উপন্যাস        :         বৌপ্রিয়া
লেখিকা        :          আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111111

১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৪)

'আপা আমার ভয় হচ্ছে কুসুমকে নিয়ে। এত ছোট বয়সে কুসুমকে স্বামীর ঘরে তুলে দেব? মেয়ে আমার সংসার সম্পর্কে বুঝেটাই বা কি? '
সাহেদার কথা শুনে পারুল বুঝতে পারেন অনেককিছু। তিনি বোনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলেন, 'বুঝে না, আর বোঝার দরকারও নেই। আমি আছি না। আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দেব। কুসুম আমার নিজের মেয়ের মতোই রে। আমার বাড়ি আমার মেয়েকে দিতে তোর এত কিসের ভয়? '

সাহেদা তবুও চিন্তিত। মেয়েকে নিয়ে চিন্তার পাহাড় জমেছে তার মনে। পারুল যে কুসুমকে নিজের মেয়ের মতোই গড়ে তুলবে, সেটা তিনি মনেপ্রাণে মানেন এবং বিশ্বাস করেন। কিন্তু তার চিন্তা সম্পূর্ন অন্য জায়গায়। কিন্তু সংকোচ হবার ফলে তিনি সেটা প্রকাশ করছেন না। যদি পারুল কিছু মনে করে বসেন। সাহেদাকে এখনও চিন্তিত চেহারায় বসে থাকতে দেখে পারুল এগিয়ে আসেন। বসেন বোনের পাশে। বোনের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
' তোর আসলে কি নিয়ে চিন্তা হচ্ছে? এতদিন কিছু বলিস নি। আচমকা আজ এত চিন্তা কোথা থেকে এলো তোর? '

সাহেদা অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকান। ভ্রু জোড়া বাঁকালে, পারুল আবার বলেন, ' আমাকে সব খুলে বল। এভাবে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরলে চলবে? '
সাহেদা কিছুটা আশ্বস্থ হোন। তিনি সকল সংকোচ একপাশে রেখে কথা তুলেন,
' আপা, কুসুম এখনো অনেক ছোট। শারীরিক ভাবে এখনো ও অনেক দূর্বল। দেখই তো। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিকমত। শুকিয়ে যাচ্ছে দিনদিন। এখন বিয়ে দিয়ে তুলে দেওয়া মানে বছর ঘুরতেই…'

সাহেদা থেমে যান। পারুল ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছেন সাহেদার দিকে। বাকি কথা শোনার জন্যে তিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন। সাহেদাকে থামতে দেখে তিনি বিরক্ত হোন। বললেন, ' থামলি কেন? বল। বছর ঘুরতেই কি? '

সাহেদা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, ' যদি এই বয়সে কুসুম বাচ্চা নেয়, তবে এটা কুসুমের জন্যে মোটেও ভালো হবে না। ওর শরীর ভালো নেই। তাই বলছিলাম আরেকটু বড় হোক। বয়স হলে এমনিতেই শরীরে পরিপক্কতা আসবে। তখন নাহয়….'
পারুল হতভম্ব হয়ে যান। সাহেদার দিকে চেয়ে বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
' তোর কি মনে হয়, আমাদের উচ্ছ্বাস এই বয়সে আদৌ কুসুমকে বাচ্চা নিতে দিবে? ও একজন ডাক্তার। ও জানে কোন বয়সটা বাচ্চা নেবার জন্যে সঠিক। তুই এমন অহেতুক চিন্তা কেন করছিস? '

সাহেদার মন মানে না। তিনি অধৈর্য্য হয়ে বলেন,
' আল্লাহ যদি বাচ্চা দিতে চান, তবে আল্লাহর হুকুম আটকানো যায় না আপা। যদি ভুলবশত…'
' কিছু হবে না ভুলবশত। আমি উচ্ছ্বাসের ভাবিকে দিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলাব এই নিয়ে। তুই নিজেও কুসুমকে বুঝাস উষাকে দিয়ে। আর এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়। প্রেশার বাড়বে কিন্তু চিন্তা যাবে না। কুসুমের বয়স, কুসুমের স্বাস্থ্য, কুসুমের মানসিকতা সবদিক আমরা খেয়াল রাখব। ভরসা রাখ আমার উপর। আমি সব সামলে নেব। '
সাহেদা কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পারুল একপ্রকার চেপে ধরে রেখেছে তাকে। তাই না চাইতেও বোনের কথাতেই সায় দিতে হল তাকে। 

__________________________

কুসুম-উচ্ছ্বাসের বিয়ে ঠিক হয় আগামী শুক্রবার। মঙ্গলবার গায়ে হলুদ এবং বৃহস্পতিবার মেহেদী অনুষ্ঠান হবে। দুই পক্ষ মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যখন থেকে কুসুম বিয়ের কথা শুনেছে, কুসুমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতদিন বিয়ে হওয়া স্বত্বেও নিজেকে বিবাহিত মনে হয় নি কুসুমের।নিজের বাড়িতেই খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, ফুর্তি করেছে। কিন্তু এখন বিয়ে হওয়া মানে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংসার করা, তাদের বাড়িতে থাকা, রান্নাবান্না করা। এতকিছু কি করে সামলাবে কুসুম? কুসুম আপাতত সেই চিন্তাই করছে। 

আজকে হয়ত কুসুমদের বাড়িতে মেহমান আসছে। তাই সকাল থেকে বাড়িঘর সাজানো হচ্ছে। কুসুমের কাজিরা সব সকাল থেকে তাদের বাড়িতে এসে বসে আছে। সবার সঙ্গে গল্প করে কুসুম মাত্রই ছাড়া পেল। উষা দুপুরের দিকে কুসুমের ঘরে এলো। কুসুম তখন সবে গোসল করে বেরিয়েছে। চুলের পানি ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরছে। সেদিকে লক্ষ্য নেই কুসুমের। কুসুম আপাতত ব্যস্ত ড্রয়ার থেকে কাপড় বের করতে। গোসলে যাবার সময় ভুলবশত কাপড় নেয়নি। তাই এখন বাথরুব গায়ে দিয়ে কাপড় নিতে এসেছে। উষা ঘরে ঢুকে ঘরের মেঝে পানিতে ভেজা পেল। উষা বিরক্ত হয়ে বলল,
' এসব কি কুসুম? তোর চুলের পানিতে ঘর ভিজে যাচ্ছে। কবে চুলের পানি মোছা শিখবি? '
বলতে বলতে কুসুমের দিকে এগিয়ে যায় উষা। কুসুম ড্রয়ারে কাপড় খুঁজতে খুঁজতে বলে, ' শেখা লাগবে না। কারণ আমার আলসেমি লাগে। '

উষা ভ্রু কুঁচকে চায়। পরপরই টিপ্পনী কেটে বলে, ' হ্যাঁ, তাও ঠিক। কদিন পর উচ্ছ্বাসের হাতে চুলের পানি মোছার পাঁয়তারা করছিস তুই। তাহলে শিখবি কেন? '
কুসুমের বুক কেঁপে উঠে। মিছে বিরক্ত হবার ভান করে বলে, ' উফ! মজা করো না তো আপা। আমি আমার লাল স্কার্ট ওইটা পাচ্ছি না। ধুয়ে দেওয়া হয়েছে নাকি? '
উষা আরাম করে বিছানায় বসে। হাতে থাকা হালকা গোলাপী রঙের শাড়ি বিছানায় রেখে দুহাত ঠেসে রাখে বিছানায়। তারপর বলে,
' আজকে কিছু পড়ার দরকার নেই তোর। '

কুসুম এই কথা শুনে চমকে উঠে। দ্রুত উষার দিকে চেয়ে চেঁচায়,
' পাগল হয়েছ? আমি বাথরুব পরে বসে থাকব সারাদিন? উফ, আপা! খালি মজা করো না তো। আমি এমনি ডিস্টার্ব আছি কদিন ধরে। '

' কেন? বিয়ে হচ্ছে বলে? '
ড্রয়ারে কাপড় খুঁজতে থাকা কুসুমের হাত থেমে যায়। কুসুম মাথা তুলে অসহায় চোখে উষার দিকে চেয়ে নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে, ' হু। যখন থেকে বিয়ের কথা শুনেছি, আসলেই খুব ভয় লাগছে।'

উষা হাসে। তারপর বলে,
' ভয়ের রাণী, ভয় সব পাশে রেখে জলদি জলদি এই শাড়ি পরে নে। গেস্ট আসছে। '
কুসুম প্রশ্ন করে, ' কে আসছে?  '
উষা চোখ টিপে বলে, ' সে তো বলা যাবে না। তবে কেউ একজন আসছে। স্পেশাল কেউ।  এখন যা। দ্রুত দুই কাপড় পরে আয়। শাড়ি তো পরতে পারিস না। আমাকেই পরিয়ে দিতে হবে। গো ফাস্ট।'

কুসুমের কেন যেন মনে হচ্ছে, উচ্ছ্বাস আসবে। কারণ যতবার উচ্ছ্বাস ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু কাহিনী ঘটে, উষা আপা এভাবেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্তর দেন। তবে আজকে কেন আসছে সে? সে ব্যপারে কিছুই জানে না কুসুম। উষা আবার তাড়া দিলে কুসুম দুই কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। বাথরুম থেকে বের হলে উষা খুব সুন্দর করে কুসুমকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। কুসুমকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কুসুম ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখে। এই শাড়িতে কুসুমকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। কুসুম আবার প্রশ্ন করে,
' বললে না আপা, কিসের জন্যে আমার এই সাজগোজ? সত্যি করে বলবে, উচ্ছ্বাস ভাই আসছে? '

উষা কুসুমের মাথায় থাপ্পড় বসায়। শাসানোর স্বরে বলে, ' ভাই কি, হ্যাঁ? জামাইকে কেউ ভাই বলে? '
কুসুম বোকা বোকা কণ্ঠে বলে, ' কি বলে ডাকব তাহলে? '
উষা শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে বলে,
' আপাতত কিছু বলের ডাকার দরকার নাই। উনি করে বলতে পারিস। তুই উনি বললেই সবাই বুঝে যাবে কার কথা বলছিস। কিন্তু ভাই না। এটা খারাপ শোনায়। '
কুসুম মাথা দুলায়। আসলে ভাই বলা নিয়ে কুসুম নিজেই দ্বিধায় জড়িয়েছিল। উচ্ছ্বাসকে ভাই বলতে তার নিজেরও ভীষন অস্বস্থি হত। উষা আপা বুদ্ধি দিয়েছে। তাহলে আজ থেকেই সেটাই করবে কুসুম। 

উষা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে কুসুমকে বিছানায় বসিয়ে রেখে যায়। যাবার আগে সফসাফ বলে যায়, উষা না বলা অব্দি কুসুম যেন এই ঘর থেকে না বের হয়। কুসুম বাধ্য মেয়ের মত মেনে নিয়েছে উষার কথা। কিন্তু মনেমনে ভীষন কৌতূহল জেগেছে কুসুমের। কে আসছে আজ? কার জন্যে কুসুমের এত সাজগোজ? উচ্ছ্বাসের জন্যে? 

কুসুমের ভাবনার মধ্যেই শোনা গেল বসার ঘর থেকে পরপর কয়েকটা বেলুন ফাটানোর শব্দ। সবাই মিলে হুই-হল্লোর করছে। সবার এত খুশির আয়োজন দেখে কুসুম বোকা বনে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে আরো তিনদিন পর। তাহলে আজকে এত কিসের খুশির আয়োজন হচ্ছে তাদের ঘরে?

আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি কমেন্ট বক্সে জানান

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে.....

১৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন