কবিতা : প্রিয় হত্যাকারী
কবি : নবারুণা গাঙ্গুলী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
বহুল পরিচিত কবি নবারুণা গাঙ্গুলীর “প্রিয় হত্যাকারী” শিরোনামের এই কবিতাটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের দেয়াল থেকে নেওয়া হয়েছে। এই লেখার অবস্থান, প্রেক্ষাপট এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
![]() |
প্রিয় হত্যাকারী || নবারুণা গাঙ্গুলী |
প্রিয় হত্যাকারী || নবারুণা গাঙ্গুলী
তোমার কাছে আমি দুটো ডানা চেয়েছিলাম, মনে আছে?
মনে আছে? একটা স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলাম তোমায়!
একটা অজানা নির্জন দ্বীপ
গভীর নীল আর ভিষণ শান্ত সমুদ্র...
সমুদ্রতটের বালুচরে শুয়ে নগ্ন আমি।
সেদিন আকাশের তারারা দূর থেকে
মিটিমিটি চেয়ে থাকবে আমার দিকে,
আর সাগরের এক একটা ঢেউ খুব সন্তর্পনে এসে
যখন আমায় ছুঁতে চেয়েও ছুঁতে না পারার আফসোসে,
ঝাপিয়ে পরবে পায়ের কাছে
আমি দুহাত মেলে ভিজে বালি মেখে...
শুধু উপভোগ করবো ওদের অসহায়তাটুকু।
আমাকে ছুঁতে চাওয়ার আগ্রহটাকে উস্কে দিয়ে রাতভোর পরে থাকবো সেখানে।
তুমি বলেছিলে,"কাছে আসবোনা, দূর থেকে লুকিয়ে দেখবো সবটা।"
তোমার কাছে আমি সীমাহীন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম।
যেখানে খুশি পারি দেওয়ার। একসাথেই...
সেই যে কথা ছিলো, একটা পাহাড়, ঘন জঙ্গল...
পাহাড়ের বুক বেয়ে বয়ে যাওয়া একটা নদী,
অন্ধকারে যেখানে জোনাকির রোজ রোজ দীপাবলি,
চাঁদের হ্যালোজেন যেখানে ফাঁকফোকর খোঁজে নদীর ঢেউয়ে মিশবে বলে...
শব্দ বলতে শুধু বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর গর্জন, আর ঝি ঝি পোকার ডাক।
জঙ্গল যেখানে একটুও নিরাপদ নয়,
আর আড়াল বলতে পাহাড়ের বুকে নেমে আসা মেঘ
আর ঘন কুয়াশার চাদরটুকুই শুধু।
সেখানে ঘাসের উপর আমি যখন সঙ্গমে লিপ্ত হবো তোমার সাথে,
গাছপালার আমাদের দেখে হিংসা হবে এই ভেবে,
ওরাতো পারেনা একে ওপরকে জড়িয়ে ধরতে....
পশু পাখিরা হবে অবাক, ভাববে ওদের মতো নির্লজ্জ হলাম কি করে!
পাহাড়ি ফুলেরা সেদিন আমাদের ঘামের গন্ধে মাতাল হবে। আর....
জঙ্গলের হিংস্রতম জীবটাও আমাদের দেখে তার সঙ্গীর বুকে মুখ গুজবে...
আর একটা ইচ্ছের কথা মনে আছে?
যখন আমাদের দিন ফুরিয়ে আসবে, রাত দীর্ঘ হবে...
আমরা দুজনে পাহাড়ের বুকে একটা ছোট্ট কুটিরে বাসা বাঁধবো...
তুমি তোমার পরিশ্রম দিয়ে দুমুঠো চাল অর্জন করে আনবে,
আর আমি আমার সাজানো ছোট্ট বাগান থেকে যেটুকু রসদ পাবো,
সেটুকুই ফুটিয়ে এক থালায় পাত পারবো।
তুমি নিরামিষ মোটেই খাবেনা বলে মারাত্মক বায়না করবে,
রোজ রোজ মাছ মাংসের জোগান আর কোথায় পাবো বলো!
যেদিন পাবোনা, আমি তোমার এঁটো মুখেই তীব্র চুম্বনে ভরিয়ে দিয়ে বলবো,
এই নাও, এবার তো আমিষ হলো!
তুমি বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিয়ে
আমার আচলে মুখ মুছে বলবে...চলো, ঘুমাই।
রাতের চাঁদ-তারা ঘর করবে আলো
আমাদের বুক একে অপরের বালিশ হবে
আমরা হবো একে অপরের চাদর
এই ভাবে অনেকদিন কাটিয়ে দেওয়ার পর
আমাদের আর ভোর দেখা হবেনা।
কোনো এক বৃষ্টির রাতে আমরা একসাথে অন্য কোথাও চলে যাবো।
শরীরটা পরে থাকুক,
আমাদের ধর্ম সনাক্ত করতে না পেরে
হয়ত মানুষেরা আমাদের পোড়াবেও না, দাফনও করবেনা,
হয় নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে, না হয় শকুনেই খাবে। সে খাক....
হ্যাঁ,তুমি সবটাই দিয়েছো।
দুটো ডানা, সীমাহীন স্বাধীনতা, শেষদিন অব্দি থাকার প্রতিশ্রুতি...
আর বিনিময়ে বড্ডই সস্তার ব্যাবসায়িক চুক্তি ভিত্তিতে
নিয়ে নিয়েছো আমার স্বপ্নগুলি।
বিলিয়ে দিয়েছো তোমার বাকি সমস্ত প্রেমিকাদের।
স্বপ্ন গুলিই যখন আর নেই,
দুটো ডানা, সীমাহীন স্বাধীনতা
আর প্রতিশ্রুতি নিয়ে কি করবো আমি?
তোমাকে তাই রেখে আসলাম ওদের কাছে,
আমার সব প্রিয় স্বপ্ন গুলি সমেত।
আমি এখন আমার সাথে ভালোই আছি, দিন কেটে যাচ্ছে,
রাতও একটা একটা করে ফুরিয়ে যাচ্ছে...
আমিও বেশ ফুরাচ্ছি একটু একটু করে, তবু শেষ হচ্ছিনা।
হয়ত একদিন কোনও নতুন স্বপ্ন পূরণ হবে বলেই টিকে আছি।
হয়ত সেজন্যই এটুকু আমি এখনও বাকি থেকে গেছি।
হয়ত আমার মৃত্যু তোমার হাতে নেই তাই
আমার জীবনটুকু বিধাতা নিজের হাতে নিয়ে রেখেছেন।
আর একটা কথা,
অপ্রেমের ছুড়িটা আসলে ভোঁতাই...
প্রেমের তীর আদতেই বড্ড ধারালো,
প্রিয় হত্যাকারী...
তোমার অস্ত্র নির্বাচনে এটুকুই শুধু ভুল হয়ে গেছে।
কবি সংক্ষেপ :
কবি নবারুণা গাঙ্গুলী ১৯৮৭ সালের ২০ আগষ্ট ভারতের কোলকাতার হাবরা জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেছেন। ব্যক্তিজীবনে ঘুরে বেড়াতে ও রান্না করতে পছন্দ করেন কবি নবারুণা গাঙ্গুলী।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন