ক্রসফায়ার ।। শাহাদাত রাসএল |
ক্রসফায়ার ।। শাহাদাত রাসএল
এক
পাওনাদারের
তাগাদা আর অপমানের ভয়ে বাসায় থাকতে পারতো না জগলুল। বেশীরভাগ সময় আদিল বক্সের সাথে
তার মেসের ঘরে ঘাপটি মেরে থাকতো। ফিরোজা সেসময় গ্রামের সহজ সরল মেয়ে থেকে আচমকা
পরিণত হয় দায়িত্ববতী স্ত্রী রুপে। দুই হাতকে দশহাতে পরিণত করে আগলে রাখে স্বামী ও
সংসারকে। পাওনাদারদের অপমান থেকে স্বামীকে নিরাপদ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। জগলুল
বিয়ের পাঁচমাসের মাথায় এই সময়টাতে এসে প্রথম ফিরোজার প্রেমে পড়ে। ফিরোজা মাঝেমাঝেই
আদিল বক্সের মেসে চলে আসে জগলুলের কাছে। বাসা থেকে নিজের হাতে রান্না করে এনে
জগলুলকে আদর করে খাইয়ে দেয়। ফিরোজা মেসে এলেই
‘ভাবী
একটু বসেন আমার একটা জরুরী কাজ পড়ছে। বাইরে যেতে হবে। ফিরে এসে গল্প করবো’
এই
কথাটা বলেই আদিল বক্স বেড়িয়ে যায়। আদিল বক্স জগলুলের আদরখাকী ক্ষুধাটা অনুভব করেই
এই কাজটা করে। দুইটা অভুক্ত শরীর একটু সুখী হোক এই কথা ভাবতে ভাবতে আদিল বক্স
মেসের রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে যায় কমলাপুর ষ্টেশনের পাশের বস্তিতে হাসু খালার
ঘরে। এই বস্তিতে একমাত্র হাসু খালার কাছেই খাঁটি বাংলা মদ পাওয়া যায় । অন্যদের মদে
আদিল বক্সের রুচি হয়না।
জগলুলকে
বুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কেঁদে নেয় ফিরোজা। নিজেদের সাজানো গোছানো সংসার এলোমেলো
হয়ে যাওয়া নিয়ে দুজনার আক্ষেপে ভারি হয়ে ওঠে আদিলের মেসের দশ বাই পনেরো হাতের ছোট
ঘরটা। জগলুলের বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে ফিরোজাকে নিয়মিত কাছে না পাওয়ার বেদনায়।
স্ত্রীর জন্য প্রেমে ভিজে ওঠে জগলুল। সংসারের মতোই ফিরোজাকে এলোমেলো করে দেয় । ফিরোজাও যেন খুলে রাখা
বইয়ের মতো নিজেকে মেলে ধরে জগলুলের সামনে। জগলুল ফিরোজার শরীরের প্রতিটা পৃষ্ঠা
প্রতিটা শব্দ থেকে প্রতিটা অক্ষর আর দাড়ি কমা পর্যন্ত পড়ে। মাঝে মাঝেই ক্যাচক্যাচ
আওয়াজ তুলে দেহপাঠ থেকে মনযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় আদিল বক্সের পুরানো আর নড়বরে
চৌকিটা।
ফিরোজা
মেস থেকে বিদায় নেবার পরেই জগলুল চলে যায় হাসু খালার ঘরে। সেখানে জগলুল যাওয়াটাই
আদিলকে সিগন্যাল দেয় ঘরে ফেরার পথ খুলে যাবার। জগলুল অপেক্ষা করে নিজের ঘরে ফেরার।
ফিরোজাকে সারাক্ষণ নিজের কাছে পাবার। মাঝেমাঝে জগলুলের মনে হয় যে শেয়ার বাজার
কেলেঙ্কারি ঘটায় ভালোই হয়েছে। ফিরোজাকে নতুন করে চেনা গেছে। ফিরোজা যে এভাবে সংসার ও জগলুলকে আগলে
রাখছে, ভালোবাসছে। ফিরোজার মনের এই দিকটা তো শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির পরে এই বিপদে
না পড়লে জগলুল জানতেই পারতো না। জগলুলের মনে হয় ও ওরসব সম্পত্তি হারিয়ে সম্পদ
পেয়েছে। ফিরোজা ওর সম্পদ।
অন্যসব
পাওনাদারের চাপ সহ্য করা গেলেও আয়নাল হাজীর চাপটা অসহ্য ঠেকে ফিরোজার কাছে।
প্রতিদিন এসে জগলুলকে খোঁজে। আর একবার এলে এককাপ চা আর একগ্লাস পানি না খেয়ে উঠতে
চায়না হাজী। ফিরোজার কাছে মনে হয় জগলুলের কাছে পাওনা টাকার সুদটা ফিরোজাকে দেখে
দেখেই আদায় করে নিতে চায় আয়নাল হাজী। জগলুল কই গেছে? বাড়ী আসেনা কেন ? টাকা কবে দিবো
? সংসার চলে কিভাবে ? এভাবে প্রশ্ন এগুতে থেকে। এগুতে এগুতে অলিগলি ঘুরে ‘জওয়ান
মাইয়া রাইতে একলা থাকতে কষ্ট লাগেনা ?’ পর্যন্ত পৌঁছে যায় প্রশ্ন।
ফিরোজা
এই কথা জগলুলকে জানিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদে। জগলুল রাগে কষ্টে দাঁতে দাঁত চেপে পাথর
হয়ে থাকে।
সর্বসান্ত
জগলুলের অক্ষম পাথুরে নিরবতা একদিন ভাঙ্গে। সেদিন পত্রিকায় হেডলাইন আসে ‘শেয়ার
বাজার কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেবে সরকার’। এই খবরে পাথর থেকে
প্রাণবান মানুষ হয়ে ওঠে জগলুল। কিছুক্ষণ আদিলের আঁশটে বিছানার উপর বসে বসে জগলুল
একবার পাওনাদারদের হিসেবটা মিলিয়ে নেয়। তারপর একটা ব্যাগে কিছু কাচাবাজার আর একটা
ইলিশ মাছ ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বউকে খবরটা দেবার জন্য যখন নিজের বাসায় এসে পৌঁছায় জগলুল,
তখন দরজার তালা আর পড়শিদের টিপ্পনী জানিয়ে দেয় গত চারদিন আগে মধ্যরাতে আয়নাল হাজীর
হাত ধরে ঘর ছেঁড়ে গেছে ফিরোজা। অতি উৎসাহী পড়শিরা এটাও জানিয়ে দিতে ভুল করেনা যে
গত একমাস ধরেই প্রতি রাতে জগলুলের ঘরে ঢুকে যেতো আয়নাল হাজী। বেড়িয়ে যেতো ফজরের
আজানের সময়। জগলুলের হিসেব মেলেনা। তিনদিন আগেও তো দুপুরবেলা কচুর লতি দিয়ে ইলিশ
মাছ রান্না করে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে জগলুলকে আদর করে খাইয়ে দিলো ফিরোজা। কচুর লতি
দিয়ে ইলিশ রান্নাটা গজলুলের খুব পছন্দের তরকারি। আজকেও ব্যাগের মধ্য থেকে ইলিশ
মাছের পাঁশ থেকে উঁকি দিচ্ছে কয়েকটা কচুর লতির ডগা।
ঘরের
তালা আর খোলেনা জগলুল। ঘরটাকে আর নিজের মনে হয়না। পাথরের মতো শক্ত হয়ে দরজার সামনে
তিনঘণ্টা বসে থেকে তারপর উঠে হাঁটতে শুরু করে জগলুল। সদ্য পাথর থেকে মানুষ হয়ে ওঠা
জগলুল পুনরায় পাথরে পরিণত।
এরপর
দীর্ঘদিন জগলুল কোথায় ছিলো। কিভাবে ছিলো। সেসব কিছুই জানিনা আমরা। ঘরের দুয়ার থেকে
হাঁটতে শুরু করার সাত মাসের মাথায় গোবরডাঙ্গার লোকজন একদিন সকালে কালাম শেখের
দোকানের সামনে পাশাপাশি ঘুমন্ত অবস্থায় একটা কুকুরের সাথে আবিষ্কার করে জগা
পাগলাকে। তারপরের চারমাস এই বাজারেই ঘুরে বেড়াতো জগা পাগলা। কারো সাথে তেমন কথা
বলতো না। বাজারের একেক জায়গায় বসে উদাস ভাবে মাঝেমাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো।
কেউ কেউ দয়া করে একটা রুটি বা একটা কলা খেতে দিলে মুখ বুজে খেয়ে নিতো জগা।
সোবাহানের ভাতের দোকানের সামনের রাস্তায় বসে ভাত খেতে দেখা যেতো মাসে দু চারদিন।
তিন
মন্ত্রী আবুল হাসান সাহেবের
কাছে দিনের সবচেয়ে পছন্দের সময় দুপুরে খাবার পরের এই সময়টা। খাওয়ার পরেই শরীরটা ছেড়ে ঘুম পায়। সরকারি এই বাড়িতে সব
ঘরেই এসি আছে। তবে মন্ত্রী সাহেব তার রুমে কখনো এসি চালান না। তার ঠাণ্ডার সমস্যা
আছে। সাথে হাঁপানি। একটু ঠান্ডা লাগলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সাথে বেপরোয়া হাঁচি।
এটা তার ছোটবেলার সমস্যা। তবে এই সমস্যাগুলো মাঝেমাঝে মন্ত্রীর জন্য সুবিধা বয়ে
আনে। এই যেমন সেদিন একটা অনলাইন পত্রিকা নিউজ করে দিলো ‘সরকারি বিদ্যুৎ খরচ
বাঁচাতে এসি ব্যাবহার করেন না মন্ত্রী’। খবরটা ভাইরাল হয়ে যায়। পিএস মাঝেমাঝে
পত্রিকার সম্পাদককে কল করে জেনে নিচ্ছিলো নিউজটা কেমন হিট হচ্ছে, কয় লাখ লোক পড়লো
এইসব টুকিটাকি। আরো কয়েকশ ডলারের বুস্টিং করতে হুকুম দেয়া হলো। সম্ভব হলে সতেরো
কোটি মানুষের মধ্যে সবাইকে ধরে ধরে নিউজটা পড়ানো উচিত বলে মত দিলেন পিএস।
এখন আবুল হাসান তার বিছানায়
একটু শরীর এলিয়ে দিলেন। বালিশের পাশে রাখা ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটা
হাতে তুলে নিয়ে বুকের উপর রাখলেন। এই বইটা বুকের উপর রাখলে একধরণের শান্তি পাওয়া
যায়। তাই এই বইটা আবুল হাসানের বিছানার পাশেই থাকে। আবুল হাসান তার পিএস রহমতের
উপর খুব খুশি। এই ছেলেটা সহমত ভাই গ্রুপের হলেও মাঝেমাঝে খুব জ্ঞানের কাজ করে।
যেমন এই বইটা আবুল হাসানকে কনে এনে দিয়েছে রহমত। এনে দিয়েছে প্রায় তিনমাস হয়ে
গিয়েছে। যদিও এখনো পড়া হয়ে ওঠেনি আবুল হাসানের। একদিন রহমতকে বলেছিলো পড়ে শোনাতে।
দুইপাতা পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো আবুল হাসান। পুরানা কাসুন্দি বরাবরই আবুল
হাসানের অপছন্দ। তারপর নিজেকে এই বলে সান্তনা দিয়েছে ‘সব বই যে পড়তে হবে এমন কি
কোন নিয়ম আছে নাকি ? কিছু বই পড়ে আরাম আর কিছু বই বুকের উপর রেখে ঘুমাতে আরাম।
‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আবুল হাসানের বুক বই।
বইটা বুকের উপর রেখে চোখটা বন্ধ
করতেই পাশের ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো। বিরক্তি নিয়ে একটু সময় ফোনটার দিকে তাকিয়ে
রইলো। এই ল্যান্ডফোনে সাধারণত কেউ কল দেয়না। যারা দেয় তারা বিশেষ সম্পর্কের মানুষ।
আস্তে আস্তে কাত হয়েই রিসিভার তুলে নিলো আবুল হাসান
আবুল হাসানঃ হ্যালো
মাওলানা কাফীঃ আসসালামুয়ালাইকুম
ভাইসাহেব
আবুল হসান কিছুটা চমকে ওঠে।
বুকের উপর থেকে বইটা একপাশে ছুঁড়ে ফেলে লাফিয়ে বিছানায় সোজা হয়ে বসে। মাওলানা কাফী
ইসলামী খেলাফতকামী একটা সংগঠনের প্রধান মুরুব্বী। উপরের নির্দেশ রয়েছে আগামী
নির্বাচনের আগে কোনভাবেই কাফীদেরকে চটানো যাবেনা। এদের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমান
ভোট। তারা যেদিকে ঝোঁকে ভোটও সেদিকেই ঝোঁকে। আবুল হাসান রিসিভারটাকে আরো
ঘনিষ্টভাবে কানের সাথে চেপে ধরে
আবুল হাসানঃ আসসালামুয়ালাইকুম
হুজুর। কেমন আছেন ? শরীরটা ভালো তো
মাওলানা কাফীঃ শরীর তো ভালো
কিন্তু মনটা ভালোনা।
আবুল হাসানঃ কি বলেন আপনার মন
ভালো না ! এটা কিভাবে সম্ভব ? একটু খুলে বলেন তো কি হয়েছে ?
মাওলানা কাফীঃ আমার সংগঠনের
দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে...
আবুল হাসানঃ তাইনাকি ! কখন ধরলো
? কি কেসে ধরলো ?
মাওলানা কাফীঃ সেদিন যে নাস্তিক
ব্লগারকে কতল করা হয়েছে সেই মামলায়...
আবুল হাসানঃ পুলিশ কি কোন
প্রমাণ পেয়েছে ?
মাওলানা কাফীঃ প্রমাণ মানে ?
প্রমাণের কথা তুলে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইছেন ? সরকার কি তবে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ?
আবুল হসানঃ তওবা তওবা কি বলেন
হুজুর। না না তেমন কিছু না। মাফ করবেন আমি কি বলতে কি বলে ফেলেছি।
মাওলানা কাফীঃ যাইহোক একটু
বুঝেশুনে কথা বলা দরকার মন্ত্রী সাহেব ক্ষমতা দেয়ার মালিক আল্লাহ্ আবার কাইরা
নেয়ার মালিকও আল্লাহ্। ওদের গ্রেফতারের খবর মিডিয়ায় আসার আগেই ছাড়ার ব্যবস্থা
করেন।
আবুল হাসানঃ আমি এখনি দেখছি
হুজুর। আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
মাওলানা কাফীঃ আরেকটা কথা
মিডিয়াগুলাও পাগলা কুত্তার মতো দুইদিন পর পর এসব ব্লগারদের জন্য ঘেউঘেউ করে। একটা
এমন ব্যাবস্থা করেন যাতে চিল্লাচিল্লি বন্ধ হয়ে যায়
আবুল হাসানঃ কি করতে হবে বলেন
হুজুর। আপনি যা বলবেন তাই হবে
মাওলানা কাফীঃ আল্লাহ্ যে
জন্মনিয়ন্ত্রণকে হারাম করেছেন তার একটা ফজিলত আছে। জানেন ?
আবুল হাসানঃ কোন ফজিলত ?
মাওলানা কাফীঃ দেশে এখন
জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। আলহামদুলিল্লাহ্। এতো মানুষ থাকতেও এই মামলাটা বন্ধ করতে
পারছেন না। তাইলে দেশ চালাবেন কিভাবে ? আমার লোকদেরকে ছাড়েন আর একটা গুলিতেই একটা
মামলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। ভাবেন ভাবেন। সামনে নির্বাচন
আমাদের সবাইকেই ভাবতে হবে। অনেক ভাবতে হবে। আল্লাহ্ হাফেজ
মাওলানা কাফী আবুল হাসানকে কিছু
বলার সুযোগ না দিয়েই কলটি কেটে দেয়। আবুল হাসান রিসিভারটা হাতে নিয়ে একটু বসে
থাকে। কাকে ফোনটা দেবে সেটা ভাবে।
চার
সেদিন শেষ বিকাল থেকেই আকাশে
ঘনমেঘ আর কিছুটা এলোমেলো বাতাস বইতে শুরু করায় গোবরডাঙ্গা বাজারের দোকানগুলো
সন্ধ্যার দিকেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দোকানের টিনের চালায় কয়েকটা ছিদ্র থাকায় রাতে
বৃষ্টিতে আটা আর চালের বস্তাগুলা ভিজে যাবার আশঙ্কা তৈরি হলে বেলাল শেখ দোকানের
চালা মেরামতে হাত দেয়। চালা মেরামত করতে করতেই নেমে পড়ে মুষলধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টি
থামতে থামতে রাত প্রায় নয়টা। গোবরডাঙ্গায় রাত নয়টা মানে অনেক রাত। গ্রামের
বেশীরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে আরো ঘন্টা খানেক আগেই। বেলাল শেখ ঝাপটা নামিয়ে তালা
লাগিয়ে দেয় তারপর হ্যারিকেনটা হাতে নিয়ে পথে নামে। এমন সময় আবার গুড়িগুড়ি বৃষ্টি
নামতে শুরু করে। বেলাল শেখ দ্রুত পা চালায় বাড়ির পথে। সোবাহানের ভাতের হোটেলের
সামনে আসতেই দেখতে পায় বন্ধ হোটেলের সামনের ছাউনির নিচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে
জগা পাগলা আর একটা বেওয়ারিশ কুকুর। হোটেলটা পাড় হয়ে ডানদিকে বটতলার দিকে মোড় নেবার
সময় বেলালের সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশের টহল গাড়িটা। দারোগা মোস্তাক হাতের টর্চ
লাইটের আলো ছুঁড়ে দেয় বেলালের মুখে
দারোগা মুস্তাকঃ কিরে এতো রাইতে
বাজারে কি ?
বিলালঃ দোকানে একটু কাম আছিলো
সার। হের লাইগা দেরী হইয়া গেলো। হেইয়ার উপরে আবার বিস্টি...
দারোগা মুস্তাকঃ যা যা জলদি
বাড়িতে যা। দিনকাল ভালো না
বিলাল দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।
বাজার পেড়িয়ে বটতলার কাছাকাছি আসতেই বাজারের দিক থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসে।
বিল্লালের মনে হয় কেউ গোঙাতে গোঙাতে কাঁদছে। কিন্তু কুকুরটা কাঁদছে নাকি পাগলা জগা
সেটা বৃষ্টির শব্দে নিশ্চিত হতে পারেনা বিলাল শেখ ।
গল্পটি শাহাদাত রাসএল'র "জীবন এক সুস্বাদু হেমলক" গল্পগ্রন্থ থেকে সংগৃহিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন