লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook |
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ৮)
থানচির
রাস্তাকে পাশ
কাটিয়ে
ওরা
বেশ
কিছুদূর এসে
পড়েছে।
দুজনে
পাশাপাশি হাঁটছে। একপাশে
বিশাল
পাহাড়,
অন্যপাশে গভীর
খাদ।
পাহাড়টা যেখানে
ছোট
হয়ে
এসেছে
সেখানে
সেখান
থেকেই
জঙ্গল
শুরু।
ওদিকটায় গিয়েই
হঠাৎ
মুগ্ধ
দাঁড়িয়ে পড়লো।
তিতির
বলল,
-"কি হলো?"
মুগ্ধ
তিতিরকে দেখালো
যায়গাটা। তিতির
বলল,
-"জঙ্গল দেখে কি
করবো?"
-"ভেতরে ঢুকে দেখবো।
থাকার
মত
হলে
এখানেই
থাকবো
রাতটা।"
-"এই জঙ্গলে সারারাত কাটাবো?"
-"তো তুমি কি
ভেবেছিলে?"
-"আমি ভেবেছিলাম আপনি
কোন
একটা
ব্যবস্থা করবেন।"
-"এই জনমানবশূন্য যায়গায়
এর
চেয়ে
ভাল
ব্যাবস্থা আমি
কি
করবো?
কোন
গ্রাম
কিংবা
আর্মি
চেকপোস্টে যেতে
চাইলে
৩/৪ ঘন্টা হেটে
পৌঁছানো যাবে।
অথচ
আলো
আর
ম্যাক্সিমাম ৪০
মিনিট
থাকবে।
এই
পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমানরা যা
করবে
আমিও তাই করছি।"
-"মানে এখানেই থাকার
ব্যবস্থা করবেন?"
মুগ্ধ
হেসে
বলল,
-"আজ্ঞে।"
তিতিরের সত্যি
ভয়
করছিল।
মুগ্ধর
সাথে
এই
জঙ্গলে
একা
রাত
কাটাবে!
এতক্ষণ
যতটুকু
দেখেছে
তাতে
ভালই
মনে
হয়েছে
ছেলেটাকে, কিন্তু
ওটা
যদি
ওর
অভিনয়
হয়ে
থাকে?
রাত
হলেই
ওকে
একা
পেয়ে
যদি
আসল
রূপটা
বের
করে?
কুকুরকে বিশ্বাস করা
যায়
কিন্তু
ছেলেদের না।
বলল,
-"টর্চ নেই আপনার
কাছে?"
-"থাকলে?"
-"টর্চ জ্বালিয়ে হেঁটে
চলে
যাব
থানচি।
চলুন
না।
এই
জঙ্গলে
আমি
থাকতে
পারবো
না।
এখনো
সন্ধ্যা হয়নি
তার
আগেই
কি
অন্ধকার! পুরো
গা
ছমছমে
অবস্থা।"
-"তিতির তোমার বয়স
কত?"
-"আপনি জানেন না
মেয়েদের বয়স
জিজ্ঞেস করতে
হয়না।"
-"জানি, তবে এখন
তো
আমরা
কোন
স্বাভাবিক সিচুয়েশনে নেই
তাই
এখন
সবই
যায়েজ।"
-"সব যায়েজ মানে?"
তিতিরের চোখ
ছানাবড়া! মুগ্ধ
বলল,
-"কত ১৬/১৭/১৮/১৯?"
-"১৭+।"
-"স্টাডির দিক থেকে হিসাব
করলে
তুমি
আমার
৬
বছরের
ছোট।
আর
বয়সের হিসাব করলে
৮
বছরের
ছোট।
ঠিকই
আছে
তাহলে
তুমি
এটা
বলতেই
পারো।"
-"কোনটা? ওই টর্চ
জ্বালিয়ে হেঁটে
যাওয়ার
কথাটা?"
-"হুম!"
-"আপনি বলেছিলেন আর্মিদের পারমিশন নেই।
কিন্তু
বিপদে
পড়লে
কি
আর
করা,
বুঝিয়ে
বলতে
হবে।"
-"হায়রে! বুঝতে চাওনা
কেন?
বাচ্চাদের নিয়ে
এই
একটা
প্রব্লেম।"
-"প্রব্লেম না মনে করে
বুঝিয়ে
বলুন,
ঠিকই
সব
বুঝবো।"
-"বুঝিয়ে বলবো কি
করে?
তুমি
তো
এখনো
এডাল্ট
হওনি।
এডাল্ট
কথা
তোমাকে
কি
করে
বলি।"
-"ওসব এডাল্ট চ্যাপ্টার স্কুলে
থাকতে
পার
করে
এসেছি।
বলুন
তো।"
-"মানে কি করেছো
স্কুলে
থাকতে?"
-"উফফ! আপনি বলুন,
আমি
সব
এডাল্ট
কথাই
বুঝি।"
-"আজকালকার ছেলেমেয়েরা অনেক ফাস্ট হয়!"
-"সময় নষ্ট করছেন।
বোঝাতে
না
পারলে
চলুন
হাঁটা
শুরু
করি।
আমি
রাতেরবেলা এই
জঙ্গলে
থাকতে
পারবো
না।"
-"আচ্ছা দাঁড়াও, দাঁড়াও।"
তিতির
দাঁড়ালো। মুগ্ধ
বলল,
-"আমি একা থাকলে
এই
রাতেও
হেটে
চলে
যেতাম।
টর্চ
লাগতো
না।
চাঁদের
আলোর
কাছে
টর্চ
ম্লান।
কিন্তু
তোমাকে
নিয়ে
যাওয়া
যাবে
না।
চেকপোস্টে আর্মিরা আমাদের
বিপদের
সুযোগ
নিতে
পারে।"
-"আর্মিরা তো আমাদের হেল্প
করবে,
বিপদের
সুযোগ
কেন
নেবে?"
-"আর্মিরা হেল্প করতো যদি
দিন
হতো।
কারন,
দিনে
হেল্প
ছাড়াও
আমরা
যেতে
পারবো।
আর
এখন
যখনই
বুঝবে
আমরা
বিপদে
আছি
তখনই
হেল্প
করার
বিনিময়ে খুব
ভদ্রভাবে তোমাকে
চাইবে।
তখন
আমি
কি
করবো?
দিয়ে
দেব?
আর
না
দিলেও
ওদের
প্রব্লেম নাই
ওদের
নিয়ে
নেওয়ার
মত
জোড়
আছে।
তার
উপর
তোমার
নাই
ন্যাশনাল আইডি
কার্ড।"
-"আপনি সবাইকে এত
সন্দেহ
করেন
কেন?
তখন
সিএনজি
ড্রাইভারকে সন্দেহ
করলেন,
এখন
আবার
আর্মিদের।"
-"জানতাম দোষ এখন
আমারই
হবে।
শোনো
আমি
কাউকে
অকারনে
সন্দেহ
করিনা।
পাহাড়ের এমন
বহুত
কাহিনী
আমি
জানি।
যা
হয়
তাই
বললাম।"
তিতির
চুপ
করে
রইল।
মুগ্ধ
বলল,
-"আচ্ছা চলো যাই।
তোমার
কিছু
হলে
আমার
কি!
আমি
ছেলে
মানুষ
আমার
তো
কোন
প্রব্লেম নাই।
এজন্যই
কারো
ভাল
করতে
নেই।"
মুগ্ধ
হাঁটা
শুরু
করলো।
তিতির
দৌড়ে
গিয়ে
পিছন
থেকে
মুগ্ধর
জ্যাকেট টেনে
ধরল।
বলল,
-"না যাবনা। প্লিজ
রাগ
করবেন
না।
আমি
তো
পাহাড়ের ব্যাপারে কিছুই
জানিনা
তাই
ভুলে
বলে
ফেলেছি,
সরি।"
-"আমার বান্দরবান থেকে
আপনাকে
নিয়ে
আসাটাই
ভুল
হয়েছে।"
-"হঠাৎ আমাকে 'আপনি'
করে
বলছেন
কেন?"
-"ঠিকই আছে, ছোটমানুষ ভেবে
তুমি
করে
বলেছিলাম। কিন্তু
আদৌ
আপনি
ছোট
না।
বহুত
পাক্না।"
তারপর
অন্য
দিকে
তাকিয়ে
বলল,
-"শালার... মেয়েরা সাথে
থাকলে
ঝামেলা
হবেই।
যতই
তুমি
তাদের
জন্য
করো।
শেষ
পর্যন্ত তোমকেই চরিত্রহীন ভাববে!"
তিতির
দেখলো
রাগে
মুগ্ধর
কপালের
রগ
দুটো
কাঁপছে। লাল
হয়ে
গেছে
মুখটা।
তাড়াতাড়ি বলল,
-"আমি কখন আপনাকে
চরিত্রহীন ভাবলাম?"
-"ভেবেছেন, ভেবেছেন বলেই এই রাতের
বেলা
হেঁটে
থানচি
চলে
যেতে
চেয়েছেন। ভয়টা
তো
জঙ্গল
নিয়ে
না।
ভয়টা
আমাকে
নিয়ে।
ভাবছেন
রাত
হলেই
আমি
আপনার
কোন
ক্ষতি
করবো।
এসব
বলা
লাগেনা
বোঝা
যায়।"
তিতির
মনে
মনে
ভাবলো
'এই
ছেলে
তো
দেখছি
মনের
মধ্যে
ঢুকে
বসে
আছে।'
কিন্তু
মুখে
বলল,
-"না না বিশ্বাস করুন,
আমি
এসব
ভাবিনি। আপনাকে
বিশ্বাস না
করলে
কি
আমি
একা
এতদূর
আপনার
সাথে
আসতাম?"
মুগ্ধ
চুপ
করে
রইলো।
তিতির
আবার
বলল,
-"প্লিজ আমাকে আগের
মত
তুমি
করে
বলুন।
নাহলে
কেমন
যেন
লাগছে
আমার।"
মুগ্ধ
খানিকটা স্বাভাবিক হলো।
বলল,
-"আচ্ছা, আচ্ছা। দিন
থাকতে
কিছু
কাজ
সেড়ে
ফেলতে
হবে,
এসো।"
মুগ্ধ
এগিয়ে
গেল
জঙ্গলের দিকে।
পিছনে
পিছনে
তিতির।
গাছপালার কারনে
এদিকটায় অতটা
আলো
নেই।
তবে
সবকিছু
দেখা
যাচ্ছে। জঙ্গলে
কয়েকটা
কমলা
গাছ
দেখতে
পেল
মুগ্ধ।
বেশ
কয়েকটা
কমলা
ছিঁড়ে
নিল।
তারপর
ভেঙে
যাওয়া
গাছের
ডাল
কুঁড়োলো রাত
নেমে
এলে
আগুন
ধরাতে
হবে
তো।
তিতিরও
সাহায্য করছে।
এমন
সময়
একটা
সিএনজি
আসার
আওয়াজ
পেল।
মুগ্ধর
চোখে
মুখে
আনন্দ
ঝিলিক
দিয়ে
উঠলো।
তিতিরকে বলল,
-"তুমি এই বড়
গাছটার
আড়ালে
দাড়াও।
আমি
দেখি,
লিফট
পেলে
তোমকে
ডাকবো।
তখন
বের
হবে।
তার
আগে
না।"
-"ওকে!"
মুগ্ধ
হাত
বাড়িয়ে
থামালো
সিএনজিটাকে। সিএনজি
থামলো।
মুগ্ধর
আশা
ম্লান
হয়ে
গেল।
সিএনজিতে অলরেডি
পিছনে
৩
জন
আর
ড্রাইভারের দুপাশে
দুজন
বসা।
সবাইকেই খুব
ভীত
লাগছিল। ড্রাইভার বলল,
-"কি অইসে ভাই?
গাড়ি
থামাইলেন ক্যান?"
-"আসলে আমরা একটা
বিপদে
পড়েছি
তাই
ভেবেছিলাম যদি
কোন
সাহায্য পাওয়া
যায়।
পেছন
থেকে
একটা
ছেলে
বলল,
-"ভাই কি বলবো?
আমরা
নিজেরাই বিশাল
বিপদ
পার
করে
আসলাম।
আপনাকে
কি
সাহায্য করবো?"
-"কি বিপদ?"
ড্রাইভার বলল,
-"ডাকাইত ধরসিল। তাও
ভাল
ওনগো
লগে
মাইয়া
মানুষ
নাই।
মাইরা
দইরা
ট্যাকা
পয়সা
সব
রাইক্ষা দিসে।"
ড্রাইভারের কথা
শেষ
না
হতেই
আরেকটা
ছেলে
বলল,
-"আমাদের সবার মোবাইল,
ল্যাপটপ সব
নিয়ে
নিয়েছে।"
ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো,
-"ভাই আপ্নের লগে
কি
মাইয়া
মানুষ
আছে?"
মুগ্ধর
যেন
উত্তর
রেডিই
ছিল।
বলল,
-"না আমর সাথে
আমার
ছেলে
ফ্রেন্ডরা আছে।
কেন
বলুন
তো?"
-"আইজকা একটা পোলা
আর
একটা
মাইয়া
সিএনজিতে কইরা
থানচি
যাইতাসিল। মাইয়াডা পরীর
মত
সুন্দর। ওই
মাইয়াডারে নিলগিরিতে দ্যাখসে ডাকাইত
দলের
এক
পোলা।
দেইক্ষা তো
ওগো
সরদাররে খবর
দিসে,
পোলা
মাইয়া
যখন
খাইতে
গ্যাছে
তখন
হেয়
যাইয়া
সিএনজি
ড্রাইভারের লগে
সেটিং
করসে।
তারপর
কতদূর
যাইয়া
ড্রাইভার কইসে
সিএনজি
নষ্ট
হইয়া
গ্যাছে। এমন
যায়গায়
অরা
যাইবোই
বা
কই,
রাইতে
ধরবো
ভাবছিল। কিন্তু
ডাকাইত
আওনের
আগেই
পোলা
মাইয়ারে লইয়া
পগারপার। ডাকাইতরা মাইয়া
না
পাইয়া
ড্রাইভার ডারে
মাইরা
কি
অবস্থা
যে
করসে
কি
কমু
ভাই!
হালার
তোর
যদি
এইসব
কামে
অভিজ্ঞতা না
থাহে
তয়
তুই
আজাইরা
ঝামেলায় জড়াইতে
গেলি
ক্যা?"
তিতির
গাছের
আড়াল
থেকে
সব
শুনে
ভয়ে
থরথর
করে
কাঁপছিল। ড্রাইভারের পাশের
ছেলেটা
বলল,
-"আমার মনে হয়
ড্রাইভারটা ইচ্ছে
করে
করেনি
এমন।
ডাকাতদের ভয়ে
করেছে।"
পিছন
থেকে
আরেকজন
বলল,
-"টাকার লোভেও করতে
পারে।"
মুগ্ধ
বলল,
-"আবার দুটোই হতে
পারে।"
আরেকটা
ছেলে
বলল,
-"কিন্তু আমি বুঝলাম
না
ডাকাতরা ওদের
রেখে
আমাদের
ধরলো
কেন?"
মুগ্ধ
বলল,
-"ওইতো, ওদের না
পেয়ে
খালি
হাতে
চলে
যাবে!
তাই
আপনাদের কাছ
থেকে
যা
পারে
হাতিয়ে
নিয়েছে। এই
রাস্তায় আজ
যারা
যাবে
হয়তো
সবারই
আপনাদের মত
অবস্থা
হবে।"
ড্রাইভার বলল,
-"না না, অরা
মাইয়ারে ধরনের
লাইজ্ঞা থানচির
দিক
গ্যাছেগা। অগো
দলের
একজন
কইতাসিল, 'অই
মাইয়ারে আমার
চাই
ই
চাই।
লাগলে
পুরা
রাস্তা
খুইজ্জা তাপা
তাপা
কইরালামু। যাইবো
আর
কই?'
বুজলেন
ভাই...
ডাকাইতগো কাছে
মাইয়া
মানুষ
পাইলে
টাকা
কিছুনা।"
মুগ্ধ
বলল,
-"আমাদের মেয়ে ফ্রেন্ডরা আসতে
চেয়েছিল ভাগ্যিস আনিনি।"
ড্রাইভারটা বলল,
-"আরে ভাই সকাল
সকাল
গেলেগা
তো
আর
কোনো
ঝামেলা
হইতো
না।
কত
মাইয়ারাই তো
আসে।"
মুগ্ধ
বলল,
-"তাও ঠিক!"
-"আচ্ছা ভাই আমরা
যাই।"
-"আচ্ছা আচ্ছা।"
সিএনজি
চলে
যেতেই
মুগ্ধ
জঙ্গলের ভেতর
তিতিরকে যেখানে রেখে এসেছিল
সেখানে
চলে
গেল।
তিতির
এখনো
ভয়ে
কাঁপছে। ওকে
দেখেই
বলল,
-"সরি।"
মুগ্ধ
হেসে
বলল,
-"আরেএএএ.. ইটস ওক্কে
তিতিরপাখি! তুমি
যখন
আমার
সাথে
আছো,
তোমাকে
সেফ
রাখার
দায়িত্বটাও আমার!"
-"আচ্ছা, সত্যি করে
বলুন
তো
আপনি
কি
কিছু
টের
পেয়েছিলেন?"
-"নাহ, কিন্তু যখন
হাসু
বলেছিল
সিএনজি
নষ্ট
হয়ে
গেছে
তখন
ওর
চেহারাটা চোরের
মত
ছিল।
সেটা
দেখে
আন্দাজ
করেছিলাম। এরকম
ঘটনা
আমি
অনেক
আগে
শুনেছিলাম। এজন্যই
তো
ম্যাক্সিমাম লোক
চান্দের গাড়িতে
থানচি
যায়,
আর
ভোরে
রওনা
দেয়
যাতে
দুপুরের মধ্যে
থানচি
পৌঁছে
যেতে
পারে।"
-"ওহ!"
-"তাছাড়া আমরা তাজিংডং থেকে ফেরার পথে
রাস্তা
হারিয়ে
ফেলেছিলাম। টর্চে
চার্জ
ছিলনা,
তার
উপর
অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার। পানি
শেষ
হয়ে
গিয়েছিল, খাবার
ছিল
না।
কি
যে
অবস্থায় পড়েছিলাম বলে
বোঝাবার মত
না।
সকাল
হলে
দেখি
যেখান
থেকে
শুরু
করেছিলাম ওখানেই
ফিরে
এসেছি
সারারাত হেটে।"
-"আহারে!"
-"হুম, তারপর থেকে
যেকোনো
ট্রিপে
গেলে
সবরকম
প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল
দেয়ার
প্রিপারেশন থাকে
আমার।"
-"ভাগ্যিস ছিল, তা না
হলে
আমার
যে
কি
হতো।"
মুগ্ধ
কিছু
বলল
না।
তিতির
এবার
বলল,
-"আচ্ছা ডাকাতরা যদি
এদিকে
আসে?"
-"আসুক, প্রব্লেম কি?"
-"আপনি কি ঢিসুম
ঢিসুমও
জানেন
নাকি?"
-"জানলে কি হবে?"
-"ঢিসুম ঢিসুম করে
ডাকাতদের খাদে
ফেলে
দেবেন।"
-"এহহহ! এখনো বিয়ে
করিনি।
মরার
ইচ্ছে
নেই।"
-"তাহলে যে বললেন,
আসুক
আসলে
প্রব্লেম নেই।"
-"না মানে আসবে
তো
তোমাকে
নিতে।
তো
দিয়ে
দিলেই
ঝামেলা
শেষ।"
তিতির
ভয়
ভয়
চোখে
চেয়ে
রইল।
হঠাৎ
মুগ্ধ
একটা
বুনোহাঁসকে দেখতে
পেল।
অনেক
দৌড়াদৌড়ি করেও
ধরতে
পারলো
না।
তিতির
বলল,
-"ধুর থামেন তো,
কি
হবে
ওটা
ধরে?"
-"পুড়িয়ে খেতাম। রাতে
কি
খাওয়া
লাগবে
না?"
-"এম্মা, হাঁস পুড়িয়ে
খাবেন?
ছিঃ।"
-"আরে মশলাপাতি আছে
তো।
সুন্দর
করে
বার-বি-কিউ করতাম।
হাত
চেটে
খেতে।
খালি
ধরতে
পারলাম
না
বলে।"
-"আপনি ব্যাগে মশলা
নিয়ে
ঘোরেন?"
-"হুম, ট্যুরে গেলে।"
তারপর
হঠাৎ
মুগ্ধর
মনে
পড়লো
হাঁস
ধরার
ধান্দায় সূর্যাস্তটা মিস
হয়ে
যাচ্ছে। তিতিরকে বলল,
-"চলো চলো.. সূর্যাস্ত মিস
হয়ে
যাচ্ছে।"
ভয়ডর
সব
ভুলে
তিতির-মুগ্ধ জঙ্গল থেকে
বেড়িয়ে
রাস্তায় চলে
গেল।
মুগ্ধ
বলল,
-"ব্যাগপ্যাক রেখে এসেছো কেন?
নিয়ে
এসো।
আমরা
যেখানেই যাব
আমাদের
ব্যগপ্যাক আমাদের
সাথেই
থাকবে।
কখন
কি
লাগে
বলা
যায়না।"
তিতির
আবার
জঙ্গলে
ঢুকে
ওর
ব্যগপ্যাকটা এনে
কাধে
নিল।
তারপর
মুগ্ধ
তিতিরের হাত
ধরে
ধরে
রাস্তা
থেকে
কিছুটা
নেমে
গেল।
যায়গাটা রিস্কি
ছিল
তবু
মুগ্ধ
আছে
সেই
ভরসায়
তিতির
নামলো।
তারপর
মুগ্ধ
তিতিরকে নিয়ে
একটা
পাথরের
উপর
বসলো।
তারপর
সামনে
তাকিয়ে
মুগ্ধ
বলল,
-"এখান থেকে সূর্যাস্তটা দেখে
যে
ফিল
পাবে
সেটা
রাস্তা
বা
জঙ্গল
থেকে
দেখে
পেতে
না।
আর
রাস্তা
থেকে
আমাদের
দেখাও
যাবে
না।
তাই
তোমাকে
এখানে
নিয়ে
এলাম।"
তিতির
সূর্যাস্ত দেখবে
কি!
ও
দেখছিল
মুগ্ধকে। এমন
একটা
মানুষ
আর
উপর
চোখ
বন্ধ
করে
বিশ্বাস করা
যায়।
ওর
কেন
জানি
ইচ্ছে
করছিল
মুগ্ধর
বুকে
মাথা
রেখে
বসে
সূর্যাস্তটা দেখতে।
কিন্তু
সেটা
তো
আর
সম্ভব
না।
সূর্যটা আস্তে
আস্তে
একটা
উঁচু
পাহাড়ের নিচে
লুকিয়ে
পড়ছে।
পুরো
আকাশটা
লাল
হয়ে
গেছে।
কোথাও
কমলা
রং
কোথাও
আগুন
লাল,
কোথাও
সিঁদুর
লাল।
তার
ফাঁকেফাঁকে আকাশের
নীল
রংটাও
উকি
দিচ্ছিল। পাহাড়চূড়া থেকে
সূর্যাস্তের সৌন্দর্য যে
এইরকম
ভয়াবহ
তা
তিতির
ভাবতেও
পারেনি।
হঠাৎ
একটা
জীপের
শব্দ
পেল
ওরা।
মুগ্ধ
চোখের
পলকে
তিতিরকে টেনে
নিয়ে
পাথরটার উপর
থেকে
সরে
পাহাড়ের আরো
নিচের
দিকটায়
সরে
গিয়ে
পাহাড়ের গায়ে
হেলান
দিয়ে
দাঁড়ালো। তিতির
ভয়ের
চোটে
আচমকা
কখন
যেন
মুগ্ধকে জড়িয়ে
ধরেছে।
একটু
পা
ফসকে
গেলেই
নিচে
বিশাল
খাদ।
মুগ্ধ
জানে
তিতিরের সেদিকে
চোখ
পড়লে
ভয়
পাবে।
তাই
ওর
একটা
হাত
দিয়ে
তিতিরের চোখ
ঢেকে
মাথাটা
নিজের
বুকের
মধ্যে
নিয়ে
রাখলো।
তিতির
শুনতে
পেল
মুগ্ধর
বুকের
ভেতর
শব্দ
হচ্ছে...
ঢিপ
ঢিপ
ঢিপ
ঢিপ!
জীপগাড়িটা জঙ্গলের সামনে
এসে
থামলো।
একটা
লোক
বলল,
-"ওস্তাদ, অরা এই
জঙ্গলে
ঢুকে
নাই
তো
রাতটা
পার
করার
জন্য?"
আরেকটা
কন্ঠস্বর শোনা
গেল,
-"থানচির রাস্তায় যহন
যায়
নাই,
এই
রাস্তায় গ্যাছে। ভাল
কইরা
খুইজা
দেখ,
পুরা
জঙ্গল
তন্নতন্ন কইরা
খুঁজবি। লাগলে
আগুন
জ্বালাইয়া দে।
ওই
****পোলার
গলাটা
নামাই
দিয়া
মাইয়াডারে লইয়া
আয়,
যাহ।"
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন