আত্মকথন : মায়ের সমুদ্র
লেখক : সোয়াতি নিজ্জানান
প্রকাশকাল : ১৯ মে, ২০২২
সোয়াতি নিজ্জানানেরর “মায়ের সমুদ্র” শিরোনামের এই আত্মকথনটি লেখার অবস্থান ও প্রেক্ষাপট এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
![]() |
মায়ের সমুদ্র || সোয়াতি নিজ্জানান |
মায়ের সমুদ্র || সোয়াতি নিজ্জানান
অসময়ে ঘুমালে আমার খুব বাজে সময় যায়। ঘুম থেকে উঠলে পৃথিবী অর্থহীন লাগে, মনে হয় কোথাও আমার কোনো কাজ নাই, কোথাও যাওয়ার নাই।
আমি রাতে ছাড়া দিনে তেমন ঘুমাইনা মাঝেমাঝে সন্ধ্যায় পরেপরে ঘুমাই। ঘুম ভেঙ্গেই মনে পরলো মাকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবো কথা ছিলো। মায়েরতো সমুদ্র দেখা হলোনা। বাপ-মা মরলে পোলাপান কাঁদবে, সারাজীবন কাঁদবে এটাই জগতের নিয়ম। আমিও সেই নিয়ম পালন করি। বাইরের কিছুতো না, এসব ভাইবা আপসোস করি।
আমার ফোনে মা একদিন আমার সমুদ্রের পারে হাটার ভিডিও দেখতে দেখতে বললো "এরপর আমরা সবাই যাবো।" যাওয়া যায়, বলে আমাদের ২-৩ বছর কেঁটে গেলো। এই জীবনের ব্যস্ততায় সেসব আর মনে পরলো না। মা কেমন অবহেলায় চলে গেলো আমার মনে হয়। মানুষ আসলে কখন চলে যায়? 'দুনিয়ায় তার প্রয়োজন ফুরালে' উত্তর দিলো শেখ সাহেব।
আমার মনে হলো "তাহলে তো মাকে আমার ভিষন প্রয়োজন ছিলো, তাহলে কেনো গেলো?"
মাকে করার মতো কতো প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরে। সবচেয়ে তীব্র যেই প্রশ্ন তা হলো, আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতা কেন তুমি? মা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।অন্য কারো সাথে কথা বলতে বলতে বা কাজ করতে করতে খেয়াল করতাম অনেক সময় ধরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাঝেমাঝে বিরক্ত বা অস্বস্তিতে জিগ্যেস করতাম 'এভাবে কেনো তাকায় আছো বুঝলাম না'!
কেন এভাবে দীর্ঘ সময় তাকাতো জানাই হলো না। মৃত মানুষের উপর রাগ বা অভিযোগ থাকতে নাই তাই আমি করিনা কিন্তু অভিমান? তাও কি করা যায়না? মায়ের উপর কি অভিমানই না হয় আমার। মৃত বলতে মনে হলো মা যাওয়ার পর আব্বার সামনে একদিন কে জেনো বললো - 'মারা গেছেন'। আব্বা তেড়ে গিয়ে বললো মারা গেছে বললা কেন? বলো চলে গেছে, আর এটা বলবা না।
প্রেমিক না, আমার মায়ের সাথে ঘর বাঁধার একটা বিশাল স্বপ্ন ছিলো। আমার আর মায়ের একটা হলদে রঙের বাড়ি। সেই বাড়িতে রঙ-বেরঙের বাগানবিলাশ থাকবে। সবচেয়ে বেশি থাকবে অরেঞ্জ কিং, শুভ্রা আর ভেরিকেটেড রোজ ভ্যালি। আমাদের বাড়ির সামনে ছোট খালার বাড়ির মতো বিশাল একটা নদী থাকবে। মাথার উপর নীল আকাশটা গাঢ় কমলা বা বাসন্তী কালার হবে, মায়ের প্রিয় কালার। আর আমি মায়ের কাঁদে মাথা রেখে মায়ের মুখে মায়ের প্রিয় গান "বন্ধু তোর লাইগারে" শুনবো।
মা যখনি "বন্ধু তোর লাইগারে"গানটা গাইতো আমি ভাবতাম মাকে জিগ্যেস করি "মা তুমি কি কারো প্রেমে পরেছিলে কখনো? করা হয়নি এই প্রশ্ন। কেনো করিনি? কি জানি! মায়ের সাথে আমার তো দূরত্ব ছিলোনা কখনো। প্রেমিকের সাথে তুমুল ঝগড়া করে মাকে ফোন দিয়ে কাঁদতাম। এতো বন্ধুসুলভ হওয়ার পরেও এই প্রশ্ন কেনো করিনি? যাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকার কথা ভাবিনি তাকে ছাড়া দিন-মাস-বছর কেটে যাচ্ছে কি সুন্দর আর সাবলীল ভাবে।
আসলে কাউকে ছেড়ে থাকাই কঠিন কিছু না। সবই সয়ে যায়। শুধু সারাদুনিয়া চষে বেড়িয়ে ঘরে ফিরি শূন্যহাতে। একদিন কলমা রঙের আকাশের নিচে বসেই "বন্ধু তোর লাইগারে" শুনতে শুনতে সমুদ্র দেখবো আমরা মা। পাশেই থাকবে আমাদের হলদে রঙের ঘরটা।
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন