উপন্যাস        :        দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা        :         তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
Bangla Golpo দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা

৪১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব -৪২ )


বাড়ি ফিরে দাদুর মুখে নিশীথ যখন শুনলো, ওর পরিবার বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয়েছে, তখন ও যারপরনাই খুশি হলো। এত দ্রুত যে সবাই রাজি হবে, এমনকি ওর বাবা কোনো বাধা দিবেনা এটা নিশীথ ভাবেনি। তবে আল্লাহ যা করে সবার ভালোর জন্যই করে এ ব্যাপারে ও সবসময়ই বিশ্বাসী ছিলো। আজকেও বিয়ের সংবাদ পেতেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললোনা নিশীথ! কিন্তু এত বড় খুশির সংবাদ পেয়েও সে দোলনচাঁপার সাথে যোগাযোগ করলোনা। মূলত, এতকিছু ঘটে যাবার পরেও ওর প্রতি ভালোবাসা স্বীকার না করার অভিমান জমে আছে দোলার প্রতি। নিশীথ ভেবে পায়না, একটা মেয়ে এতটা চাপা ও নির্দয় কিভাবে হতে পারে? আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!
সারাজীবন কলেজ থেকে শুরু করে ভার্সিটিতে ওর এক কথায় সব করতে রাজি হওয়া সুন্দরী মেয়েগুলোকে বাদ দিয়ে নিশীথের মন কিনা ফেসেছে এমন এক নির্দয়া রমণীর উপর যার চোখে ওর প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট দেখা দিলেও সে ভুলেও কখনো মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলেনা! নিশীথের মতো ধৈর্যহীন ছেলে এতটা দিন দোলার মতো চাপা স্বভাবের মেয়ে ঘুরেও কিভাবে ক্লান্ত হলোনা, এখনো ওর মন কেনই বা দোলনচাঁপার প্রেমে মজে আছে নিশীথ আজ পর্যন্ত এ কথাটা ভাবে! কিন্তু ওর ভাবনা ওর মন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে৷ এ প্রশ্নের উত্তর সে কখনো পায়না!
---কি দাদুভাই, বিয়ের কথা শুনেই মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করলো নাকি হুম?
দাদুর কথায় নিশীথ ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসে। চুলের ভাজে হাত চালিয়ে হেসে বলে,
---লাড্ডু তো মনে সেদিন থেকেই ফুটছে যেদিন থেকে তোমার হবু নাতবৌকে প্রথমবার দেখেছি!
নাতির রসিকতায় ইউনুস সাহেব হো হো করে হাসলেন। নিশীথটা বেশ দুষ্টু, ফাজিলও আছে বটে। অন্যদিকে দোলনচাঁপার কথা যতটুকু শুনেছেন, মেয়েটা অনেক শান্ত-চুপচাপ। এদের কীভাবে কি হবে? ওই ভোলাভালা শান্ত মেয়েটা তার বদ-বেপরোয়া নাতিকে কীভাবে সামলাবে? ইউনুস সাহেব ক্ষনিকের জন্য ভাবনায় পড়ে যান! অবশ্য পরক্ষণেই ভাবেন, তার নাতি যেভাবে দোলনচাঁপার উপর লাট্টু তাতে মেয়েটাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবেনা বৈকি! এসব ভেবে মনে মনেই ইউনুস সাহেব হাসলেন। নিশীথ তা লক্ষ্য করে বললো,
---তা এবার তুমি কোন চিন্তায় মগ্ন হলে গো, দাদু? পুরনো দিন মনে পড়ে গেলো বুঝি?
নাতির কথায় উচ্চহাসিতে ফেটে পড়লেন ইউনুস সাহেব। কিন্তু বয়সজনিত কারণে কিছুক্ষণের মাঝেই সেই হাসি কাশিতে রুপান্তরিত হলো। নিশীথ বিচলিত হয়। পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে তড়িঘড়ি করে দাদুর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
---কেন এভাবে হাসতে গেলে তুমি? ডাক্তার মানা করেছেনা তোমায়? বুকে চাপ পড়বে তো! কেন যে তুমি একটা কথাও শুনোনা, দাদু!
---কার দাদা হই দেখতে হবেনা?
পানি খেয়ে ইউনুস সাহেব উত্তর দিলেন। নিশীথ কিছু বললোনা এবার। চুপচাপ দাদুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো শুধু! দাদুর কিছু হলেই ও ভীষণ ঘাবড়ে যায়। একটু আগে কি ভয়টাই না পেয়েছিলো! অথচ যার ভয় পাওয়ার কথা উনিই কত ভাবলেশহীন। আহা জীবন!
___________________
পরদিনই নিশীথের থেকে পারভীন বেগমের নাম্বার নিয়ে আয়মান সাহেব বাদে তালুকদার বাড়ির বাকি মুরব্বিরা নিশীথের সাথে চলে গেলেন দোলাদের বাসায়। দোলা ভার্সিটিতে থাকায় ও এসব বিষয়ে কোনোকিছুই জানতে পেলোনা। প্রথমে নিশীথের বাড়ির লোকজনকে দেখে পারভীন বেগম অবাক হলেও পরক্ষণে তাদের সামলে নিয়ে বাসায় ঢুকতে দিলেন। নিশীথের উদ্দেশ্যে বললেন,
---তুমি যে তোমার পরিবারকে নিয়ে আসবে আগে বললেই পারতে, বাবা। কিছু ব্যবস্থা করতে পারতাম। এভাবে হুট করে এলে কি হয়? এখন যে আমি যে কিছুই করতে পারলামনা। কতটা লজ্জা লাগছে আমার!
উনার কথায় নিশীথ সরল জবাব দেয়,
---আমি নিজেও জানতাম না আজকে এভাবে আপনার এখানে আসা হবে, আন্টি। কাল রাতে বাড়ি ফিরেই জানতে পেরেছি সবকিছু। এসব এত দ্রুত ঘটে গেলো যে আপনাকেও জানানোর সুযোগ পাইনি। দাদুর জোরাজুরিতেই এভাবে হুট করে এখন আসা! তাছাড়াও আমরা বাসা থেকে খেয়েই এসেছি। আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না। শুধু বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে আমার পরিবার!
নিশীথের এত কথার পরেও পারভীন বেগম মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলেন। ড্রয়িংরুমের সোফা ঠিকঠাক করে উনি সবাইকে বসতে দিয়ে দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলেন। ভাগ্যিস কামিনি আজকে বাসায় আছে! ফ্রিজ থেকে সংরক্ষিত কিছু নাস্তার আইটেম বের করে কামিনিকে বললেন এগুলো দ্রুত ভেজে দিতে। এরপর তিনি ড্রয়িংরুমে চলে গেলেন তালুকদার বাড়ির সবার সাথে আলাপ করতে! কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর ইউনুস সাহেব বললেন,
---দেখো মা, নিশীথ আমাদের ওদের দুজনের ব্যাপারে সব জানিয়েছে। ও যে দোলনচাঁপাকে কতটা ভালোবাসে আমরা বুঝি। এজন্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ছেলে যখন নিজের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছেই তখন আর সময় নষ্ট না করে দুজনের বিয়ে করিয়ে সম্পর্ক হালাল করতে। এতেই দু'পক্ষের কল্যাণ। তুমি বয়সে আমার মেয়ের মতো। তাই তোমায় মা করেই বললাম। কিছু মনে করোনা!
---জি, আংকেল। অবশ্যই। আমিও মেয়ের খুশির কথা চিন্তা করে নিশীথকে মেয়েজামাই হিসেবে পছন্দ করেছি। ও খুব ভালো ছেলে। আমার মেয়েকে আগলে রাখবে বলে মনে করি!
---অবশ্যই। আমরা তোমার দোলনচাঁপাকে ফুলের মতো যত্নে রাখবো ইন শা আল্লাহ। তাহলে যদি সবাই রাজি থাকে আমরা কি বিয়ের ব্যাপারটা পাকা করতে পারি? আসমা, নিশীথের মা হিসেবে তোমার কোনো মতামত থাকলে তুমি বলতে পারো!
ইউনুস সাহেবের কথায় আসমা বেগম মাথা নেড়ে বললেন,
---আমি যা বলতে চেয়েছিলাম আপনি তা বলেই দিলেন, আব্বা। আপনারা সবাই যদি রাজি থাকেন আমারও আর কোন মতামত নেই। দোলনচাঁপা ভালো পরিবারের মেয়ে। দেখতেও সুন্দর। সবচেয়ে বড় কথা, আমার ছেলের পছন্দ। তাই আমারও কোনো আপত্তি নেই এ বিয়েতে!
নিশীথের মায়ের কথা শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন পারভীন বেগম। যাক তবে কারও কোনো চিন্তা নেই আর। তবে নিশীথের বাবাকে না দেখে উনি জিজ্ঞেস করলেন,
---তা নিশীথের বাবা আসেননি যে? উনি কি ব্যস্ত?
নিশীথ কিছু জবাব দিবে এর আগেই ইউনুস সাহেব কথা ঘুরিয়ে বললেন,
---হ্যাঁ, অফিসে অনেক কাজ আছে। ও অফিসে গেছে। তাছাড়াও, আমরা মুরুব্বিরা তো আছিই। সবাই একমত হলে কথা পাকা করতে দেরি করা উচিত নয়।
পারভীন বেগম মাথা নাড়লেন। একিসাথে দু'পক্ষের যাবতীয় সব কথাবার্তা শেষে বিয়ের দিন-তারিখ পাকা করা হলো। যেহেতু পারভীন বেগম আগে থেকেই দুজনের ব্যাপারে সবকিছু জানতেন, তাই উনিও কোনোকিছুতে দ্বিমত করলেন না! আপাতত বিয়ের দিন-তারিখের বিষয়ে নিশীথের মতকে গুরুত্ব দেওয়া হলো। ওর ইচ্ছেনুযায়ী সবচেয়ে নিকটবর্তী তারিখে বিয়ের প্রোগ্রাম ধার্য করা হলো!
অতঃপর নাস্তা-পানি শেষে তালুকদারগণ প্রস্থান করতেই নিশীথ একফাঁকে পারভীন বেগমকে ডেকে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বললো। পারভীন বেগম প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে কি মনে করে হাসলেন। নিশীথের দিক তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হাসলেন আর বললেন,
---তুমি পারোও বটে!
নিশীথ হেসে বললো,
---আশা করছি আপনি আমার কথার সম্মান রাখবেন, আন্টি!
---অবশ্যই, বাবা। তুমি চিন্তা করোনা।
নিশীথ মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো। নিচে নেমে ফোন বের করে সময় দেখার ফাকে হোমস্ক্রিনে দোলার ছবির দিকে তাকিয়ে ক্রু'র হেসে বললো,
---এতদিন আমায় অনেক জ্বা'লিয়েছো, দোলনচাঁপা। এবার তোমার পালা!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন