উপন্যাস : দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা : তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা |
৫৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৫৪)
তিনদিন পেরিয়েছে এ বাসায় আসার। একটু একটু করে নতুন সংসারে মানিয়ে নিচ্ছে দুজনেই। নিশীথ অফিসে যাওয়ার আগে দোলাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় অফিস শেষে দোলাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। টোনাটুনির সংসারে এভাবেই চলছিলো জীবন। এরই মাঝে রাতে খেতে বসে নিশীথ ও দোলা প্ল্যান করলো, কাল নিশীথের অফিস শেষে দুজনে সংসারের দরকারি কিছু জিনিসপত্র কিনতে মার্কেট যাবে। সেই মোতাবেক পরদিন সকালে উঠে নাস্তা করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো নিশীথ। দোলাকে ভার্সিটি নামিয়ে অফিস যাওয়ার পথে রাস্তায় জ্যামে পড়ে বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে যাওয়ায় আজকে অফিস পৌঁছাতে দেরি হয়েছে ওর। বাইক পার্ক করে দ্রুতপায়ে অফিসের ভেতরে ঢুকছিলো নিশীথ, এমন সময় নিয়তির অদ্ভুত পরিহাসে কাকতালীয়ভাবে মুখোমুখি হলো আয়মান সাহেবের। উনি মাত্রই তার ম্যানেজার তামিমের সাথে হেটে যাচ্ছিলেন গেটের সামনে দিয়ে। নিশীথকে এ সময় অফিসে আসতে দেখে ওকে শুনানোর জন্য পরোক্ষভাবে ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
---বুঝলে তামিম, অফিসে লেইট করে আসাটা কোনো ধরনের প্রফেশনালিজমের মধ্যে পড়েনা। একবার মানুষ লেইটে আসা শুরু করলে তা অভ্যাসে পরিণত হতে সময় লাগেনা। তাই যারা যারাই এখন থেকে দেরি করে আসতে দেখবে, ওদেরকে বলে দিও এরপর থেকে যেন এমন না হয়। সবাই যেন টাইমলি কাজে আসে। কাজে টাইমলি না আসা লোকজন আমি একদম পছন্দ করিনা!
নিশীথ নিজের কেবিনের দিকে যেতে যেতে সবটা শুনলো ঠিকি। তবে মাথায় নিলোনা। বাপকে শুনানোর জন্যই একা একা কথা বলছে এমন ভাব করে বললো,
---আপনার যে কোন ধরনের মানুষ পছন্দ তা আপনি নিজেও হয়তো জানেন না!
নিশীথ চলে গেলো ঠিকই। আয়মান সাহেবও কথাটা কানে নিলেন। আড়চোখে ছেলের কথা শুনে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। এর মাঝে বাপ-ছেলের এমন অদ্ভুত কথাবার্তা মধ্যে থেকে পরিদর্শন করলেন তামিম। উনি কিছু বুঝলেন না কি হচ্ছে! উল্টো তিনি সরলভাবে আয়মান সাহেবকে প্রশ্ন করলেন,
---আচ্ছা স্যার, আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি?
---হুম।
---বলছিলাম আপনি ও নিশীথ স্যার তো একই বাসায় থাকেন, আবার একই অফিসেই আসেন। তাহলে আপনারা বাপ-ছেলে একসাথে অফিসে আসলেই তো পারেন! আইডিয়াটা দারুণ না, স্যার?
তামিমের কথায় আয়মান সাহেব কিছুক্ষণ বোকার মতো চুপ করে তাকিয়ে থাকলেন। কি বলবেন না বলবেন ভাবতে ভাবতে গলা ঝেড়ে প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
---এসব বাদ দাও এখন। আজকে আমাদের বোর্ডের কোনো মিটিং ছিলো না? তোমাকে যে ফাইলগুলো রেডি করতে বলেছিলাম? ওগুলো করেছো?
---জি স্যার, আমি এক্ষুনি রেডি করছি।
---চলো তবে। তুমি দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছো কেন? একটু আগে কি বললাম ভুলে গেলে?
আয়মান সাহেবের তাড়া খেয়ে তামিম দ্রুত হেটে চললেন তার সাথে। যাওয়ার রাস্তায় নিশীথের কেবিনের দিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার ভেতর থেকে! এমনটা কেন হলো, উনি বুঝলেন না। ম্যানেজারের কথায় ধ্যান ভেঙে যাওয়ায় চলে গেলেন নিজের কেবিনে।
_________________
অনেকক্ষণ ধরেই দোলা ফোন দিচ্ছে নিশীথকে। আজ ওর শেষের ক্লাস ক্যান্সেল হওয়ায় সন্ধ্যা থেকেই বসে আছে ক্যাম্পাসে। অপেক্ষা করছে নিশীথ কখন নিতে আসবে তার জন্য। অন্যদিন হলে আগেই বাসায় চলে যেতো দোলা, কিন্তু আজকে মার্কেট যাবে বিধায় ভার্সিটিতেই বসে থেকে অপেক্ষা করছে নিশীথের জন্য। নিশীথ ফোন না ধরায় চুপচাপ বসে ছিলো ও। ঘড়ির কাটায় সাড়ে ছ'টা পেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। নিশীথ বলেছিলো সাড়ে ছয়টার মধ্যে নিতে আসবে ওকে। কিছুক্ষণ পর নিশীথ ফোন দিলো দোলাকে। ও ধরতেই নিশীথ বললো,
---কোথায় তুমি?
---ক্যাম্পাসের ভেতরেই আছি। আপনি ফোন ধরছিলেন না তাই ওয়েট করছিলাম এতক্ষণ!
---ওহ। কখন ফোন বেজেছে টের পাইনি। আমি আসলাম মাত্র। তোমাদের গেটের বাইরেই আছি। বেরিয়ে আসো!
নিশীথ এসেছে শুনে দোলা খুশি হয়ে যায়। ফোন কেটে জলদি বেরিয়ে আসে ভার্সিটির বাইরে। গেটের সামনে যেতেই বাইকে বসা হেলমেট পরিহিত নিশীথকে চোখে পড়ে ওর। নিশীথ ফোনে কি যেন দেখছিলো, এমন সময় দোলা কাছে আসতেই চোখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকায়। দোলা মিষ্টি করে হাসতেই নিশীথ ইশারায় বসতে বলে ওকে। দোলা বাইকে উঠে নিশীথের অফিস ব্যাগ কোলে নেয়। নিশীথ বলে,
---রাস্তায় তো জ্যাম দেখাচ্ছে ভালোই। অফিসগুলো ছুটি হয়েছে। আমাদের পৌঁছাতে দেরি হবে বোধহয়!
---চলুন দেখা যাক কতক্ষণ লাগে! বেশি দেরি হলে ওখান থেকেই ইউটার্ণ নিয়ে বাসায় চলে যাবো না হয়?
নিশীথ মাথা নেড়ে বাইক স্টার্ট করে। রাস্তায় কিছুদূর এগোতেই ওরা বুঝে গেলো, দোলার কথাটাই সঠিক। পুরো রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। ওরা অপেক্ষা করার পরেও ইতিমধ্যে সাড়ে সাতটা পেরিয়েছে। এ মুহুর্তে এখান থেকে মার্কেট পৌঁছাতে সাড়ে আটটা বেজে যাবে। বাসায় পৌঁছাতে আরও দেরি হবে। তার চেয়ে বরং আজকে বাসায় চলে যাওয়াই উত্তম। নিশীথ দোলাকে শুধালো,
---কি করবো? বাসায় চলে যাই আজকে, কি বলো?
---হ্যা তাই চলুন। আজ মনে হয়না মার্কেট যাওয়া ঠিক হবে। আমরা কাল/পরশু আসবোনি।
---আচ্ছা, সামনের জ্যামটা একটু ছাড়ুক। সিগনাল দিয়েছে বোধহয়। গাড়িগুলো না এগোলে তো ইউটার্ণও নিতে পারবোনা।
দোলাও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। চারদিকের প্রচণ্ড ভীড়ে ও গরমে সকলের অবস্থা যায় যায় ভাব। একেতো গরম, তার উপর সারাদিনের ক্লান্তিতে নিশীথের অবস্থা দেখার মতো। ও একবার উকি দিয়ে সামনে দেখলো রাস্তার পরিস্থিতি, সিগনাল এখনি ছাড়বেনা বুঝে অতঃপর জ্যামে বসেই মাথা থেকে হেলমেট খুলে বড়সড় এক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো! এতক্ষণ পর যেন মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারলো বেচারা। ওর অবস্থা দেখে দোলার খুব মায়া হলো। নিশীথের চুল, কপাল ও ঘাড় বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে সমানে। দোলা কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে হঠাৎ ওড়নার আঁচল হাতে নিয়ে পেছন থেকে নিশীথের চুল ও ঘাড়ের অংশের ঘাম মুছে দিলো। বলাবাহুল্য, ওর এমন কাণ্ডে হুট করে নিশীথও খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। একিসাথে অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ভরে গেলো ওর মন। মাথা পাশ ঘুরিয়ে দোলার উদ্দেশ্যে বললো,
---কি ব্যাপার, দোলনচাঁপা? মাঝরাস্তায় বরের প্রতি এত সহানুভূতি?
দোলা এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও ওর মাত্র মনে পড়লো আসলেই তো! ওরা দুজন তো এখন রাস্তার মাঝে অবস্থান করছে। অথচ এতক্ষণ নিশীথের দিকে মনোযোগ থাকায় স্থান,কাল কোনোটাই দোলার খেয়ালই ছিলোনা! ফলে একটু আগে জড়তাহীনভাবে করা কাজটিতে আপাতত বেশ লজ্জাবোধ করলো মেয়েটা। আশেপাশে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো, কেউ ওদের দেখেনি তো?
নিশীথ বাইকের আয়নায় দোলার হাবভাব লক্ষ্য করলো বেশ ভালোভাবেই। একিসাথে ওর হুট করে এই লজ্জা পেয়ে মিইয়ে যাওয়া মুখটা উপভোগও করলো বেশ। দোলা মিনমিন করে বললো,
---ইশ! আপনি খুব খারাপ। এভাবে আমায় মনে করে দেওয়া খুব জরুরি ছিলো বুঝি? কত লজ্জা লাগছে এখন! কেউ দেখলোই নাকি আমাদের।
---দেখলেও বা কি? তুমি তোমার স্বামীর প্রতিই ভালোবাসা প্রকাশ করছো, অন্যের প্রতি তো আর নয়। পুরো অধিকার আছে তোমার। চিল!
নিশীথ চিল করতে পারলেও দোলা পারলোনা। বরং বিড়বিড় করে কিসব যেন বললো। নিশীথ ওকে আরেকটু লজ্জা দিতে বললো,
---আরেকবার ভালোভাবে মুছে দাও তো, দোলনচাঁপা। আবারও ঘেমে গেছি!
দোলা আয়নায় তাকাতেই দেখলো নিশীথ ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপছে। ও চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিশীথ হাসতে লাগলো। দোলা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সামনের গাড়িগুলো নড়তে শুরু করায় নিশীথ দ্রুত মাথায় হেলমেট চেপে বাইক স্টার্ট দিলো। অথচ দুজনের অগোচরে কেউ একজন যে ওদের গভীরভাবে লক্ষ্য করছিলো, বিষয়টা ওরা জানতেও পারলোনা!
___________________
আয়মান সাহেব বাসায় এসেছেন কিছুক্ষণ আগেই। আজকে জ্যামে বসে অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে উনার। এর মাঝে আসমা বেগম চা এনে রাখলেন তার সামনে। বলতে গেলে, নিশীথের যাওয়ার পর থেকে আসমা বেগম কথাবার্তা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন আয়মান সাহেবের সাথে। খুব বিশেষ প্রয়োজন না হলে তিনি আর কথা বলেন না আগের মতো। তবে মুখে কিছু না বল্লেও নিজের স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব আগের মতোই পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
রুমে এসি দেওয়াই ছিলো। তবু ওর মধ্যেও আয়মান সাহেবের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছেন। আসমা বেগম রুম থেকে চলে যাচ্ছিলেন। কিছু বলবেন না ভেবেও হঠাৎ পেছন ফিরে একবার আয়মান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
---বেশি গরম লাগলে এসি বাড়িয়ে দিন।
আয়মান সাহেব যেন শুনতেই পারলেন না তার কথা। তখনো চুপচাপ নিজ ধ্যানে মগ্ন তিনি। এদিকে কপাল তার তখনো বেয়ে পড়ছে ঘামে। আসমা বেগম ফোস করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসেন।
---ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে তবু কোনোদিকে হুশ নাই!
টেবিলের উপর থেকে এসির রিমোট হাতে নিয়ে নিজেই পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে যান। তার খট করে রিমোট রাখার শব্দে আয়মান সাহেব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসেন। একবার এসির রিমোটের দিকে তো একবার চলে যাওয়া স্ত্রীর দিকে তাকান। হুট করে তার মনে পড়ে, প্রায় একিরকম ঘটনা উনি আজ রাস্তায় ঘটতে দেখেছেন!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন