উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৬)
সবাই সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত। একেকজন একেক ভাবে সাজছে।যেনো কোনো তারার মেলায় চলে এসেছে তরু।নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে তরুর।বিয়ে নিয়ে সব মেয়েরই ফ্যান্টাসি থাকে।তরুর ও ছিলো। একটা ধুমধামে করে বিয়ের অনুষ্ঠান, মেহেন্দি, হলুদ সব কিছু নিয়েই তরুর নানা প্ল্যান ছিলো।
তরুর ও ভীষণ শখ ছিলো বিয়েতে জামদানী পরবে।দুই হাত ভর্তি মেহেদী পরবে।
তবুও সবসময় সবকিছুতে কেনো জানি একটা হিসেব চলেই আসে।বাবা থাকা আর না থাকার একটা সুক্ষ্ম হিসেব সবসময়ই মাথায় থাকে।
বাবা না থাকা মেয়েদের আসলে কোনো কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখতে নেই,কখনো শখ থাকতে নেই।এই দুনিয়া এতিমের জন্য একটা বন্দীশালা। এই বন্দীশালা থেকে নিজেকেই নিজের উদ্ধার করতে হবে।
এখানে নিজেকেই নিজের উদ্ধার করতে হয়।ভালো রাখতে হয়।নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করতে হয়।
তরুর দুই জা লিপি এবং ইতি দু'জনেই নীরস মুখে ঘুরছে।দুজনের কারো গায়েই কোনো সাজগোজের চিহ্ন নেই। পার্লারের মেয়েরা এসে বউকে সাজাচ্ছে। লিপি,রুমা দুজনেই তাকিয়ে আছে সেদিকে। সব মেয়েরাই সাজতে পছন্দ করে। মেয়েদের সাথে সাজগোজ ব্যাপারটা গভীরভাবে জড়িত। সেখানে তখনই একটা মেয়ে সাজগোজ উপেক্ষা করে হয়তো সে স্কিন সচেতন কিংবা সাজগোজের প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই বা পেছনে কোনো কষ্ট লুকিয়ে আছে।
তরু একটা গোল্ডেন কালার শাড়ি পরেছে।ফাইজানই তাকে বলেছিলো বিয়ে,বৌভাত দুই অনুষ্ঠানে শাড়ি পরার জন্য।
তরু এগিয়ে যায় তাদের দিকে। দুজনের পরনের শাড়ির দিকে তাকিয়ে তরুর কেমন কষ্ট লাগে।
এই দুইজন যে কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে পড়ে আছে তা কেবল তারাই জানে।
তরু এগিয়ে গিয়ে বললো, "ভাবী,সাজবেন না আপনারা? আসেন আমি সাজিয়ে দিই।"
রুমার কাছে এই মেয়েটাকে অসহ্য লাগে।একে তো স্বামী নিয়ে দূরে থাকে,শান্তিতে তার উপর ফাইজানের চোখের মণি যেনো।
অথচ তাদের না আছে স্বামী, না আছে নিজের সংসার। না পায় নিজের পছন্দের কিছু।বিনা বেতনে কাজের লোকের কাজ করে শ্বশুর বাড়ি। ওখানে তাদের নিজের বলে কিছু নেই।
লিপি বললো, "না আমরা সাজবো না। সাজগোজ সবার জন্য আসে না।তোমরা থাকবা ফুলদানিতে সাজানো ফুলের মতো।তোমারে দুই চোখ ভইরা দেখনের মানুষ আছে। তোমরা সাজলে মানাবে। আমরা হচ্ছি ঝরা ফুল। আমাদের এতো রংঢং দেখার মানুষ নাই।"
তরু ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো, "ভাবী,আপনারা যদি আমাকে এভাবে পর করে দেন তাহলে আমি কোথায় যাবো ভাবী?আমার ভাই বোন নেই।আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর আমি একটা পরিবার পাবো।মা বাবা ভাই বোন সবাইকে পাবো।আমার বাবা না থাকার,ভাই বোন না থাকার কষ্টটা মুছে যাবে।কিন্তু বিয়ের পর দেখি আমি হয়ে গেলাম শ্বশুর শাশুড়ীর চোখের কাঁটা।
ওনারা যদি আমাকে পছন্দ করতো,আমাকে মেনে নিতো তাহলে আর আমাকে ফাইজান ওর কাছে রাখতো না।আমি ও আপনাদের সাথে থাকতে পারতাম।
আমার অপরাধ কোথায় বলেন ভাবী?"
ইতি বললো, "মেনে নেয় নাই ভালোই হইছে।তবুও তো ভালোভাবে বেঁচে আছো জামাই নিয়ে। আমাদের তো মেনে নিয়ে গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলতেছে।"
তরু বললো, "কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি ভাবী,আপনারা দুজন সব মেনে পড়ে আছেন কেনো?
কেনো আপনারা প্রতিবাদ করেন না?
কেনো ভাইয়াদের জোর গলায় বলেন না দেশে আসার জন্য? "
লিপি ইতি দু'জনেই হেসে ফেলে।
লিপি বলে, "তুমি এখনো এদের চিনো না তরু।মানুষের চেহারার আড়ালে এরা পিশাচ। জামাইয়ের সাথে কথা বলার সময় শাশুড়ী, ননদ,ননদের ছেলে মেয়েরা বসে থাকে।
রাত ৯ টার পরে ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া বিয়ের পর জামাইকে কাছে পেয়েছি মাত্র ২ মাস,ইতি পেয়েছে ১.৫ মাস।এইটুকু সময়ের মধ্যে কি কাউরে চেনাজানা যায়?
তারপর আমরা নিজেরা পার্সোনাল ফোন পাইছি ১ বছর ও হয় নাই।এর আগে তো শ্বশুর আব্বার ফোনেই কথা বলতে দিতো ১০ মিনিট।
এসব আসলে বলার মতো না তরু।তোমার উপর আমরা রাগ করি হয়তো। আমাদের হিংসে হয়।আমরা এতো বছর ধরে যা পাই নি তুমি এসেই সব পেয়ে গেছো।পরে দুজন ভেবে দেখলাম সকালে যে এখানে তোমার দোষ কি।আমাদের স্বামী যদি ঠিক থাকতো তাহলে আমাদের ও সব ঠিক থাকতো।
যাদের স্বামীই তাদের আপন না তারা আর কি করবে।"
তরু বললো, "আপনারা ফোনে ডাটা প্যাক কিনে নেন না কেনো?"
"গোয়েন্দার অভাব নেই তরু।প্রতিদিনই আমাদের ফোন চেক করে আম্মা মানুষ দিয়ে। তাছাড়া আমরা হচ্ছি দুনিয়ার ফকির। টাকা পাবো কই?"
"ভাইয়ারা হাত খরচ দেয় না?"
দুজনে এবার জোরে হেসে উঠে শুনে। হাত খরচ দিবে তাদেরকে?
ভাত খাওয়ায় এটাই তো বেশি।
তরুর সারা শরীর রাগে জ্বলে যায় শুনে। সবচেয়ে বেশি রাগ হয় দুই ভাসুরের উপর। এতো বছর ধরে দেশের বাহিরে পড়ে আছে কেনো এরা।
বউয়ের প্রতি কোনো দায়িত্ব যদি পালন করতে না পারে তাহলে এরা কেনো বিয়ে করে?
শুধু বাবা মা'য়ের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য বিদেশে পড়ে আছে দুজনেই।
নিজেকে শান্ত করে তরু বললো, "আমার সাথে আসুন।এখানে আমরা সবাই মেহমান। কাজ করতে আসি নি আমরা। আপনারা কেনো যেচে পড়ে কাজ করছেন?
অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাও অন্যায়।শ্বশুর শাশুড়ীর কথার ভয়ে আপনারা নিজেরাও নিজেদের উপর জুলুম করছেন।
ভাবী,আমি ছোট মানুষ। আমার বাবা নেই।মা ও অন্যত্র।
আমার এইটুকু জীবনে আমি একটা জিনিস ভালো করে বুঝেছি,নিজেকে নিজেরই ভালো রাখতে হয়। কেউ আপনার ভালোর চিন্তা করবে না।আপনার কিসে ভালো হবে আগে সেটা ভাববেন।আমি বলছি না স্বার্থপর হতে হবে।কিন্তু কি জানেন,আগে নিজের ঘরে প্রদীপ জ্বেলে তারপর মসজিদে প্রদীপ জ্বালতে হয়।নিজের আগুনে পুড়ে অন্যের মাথায় পানি ঢালার কোনো মানে হয় না।
আসুন আমার সাথে, সাজবেন।আমি সাজিয়ে দিবো।"
তরুর কথা দুজনেরই ভালো লাগে। তাই রাগ অভিমান ভুলে তরুর সাথে যায়।
তরু দুজনেই সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়।দুজনের শাড়ি চেঞ্জ করে নিজের দুটো শাড়ি দেয় দুজনকে।
এর আগে যে শাড়ি দুটো পরেছে ওরা তা কিছুতেই একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত না।
তিন বউ যখন একসাথে বের হলো সাজেদা বেগম আর কালাম হোসেন আড়চোখে তাকালো।কালাম হোসেনের রক্ত গরম হয়ে গেলো। এই লিপি আর ইতির মাথায় কিনেসব গোবর না-কি!
এতো করে দুজনকে তরুর বিরুদ্ধে ফুঁসলিয়েছে তারা দুজন। অথচ এরা কি-না তরুর সাথে মিশে গেলো।তিন বউয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয়ে গেলেই তো অসুবিধা। বিশেষ করে তরু।এই মেয়েটা ধানি মরিচ। এই দুজনকে চালাক বানিয়ে ফেলবে।এরপর তিনজন মিলে তাদের মাথায় উঠে নাচবে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন