উপন্যাস : দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা : তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা |
৪৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৪৪)
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে দোলা পুরোটা সময় কেদে পার করলো। কিন্তু বাসায় ঢুকার আগ মুহুর্তে দুই হাতে শক্ত করে চোখের পানি মুছে নিলো৷ ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরায় নিজের মুখ দেখে কিছুক্ষণ দেরি করেই বাসায় ঢুকলো। পারভীন বেগম মেয়েকে সিরিয়াস মুডে বাসায় ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। কিন্তু দোলা এতক্ষণে নিজেকে একটু সামলে নিয়েছে বিধায় স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো কিছু না। তবু ওর চোখমুখের অবস্থা বাজে, পারভীন বেগম দেখেও কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করলেন না। মায়ের কথার অপেক্ষা না করে দোলা রুমে চলে গেলো। মিনিট বিশেক পর বেরিয়ে এসে মা-কে জানালো ও বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে। এতক্ষণ রুমে বসে হিসাব-নিকাশ কষে দোলা ঠান্ডা মাথায় ঠিক করলো ওর কি করা উচিত। সবটা ভেবেচিন্তে ও মায়ের পছন্দের ছেলের সাথেই রাজি হয়ে গেলো। পারভীন বেগম মেয়ে রাজি হয়েছে শুনে খুশি হলেন। নিশীথ পাত্র এটা জানার পর দোলা যে রাজি হবেই, এ তো জানা কথা। তবে কেন এত সিরিয়াসভাবে মেয়েটা বললো? মায়ের মনে খটকা লাগলো। বাইরে থেকে আসার পর থেকেই শান্তশিষ্ট দোলা আরও বেশ খানিকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। পারভীন বেগমের খটকা লাগে মনে। উনি দোলাকে জিজ্ঞেস করলেন,
---কিছু হয়েছে কি? তোকে এমন মরা মরা দেখাচ্ছে কেন বল তো?
---কি হবে, মা? শুনেছি বিয়ে ঠিক হলে সব মেয়েরই একটু নার্ভাস লাগে। আমারও হয়তো তাই হচ্ছে!
দোলা সজ্ঞানে এড়িয়ে গেলো মায়ের করা প্রশ্নটা। পারভীন বেগম থেমে গেলেন। ভাবলেন, হয়তো এমনটাই হচ্ছে দোলার সাথে। তবু মায়ের মন পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারলোনা। তাও এবার মেয়েকে কোনো প্রশ্ন করলেন না আর। ভাবলেন পরশুদিন তো এমনিতেও নিশীথের পরিবার আসবে ওকে দেখে আংটি পড়ানোর জন্য। তখন নিশ্চয়ই দোলার মন ভালো হয়ে যাবে!
দোলা চলে গেলে মেয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে তিনিও বিয়ের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিলেন। দোলার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দাদিবাড়ির দিকে এবং পরবর্তীতে ওর নানা-নানি মরে যাওয়ার পর থেকে মামা-খালারা বাদে মায়ের দিকেও তেমনভাবে আত্মীয়দের মধ্যে কারও সাথে ওদের সম্পর্ক আগের মতো আর নেই। ফলে বিয়েতে মেয়েপক্ষ হতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সংখ্যাও বেশ কম হবে। কাদের বিয়েতে ডাকবেন এসবের লিস্ট করছিলেন পারভীন বেগম। বোনকে ফোন দিয়ে জানাচ্ছিলেন দোলার বিয়ের কথা, এমন সময় ভাইব্রেট করে উঠলো ফোনের স্ক্রিন। কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলেন নিশীথ ফোন দিচ্ছে। সহসা হবু জামাইয়ের ফোনকে তিনি অধিক গুরুত্ব দিলেন। বোনকে বিদায় জানিয়ে সাথে সাথেই নিশীথের কল ধরলেন। হ্যালো বলতেই নিশীথ সালাম দিয়ে দোলার হালচাল জিজ্ঞেস করলো। পারভীন বেগম কিছু বলতে যাবেন এমন সময় তার মাথায় এলো, ওদের মধ্যে আবার কোনো মনোমালিন্য হয়নি তো?
একেতো সকাল থেকে দোলার এমন বাজে অবস্থা, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেও মুড ভালো হয়নি। আবার নিশীথ এভাবে তাকে ফোন দিয়ে দোলার কথা জিজ্ঞেস করছে, এসবের কারণ কি?
---দোলনচাঁপা কি করছে, আন্টি? ওর শরীর এখন ভালো আছে তো?
---আছে ভালো। কিন্তু এসব কথা তো তুমি সরাসরি দোলার থেকেই শুনতে পারতে, বাবা। ওকে ফোন না দিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করছো যে?
---না এমনিই। ভাবলাম আপনার থেকেই খোজ নেই। আপনার মেয়ে তো রেগে বো'ম হয়ে বসে আছে আমার উপর!
---ওমা! কেন? তুমি কি এমন করলে যে আমার শান্তশিষ্ট মেয়েটা এভাবে রেগে গেলো? তাইতো বলি বাসায় আসার পর থেকেই ওকে এত মনমরা লাগছে কেন! নিশীথ, যদি পারো তবে আমায় সবটা খুলে বলোতো, বাবা। বিয়ের আগে এসব এখন আর ভাল্লাগছেনা আমার!
নিশীথ ফোস করে শ্বাস ফেললো। কই দোলার খোজখবর নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলো, এখন দেখছে শাশুড়ীকে সবকিছু বলতে হবে। দোলা পুরোটাই হয়েছে ওর মায়ের মতো, নিশীথ ভাবলো মনে মনে। তবে সবকিছু বললোনা সে। শুধু বললো,
---আসলে আপনার মেয়ের সাথে একটু দুষ্টুমি করেছি, আন্টি। ওর বিয়ে যে আমার সাথেই হচ্ছে ওটা বলিনি ইংগেজমেন্ট এর দিন সারপ্রাইজ দিবো বলে। তাই এমন ক্ষে'পে আছে আর কি!
পারভীন বেগম আকাশ থেকে পড়লেন। বলছে কি এই ছেলে? দোলা যদি না-ই জানে ওর সাথে নিশীথের বিয়ে হচ্ছে তবে বিয়ের জন্য রাজি হলো কিভাবে? বিস্ময় না ঢেকে পারভীন বেগম অবাক স্বরে বললেন,
---তোমার সাথে বিয়ে হচ্ছে বলোনি মানে? কিন্তু দোলন যে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলো। তবে কি ও তোমার ব্যাপারে না জেনেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে?
দোলা বিয়েতে রাজি হয়েছে শুনে নিশীথ মনে মনে হাসলো। ও যা ধারণা করেছিলো তাই হয়েছে। ওর উপর রাগের বশে জিদ ধরে পাত্র সম্বন্ধে কোনোকিছু না জেনেশুনেই বিয়েতে হ্যাঁ বলেছে দোলা। নিশীথ কিছু একটা বলতে যেয়ে থেমে গেলো। মনে মনে কি যেন হিসেব কষে হবু শাশুড়িকে বললো,
---আন্টি, আপনার কাছে ছোট্ট একটা রিকুয়েস্ট। আমি চাই ইংগেজমেন্টের দিন দোলনচাঁপাকে সারপ্রাইজ দিতে, এজন্যই আজকে ওকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলিনি। আপনিও প্লিজ আর একটা দিন চুপ থাকুন, ওকে জানতে চাইলেও ওকে বলবেন না আমার কথা। ইনডাইরেক্টলি জবাব দিবেন যেমনটা কাল দিয়েছেন।
---কিন্তু নিশীথ, দেখো বাবা বিয়েটা তোমাদের দুজনের। আমি বুঝতে পারছি তোমার অনুভূতি, তুমি ওকে একবারে বিয়ের দিন সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসব করছো। কিন্তু দোলার দিকটাও একবার ভেবে দেখো? ওর সাথে তো এটা অন্যায় হচ্ছে, তাই না?
নিশীথ চুপ রইলো। ও নিজেও জানে দোলার সাথে ও যা করছে তা ঠিক নয়, বরং ওর দোলনচাঁপাকে কষ্ট দেওয়ার কথা নিশীথ কখনো ভাবতেও পারেনা। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। নিশীথ যা করছে ভেবেচিন্তেই করছে। তবে আপাতত এটা কাউকে বুঝাতে পারবেনা সে। তাই ভেবেচিন্তে পারভীন বেগমকে বললো,
---আন্টি, আপনার মেয়েকে আমি কতটা ভালোবাসি এটা আপনি ভালো করেই জানেন। এ ব্যাপারে নতুন করে আমার নিশ্চয়ই বলার প্রয়োজন নেই? শুধু ছেলে হিসেবে এবার এটুকুই আবদার করছি, আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। দোলা যা ভাবছে সে অনুযায়ী ওকে কাজ করতে দিন। কাল বাদে পরশুদিনই আমাদের ইংগেজমেন্ট। আমি যা করছি বুঝেশুনেই করছি। আপনি যেভাবে ইংগেজমেন্টের ব্যবস্থা করতে চাইছেন সবকিছুই করুন। শুধু দোলা আমার ব্যাপারে না জানতে চাইলে ওকে নিজে থেকে কিছু জানাবেন না প্লিজ। এ রিকোয়েস্ট টুকু রাখবেন আশা করছি।
পারভীন বেগম পড়লেন দোটানায়। একদিকে মেয়ে, আরেকদিকে হবু জামাই। তবে উনি দোলার ব্যাপারে নিশীথের উপর বেশ ভরসা করেন। উনি প্রায় নিশ্চিত এ ছেলে ইচ্ছা করে তার মেয়েকে কষ্ট দিবেনা। তাই ওদের হবু জামাই-বউয়ের এ মনোমালিন্যে তিনিও আর নাক গলাতে চাইলেন না। নিশীথের কথায় সাড়া দিয়ে ফোন রেখে দিলেন।
ফোন কেটে তা বিছানায় ছুড়ে নিশীথ কফির মগ হাতে বারান্দায় এসে দাড়ালো। রাত ৯টার মতোন বাজছে এতক্ষণে। মৃদু মৃদু বাতাস বইছে বাইরে। চোখ বুজে কফি মুখে দিতেই চোখমুখ কুচকে ফেললো ছেলেটা। শাশুড়ীর সাথে কথা বলার ফাঁকে কফি ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে গেছে। এ আর খাওয়া যাবেনা একদমি। ফোস করে এক শ্বাস ফেলে মুখের কফিটুকু সুড়ুৎ করে নিচে ফেলে দিলো নিশীথ।
বিরক্তিতে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিতেই টবে ফোটা দোলনচাঁপা ফুলের সুবাস ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুগ্ধতা ছড়ালো। মস্তিষ্কের বিরক্তভাব মনের প্রশান্তিতে পরিণত হলো। নিশীথ ভাবনার জগতে ডুব দিলো। এইতো আর ক'দিন মাত্র। তখন ওর এই ঘরে, ওর পাশেই ওর দুই প্রশস্ত বাহুর মধ্যে আগলে থাকবে ওর লাজুক দোলনচাঁপা। যে শুভক্ষণের স্বপ্ন বিগত মাস ধরে নিশীথ দেখে আসছে তা পরিণতি পেতে আর বিলম্ব নেই। একিসাথে ওর মনে প্রশ্ন আসে। আচ্ছা, দোলনচাঁপা কি খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছে? কেদেকেটে চোখজোড়া এতক্ষণে ফুলিয়েছে নিশ্চয়ই? নিশীথ বিচলিত হয়। মনে মনে নিজের প্রতি খানিকটা রাগ হয়। কেন যে এমন করতে গেলো নিজের প্রেয়সীর সাথে? মেয়েটা বাইরে থেকে নিজেকে শক্ত দেখানোর চেষ্টা করলেও নিশীথ জানে দোলা ভেতর থেকে কত কোমল! কিন্তু ও এটাও ভাবে যে, আজ দোলনচাঁপা ওকে হারানোর ভয়ে যতটা কষ্ট পাচ্ছে এর চেয়েও অধিক কষ্ট নিশীথ প্রতিরোজ পেয়েছে। ওর এক মাসের অনুভূতির স্বাদ দোলা একদিনে একটুখানি পেলে কি খুব মন্দ হয়? না, হয়না!
নিশীথ মনে মনে প্রতিশ্রুতি নেয়- যেদিন কবুল বলে দোলনচাঁপাকে ঘরে আনবে সেদিন থেকে ওর সমস্ত দুঃখ-কষ্টকে নিশীথ সামলে নেবে। সুতরাং, বিয়ের আগে এ কান্নাই হবে দোলার শেষ কান্না! সুখের দিনগুলোর আগে একটু দুঃখ আসুক না হয়! মেঘের পরেই তো সূর্য আসে, তাই না?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন