্রহরেই আমি হাসি হাসি মুখ করে সকলের আদর নিলাম। আকাশ সমান ভালোবাসা নিলাম। এতো আনন্দ, ভালোবাসার মাঝেও খুব সন্তপর্ণে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। কেমন কালো কালো তাদের রূপ। খুব বিষণ্ণ। বিষাদে মোড়ানো। কিছুক্ষণ আগে বাবা ফোন করেছিলেন। খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে জানিয়েছেন,
' শুভ জন্মদিন আম্মু।'
বাবার কখনোই তারিখ মনে থাকে না। আশ্চর্যের ব্যাপার; এবার মনে ছিলো। কেবল মাত্র আমাকে খুশি করবে বলেই হয়তো মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে ছিলো। এমন অকৃত্রিম, বোবা ভালোবাসা পেয়ে অসহায় লাগল আমার। কেন এতো ভালোবাসে তারা? আমার কাছে জাদুদন্ড থাকলে সবার মন থেকে এক নিমিষেই মুছিয়ে দিতাম আমার তিন অক্ষরের নাম। বলতাম, শুনো পৃথিবী? আমাকে অতো ভালোবাসার দরকার নেই। ভালোবাসা মানেই দায়। আমার আর দায় উঠানোর শক্তি নেই। সময় নেই। আমার এখন নিরন্তর বিশ্রাম। আমি চোখ বোজে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। বাড়ন্ত রাতের সাথে সাথে চোখে নামল ঝুমঝুমি রঙিন স্বপ্ন। কুয়াশা ঢাকা বিষণ্ণ এক রাস্তা। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলো। পথের ধারে নেড়ি কুকুর। নীল পাঞ্জাবি আর কালো চাদর গায়ে সৌম্যকান্ত এক দীর্ঘকায় যুবক। নিরুদ্বেগ হাঁটছে। গলা ছেড়ে গান গাইছে,
'How do I live? How do I breathe?
When you're not here, I'm suffocating
I want to feel love, run through my blood.
Tell me is this where I give it all up?'
যুবকের পেছন পেছন ছুটছে লাল বসনা এক কিশোরী। কিশোরীর রিমঝিম নূপুর আর কাঁচের চুড়ির আওয়াজে খিলখিলিয়ে উঠছে নিস্তব্ধ রাত। হিমেল কুয়াশারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে পিঠে ছড়ানো মোলায়েম কেশরাশি। তার কাজল রাঙা চোখদুটোতে ভারী অভিমান। সে ক্ষুব্ধ কন্ঠে শুধাল,
' আপনি সবসময় ইংলিশ গান কেন গান? বাংলা গান গাইলেই পারেন।'
কিশোরীটির মুখটি এবার আচমকা স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো আমার চোখে। কী আশ্চর্য, মেয়েটা আমি! আর এই রাতটা ঠিক যেন আমারই অষ্টাদশ জন্মতিথি। আমি অবাক হলাম। বলিষ্ঠ পুরুষটি আমায় আরও অবাক করে দিয়ে রিনরিনে কন্ঠে গান ধরলো,
'আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে,
কেবল তোমায় ভালোবেসে।'
কিন্তু কী আশ্চর্য! পুরুষ মানুষের কন্ঠ এমন রিনরিনে হবে কেন? পুরুষ মানুষের কন্ঠ হবে বুক কাঁপানো জলদগম্ভীর। তবে কী এই যুবক পুরুষ নয়? আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে স্বপ্নদৃশ্য পাল্টে গেল। শূন্য রাস্তাটা কেমন মিলিয়ে গেল। সেই বলিষ্ঠ যুবক, ল্যাম্পপোস্ট, নেড়ি কুকুর কিচ্ছু নেই। চারদিকে কেবল এক ঘূর্ণিয়মান অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে কেউ একজন ডাকছে। কে ডাকছে আমায়? কী চাই তার? এতো করুণ কেন তার কণ্ঠস্বর? আমার তন্দ্রাচ্ছন্নভাব কেটে গেল। দরফর করে উঠে বসলাম বিছানায়। বুকের ভেতরটায় ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। কানে বাজছে এখনও একই ঘোর। কেউ যেন ডাকছে। খুব করুণ তার কণ্ঠস্বর। কী বলতে চাইছিল সে? মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল কথা শুনতে না পারার মন খারাপে। এমন সময় একটা কন্ঠ কানে এলো,
' আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে...'
গানের কথাগুলো কানে যেতেই ধাতস্থ হয়ে আশেপাশে চাইলাম। আমার থেকে হাতখানেক দূরে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে ঋতু। গান গাইছে। আমাকে দেখেই গান থামিয়ে মৃদু হাসলো। চকচকে চোখে চেয়ে বলল,
' ঘটনা তো একটা ঘটে গিয়েছে।'
আমার মাথা তখনও ভার। এক হাতে কপাল চেপে ধরে বললাম,
' মানে?'
ঋতু উৎসাহ নিয়ে বলল,
' বাসার নিচে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ভোর তিনটা থেকে খেয়াল করছি। এখন বাজে চারটা পঞ্চাশ। ছেলেটা বোধহয় রিক্তা আপুর ছয় নম্বর প্রেমিক। বাইরে খুব ঠান্ডা; ছেলেটার জন্য এতো মায়া হচ্ছে! মনে হচ্ছে, রিক্তা আপুকে নিজে গিয়ে বলি, ওহে রিক্তা আপু? নিচে আপনার প্রেমিক দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেয়ে যান। প্লিজ। আই ইনসিস্ট।'
ঋতু সাধারণত এমন ধরনের কথা বলে না। আজ বলছে।তার কথায় আমি ভ্রু বাঁকিয়ে চাইলাম। ভ্রু নাচিয়ে বললাম,
' ঘটনা কী? তার প্রতি তোমার এত্তো মায়া?'
ঋতু হেসে ফেলল,
' ধুর আপু! আপনি সবসময় নেগেটিভ ভাবেন। আমি তো স্ব-শহরীয় ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে বলছিলাম। আমার শহরের একটা ছেলে রিক্তা আপুর মতো দশ প্রেমিক চালানো টাইঙ্গাইলা মেয়ের কাছে দূর্দান্ত ছ্যাঁকা খাবে ভাবতেই তো মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।'
আমি হেসে ফেললাম। বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম,
' ছেলেটাকে একবার চায়ের দাওয়াত দিয়ে দেখতে পারো। তার জন্য যে তোমার হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো মন খারাপ হচ্ছে, ব্যাপারটা তাকে বুঝিয়ে বলতে পারো। দেখা গেলো, তোমার ''স্ব-শহরীয় ভ্রাতা"র কচি হৃদয়টা এবারের মতো বেঁচে গিয়ে তোমার সাথে জোড়া লেগে গেল? আমরা একটা অমর প্রেমের সাক্ষী হয়ে গেলাম?'
মুহূর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল ঋতুর মুখ। লজ্জা এড়াতে হেসে ফেলে বলল,
' আই হেইট জোড়াতালি। তার হৃদয়টা আমার থেকে আপনার সাথে জোড়া লাগলেই বরং বেশি ভালো হতো। নীলা আপু কী বলেছে শুনেননি? উনিশ বছরে পা দিয়েও যদি আপনি একটা প্রেমই না করতে পারেন? তবে আপনার জন্য ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। এক্কেবারে তালা-চাবি গুঁজে বন্ধ।'
আমি হেসে ফেললাম। ঋতু উঠে গিয়ে পড়তে বসলো। এই মেয়েটা দিন রাত পড়াশোনা করে। এতো ধৈর্য কোথায় পায় কে জানে? আমি আড়মোড়া ভেঙে বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পিঠময় ছড়ানো চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে নিচের দিকে উঁকি দিলাম। আমাদের উপরতলার রিক্তা আপুর প্রেম জীবন ফসলি জমির মতোই উর্বর। আমাদের বাংলা যেমন, 'ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা?' রিক্তা আপুর জীবনও তেমন, 'প্রেম, পুরুষ ও প্রেমিকে ভরা।' তার সুজলা- সুফলা- প্রেমিকে ভরা জীবন আমাদের রুটিন লাইফের একমাত্র বাংলা সিনেমা। বিনোদনের একমাত্র উপায়। আমি খুব আশা নিয়ে নিচে তাকালাম। কিন্তু আমায় আশাহত হতে হলো। তখনও ঠিকঠাক আলো ফুটেনি। বাইরে ভীষণ কুয়াশা। ল্যাম্পপোস্টের আলোটাও কেমন নিভু নিভু। গাঢ় কুয়াশার সাথে ঠিক যেন কায়েদা করে উঠতে পারছে না। ফুটপাতের উপর একটা পুরুষ মতোন শরীর ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। কাউকে কল করছে আবার সাথে সাথেই কেটে দিয়ে থম ধরে বসে থাকছে, এটুকু ছাড়া আর কিছুই বোঝার উপায় নেই। আমি হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ছেলেটি এবার উঠে দাঁড়াল। অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের টুকরোতে লাথি কষলো। প্রায় সাথে সাথেই চমকে উঠলাম আমি। বিদ্যুৎ ঝিলিকের মতো চিন্তা খেলে গেল, হিল্যুসিনেশন? হতে পারে। মাথার ব্যামোটা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। কিন্তু, মাথা নষ্ট ব্যামোটা বেছে বেছে ওই বেয়াদব, অসভ্য, জল্লাদ লোকটাকেই তুলে আনলো কেন? আজাইরা! দুনিয়াতে আর কোনো মানুষ ছিলো না? এখন যদি উঠতে, বসতে, শুতে সব জায়গায় এই লোককে দেখতে পাই তাহলে তো সমস্যা। আমি বিরক্ত চোখে চেয়ে রইলাম। অনেক সময় ধরে ঘাড় এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বহু কসরত করে দেখলাম। নাহ, হিল্যুসিনেশন কাটছে না। আচ্ছা, এটা কী ধরনের হিল্যুসিনেশন? শুধু দূর থেকে দেখা যায়? আমি মুখোমুখি দাঁড়ালেও দেখা যাবে? নাকি হুট করেই অন্য মানুষ হয়ে যাবে? পরীক্ষা করে দেখা যাক। বহু চিন্তা ভাবনা করে গায়ের উপর পাতলা চাদর মেলে নিচে নেমে এলাম। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ উত্তেজনা হচ্ছে। ভয় হচ্ছে। ঝপসা ঝাপসা দেখা ওই হিল্যুসিনেশনটা কী কোনোভাবে সত্যি হতে পারে? মনে মনেই প্রমাদ গুণলাম আমি। অসম্ভব। তাই কী হয়? শুভ্র ভাইয়ের মতো আত্মসচেতন মানুষ পড়াশোনা ছেড়ে, আবেগে ভেসে, ভিনদেশ থেকে মাঝ রাত্তিরে আমার বাড়ির সামনে এসে হা করে দাঁড়িয়ে থাকবে, এমনটা ভাবা হো হো করে হেসে ফেলার মতোই জল্পনা। আমি কাঁপা হাতে ফটকের তালা খুললাম। ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলাম, গলাটা শুকিয়ে আসছে। বেয়ারা মনটা খুব নিষিদ্ধ এক ইচ্ছের দাবি রাখছে। নিজের এমন আকন্ঠ বেহাপনায় বিরক্ত হলাম আমি। খুব বিরক্তি নিয়ে মূল ফটক পেরিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, এই হিল্যুসিনেশন-ফিল্যুসিনেশন ভুলে সার্কিট হাউজের রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করব। যে পুরুষ আমায় বেমালুম ভুলে গিয়ে জাপানে বসে থিওরি কপচাচ্ছে। মেয়েদের সাথে মাখনের মতো চিপকে থাকছে তাকে নিয়ে কল্পনায় এতো আহ্লাদ করার মানে হয় না। কিন্তু বিধিবাম। ফটক পেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই প্রতিজ্ঞা কী? আমার পুরো পৃথিবীই যেন থমকে গেল। রাস্তার ঠিক ওপাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘদেহী মানুষটিকে দেখে কেমন অনুভূতি হলো তা যেন নিজেই উপলব্ধি করতে পারলাম না। বিশ্লেষণ করতে পারলাম না। চোখের তারায় হাজার টন বিস্ময় খেলে গেলো। ফুটপাতের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্লান্ত-শ্রান্ত, এলেমেলো যুবকটিকে এক মুহূর্তের জন্য আমার আবদার, অভিযোগের ভারী ব্যাগ কাঁধে ঘুরে বেড়ানো স্যান্টাক্লজ বলে বোধ হলো। যে বহু বহু দূরের দেশ থেকে ছুটে এসেছে কেবল আমার অভিযোগ নামার পত্রগুলোকে বাতাসে ঢেকে আকাশে উড়িয়ে দেবে বলে। কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, সকল প্রতিরোধ হাওয়ায় ভাসিয়ে, একেবারে মনের অজান্তেই রাস্তার ওপাশে ছুটে গেলাম আমি। তারপর চোখের পলকে, বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আছড়ে পড়লাম সেই দীর্ঘকায় পুরুষের ভীষণ শক্ত বুকে। আমার খুব শূন্য মনটা মুহূর্তেই ভরে উঠল হাজার হাজার শিউলী ফুলের সুগন্ধে। জীবনটাকে আচমকা বেলীফুলের মতো স্নিগ্ধ বলে বোধ হলো। কী সুন্দর! কী সুন্দর!
আমার আকস্মিক আক্রমণে চমকে উঠল আগুন্তকঃ। হাত থেকে ছিটকে পড়ল মুঠোফোন। আমাকে নিয়ে দুয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একটাও কথা বললো না। পরিচিত সেই গন্ধটা নাকে আসতেই জীবনের প্রতি শত শত অভিযোগ মনে পড়ে হুট করেই কেঁদে ফেললাম আমি। কিছুতেই আটকে রাখতে না পারা কান্নাটা একসময় ভয়াবহ রূপ ধারণ করলো। অথচ আগুন্তকের পাথর কঠিন সংযম একটুখানি নড়বড়ে হলো না। সে আগের মতোই স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। অবিচল। একটুও নড়লো না। কথা বললো না। কেবল তার ঢাক পেটানো হৃদপিণ্ডের অত্যাচারটা বেড়ে চললো ক্রমাগত। কানের কাছে শুনতে পেলাম তার বুকের ভেতরের প্রচন্ড আন্দোলন, ধ্রিম! ধ্রিম! ধ্রিম! ধ্রিম! আমার হাতের বাঁধন আপনাআপনিই শক্ত হয়ে এলো। এই মানুষটাকে, এই গন্ধটাকে আরও শক্ত করে বেঁধে ফেলতে না পেরে বুকে হুহু করে উঠার মতো আফসোস হলো। রুদ্ধ হয়ে আসা কন্ঠটা অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,
' সরি!'
এবারও কোনো হেলদোল দেখা গেল না। প্রাণহীন মূর্তির মতোই দাঁড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ। মনের সমস্ত আবেগ ঢেলে আবারও স্বগতোক্তি করলাম আমি,
' সরি।'
প্রাণহীন মূর্তিতে যেন এবার প্রাণের সঞ্চার হলো। অনেকক্ষণ পর বোধহয় তিনি বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন। ধীর কন্ঠে বললেন,
' কতোটুকু সরি?'
আমার হাতের মুঠো শক্ত হলো। পাতলা ফিনফিনে শার্টটা মুঠো বদ্ধ করে মাথাটা যেন আরও চেপে বসলো তার পাথর কঠিন বুকে। কোথাও যেন খুব ভয়। ভয় ভয় কষ্ট। ভয় ভয় আনন্দ। শুভ্র ভাইয়ের হৃদযন্ত্রটাও বুঝি আরও একটু অস্থির হলো? আমি ঠোঁট উল্টে রুদ্ধ কন্ঠে বললাম,
' কানে ধরে উঠবস করার মতো সরি।'
মুহূর্তের মাঝে নিজের রূপে ফিরে এলেন শুভ্র ভাই। ধমকে উঠে বললেন,
' তাহলে কলিজার উপর চেপে না থেকে কানে ধর। গুণে গুণে দুই হাজার চারশো বার কান ধরে উঠবস করবি। ইউর টাইম স্টার্টস্ নাও।'
সাথে সাথেই কান্না বন্ধ হয়ে গেল আমার। মুখ তুলে অবাক চোখে চাইলাম। হিল্যুউসিনেশনের ভূত কেটে গেল। বুঝলাম, এই মহা বেয়াদব লোকটা সত্য সত্যই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং এসেই আমাকে ভয়াবহ অপমান করে ফেলেছেন। মুহূর্তেই মাথামোটা রাগটা গিজগিজ করে উঠল নিউরনে নিউরনে। মনে মনে বুঝে ফেললাম, এই লোকের সাথে ভালো ব্যবহার করে লাভ নেই। কুকুরের পেটে ঘি হজম হবার চিন্তাটা যেমন অবান্তর? শুভ্র ভাই মাঝরাতে ফিরে এসে আমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন এমন চিন্তা করাও ভয়াবহ রকম অবান্তর। আমার বিরহ বিরহভাব কেটে গেল। ফুঁসে উঠে বললাম,
' হঠাৎ কান ধরতে যাব কেন আমি? ধরব না।'
শুভ্র ভাই ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে বললেন,
' ধরবি না তো বললি কেন?'
' বলেছি নাকি? কই? আমার তো মনে পড়ছে না। তাছাড়া, কী এমন করেছি যে কানে ধরে উঠবস করতে হবে? আমি এখন টোয়েন্টি। আপনি জানেন না?বিশ বছরের মেয়েদের কান ধরে উঠবস করতে হয় না।'
শুভ্র ভাই এবার এমন একটা ভাব করলেন যেন উনি বিস্ময়ের ঠেলা সামলাতে না পেরে এই মুহূর্তে অ্যাটাক ফ্যাটাক কিছু একটা করে ফেলবেন। বুক চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠে বলবেন, 'আমেনার মা!' আমি তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলাম। শুভ্র ভাই 'আমেনার মা' বলে না চেঁচালেও অনেকটা একইরকম কান্ড ঘটালেন। এক হাতে বুক চেপে ধরে বিস্ফারিত চোখে চাইলেন। বললেন,
' কী পরিমাণ ধান্দাবাজ রে তুই রোদু? ধানের খইয়ের মতো ফটফট করে মিথ্যা ফুটাচ্ছিস! বাকি সব নাহয় বাদই দিলাম। এইযে আমার কলিজার উপর চেপে বসে আমার কলিজা, ফুসফুস সব নষ্ট করে দিলি। এজন্যও তো তোর কান ধরে উঠবস করতে করতে হাঁটুর হাঁড় ক্ষয় করে ফেলা উচিত। আমি ভদ্র ছেলে। কোনো প্রতিবাদ করি না বলে তুই সুযোগ বুঝে আমার কলিজা, ফুসফুস নষ্ট করে দিবি?'
আমি হতবাক হয়ে গেলাম। বললাম,
' আমি একটু চেপে ধরায় আপনার কলিজা, ফুসফুস সব নষ্ট হয়ে গেল?'
শুভ্র ভাই খুব গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
'অবশ্যই হলো। নাহলে আমার বুক এমন ধরফর করছে কেন? কলিজাতেও তো নিউক্লিয়ার বোম ফাঁটার মতো বিস্ফোরণ হচ্ছে। চেয়ে দেখ, হাতে-পায়ের রোম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এই এতো এতো ব্যথা সহ্য করেও আমি তোকে মাফ করে দেব ভেবেছিস? কক্ষনো না। কদাপি নহে।'
আমি ক্লান্ত চোখে চাইলাম। এই অ-ভদ্রলোক সুদূর জাপান থেকে ছুটে এসেছে কেবল আমার সাথে ঝগড়া করবে বলে, ভাবতেই কান্না পেয়ে গেল। অসহায় কন্ঠে বললাম,
' আপনার কলিজা যে এতো সেনসেটিভ তা তো আমি জানতাম না শুভ্র ভাই। আমি একটু ছুঁলেই যে আপনার কলিজায় নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ হয়ে যাবে জানলে আমি কক্ষনও ছুঁতাম না। সত্যি!'
শুভ্র ভাই কড়া চোখে চেয়ে সংশোধন করে দিলেন,
' একটু ছোঁয়া কী? তুই রীতিমতো চেপে ধরেছিস।'
রাগে শরীরটা জ্বলে গেলো আমার। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
' ওই একই। জানলে আমি কক্ষনো চেপে ধরতাম না। আপনার কলিজায় এমন বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়ায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত শুভ্র ভাই।'
শুভ্র ভাই আমার দুঃখিত হওয়ায় খুব একটা সুখী হলেন না। আমার দুঃখবোধকে তিনি জাস্ট পাত্তা না দিয়ে বললেন,
' না জানলেই চেপে ধরতে হবে? আমি তো কখনো ধরিনি তোকে। মনে কর, ধরেছিলাম?'
আমি হতাশ চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে চাইলাম। মনে মনে নিজের মাথাটা হাজারটা ইট মেরে মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেললাম। কী দরকার ছিলো ওমন করে জড়িয়ে ধরার? আবেগ রাখার আর জায়গা পাস না? জড়িয়ে ধরার হলে অপরিচিত কোনো ছেলেকে ধরতি। দরকার পড়লে গলায় ঝুলে পড়তি। তবুও এমন মসিবতে পড়তে হতো না। এখন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কলিজা বিস্ফোরণের দায়ে দন্ডিত হয়ে থাকতে হবে। নিশ্চিত, শুভ্র ভাই কাজিন মহলের যাকেই দেখবে তাকেই ডেকে ডেকে বলবে, এই শোন? রোদু না আমায় চেপে ধরে কলিজা নষ্ট করে দিয়েছে। একেবারে বিস্ফোরণ। উফ! অসহ্য! আমি বিরক্ত চোখে চাইলাম। বিরক্তিতে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
' এখন কী এই বিস্ফোরণের দায়ে আমাকে মরে যেতে হবে শুভ্র ভাই?'
শুভ্র ভাইয়ের নির্বিকার জবাব,
' মরে যেতে হবে না। কানে ধরতে হবে। নয়তো আমিও তোকে ওভাবেই চেপে ধরব। বিস্ফোরণে বিস্ফোরণে কাটাকাটি।'
কত্তো বড় খারাপ! বদ পুরুষ মানুষ। আমি ফুঁসে উঠে বললাম,
' কক্ষনো না!'
শুভ্র ভাই কাঁধ ঝাঁকালেন। নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন,
' তাহলে কান ধর।'
আমার তেজ উবে গেল। মুখটা আবারও কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। মুহূর্তেই মুখখানাকে মক্কার খেঁজুরের মতো নিষ্পাপ করার চেষ্টা করে বললাম,
' ভোর হয়ে গিয়েছে শুভ্র ভাই। এক্ষুনি শত শত মানুষ রাস্তা হাঁটতে বেরুবে। তারা যদি দেখে আমি রাস্তায় কান ধরে উঠবস করছি তাহলে আপনাদের অসম্মান হবে না? মানুষ তো ভাববে শুভ্রদের বংশের মেয়েরা রাস্তায় কান ধরে উঠবস করে। ব্যাপারটা ভালো দেখায়? আপনার মতো সুবিবেচক মানুষ এমনটা হতে দিতে পারে?'
শুভ্র ভাই ভ্রু বাঁকিয়ে চাইলেন। আমার এতো মিঠে মিঠে কথার দু'আনা মূল্যও তিনি দিলেন না। বললেন,
' মানুষের ভাবনা দিয়ে তো আমি আমার কলিজা বিস্ফোরণের শাস্তি দিতে পিছু হটবো না। আমি একজন সুনাগরিক হয়ে তোর মতো বেয়াদব, অসভ্য, ধান্ধাবাজ অপরাধীকে বিনা বিচারে ছেড়ে দিতে পারি না। যেখানে তোর বাপ আবার দ্বিতীয় ইয়াহিয়া। আমি খাঁটি বাঙালি ; ইয়াহিয়ার কন্যার প্রতি কোনো মায়া-মহব্বত চলবে না। তুই অবশ্যই আমার সাথে যাবি। আমরা দরজা বন্ধ করে শাস্তি দেওয়া নেওয়া করব। কিন্তু কোনোভাবেই শাস্তি কমানো যাবে না। নেভার।'
আমি ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেললাম। এই লোকের সাথে তর্ক করতে করতে শেষ শক্তিটুকুও নিঃশেষ প্রায়। ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,
' এখন আমার কান ধরে উঠবস করার জন্য টাউনহল থেকে চরপাড়া যেতে হবে?'
শুভ্র ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
' হ্যাঁ, হবে।'
আমার এক মুহূর্তের জন্য এই অসহ্য লোকটাকে এক লাথিতে জাপান পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। উফ! এতো জ্বালায় কেন এই লোক? একটু ভালো ছেলেটির মতো ব্যবহার করা যায় না? শুভ্র ভাই দুয়েক পা এগিয়ে গিয়ে ছিটকে পড়া মোবাইল উদ্ধার করলেন। মোবাইল স্ক্রিনের বেহাল দশা দেখে হিংস্র চোখে আমার দিকে চাইলেন। মাথায় জবরদস্ত একটা চাটি মেরে মর্মাহত কন্ঠে বললেন,
' কতবড় খারাপ রে তুই রোদু। তোর কন্যাদায়গ্রস্থ, দুঃখী বাপের মুখ চেয়ে তোর মতো বিস্ফোরণকে বিয়ে করেছি বলে আমার জীবনে এমন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলবি তুই? এতো অত্যাচার করবি? কলিজা ফাঁটিয়ে টাটিয়ে ফোনও ফাটিয়ে ফেলবি? এই ফোনের টাকা তোর ধান্ধাবাজ বাপের থেকে যৌতুকে নিবো আমি। ব্যাটা সুযোগ পেলেই একচ্ছত্রভাবে আমার রক্ত চুষবে। আর আমি কিছু পাবো না? তা তো হতে পারে না! এই যান্ত্রিক বিস্ফোরণের জন্য তোর উঠবস আরও পাঁচশো বেড়ে গেলো। নাউ ইউর কাউন্ট ইজ, টু থাউজ্যান্ড নাইন হান্ড্রেড।'
শুভ্র ভাইয়ের চাটিতে প্রায় উল্টে পড়ার জোগাড় হলো আমার। নিজেকে সামলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিরক্ত চোখে চাইলাম। এক মুহূর্তের জন্য বিরক্তিতে শ্বাসবন্ধ হয়ে মরে যাব বলে বোধ হলো। দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে মনে মনে দশ হাত তুলে প্রার্থনা করে ফেললাম, 'হে আল্লাহ! হে খোদা! হে রহমানির রহিম! হে গাফ্ফারুর রাহিম! এই লোকের জন্য দোয়া করে বহুত বড়ো পাপ করে ফেলছি আমি। আমি পাপিষ্ঠ। মহাপাপী। এতোবড় পাপ করে ফেলে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি দোয়া ব্যাক নিচ্ছি। তুমিও এই অসভ্য, বেয়াদব, সন্ন্যাসী পর্যায়ে চলে যাওয়া লোকটাকে জাপানে ব্যাক করে দাও, প্লিজ, প্লিজ। যেখানের মাল সেখানে যাক। আমার দেশবাসী শান্তিতে থাক। আমিন!' শুভ্র ভাই ততক্ষণে রাস্তা ধরে হাঁটা ধরেছেন। কুয়াশার চাদর গায়ে ঘুমন্ত শহরটিতে ধীরে ধীরে মেঘের মতোই মিলিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আমি দৌঁড়ে উনার পিছু নিলাম। উনার পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে রীতিমতো হাঁপ ছুটে গেল আমার। শুভ্র ভাই আমার দিকে চেয়ে ভীষণ চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
' বিরাট একটা মিস হয়ে গেল বুঝলি? তোর মতো ভয়ঙ্কর মহিলাকে কে বাসা ভাড়া দিলো সেটা দেখে আসা উচিত ছিলো। বাড়িওয়ালার সাথে দেখা না করে চলে আসাটা উচিত কাজ হয়নি। অপরাধবোধে মরে যাচ্ছি।'
আমি অবাক চোখে চাইলাম। বিভ্রান্ত হয়ে বললাম,
' কেন? বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করতে হবে কেন? উনার সাথে আপনার কী কাজ?'
শুভ্র ভাই আশ্চর্য হয়ে বললেন,
' দেখা করব না? তোর মতো ভয়ঙ্কর পদার্থকে বাসা ভাড়া কে দিলো দেখতে হবে না? দেখা গেল, তুই বাড়িওয়ালার ঘাড়ে বসেই কাঁঠাল পেরে খেয়ে ফেললি। ফট করে বাড়িওয়ালার আলাভোলা ছেলেকে পটিয়ে টটিয়ে বাড়িটা নিজের নামে লিখে নিলি। সর্বনাশ অবস্থা। তখন তো দোষ তোর হবে না, দোষ হবে আমাদের গোষ্ঠীর। আমি সচেতন নাগরিক হয়ে তো এতোবড় অন্যায় হতে দিতে পারি না। তুই যে কী জিনিস, ব্যাপারটা উনাকে জরুরি ভিত্তিতে জানিয়ে আসা উচিত।'
আমি থমকে দাঁড়ালাম। চোখ-মুখ লাল করে থম ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। শুভ্র ভাই হাঁটতে হাঁটতে থমকালেন। অবাক হয়ে বললেন,
' কী হলো?চল!'
আমি শক্ত কন্ঠে বললাম,
' আপনি যান। আমি ভয়ঙ্করতম মহিলা। এখন আমার উচিত বাড়িওয়ালার ঘাড়ে বসে কাঁঠাল খাওয়া। তার আলাভোলা ছেলেকে পটিয়ে ফেলা। আপনার সাথে হেঁটে-হেঁটে চরপাড়া চলে যাওয়া নয়। আমি যাব না।'
এইযে আমি শক্ত কন্ঠে নিষেধ করলাম? বিরক্তিতে আমার মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল? শুভ্র ভাই তার চার আনা মূল্যও দিলেন না। 'হেঁটে-হেঁটে' শব্দটা ছাড়া আগেপিছের কোনো বাক্য তিনি শুনলেনই না। বিস্ময়ে ফেঁটে পড়ে বললেন,
' কেমন ফন্দিবাজ মেয়ে রে তুই রোদু! আগে তো দেখতাম খুব নেচে নেচে চরপাড়া থেকে টাউনহল কলেজ করতে চলে আসতি। আর যখনই বিয়েটা হলো, সাথে সাথেই 'হেঁটে-হেঁটে' তে ট্যাগ মার্ক? এটুকু হাঁটলে তোর পা খয়ে পড়ে যাবে? খালি বরের টাকা নষ্ট করার ধান্দা। এইযে আমি জাপান থেকে হেঁটে হেঁটে দেশে চলে এলাম। একবারও অভিযোগ করেছি? আশ্চর্য!'
রাগে-দুঃখে পুরাতন মাথাব্যথাটা আবারও দপদপ করে জ্বলে উঠল আমার। দাঁতে দাঁত চেপে, ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়ে বললাম,
' আপনি জাপান থেকে হেঁটে-হেঁটে দেশে চলে এসেছেন শুভ্র ভাই?'
শুভ্র ভাই কাঁধ ঝাঁকালেন,
' তা নয়তো কী? এইযে হেঁটে হেঁটে ফ্লাইটে উঠলাম, নামলাম। এটাকে হেঁটে আসা বলে না?'
আমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো রাগের তান্ডবে এই মুহূর্তে 'বুম' করে ফেঁটে যাবে আমার ফুসফুস। আমি দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বললাম,
' অবশ্যই বলে শুভ্র ভাই। আপনি অবশ্যই হেঁটে হেঁটে জাপান থেকে দেশে চলে এসেছেন। এজন্য আমার আনন্দে আপনার পা ধরে সালাম করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।'
শুভ্র ভাই গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
' দরকার নেই। আমি জানি, আমি মহৎপ্রাণ। আমাকে এসব পা ধরাধরি করতে হবে না। আম্মু বলেছে, তাঁর পুত্রবধূকে মহারাণীর মতো আদর-যত্ন করতে হবে। সে আদরের দুলালি। তাকে আদরে আদরে রাখতে হবে। আমি 'মাতার আদেশ শিরোধার্য' ধরনের ছেলে। আম্মুর পুত্রবধূকে আদর করতে আমার বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই। তার কোমল পায়ে ব্যথা লাগানোরও প্রয়োজন নেই। আমি তাকে বাঙালির পঙ্খীরাজে করে নিয়ে যাব।'
শুভ্র ভাইয়ের কথায় বিরক্তি উবে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম আমি। অবাক হয়ে বললাম,
' এ্যাঁ? পঙ্খীরাজ? জাপান গিয়ে আপনি যাত্রা-ফাত্রাতে যোগ দিয়ে ফেলেননি তো শুভ্র ভাই? ওখানে বাংলাতে যাত্রা হয়?'
শুভ্র ভাই বিরক্ত চোখে চাইলেন। চোখ দিয়েই অদৃশ্য দুটো হাত বের করে দু'গালে সটান দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
' চুপ! বেয়াদব।'
আমি চুপ করলাম। তখন কেবল আলো ফুটছে। রাস্তায় দু-একজন পথচারী আর কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে কালেভদ্রে দেখা যাওয়া দু-একটা রিকশা চোখে পড়ছে। শুভ্র ভাইয়ের ভাগ্য চমৎকার। তিনি সেই কালেভদ্রে দেখা যাওয়া দু-একটা রিকশার মাঝের একটি পেয়ে গেলেন। আমি রিকশায় উঠে বসতেই আমার পাশে এসে বসলেন শুভ্র ভাই। কুয়াশায় ঢাকা ময়মনসিংহ নগর। চোখের সামনে যেন মেঘ ভাসছে। শীতালু বাতাসে ঝরে পড়ছে শুকনো পল্লব রাশি। শিশিরে টইটুম্বুর গাছের পাতা, বিজন পিচের পথ। কানের কাছে বাজছে মিঁইয়ে আসা অচেনা পাখির সুর, রিকশার টুনটান। নাকে লাগছে কোনো এক অট্টালিকা থেকে ভেসে আসা তীব্র শিউলী আর খুব তীব্র 'শুভ্র ভাই, শুভ্র ভাই' গন্ধ। কী অদ্ভুত! এই গন্ধটা যেন ঠিক চাঁদ রাতের মতো। এতো আদর! এতো সুন্দর! এতো মন ভালো, মন ভালো! আমি চোখ ফিরিয়ে শুভ্র ভাইয়ের দিকে চাইলাম। গাঢ় কুয়াশার কুন্ডলীতে, কুয়াশা রঙা শার্ট গায়ে, কুয়াশা রঙা গায়ের রঙে, কুয়াশার মতোই সুন্দর হয়ে বসে আছেন উনি। অদ্ভুত প্রফুল্লে ভেসে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভোরটিতে। ঠিক যেন মেঘ। ছুঁয়ে দিলেই মিলিয়ে যাবে। ফুরিয়ে যাবে নরম আঙ্গুলের ফাঁক গলে। অথবা দ্রুত ছুটা রিকশা থেকে কুয়াশা হয়ে উড়ে যাবে এখনই! আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। শুভ্র ভাই পকেটে দু'হাত গুঁজে সরল, নিশ্চুপ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে চারপাশ। ঠান্ডায় নীলাভ হয়ে গিয়েছে সাদা, ফিনফিনে চামড়া। কেমন আদর- আদর হাবভাব। ভোলাভালা, মিষ্টি। ঠিক যেন সদ্য জন্মানো শিশুটির মতোই নিষ্পাপ তার মুখশ্রী। এই মুখটির দিকে চেয়ে পৃথিবীর কোন রমণী বিশ্বাস করবে, এই লোকটিই সেই নষ্ট কথা বলা মানুষ? মুখ খুললেই দুনিয়ার অসহ্য অসহ্য কথা বলে? ধমকে ধমকে শেষ করে দেয় আমার জীবন? আমার দৃষ্টি বুঝতে পেরে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে চাইলেন শুভ্র ভাই। কী মায়াময়, ক্লান্ত সেই দৃষ্টি। আমার হঠাৎ কান্না পেয়ে গেলো। বুক ভর্তি মায়া হলো। ওই চোখে যেন আমি আমাকে দেখতে পেলাম। খুব দুঃখী আমি। অভিমানিনী আমি। পাশে বসে থাকা মানুষটির জন্য পৃথিবী যাওয়া আমি। আমি স্তব্ধ চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে চেয়ে রইলাম। যেন স্বপ্ন ছুঁতে চলেছি এমনই করে হাত বাড়িয়ে কুয়াশার মতো সুন্দর পুরুষটির হাতে জীবনে প্রথম বারের মতো আলতো হাত রাখলাম। কুয়াশা পুরুষ চমকে উঠে তার বিশাল হাতের উপর আমার ছোট্ট হাতের দিকে চাইলেন। একটুও উলোটপালোট কথা না বলে নিশ্চুপ চেয়ে থেকে ছোট্ট হাতটা খুব যত্নে আগলে নিলেন তার বিশাল থাবায়। হাতের পিঠে দু-তিনেক উষ্ণ ঠোঁটের তপ্ত আহ্লাদ দিয়ে বিজয়ী চোখে চাইলেন। আমি চেয়ে দেখলাম, একইসঙ্গে কত আনন্দ সেই চোখে, কত ব্যথা! শুভ্র ভাই আমার হাত টেনে দূরত্ব ঘুচিয়ে বসলেন। নির্জন, কুয়াশার রাজ্যে খুব স্বচ্ছ ভালোবাসায় ছুঁয়ে দিলেন প্রেয়সীর কপাল। হুহু করে বয়ে গেল গা কাঁপানো হিমেল বাতাস। দুইজোড়া অভিমানী চোখ থেকে প্রায় একইসঙ্গে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা গরম জল। সেই ভোরের স্বপ্নের অচেনা যুবকের মতোই খুব করুণ, ক্লান্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বললেন শুভ্র ভাই,
' শুভ জন্মদিন রোদপাখি। পৃথিবীর সকল দোয়া কেবল তোমার হোক। এই জনম, মৃত্যুর পরের জনম, প্রত্যেক জনম কেবল আমার হও।'
আমি অবাক চোখে চাইলাম। হঠাৎ করেই খেয়াল হলো আজ আমার জন্মদিন। এতোকিছুর মাঝেও শুভ্র ভাইয়ের খেয়াল ছিলো? আশ্চর্য! আমার শতবর্ষীয় মেঘগুলো আবারও বৃষ্টি হলো। ঝুম বৃষ্টির মতোই ঝাঁপিয়ে পড়লাম কুয়াশা মানবের বুকে। হুড়মুড় করে বৃষ্টি নামল তার পাথর কঠিন বুকে। এবার আর উনি কলিজা বিস্ফোরণের দায়ে শাস্তি দাবী করলেন না। একহাতে রিকশার হুক তুলে দিয়ে নিশ্চুপ হাতে বুকে চেপে ধরলেন ছোট্ট, নরম শরীর৷ দীর্ঘ এক স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। শুভ্র মেঘের মতোই আড়াল করে নিলেন বিষণ্ণ সেই দুপুর থেকে। ঘুম না আসা খুব একলা রাত্রি থেকে। মন খারাপের মৈত্রী থেকে। আমার হাতের বাঁধন দৃঢ় হলো। দীর্ঘ ছয় বছরে এই প্রথম আমাদের জড়িয়ে ধরার গল্প হলো। রিকশা চরপাড়ার পথ ছেড়ে ভিন্ন এক পথ ধরল। শুভ্র ভাই কপালের গোড়ায় দীর্ঘ এক চুমু দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই তীব্র আপত্তিতে আরও ঝেঁকে বসলাম আমি। আকাশ সমান বিচ্ছেদ পোহিয়ে এই নিজস্ব, সুন্দর পৃথিবীটাকে ছাড়তে ইচ্ছে হয় না। ছাড়লেই কান্না পায়। হুহু কান্নায় ভেসে যায় বুক। আমাকে এখনও মুখ ফুলিয়ে কাঁদতে দেখে হেসে ফেললেন শুভ্র ভাই। সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করে আলতো হাত বুলালেন মাথায়। খোলা চুলে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
' থাক আর কাঁদতে হয় না। ইশ! চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কেঁদে-কেটে। তোর বাপ তো আমার নামে মামলা-টামলা ঠুকে দিবে রে ভাই। রাজকন্যার চোখ থেকে কত গ্রাম জল গড়াল তার উপর ভিত্তি করে নিরন্তর ফাঁসি।'
শুভ্র ভাইয়ের কথার প্রত্যুত্তরে কোনোরকম উত্তর দিলাম না আমি। উনি আমার মুখের দিকে চেয়ে হেসে ফেললেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
' দুনিয়ার কাউকে কিছু না জানিয়ে, চূড়ান্ত পাগলামো করে, ৪৭৬৬ কি.মি. ছুটে এসে, মাঝরাত্তিরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর এতো ভালোবাসা? তার আগে তো কেউ একটিবার আমার খোঁজ নিলো না? আমার যে এতো অসুখ হলো, বিরহে বিরহে মরে যাওয়ার জোগার হলো। তখন তো কারো একটু মায়া-মহব্বত হলো না? ইশ! বিরহে বিরহে প্রাণটা ফেঁটে যাচ্ছিল আমার।'
আমি ব্যথিত চোখে চাইলাম। শুভ্র ভাইয়ের হাসি একটু বিস্তৃত হলো। চমৎকার হেসে বললেন,
' তবে তোর বাপ টিকেটের টাকাটা যৌতুক হিসেবে দিয়ে দিলে বিরহ কিছু কমে যায়। আম্মুর পুত্রবধূকে পটিয়ে ফেলার পর টাকার চিন্তায় মাথা ঘুরে যাচ্ছে আমার। আমার বাপেরও ঘুরবে। আম্মুকে আগেভাগেই জানাতে হবে, আমাকে একদিন দেখতে না পেলেই প্রাণ বেরিয়ে যায় ধরনের পুত্রবধূ এনে কত বড় অন্যায় করে ফেলেছেন উনি। তার পুত্রবধূর প্রাণ বাঁচাতে কতগুলো টাকা নষ্ট হয়ে গেলো! এখন সব দোষ তার, তার পুত্রবধূ আর পুত্রবধূর ধান্দাবাজ বাপের। আমার তো আর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল না। আমি শিশু। আমার কোনো দোষ নেই।'
এবার আমি সরে বসলাম। দীর্ঘ এক ডিপ্রেশনের নদী পেরুনোর পর টানা মন ভালো থাকার উপায় নেই। আমি মুখ ভার করে বসে রইলাম। কী-সব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম খেয়াল নেই। শুভ্র ভাই হঠাৎ ফিসফিসিয়ে বললেন,
' সরি।'
আমি বললাম,
' কেউ আমায় চট্টগ্রামে ভর্তি হতে দিলো না।'
' শুভ্র সরি।'
' আপনি আমাকে একটুও বলে গেলেন না। কতো কঠিন ব্যবহার করলেন। আমার মন খারাপ হয়েছে।'
শুভ্র ভাই ফিসফিসিয়ে বললেন,
' সব দোষ শুভ্রর। শুভ্র সরি রোদপাখি।'
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
' কতটুকু সরি?'
শুভ্র ভাই হাসলেন। ডানহাতে আলতো জড়িয়ে ধরে খুব ভেবেচিন্তে বললেন,
' উমম..কান ধরে উঠবস করার মতো সরি।'
আমি হেসে ফেললাম। পরমুহূর্তেই টলমল করে উঠল চোখ। আনমনা হয়ে বললাম,
' আমার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। আমি ভেঙে গিয়েছি। আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না।'
শুভ্র ভাই কানের কাছে মুখ এনে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে বললেন,
' ধুর! তুই কিছু জানিসই না। শুভ্রর রোদপাখি ইজ আ ম্যাজিক। শুভ্রর রোদপাখি সব পারে। বিধাতা ছাড়া কার সাহস আছে তাকে আটকে রাখে?'
আমি টলমলে চোখে চাইলাম। ঠোঁটে ফুটলো হাসি। হুট করেই মনে হলো, সত্যিই আমি সব পারি। যার একটা শুভ্র আছে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কে তাকে রুখতে পারে?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৬২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন