উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৫)
গায়ে হলুদের সময় তরু হলুদ দিতে গেলো না।এক কোণে একটা চেয়ারে তরুকে বসে থাকতে বললো ফাইজান।
সবাই শাড়ি,জুয়েলারি পরে ভীষণ সুন্দর করে সেজেছে। যেনো তারার মেলা বসেছে আজকে এখানে।
তরু ভেবে পায় না মানুষের মনে এতো হিংসা কেনো আসে।জীবনে যে যত বেশি সৎ থাকতে চায়,তাকেই জীবনের প্রতিটি ধাপে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়।
স্টেজে কয়েকজন মিলে নাচছে। তরু দেখলো তার দুই জা ও আছে সেখানে। এরা দুজনেই তরুর থেকে দূরে দূর থাকছে।তরুর সাথে কথা বলতে ও যেনো তাদের আপত্তি।
ফাইজান এক প্লেট গরম গরম বিরিয়ানি নিয়ে এলো তরুর জন্য তরু বিরক্ত হয়ে বললো, "তুমি এরকম কেনো বলো তো?এখানে সবাই বসে আছে খালি মুখে আমি কি-না সবার মাঝখানে বসে খাবার খাবো।"
"এখানে সবাই তো আমার বউ না,সবার চিন্তা আমি কেনো করতে যাবো।তুমি খেয়ে নাও।খাবার প্লেটে বাড়ছে,সবাইকে দিবে।সবাই-ই খাবে।"
তরুর অস্বস্তি হতে লাগলো। মাথা নাড়িয়ে বললো, "না,সবাই যখন খাবে তখন খাবো।সবাই কি বলবে এখন!"
ফাইজান বিরক্ত হয়ে বললো, "তুমি এখন না খেলে আমি খাইয়ে দিবো,তারপর সবাই কি বলবে সেটা ভেবো।আমরা দুপুরে খেয়ে এসেছি, এরপর আর নাশতা ও করা হয় নি।আমার ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে তরু।খেয়ে নাও,আমি সবাইকে সার্ভ করে তারপর খাবো।এদিকে এরপর আসতে পারবো না।ভীড় বেড়ে যাবে মহিলা,বাচ্চাদের। এখানে আমি ছাড়া তোমার আপন কেউ নেই যে তোমাকে খুঁজে খাবার খাওয়াবে।"
তরু কি বলবে ভেবে পেলো না।আসলেও তো!
তার জীবনে কে আছে আর ফাইজান ছাড়া?
তরু প্লেটটা নিয়ে বসে রইলো তবুও। ফাইজান চলে গেলো। দেখতে দেখতে সবাই খাবার নিয়ে আসতে লাগলো। সবাই খেতে লাগলো।
তরু দেখলো স্টেজের পাশেই চেয়ারে বসে সাজেদা বেগম তার মেয়ে,নাতি নাতনি,বোন,বোনের মেয়ে সবাইকে নিয়ে খাচ্ছে। সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে একে অন্যকে।
তরুর দুই জা ও একপাশে আছে একসাথে।
এরা কেউ কি আসলেও তরুর কিছু হয়!
কিছু হলে কি তরুর ক্ষতি করার চিন্তা করতো এরা!
তরু আর ভাবলো না।খেতে লাগলো।
সাজেদা পান্নাকে দেখিয়ে বললো, "দ্যাখ,ফাইজানের বউয়ের খাওন দ্যাখ।পেছনে বইসা কেমন করে গিলতেছে।"
পান্না বিরক্ত হয়ে বললো,"আস্ত ছোটলোকের বাচ্চা।"
খাওয়ার পর ফাইজানের আর দেখা পেলো না তরু।রাতে প্রায় দেড়টার দিকে ফাইজান এলো।দুই হাতে গরু জ বা ই য়ে র র ক্ত লেগে আছে। গায়ের গেঞ্জিতে ও র ক্ত।ফাইজান তরুকে নিয়ে গেলো একটা রুমে।
এই রুমে তরুর দুই জা ছাড়া আর কেউ নেই।
ফাইজান ভাবীদের বললো, "ভাবী,তরুকে আপনাদের কাছে রেখে গেলাম।ওরে আপনাদের কাছে রাইখেন।একটু দেখে রাইখেন ও এখানে কাউকে চেনে না।"
তরুর বড় জা মুখ গোমড়া করে বললো, "কাউওরে চিনতে হইলে তো এইখানে থাকতে হইবো।তোমার বউ হইছে অফিসারের বউ,জামাইয়ের পকেটে পকেটে থাকে।আমরা হইছি কামলার বউ।জামাই কামলা দেয় এক দেশে আমরা কামলা দিই তোমাগো বাড়িতে।"
ফাইজান তরুর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করে। তরু ওনাদের কথায় কিছু মনে করে নি।এই মানুষ দু'জন যে ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় আছে তরু তা বুঝতে পারছে।
ফাইজান চলে যাওয়ার পর তরু বড় জা'য়ের হাত ধরে বললো, "ভাবী,আমাকে যদি আপনারা এরকম পর করে দেন তাহলে আমি কোথায় যাবো বলেন? আমার তো বাবা নেই,মা ও অন্য সংসারে চলে গেছেন।শ্বশুর শাশুড়ী ও আমাকে পছন্দ করেন না।আপনারা দুজন ও যদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে আমার আর জায়গা কই?
শ্বশুর বাড়ি মানুষের নিজের বাড়ি হয়ে যায়,জায়েরা হয় মায়ের পেটের বোন।আমি আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভাবী,আমি আপনাদের ছোট বোনের মতো। আমি জানি আমার এখানে না থাকা নিয়ে আপনাদের মনে ক্ষোভ আছে।সেটা থাকাই স্বাভাবিক। বিশ্বাস করেন ভাবী,এখানে আমার কোনো হাত নেই।"
তরু মেজো জা বললো, "ভাবী,শুয়ে পড়ো।সকাল থেকে আবার কাজ করতে হবে। আমরা তো এখানে মেহমান হয়ে আসি নি।আমাদের তো সব কাজে লাগবে।আরাম করার সুযোগ আমাদের নেই।বাজে গল্প করে সময় নষ্ট করার সময় নেই।"
তরুর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুজন শুয়ে পড়লো উল্টো দিকে তাকিয়ে।
তরু অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো। এই সংসার সংসার খেলা এতো জঘন্য কেনো?
কেনো এতো ঘোরপ্যাঁচ এই খেলায়!
কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী, কে কার শত্রু কিছুই বুঝা যায় না।সবার মুখেই মুখোশ পরা।তরু কারো আসল রূপ বুঝতে পারছে না।
ফাইজান ঠিকই বুঝেছে তরু এদের সাথে পেরে উঠবে না।তাই তরুকে সব কিছুর থেকে দূরে রেখেছে।
সকালে তরুর ঘুম ভাঙ্গলো আগে।তরুর দুই জা যখন উঠে বের হয়ে যায় তরু ও পেছন পেছন যায়।
বড় জা তরুকে দেখে বললো, "তুমি আইসো না তরু। তোমার স্বামী যদি দেখে তুমি এখানে এসে কাজ করতে আসছো আমাদের সাথে তাহলে রাগ করবে।"
তরু থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।হঠাৎ করে মনে পড়ে গেলো শাশুড়ীর গত রাতে বলা কথা। তাকে জানতে হবে শাশুড়ী কি করতে চায় তার সাথে।
তরু আবারও দুই জা'য়ের পেছনে যেতে লাগলো।
গিয়ে দেখলো দুজন বসে সুপারি কা ট ছে মেহমানদের জন্য। তরু শাশুড়ীকে বললো, "আমি কি করবো আম্মা?"
সাজেদা বললো, "মুরগির চামড়া বাঁছতে বসো এইখানে।"
তরু বসে পড়লো।
এদের কাছাকাছি থাকতে হবে।এরা জানে না,পরিস্থিতি তরুকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তরুর দিকে কেউ ইট মারলে, পাটকেল না ছুঁড়ে তরু থামবে না।
তবে তার আগে দুই জা'য়ের মনের মেঘ দূর করতে হবে।
চামড়া পরিস্কার করতে করতে ফাইজান এসে হাজির হলো।তরুকে সবার সাথে দেখে ফাইজানের ভীষণ অস্বস্তি হয়। সব ছেলেই চায় তার বউ তার পরিবারের সাথে মিলেমিশে থাকুক।অথচ ফাইজান ভয় পায়। সে জানে তার পরিবার কতো নিখুঁত অভিনয় করতে পারে।
এরা হেসে হেসে তরুর পিঠে ছু রি দিয়ে যেকোনো আঘাত করতে পারে। তরু বুঝতে ও পারবে না।
হয়তো এখানেই কথার বাণে তরুকে জর্জরিত করে ফেলবে।
একটা চেয়ার নিয়ে ফাইজান ও বসলো সাজেদার পাশে।
সাজেদা নাকিসুর তুলে বললো, "বিয়া করলে পোলারা পর হই যায় মানুষ কইতো।বিশ্বাস হইতো না।আমার পোলা আমারে সেইটা চক্ষে আঙুল দিয়ে দেখাইয়া দিলো। আইজ কতো মাস পর আমার পোলা কাছে আইসা বসছে।"
তরু বিব্রত হয়ে গেলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন