উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৭)
বৌভাতের দিন ফাইজান তরুকে নিয়ে যেতে চাইলো।তরুর ইচ্ছে করছে কয়েকটা দিন থাকতে এখানে।দুই জা'য়ের ব্যথায় তরু ব্যথিত। তাছাড়া এই মানুষ দুটোর সাথে হওয়া অন্যায় তরু মানতে পারছে না।সাজেদার বলা সেদিনের কথাও তরুর মাথায় ঘুরছে।
সব ভেবে তরুর ইচ্ছে করছে আরো কয়েকটা দিন এখানে থাকতে।
ফাইজান বললো, "না মা।আমি তরুকে একা রেখে যাবো না কিছুতেই।ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না এখানে।"
পান্না বললো, "ক্যান,লিপি,ইতি ওরা থাকে না?না-কি তুই মনে করস তোর বউরে আমরা যত্ন কম করমু?"
কালাম হোসেন বললো, "তোর বউরে তো আমরা সারাজীবন রাখতে চাই নি এখানে।কয়েকটা দিন বেড়াবে তাতে তোর এতো অসুবিধা কিসের?"
ফাইজান বললো, "না আব্বা,আমার তরুরে ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না। আমার দমবন্ধ লাগে ওরে না দেখলে।ওরে যাইতে দেন।"
লজ্জায় তরুর মুখ লাল হয়ে গেলো। কালাম হোসেন তীব্র ঘৃণা নিয়ে এক দলা থুতু ছুড়ে মারেন।
সাজেদা বললো, "কি বেলাজ,বেয়াদব ছেলে।বাপের সামনে কেমনে কথা কওন লাগে তাও তুই ভুইলা গেছস?"
"না মা,ভুলি নি।কিন্তু বাপ মা যদি ছেলের ব্যক্তিগত এরিয়াতে ঢুকে যায় তাহলে তো আর চুপ থাকা যায় না।তরুকে আমি সাথে করে এনেছি আবার সাথে করে নিয়ে যাবো।"
সাজেদা অস্থির হয়ে গেলো। বান মারতে হলে কবিরাজ বলেছে তরুর চুল লাগবে,নখ লাগবে,পরনের কাপড় লাগবে।তরু এখানে না থাকলে কেমনে করবে?
তাছাড়া ১১ দিন তরুর ও উপস্থিতি থাকা লাগবে।
কিন্তু ছেলে যেই বেয়াদবের মতো কথা বলতেছে এরপর তো স্বামী স্ত্রীর ব্যক্তিগত কথা ও বলা শুরু করে দিবে।
তরু ফাইজানকে বললো, "থাকি না কয়েকটা দিন,তুমি এমন করছো কেনো?"
ফাইজান চোখ রাঙিয়ে বললো, "একটা ও বাড়তি কথা বলবা না।চুপচাপ তৈরি হও।"
তরু ফাইজানের কথার উপর আর জোর গলায় প্রতিবাদ করতে পারলো না।নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্লোর খোঁচাতে লাগলো। তবে ভেতরে ভেতরে খুব মন খারাপ হলো তরুর।ভেবেছিলো শাশুড়ীর প্ল্যানটা কী আসলে তা বের করবে।কিন্তু তা আর হলো না।
ফাইজানকে এই ব্যাপারটা তরু প্রমাণ ছাড়া বলতে চাচ্ছে না আবার তদন্ত করতে চায় তরু তাও বলতে পারছে না।তাই ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
সাজেদার মুখে অমাবস্যার অন্ধকার যেনো।রাগে হাত পা কাঁপছে। এই মেয়েটাকে কিছুতেই সে ধরাশায়ী করতে পারছে না।
বারবার তরু তাকে গোল দিচ্ছে।
থমথমে মুখে সাজেদা চলে গেলো নিজের রুমের দিকে।ফাইজান কারো মেজাজের ধার ধারলো না।ফাইজানের মনে আছে বড় ভাইয়ের বলা কথা। তার প্রথম স্ত্রীকে আব্বা মা এই বাড়ি থেকে তাড়িয়েছিলো কতো জঘন্যভাবে।
এরা ভীষণ নিষ্ঠুর।
যাকে তাদের পছন্দ না তাকে রাস্তা থেকে সরাতে সব রকম কাজ করতে পারে।
ফাইজান কাউকে সেই সুযোগ দিতে চায় না।তরুকে রেখে গেলে এরা তরুকে মেরে ও ফেলতে পারে।
একটা সন্তানের কাছে বাবা মা কতটা আপন হয় তা সন্তান জানে।সেই বাবা মায়ের উপর থেকে অল্প আঘাতে সন্তানের বিশ্বাস হারায় না।আর যখন সন্তান বাবা মাকে বিশ্বাস করা ছেড়ে দেয় তখন তার পেছনে যে একটা কঠিন সত্য লুকিয়ে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মা আর বড় খালা রাতে যখন গোপন বৈঠক করে তরুর ব্যাপারে ফাইজান সবই শুনে নেয়।
শেষ পর্যন্ত মা তরুকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নিবে এটা ফাইজানের কল্পনাতীত ছিলো। অথচ তাই হতে যাচ্ছে।
ফাইজান তরুকে এক মুহুর্তের জন্য ও বাবা মা'য়ের সংস্পর্শে রাখতে চায় না।
এই কথাগুলো ফাইজান তরুকে বলতে পারবে না।কি ভীষণ যন্ত্রণা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছে ফাইজান কেউ জানে না তা।
লিপি এসে বললো, "ফাইজান,রাতে খাওয়া দাওয়া করে যেও না হয়।তরুর সাথে তো আমরা একটু গল্প ও করতে পারলাম না ভালো করে। তোমাদের থাকতে হবে না কিন্তু একটু দেরি করে যাও।"
ফাইজান সম্মত হলো।রাতে খাবার খেয়ে তরুরা বের হলো। তরু অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে যেতে বাধ্য হলো।
রাতে গাড়িতে ফাইজানের সাথে তেমন কোনো কথা হলো না তরুর।সারা পথ রাগ করে ছিলো তরু।
কিছুক্ষণ পর দেখলে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এসেছে। বড় জা ছবি পাঠিয়েছে তাদের দুই জা'য়ের।
তরু মুচকি হাসে। ভাসুরদের দেশে আনার মিশনে লেগে গেছে তাহলে দুজন। তরুই পরামর্শ দিয়ে এসেছে দুজনকে।
দুজন তরুর কথামতো কাজ শুরু করে দিয়েছে। সুন্দর করে সেজে শাড়ি পরে স্বামীদের ছবি পাঠিয়েছে দুজন। ফাইজানকে দিয়ে তরু দুজনের জন্য দুটো নতুন সিম কার্ড এনে দিয়েছে। এক মাসের জন্য ডাটাপ্যাক কিনে দিয়ে এসেছে। রাতে ওয়াইফাই বন্ধ করে দিলে নতুন সিমকার্ড দিয়ে দুজন নেট ব্যবহার করে স্বামীদের সাথে কথা বলতে পারবে এবার থেকে।সকাল বেলা নতুন সিমকার্ডটা অফ করে রাখবে।তাহলে আর চেক করলেও কেউ জানবে না কিছু।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন