উপন্যাস : দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা : তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা |
৫৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব -৫৯ )
অফিস থেকে বের হবার আগে নিশীথ সুযোগ বুঝে একবার ওর চাচার সাথেও কথা বলে নিলো। যেহেতু একি বাসায় থাকতো ওরা সেখানে সবাইকে বলার পর চাচা-চাচিকে দাওয়াত না দিলে বিষয়টা বাজে দেখায়! কিন্তু আরেফিন সাহেব জানালেন, শুক্রবার নিশীথের চাচির বোনের বাসায় যাবেন তারা৷ সেখানে আগেই কথা দিয়ে ফেলেছেন। সুতরাং, তারা যেতে পারবেন না! নিশীথও এসব শুনে আর জোর করলোনা। সবাইকে বলতে পেরেছে এতেই সে খুশি।
রাতে বাসার কলিংবেল চাপতেই দোলা দরজা খুলে দিলো। নিশীথ ভেতরে ঢুকতেই ওকে খুশিমনে জড়িয়ে ধরবে এমন সময় দোলাকে বাধা দিলো নিশীথ। ও অবাক চোখে তাকাতেই পেছনে রাখা হাতটা সামনে এগিয়ে আনলো সে। দোলা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো, নিশীথের হাতে একগুচ্ছ সতেজ দোলনচাঁপা। ফুলগুলো এত শুভ্র, সুন্দর যে নিমিষেই দোলার উৎফুল্লিত মন আরেকটু ভালো হয়ে গেলো! দু হাতে নিয়ে নিলো দোলনচাঁপার গুচ্ছ। মাথা ঝুকিয়ে ঘ্রাণ শুকতেই স্নিগ্ধ সুবাসে মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।
এবার এক হাতে ফুল ধরে রেখে অপরহাতেই নিশীথকে জড়িয়ে ধরলো দোলা। নিশীথ হেসে বললো,
---কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
দোলা হেসে বললো,
---কোথায় আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দেবো উল্টো আপনিই আমায় এত সুন্দর সারপ্রাইজ দিলেন। ইশ! দোলনচাঁপাগুলো এত্ত সুন্দর!
---আমার দোলনচাঁপার চেয়ে বেশি নয়!
নিশীথ ওর গালে চুমু খেয়ে বললো। দোলা লাজুক হেসে বললো,
---হঠাৎ আজ ফুল আনলেন কেন? কি হয়েছে?অনেক খুশি লাগছে আপনাকে আজ!
---তোমার জন্য ফুল আনতে আমার আবার কারণ লাগবে নাকি? রাস্তায় জ্যামে বসে চোখে পড়লো, দেখেই তোমার কথা মাথায় এলো। তাই নিয়ে নিলাম। আজ আমি খুব খুশি!
---আমি কি জানতে পারি এ খুশির কারণ?
দোলা আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করলো। নিশীথ বললো,
---অবশ্যই। সব বলছি। আগে রুমে তো যেতে দাও। সব কথা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনবে নাকি?
নিশীথের কথায় দোলার খেয়ালে এলো, ওরা দুজন তখন থেকে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। ও নিশীথের কাছ থেকে সরে এসে জিব কেটে বললো,
---সরি সরি। আপনি আগে রুমে যেয়ে শাওয়ার নিয়ে নেন। আমি খাবার গরম করছি, তারপর আরাম করে সব কথা শুনবো!
যথারীতি নিশীথ চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ও বের হয়ে এসে দেখলো আজ ওর জন্য চিকেন বিরিয়ানি রান্না করেছে দোলা, নিশীথের খুব পছন্দ এটা। নিশীথ বিস্মিত হয়ে বললো,
---ওয়াও, বিরিয়ানি? কিন্তু তুমি না বলেছিলে এটা রান্না করতে পারোনা, তবে? মা রান্না করে দিয়ে গেছেন?
---না, মা পাশে থেকে সব বলে দিয়েছে, আমি রান্না করেছি আপনার জন্য!
দোলার কথায় নিশীথ খুশি হলো। ওর বেশ খিদে পেয়েছিলো, কোনো কথা ছাড়াই গপগপ করে সবটা সাবাড় করে ফেললো। দোলা ওর পাশে বসে তৃপ্ত চোখে ওকে দেখলো শুধু। নিশীথ খাচ্ছে আর টুকটাক গল্প করছে। দোলার সেদিকে মন নেই। ওর চোখ মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিশীথের দিকেই আটকে আছে। ওর মন চাইছে সময় এখানেই আটকে যাক!
দোলার মনে হঠাৎ এলো, ওদের জন্ম সেই পুরনো আমলে হলে কি হতো? তাহলে নিশীথ রোজ কাজ করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরতো। এসে মাটিতে বসে ভাত খেতো আর দোলা ওর পাশে বসে রোজ হাতপাখা দিয়ে ওকে বাতাস করতো, মন ভরে ওর গল্প শুনতো! কত মিষ্টি হতোনা দৃশ্যটা?
নিজ মনের এসব পাগলামি চিন্তাভাবনায় দোলার বেশ হাসি পেলো। আচ্ছা, প্রেমে পড়লে কি মানুষ এমন আবলতাবল ভাবে? নয়তো সে কেন এসব ভাবছে! ওর হাসির মাঝেই নিশীথের গলায় খাবার আটকে গেলো। ওর কাশির শব্দে দোলার ধ্যান ভাংগতেই ও তড়িঘড়ি করে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে।দিলো। ও পানি খাওয়ার মাঝেই নিশীথের পিঠ চাপড়ে রাগের স্বরে বললো,
---খাওয়ার সময় কে কথা বলতে বলেছে আপনাকে? যখন যেটার দরকার তখন সেটা করবেন। খাওয়ার পর সব কথা হবে। এখন চুপচাপ খেয়ে উঠুন!
বউয়ের ধমকে নিশীথও আর কথা বাড়ালোনা। চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো। দোলা সব কাজ শেষ করে এসে দেখলো নিশীথ চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। ও এসে পাশে বসতেই নিশীথ ওর হাত টেনে ওকে পেছন থেকে ঘুরিয়ে বসালো। ফলে দোলার পিঠ এসে ঠেকলো নিশীথের চওড়া বুকের সাথে। নিশীথ পেছন থেকে ওর কাধে থুতনি রেখে বললো,
---থ্যাংক ইউ, দোলনচাঁপা!
---কেন? বিরিয়ানির জন্য?
ওর বোকা প্রশ্নে নিশীথ হেসে উঠে। হাসতে হাসতেই বলে,
---ওটার জন্যও, তবে সত্যি বলতে আজ অনেকদিন পর বাবার সাথে কাজের বাইরে কথা বলে আমার অনেকটা হালকা লাগছে। এতদিন ওমন যান্ত্রিক সম্পর্কে রোবট রোবট মনে হতো নিজেকে! আজ কতদিন পর তার কেবিনে গিয়েছি, তার সাথে কাজের বাইরেও কথা বলেছি এসব শুধুই তোমার জন্য হলো! থ্যাংক ইউ।
---ওহ এই ব্যাপার? এজন্যই তো বলছিলাম এত করে। বাবা-ছেলের মধ্যে কি ওমন সম্পর্ক মানায়?
---ইচ্ছে করে তো আর কেউ সম্পর্ক খারাপ করেনা। কারণ থাকতে হয়৷ ছোটবেলা থেকেই মায়ের প্রতি তার এমন আচরণ দেখেই আমি নিজেকে তার থেকে দূরে সরিয়ে ফেলি আর .....
নিশীথ কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যায়। দোলা এতক্ষণ সবটাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো, আচমকা নিশীথ থেমে যাওয়ায় ও শুধালো,
---আর? কি হলো থামলেন কেন?
---কিছুনা। ওসব এখন বলতে ভাল্লাগছেনা। পুরনো কথা মনে করে দুঃখ পেয়ে লাভ নেই!
দোলা চুপচাপ শুনলো। ও বুঝলো নিশীথ হয়তো এ মুহুর্তে দুঃখের স্মৃতি মনে করতে চাইছেনা তাই ও আর ঘাটালোনা বিষয়টা। প্রসংগ পাল্টে বললো,
---আচ্ছা, আপনি বাবার সাথে কি কি কথা বলেছেন? বাবা কি বলেছে? তখন ফোনে বুঝতে পারিনি ঠিকমতো। বলুন না!
নিশীথ সবটা বলে। দোলা ঘটনা শুনে হেসে ফেলে। আয়মান সাহেব কেমন অবাক হয়েছিলেন নিশীথের কথা শুনে তা অনুমান করার চেষ্টা করে মনে মনে! এমন সময় নিশীথ হাসতে হাসতে বলে,
---আর বলোনা, তার চেহারা দেখার মতো ছিলো! এতটা অবাক হয়েছিলেন যে আমার কথার মাঝে কলমের উল্টো দিক দিয়ে সাইন করতে ধরেছিলেন ফাইলে!
নিশীথের হাসি দেখে দোলাও হেসে ফেলে। পরক্ষণেই মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,
---হাসছেন কেন? বাবা হয় আপনার! সবার কপালে বাবা থাকেনা, নিশীথ। আর এটা অনেক দুঃখের বিষয় যে আপনার বাবা থাকার পরেও আপনাদের মাঝে এমন ঠান্ডা সম্পর্ক! আপনার কি মনে হয়না বাবার সাথে একদিন মন খুলে সব কথা বলে আপনাদের মধ্যের এ দূরত্ব ঘুচিয়ে দেওয়া উচিত?
দোলার কথা শুনে নিশীথের হাসি হাসি মুখ বদলে যায়, তার জায়গায় বিরাজ করে নিরবতা। দোলা তা লক্ষ্য করে বলে,
---আমি জানি আপনি হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েই তার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু একটাবার বাবার অবস্থান থেকেও ভাবার চলে করুন? হয়তো তার কাছে কোনো কারণ ছিলো তার আগেকার ওমন ব্যবহারের! কিন্তু আপনার ও বাবার মধ্যে দূরত্ব এতটাই বেশি যে আপনারা কেউ কখনো চেষ্টাই করেননি একে-অপরকে বুঝার!
দোলার কথায় যুক্তি দেখে নিশীথ দমে গেলো। তবে মুখে কিছু বললোনা। সরে এসে বিছানায় নিজ জায়গাতে শুয়ে বললো,
---ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। আমার ঘুম ধরেছে! তুমিও শুয়ে পড়ো! কত কাজ আছে কাল।
দোলা কিছুক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থেকে বাতি নিভিয়ে নিশীথের পাশে শুয়ে পড়লো। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে থাকলেও আজ তাদের ভেতর অদ্ভুত নিরবতা। তবে দুজনের মনেই একটাই চিন্তা। শুক্রবার দুপুরের অপেক্ষা!
_____________________
দিনগুলি যেন চোখের পলকে কেটে গেলো। আজ শুক্রবার, নিশীথ মাত্র জুম্মার নামাজ পড়ে আসলো মাত্র মসজিদ থেকে, ওর সাথে শিমুলও এলো বাসায়। দোলা ও পারভীন বেগম ব্যস্ত হাতে ছোটাছুটি করছেন রান্নাঘরে। আরেকদিকে কামিনি সালাদের সবজি কাটছে টেবিলে। ছোট্ট এ প্লাইউডের ডাইনিং টেবিলটি ক'দিনই নিয়েছে ওরা বাসার জন্য। নিশীথ দোলাকে আওয়াজ দিতেই ও রুমে এলো। শিমুল বিছানায় বসে ফোনে গেম খেলছে, ওকে এক পলক দেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা নিশীথের কাছে এগিয়ে গেলো দোলা। নিশীথ ওকে দেখে বললো,
---রান্না কতদূর? সব কাজ শেষ? মা ও দাদু রওনা দিয়েছে কিন্তু। মাত্রই ফোন দিলো আমায়!
---হ্যাঁ, সবকিছুই প্রায় শেষ। কোনো সমস্যা নেই, তারা আসুক। মা ও দাদু আসছে মানে? বাবা?
দোলা দ্বিধান্বিত কণ্ঠে শুধায়। ওর প্রশ্নে নিশীথের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। শীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়,
---জানিনা। মা বললো শুধু দাদু আর সে আসছে।
নিশীথের কথা শুনে বিস্ময়ে দোলার চোখ বড় হয়ে যায়। শেষ মুহুর্তে এসে এ কি বলছে নিশীথ? আয়মান সাহেব আসছেন না মানে? যার জন্য এত আয়োজন শেষমেশ কিনা তিনিই আসছেন না?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৬০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন