উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৮)
ঘটনা দ্রুত ঘটতে লাগলো। ফয়সাল নিজের প্রথম প্রেমকে ভুলে লিপিকে জীবনে আপন করতে পারছিলো না।আবার আপন করতে চাইলে ও বাবা মা মধ্যখানে বাঁধা হিসেবে আসে।লিপিকে কাছে পেয়েছে মোটে ১ মাস।তার উপর ফোনে ও লিপি তেমন একটা কথা বলে না,ফয়সাল ও তাই আগাতে পারে না। নিজের অতীতকেও ছাড়তে পারে না।
মাঝখানে দোদুল্যমান জীবন কাটাচ্ছে।
তাই তার ও বউয়ের প্রতি টান কম।
সবার জীবনেরই লুকোনো একটা গল্প থাকে।সেই গল্প কেউ জানে না।যার যার গল্প তার কাছেই মহাকাব্য হয়ে থাকে।
ফয়সাল,ফরহাদ দুই জনেই নিজেদের বউয়ের এরকম আকস্মিক পরিবর্তন দেখে চমকিত।
সবসময় বউদেরকে দূরের মানুষ হিসেবেই ভাবতো এতো বছর। লিপি,ইতি দুজনেও পরিস্থিতির চাপে কখনো নিজেরাও স্বামীদের সাথে আন্তরিক হতে পারে নি।
শ্বশুর শাশুড়ীর মানসিক অত্যাচারের পুরো রাগ গিয়ে পড়তো স্বামীদের উপর। ফলশ্রুতিতে দুজনেরই স্বামীদের সাথে ভীষণ দূরত্ব জন্মায়।
তরুর কথা শুনে দুজনেই বুঝতে পারে তাদের এরকম দূরে সরে থাকার জন্যই তৃতীয় পক্ষ সহজেই মাঝে ঢুকে পড়েছে।
জীবন একটাই।স্বামীর সঙ্গ যেই বয়সে প্রয়োজন নারীর জীবনে, সেই বয়সে কাছে না পেলে বৃদ্ধ বয়সে পেয়ে কি হবে?
সেই সময় কি রোগ ব্যারামের গল্প করবে?
তরুর পরামর্শ মতো দুজনেই স্বামীদের আকৃষ্ট করার জন্য রাতে বিভিন্ন ভাবে সেজেগুজে ছবি পাঠানো শুরু করেছে।
এতো বছর পর নিজেদের স্ত্রীর থেকে এরকম আহবান পেয়ে দুই ভাইয়েরই মনের জমাট অভিমান গলতে শুরু করে দেয়।
ছোট্ট একটা জীবন, কখন ফুরিয়ে যাবে ঠিক নেই অথচ নিজের স্ত্রীর সাথে এতো দূরত্ব নিয়ে কতো দিন ধরে থাকবে?
জীবন কি এরকম যুদ্ধ করেই কাটিয়ে দিবে?
বাবা মা'য়ের উপর অভিমান করে নিজেদের যৌবন কালে স্ত্রীর সঙ্গ হারাবে কেনো?
ফয়সালের প্রাক্তন স্ত্রীর কথা লিপি জানতে পেরেছে। প্রথম প্রথম রাগ,ক্ষোভ ছিলো। তরু বুঝিয়েছে ব্যাপারটা।
লিপি আর ফয়সালের মধ্যে রুমা ছিলো একটা বাঁধার মতো।
তরুর সাজিয়ে দেওয়া কথাটাই লিপি স্বামীকে নিজের মতো করে বললো, "আমি জানি আপনি আপনার প্রথম স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতেন।ভাগ্যের পরিহাস হোক আর আপনার বাবা মা'য়ের কারণে হোক,এখন সে তো আপনার অতীত। আপনার স্ত্রী এখন আমি।উনি এখন পরনারী।
আপনি একবার ভেবে দেখেছেন কখনো একজন স্ত্রী হিসেবে আমার মনের ক্ষত কতটুকু?
আমার কি দোষ ছিলো বলেন? আপনাদের বাবা মা ছেলের মধ্যকার ঝামেলায় আমাকে কেনো বলির পাঁঠা করলেন?আমি কি পেয়েছি বলেন তো?
আপনার বাবা মা'য়ের ব্যবহার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই আপনি জানেন সবটাই।তবুও কেনো সব সহ্য করে পড়ে আছি বলতে পারেন?
আমার তো স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকার কথা ছিলো। অথচ স্বামীই আমার আপন হলো না।
যাকে হারিয়েছেন তার জন্য শোক করতে করতে যে আছে তাকেও দূরে সরিয়ে রাখলেন?
এতে কি সুখী হতে পেরেছেন বলেন?
ঝগড়া, ঝামেলা ছাড়া কি হয়েছে?
কবে বুকভরা আনন্দ নিয়ে আপনি ঘুমাতে গিয়েছেন?
আপনি যেমন কষ্টে আছেন আমি ও তেমন জ্বলছি।
এটা কোনো মানুষের জীবন না।আমি শুধু আপনার ভালোবাসা পাবার আশায় এতো বছর ধরে সহ্য করে যাচ্ছি সব।আমার ভালোবাসাটা কি আপনার চোখে একটু পড়ে না বলেন? "
ফয়সালের ভুল ভাঙে লিপির কথা শুনে। লিপি ভুল কিছু বলে নি। যৌবন কাল শেষ হওয়ার পথে।অথচ লিপি তার কাছে এসে কি পেলো?
বাবা মা'য়ের উপর রাগ করে লিপিকে কষ্ট দিচ্ছে। লিপি তো আর স্ত্রী। এক দিনের জন্য তো না।সারাজীবনের জন্য। তাকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ!
ফয়সাল ফাইজানকে কল দিলো। ফাইজান বললো, "ভাই দেশে আসেন।অনেক হইছে।আপনি, মেজো ভাই দুজনেই চলে আসেন।ভাবীদের সাথে আপনারা অবিচার করতেছেন। "
ফয়সাল এরপর নিজের মেজো ভাইকেও কল দিলো। দুই ভাই দীর্ঘ সময় কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে আসবে।বাবা মা'কে জানাবে না।বাবা মা'কে জানালে ওনারা যে আসতে নিষেধ করে দিবে তা তাদের অজানা নয়।
শুধু ফাইজানকে জানালো।
ফাইজান তরুকে বললো, "কি ব্যাপার তরু,তুমি এমন বুদ্ধি দিলা যে বড় ভাই,মেজো ভাই দু'জনেই আসতে চাচ্ছেন।অন্যের বউদের বুদ্ধি দিতে পারো স্বামীকে ইমপ্রেস করতে হবে কিভাবে অথচ নিজে! "
তরু ফাইজানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, "আমি পারবো না,সেটা তুমি করবে আমাকে ইমপ্রেস "
কালাম হোসেন ফাইজানকে কল দিয়ে বললো, "আগামীকাল আমি আর তোর মা ঢাকা আসমু।তোর মায়ের না-কি তরুর জন্য পরান পোড়ে।"
ফাইজান বললো, "ঠিক আছে আব্বা আসেন আপনারা। "
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজকেই কিছু অগ্রীম সতর্কতা নিতে হবে।মা'য়ের উদ্দেশ্য ফাইজানে কাছে পরিস্কার।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন