উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ২)

 

মুগ্ধ দেখলো তিতির অডিওটা সিন করেছে। যাক তাহলে নিশ্চই শুনছে এখন। শুনে হয়তো কাঁদছেকিন্তু শান্তি তো পাচ্ছেএটাই অনেক।  কি একটা টেক্সট করবেতিতির নিশ্চই রিপ্লে দিবেনা। তখন খারাপ লাগবে। এসব ভেবেও টেক্সট একটা করেই ফেলল,

"তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।"

 

প্রায় সাথে সাথে মেসেজটা সিন করলো তিতিরকিন্তু রিপ্লে দিলনা। মুগ্ধ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো শুধু একটা রিপ্লে আসার জন্য। কিন্তু এলনা।

 

সারারাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে গানটা শুনলো তিতির। শুনতে শুনতে ভাবছিল ওদের প্রথম পরিচয়ের কথা। আহাকি মিষ্টিই না ছিল মুহূর্তগুলো!!!

 

তিতিরের সাথে মুগ্ধর পরিচয়টা খুব অন্যরকমভাবে হয়। আজ থেকে প্রায়  বছর আগে "ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশএর একটা ইভেন্টে এটেন্ড করেছিল ওরা দুজনেই। ইভেন্টটা ছিল বান্দরবানে "নাফাখুম ট্যুর।"

 

তিতির এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফ্রি বসে ছিল। আর মুগ্ধ মাস্টার্স লাস্ট সেমিস্টারে উঠেছিল কেবলওটা ছিল তিতিরের সেকেন্ড ট্যুর উইদাউট ফ্যামিলি। প্রথমবার ফ্রেন্ডদের সাথে সিলেট গিয়েছিল এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে। তিতির অবশ্যই খুব ভাগ্যবতী যে ওর ফ্যামিলি ওকে সব ধরনের স্বাধীনতা দিত যা অন্য অনেক মেয়েরা আজও পায়না।

 

"বাংলালিংক বাংলার পথেনামক একটা টিভি প্রোগ্রামে ট্রাভেলর টিংকু চৌধুরী বান্দরবানের এক অপার সৌন্দর্যময় জলপ্রপাত নাফাখুমকে দেখিয়েছিল। তা দেখেই তিতিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। তার কিছুদিন পরই ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে নাফাখুম ট্যুরের একটা ইভেন্ট দেখতে পেল। সাথে সাথে বাবা কে দেখালোবাবা একটু দোনোমনা করছিল কিন্তু ভাইয়া বলল,

-"ওকে যেতে দাও বাবা। ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ অনেক সেফ একটা গ্রুপআমার তখন ফাইনাল পরীক্ষা চলবে নাহলে আমিও যেতাম। তুমি চিন্তা করোনা তোআমি জানি আমার বোন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেতাছাড়া যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সে সেভ করতে জানেএন্ড দ্যাটসওয়াই আম প্রাউ অফ হার!"

 

সময়টা ছিল নভেম্বর মাসশীতের শুরু। রাত ১০ টায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে। ভাইয়া আর বাবা এসে ওকে বাসে তুলে দিল। ওকে দিতে এসে বাবা আরও চিন্তায় পড়ে গেল কারনইভেন্টে সবার সাথেই তাদের ফ্রেন্ডসকাজিনস আছে কিংবা রিলেটিভস আছেশুধু তিতিরের সাথেই কেউ নেই। তিতিরের অবশ্য এতে নিজেকে আরো ফ্রি ফ্রি লাগছিল। বাবা আর ভাইয়া ইভেন্ট ডিরেক্টর সাফি আর দোলা বলে গেল যাতে তারা ওর খেয়াল রাখে।

 

দোলা তিতিরকে ওর সিট দেখিয়ে দিল। তিতির বলল,

-"আপুরেজিস্ট্রেশনের সময় আমি বলেছিলাম যে আমি জানালার পাশে সিট চাই এট এনি কস্ট!"

দোলা চিন্তায় পড়ে গেল। বলল,

-"সেকিতোমার রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী এই সিটটাই তো তোমারআচ্ছাএই সিটটা যার সে আসুক আমি তার সাথে কথা বলে দেখি!"

তিতির হেসে বলল,

-"ওকে আপুথ্যাংকস!"

 

দোলা চলে গেল। শীতের মৃদুমন্দ বাতাসে তিতিরের হালকা শীত করছিলকিন্তু জানালাটা বন্ধ করতে ইচ্ছে হলোনা। তাই ওড়নাটা মাথায় পেঁচিয়ে নিল। সিটটা এলিয়ে আধশোয়া হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। ওড়নায় ওর মুখটা ঢাকা। ওর যে কি ভাল লাগছিল তা বলে বোঝানোর মত না। খুব ফ্রি লাগছিল নিজেকেআগামী ১০ দিন  একটা অন্য জগতে থাকবে। ওর স্বপ্নের জগৎযেখানে থাকবে শুধু প্রকৃতিশুধু সৌন্দর্য। যেখানে থাকবে না কোন নাগরিক কোলাহলহঠাৎ একটা ডাক ওর ভাবনার রাশ টেনে ধরল,

-"স্কিউজমি!"

 তাকাতেই দেখতে পেল একটা ছেলে ব্যগপ্যাক হাতে দাঁড়িয়ে তাকাতেই স্বাভাবিকভাবে বলল,

-"আপনার পাশের সিটটা আমারআমি কি বসতে পারি?"

তিতির ছেলেটার ম্যানার্স দেখে মুগ্ধ হলো। কিন্তু তারপর হঠাৎই খেয়াল হলো ওর পানির ফ্লাস্কটা পড়ে ছিল পাশের সিটেম্যানার্সের কিছু না ছেলেটা ভদ্রভাবে ওর পানির ফ্লাস্কটা সরাতে বলছে।  ফ্লাস্কটা সরিয়ে বলল,

-"সিওরবসুন।"

-"থ্যাংকস।"

ছেলেটা নিজের ব্যাগপ্যাক উপড়ে উঠিয়ে দিয়ে বসল। তিতির মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা যদি গায়ে পড়া হয় আর সারা রাস্তা প্যাঁচাল পেড়ে ওর মাথা খারাপ করে দেয়সিনেমা দেখে দেখে তো ছেলেরা ইন্সপায়ার হয় লম্বা জার্নিতে মেয়েদের সাথে লাইন মারার ব্যাপারেতারপর ভাবলো গান শুনুক আর না শুনুক হেডফোন কানে দিয়ে রাখুক তাতে ছেলেটা কথা বলতে চান্স পাবেনা। এসব ভাবনা শেষ না হতেই দেখলো ছেলেটা নিজের গলায় ঝুলানো হেডফোনটা কানে দিয়ে সিটটা এলিয়ে শুয়ে পড়লোযাক বাবা বাঁচা গেলতার মানে ছেলেটা ওর সাথে আজাইরা প্যাঁচাল পাড়বে না।

 

বাস ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পর একজন লোক সবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করতে লাগলো। ছেলেটা হেডফোন খুলতেই তিতির ওকে বলল,

-"স্কিউজমি!"

-"হ্যাবলুন!"

-"একচুয়েলিএই সিটটা আমার আর আপনি যেটাতে বসেছেন ওটা আমার।"

-" আপনি কি আপনার সিটে আসতে চাচ্ছেন?"

-"না মানেআমি বলতে চাচ্ছি আমি কি আপনার সিটটা ধার পেতে পারিএকচুয়েলি আমি জানালার কাছে ছাড়া বসতে পারিনাঅস্বস্তি লাগে। তাই আমি রেজিস্ট্রেশনের সময় বলেছিলাম জানালার পাশে সিট লাগবে আমার। ওনারা কেন দিলনা বুঝলাম না।"

-"ইটস ওকেনো প্রব্লেম!"

এরপর চেকার এসে ওদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করে গেল।

তারপর সাফি আর দোলা একটা স্পিচ দিল। দোলা শুরু করেছিল,

-"হ্যালো,

ডিয়ার ট্রাভেলার ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স.. হোপ এভরিথিং ইজ ওকে স্টিল নাও।"

একথা বলেই আপু মিষ্টি একটা হাসি দিল। সেই হাসিতে মোটামুটি সবাই তাল মেলালো। তারপর সাফি ভাইয়া হেসে বলতে শুরু করলো,

-"ট্যুর প্ল্যান আপনারা সবাই কমবেশি জানেনতবুও আরেকবার রিপিট করছি আমরা কোনো তাড়াহুড়োর ট্রিপ চাইনি। দৌড়ের উপর সব দেখা হয় ঠিকই কিন্তু উপভোগ করা যায়নাতখন ট্যুর হয় নট ট্রাভেলিংতার উপর আমরা যাচ্ছি জঙ্গলে। তাই যেখানে / দিনে যাওয়া আসা হয় সেখানে আমাদের ১০ দিনের প্ল্যানআজ রাত  টার দিকে কুমিল্লা পৌঁছে যাবওখানে আমরা আমাদের ডিনার করে নেব। তারপর আরেকটা টি-ব্রেক পাব / টার দিকে। সকাল / টার মধ্যে আমরা বান্দরবান শহরে পৌঁছে যাব। তারপর লাঞ্চ করে ওখা থেকে জিপে করে সোজা থানচি। পথে নিলগিরিচিম্বুক পড়বে জাস্ট ১০ মিনিটের জন্য একটা ঢুঁ মারবো। তারপর আবার যাত্রাথানচি পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে যাবে। লাঞ্চ করবো ওখানেই। তারপর একটু রেস্ট নেব। যেহেতু থানচির পর আর কোন বাজারঘাট পাবো না তাই থানচি থেকেই পুরো ১০ দিনের বাজার করে নেব। বিকালটা আমরা বাজার করে আর পাশের একটা ছোট জলপ্রপাত ঘুরে কাটাবো। সন্ধ্যায় বার-বি-কিউ হবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব যাতে সকাল সকাল উঠতে পারি। আর থানচিতে আমরা তাঁবুতে থাকবো। পরদিন সকালে আমরা আবার রওনা দিব। কিন্তু নৌকায় করেবাইরোড থানচি পর্যন্তই। রওনা দেয়ার আগে সবাই বাড়িতে কথা বলে নেবেন। কারনথানচির পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। প্রায় দুইদিন নৌকা ভ্রমনের পর আমরা যেখানে পৌঁছাব সেই যায়গার নাম রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টা হাটার পর আমরা পৌঁছাব আমাদের স্বপ্নের নাফাখুম জলপ্রপাতে। তারপর আমরা ওই রাতটা পাশের পাহাড়ি গ্রামে কাটাব। তারপর কাছের আরো দুটো জল্প্রপাত দেখব পরেরদিন। তারপর যেভাবে গিয়েছি ওভাবেই ব্যাক করবো। আশা করি এই যাত্রার জন্য আপনারা সকলেই মানসিকভাবে প্রস্তুত। সকলের কাছে পরস্পরের প্রতি সহযোগীতার মনোভাব আশা করছি। এখন আমরা আর অপরিচিত নইআমরা এখন একটা ফ্যামিলি। গ্রুপের কোন মেম্বার অন্য মেম্বারকে কোন বিষয়ে হ্যারাস করবেন নাছোট করবেন না। যদি কারো নেগেটিভ আচরণ দেখা যায় তাহলে তাকে ওই মুহূর্তে ওই যায়গায় ফেলে চলে যাওয়া হবে। রান্নাবান্না সাধারণত মাঝিরাই করে। কিন্তু মাঝিদের আমরা সবাই সাহায্য করবোমনে রাখবেন দশের লাঠি একের বোঝা। রেমাক্রির পর থেকে রাস্তায় আপনাকে প্রচুর জোঁক ধরবে তাই নিজের প্রতি  সকলের প্রতি এক্সট্রা খেয়াল রাখবেন। যখনই দেখবেন আপনাকে জোঁকে ধরেছে আশেপাশে যারা থাকবে তাদের কাছে সাহায্য চাইবেন। আর যদি আপনি দেখেন আপনার পাশের মানুষটিকে জোঁকে ধরেছে তাহলে তাকে নিজ দায়িত্বে সাহায্য করবেন। আর সব শেষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছিপাহাড়িদের ড্রেসআপ বাঙালিদের মত হয়নাদয়া করে তখন নিজের চোখকে  মুখকে সংযত রাখবেন। তাদের জীবন্যাত্রার প্রতি সম্মান রাখবেন। মনে রাখবেন ওখানে আমরা বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য পাহাড়িদের কাছেই যেতে হবে। কারন আবার মনে করিয়ে দেই থানচির পর মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এতক্ষণ ধরে আমার বকবক শোনার জন্য ধন্যবাদহ্যাপি ট্রাভেলিং!"

 

তারপর আবার সেই সেম ঘটনা। ছেলেটা হেডফোন কাজে গুঁজে দিল। আর তিতির জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ একটা ডাক কানে এল,

-"স্কিউজমি। স্কিউজমিএই যে শুনছেন?"

তিতির চোখ মেলে দেখলো পাশের ছেলেটা ওকে ডাকছেহায়রেকখন  ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পায়নিতিতির তাকাতেই ছেলেটা বলল,

-"সবাই ডিনার করতে নেমেছে। আমিও যাচ্ছি। আপনি বাসে একা ঘুমাবেন তাই ডাকলাম। কিছু মনে করবেন না।"

তিতির দেখলো পুরো বাসে কেউ নেই। বলল,

-"থ্যাংকসকখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি।"

-"হ্যা ভালই ঘুম আপনারএকটু আগে তো সাফি সবাইকে মিনি মাইকে বলল ২০-৩০ মিনিট ব্রেক টাইম। এর মধ্যে ডিনার সেড়ে নিতে হবে।"

তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। আসলেই যখন তখন যেকোনো যায়গায় ঘুমিয়ে পড়ার প্রতিভাটা ওর ভালই আছে। বাস থেকে নামতে নামতে ছেলেটা বলল,

-"বাই দ্যা ওয়েআমি মুগ্ধ। আপনি?"

তিতির বলল,

-"কি ব্যাপারে?"

মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,

-"মানে?"

-"আপনি যে জিজ্ঞেস করলেন আমি মুগ্ধ কিনা ওটাই জানতে চাচ্ছিকি ব্যাপারে মুগ্ধ হওয়ার কথা বলছেনট্যুরবাট এটা তো মাত্র শুরু!"

ছেলেটা হেসে ফেলল,

-"আমার নাম মুগ্ধ। আমি আপনার নামটা জানতে চাচ্ছিলাম। বারবার স্কিউজমি স্কিউজমি করতে কার ভাল লাগে বলুন। আফটারল আগামী ১০ দিন একই যায়গায় থাকছি। নামটা তো জানা প্রয়োজন।"

তিতির লজ্জা পেয়ে হেসে বলল,

-"ওহআমার নাম তিতির।"

-"বাহনামটা খুব সুন্দরতিতির নামের মানে জানেন?"

-"হুমএকটা পাখির নাম।"

মুগ্ধ রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

-"তিতিরপাখি দেখেছেন কখনো?"

-"নাহ!"

-"তিতির খুব সুন্দর দেখতে।"

-"ঢাকায় আছে নাকি?"

-"নাহআমি ঝারখান্ডে দেখেছিলাম। রাঁচীর এক জঙ্গলে।"

-"বাপরেআপনি খুব ঘোরাফেরা করেন নাকি?"

-"তা বলতে পারেন তবে আমি জঙ্গল প্রেমিকপাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরতে বেশি পছন্দ করি।"

-"ওহনাফাখুম গিয়েছেন আগে?"

-"হ্যাদুইবছর আগে গিয়েছিলাম। এটা সেকেন্ড টাইম।"

-"আমার এই প্রথম।"

-"ওহআপনার সাথে কেউ নেই?"

-"নাহআমি একাই এসেছি। আচ্ছা আপনারা ছেলেরা মেয়েদের কোথাও একলা যেতে দেখলেই একথা জিজ্ঞেস করেন কেন?"

-"কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আসলে এই টাইপের ট্রিপে কখনো কোন মেয়েকে একা যেতে দেখিনি তো তাই। হয় ফ্রেন্ডনয় বিএফনয় হাসবেন্ডনয় কাজিননয়তো ভাই। কেউ কেউ সাথে থাকেই।"

-"আমার সাথে কাউকে লাগেনা। আই ক্যান টেককেয়ার অফ মাইসেল্ফ।"

-"আপনি বোধহয় রেগে যাচ্ছেন।"

-"নাহরেগে যাচ্ছিনা। সত্যি কথা বলতে কি আজকাল অনেক মেয়েরই যাওয়ার সাহসটা থাকে কিন্তু ফ্যামিলি যেতে দেয়না একা। সেক্ষেত্রে আমি বাঁধিয়ে রাখার মত একটা ফ্যামিলিতে জন্মেছি। আমি স্বাধীনকখনো কেউ কোন কিছুতে বাধা দেয়না।"

-"বাধা দেয়না বলেই বোধহয় আপনি আপনার ফ্যামিলিকে রেসপেক্ট করেন। আর তাদের সম্মান বজায় রাখেন।"

তিতির হেসে বলল,

-"হ্যা। ওরা আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার এত মূল্য দেয় বলেই আমিও ওদের কথা রাখার ট্রাই করি অলওয়েজ।"

 

সাফি ভাই দূর থেকে হাত নাড়ছে। মুগ্ধও হাত নেড়ে তার রিপ্লে দিল। বলল,

-"চলুনখেতে বসা যাক।"

মুগ্ধ সাফিদের টেবিলেই বসলো। সাফি কার সাথে যেন কথা বলছিল। চোখাচোখি হতেই হাসি বিনিময় হলো শুধু। দোলা জিজ্ঞেস করল,

-"কি অবস্থা আপুভাল লাগছে?"

-"হ্যাখুব।"

-"কোন প্রব্লেম হলে আমাকে বলবেআসলে বুঝতেই তো পারছো এতগুলো মানুষআলাদা ভাবে খেয়াল রাখা ডিফিকাল্ট।"

-"ইটস ওকে আপুআমি আপনাকে বলবো।"

দোলা হেসে বলল,

-"বাই দ্যা ওয়েমুগ্ধ ভাইয়ার সাথে আলাপ হয়েছে?"

মুগ্ধ বলল,

-"আরে উনি তো আমার পাশের সিটেই। আলাপ হবে না কেন?"

দোলা বলল,

-"ওয়াওদেন গ্রেটমুগ্ধ ভাইয়া তুমিও একাওনাকে একটু দেখে রেখো। উনি একা এই ট্রিপে।"

মুগ্ধ বলল,

-"তুই বলার আগে থেকেই দেখছি।"

তিতির চমকে তাকালো মুগ্ধর দিকে। দোলা বলল,

-"মানে?"

-"মানে সবাই বাস থেকে নেমে গিয়েছিলতখনও উনি বাসে ঘুমাচ্ছিলেন। আমিই তো ডেকে নিয়ে এলাম। এটা দেখে রাখা হলোনা?"

দোলা হেসে বলল,

-"আচ্ছা বুঝলাম।"

 

খাওয়া শেষে উঠে যেতেই তিতির বলল,

-"বিল পে করতে হবে না?"

মুগ্ধ বলল,

-"না নাএটা ট্যুরের মধ্যেই। ওরাই দেবে। বাস ছাড়তে আরো / মিনিট বাকী। চলুন বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো যাক।"

তিতির ওর সাথে যেতে যেতে বলল,

-"আপনার সাথে কেউ নেই?"

-"নাহআমি একাই ঘুরি অলওয়েজ। তাছাড়া আমার সাথে ঘোরার মত কেউ নেইও।"

-"ওহআচ্ছাদোলা আপু আপনার পরিচিততখন দেখলাম তুই করে বলছেন।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-" সাফির গার্লফ্রেন্ডআর সাফি আমার আপন চাচাতো ভাই। সেই সূত্রেই দোলার সাথে পরিচয়।"

-"ওহকে বড়?"

-"আমি সাফির  বছরের বড়।"

-"ওহ!"

কিছুক্ষণ ওরা হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। প্রথমে কেউ কোন কথা বলছিল না। মুগ্ধই শুরু করলো,

-"আপনি কিসে পড়ছেন?"

-"এবার এইচএসসি দিলাম।"

মুগ্ধ অবাক হলো,

-"মানে এখনো ইউনিভার্সিটিতে যাননি?"

-"নাহপাবলিকে পরীক্ষা দিব তাই কোথাও এডমিশন নেইনি। এইতো ফিরে আসার পরই এক্সাম।"

-"তুমি তো পুরাই বাচ্চা। সরি তুমি করে বলে ফেললাম।"

-"ইটস ওকে। সাফি ভাইয়াদোলা আপু তো প্রথম থেকেই তুমি বলেআপনিই তো আপনি আপনি করছিলেন।"

-"ওহতাই নাওই আর কিআমি ওদের মত প্রথমেই কাউকে ওভাবে বলতে পারিনা।"

-"আপনি কিসে পড়েন?"

-"ইসআর চার মাস পরে কথাটা জিজ্ঞেস করতে যদি।"

-"তাহলে কি হবে?"

-"বলতে পারতাম আমার স্টাডি কম্পলিট।"

তিতির হেসে দিল। মুগ্ধ বলল,

-"আমি মাস্টার্স করছি। লাস্ট সেমিস্টার। এই এই বাস ছেড়ে দিচ্ছেচলো চলো।"

বাসে উঠে বসতেই মুগ্ধ বলল,

-"এখন কি আবার ঘুমাবে?"

তিতির হেসে বলল,

-"আপনি কি আবার হেডফোন কানে গুঁজবেন?"

এবার মুগ্ধও হেসে দিল।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন