উপন্যাস : বৌপ্রিয়া
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111111
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৩)
কুসুমের চোখ ছানাবড়া। উচ্ছ্বাসের কুচকানো ভ্রু আপাতত সোজা হয়ে আছে। কুসুমের মুখের অভিব্যক্তি আপাতত তার বড্ড মজা লাগছে। উচ্ছ্বাস নড়েচড়ে বসে। বিস্মিত কুসুমের বাকি আচরণটুকু দেখার জন্যে সে বেশ আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। পা দুটো মেঝেতে ছড়িয়ে রেখে মৃদু হেসে কুসুমের দিকে চেয়ে রয়। কুসুম এখনো মুখে হাত চেপে বসে আছে। একবার এগিয়ে এসে উচ্ছ্বাসের গায়ের সঙ্গে লেগে বসে। উচ্ছ্বাসের পেশীবহুল বাহুতে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। মৃদু স্বরে বলে, ' এটা সত্যি আপনি? '
কুসুমের আচরণে হাসি পাচ্ছে উচ্ছ্বাসের। উচ্ছ্বাস টিপ্পনী কেটে বলে,
' না তো। আমার ভূত। ভয় দেখাতে এসেছে তোমায়। ভয় দেখাই? '
কুসুম এবার বুঝতে পারে, তার আকাঙ্ক্ষিত উচ্ছ্বাস ভাই সত্যি সত্যি এসেছেন। কুসুম সোজা হয়ে বসে। খুশিতে সে উন্মাদ! থরথর করে কেঁপে উঠে কুসুম প্রশ্ন করে,
' আপনি কখন এসেছেন? কিভাবে এলেন? কালকে কথা হয়েছে। কিছু বললেন না। বাড়ির সবাই বলল আপনি আসবেন না এখন। আজকে কোথা থেকে এলেন? কিভা… '
উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে কুসুমের গাল ছুঁয়ে দেয়। চোখ পিটপিট করে কুসুম। উচ্ছ্বাস শান্ত স্বরে বুঝায়,
' ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট! কুসুম, রিলাক্স। শান্ত হও। আমি উত্তর দিচ্ছি তোমার সব কথার। রিলাক্স। '
কুসুম জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর নিজেকে শান্ত করে বলে,
' সব খুলে বলুন আমায়। আমি জানার জন্যে খুব এক্সাইটেড। '
উচ্ছ্বাস হাসে। বলে,
' আমার ফ্লাইট পরশু ছিল। তোমার সঙ্গে যখন কথা বলেছি তখন আমি গাড়ি করে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম। সবাই বলল তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার কথা। তাই কিছু জানাই নি তোমাকে। আজকে ঢাকায় নেমে সোজা মা'কে নিয়ে এখানে চলে এসেছি। সারপ্রাইজ হলে? '
কুসুমের চোখে নিছক জল জমে। কুসুম হেসে বলে,
' খুব। কিন্তু বাড়ির সবাই যে বলল আপনি ডিসেম্বরে আসবেন? '
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে বলে, ' বলেছে নাকি? আমি জানিনা সেটা। ওরা তো জানে আমি আজকে আসব। '
কুসুমের রাগ হয় বাড়ির লোকদের উপর। ওর সঙ্গে সবাই কি জঘন্য মজাটাই না করল। সবাইকে একটু পর গিয়ে ধরবে কুসুম। সবার আগে গলা চেপে ধরবে উষা আপার। সেই তো কুসুমকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে। রাগে কুসুম উচ্ছ্বাসের মোবাইলে রাগান্বিত মেসেজ পাঠিয়েছিল। মেসেজ কি দেখেছিল উচ্ছ্বাস? কুসুম প্রশ্ন করে,
' আপনি গতকাল মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। দেখেছেন? '
উচ্ছ্বাস এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কুসুম বোকা বনে যায় সেই হাসি দেখে। উচ্ছ্বাস এগিয়ে এসে কুসুমের গাল টেনে বলে,
' বোকা মেয়ে। বড় হয়ে রাগ বেড়ে গেছে। ছোট থাকতেই তো ভালো ছিলে। যা বুঝাতাম তাই বুঝতে। এখন আর এরকম করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। '
কুসুম গালে হাত দিয়ে থম হয়ে চেয়ে থাকে তার দুষ্টু উচ্ছ্বাস ভাইয়ের দিকে। তারপর দুঃখ পেয়ে বলে,
' আপনি রেগে গিয়েছিলাম বাড়ির সবার কথায়। তাই এমন মেসেজ পাঠিয়েছি। সরি। '
উচ্ছ্বাস প্রশ্ন করে, ' এখন রাগ কমেছে? '
কুসুম মৃদু স্বরে মাথা নামিয়ে বলে, ' হু। '
উচ্ছ্বাস আবারও গাল টেনে ধরে কুসুমের। হেসে বলে, ' দ্যাটস লাইক অ্যা গুড গার্ল। '
কুসুম গাল ঘষে বলে, ' বারবার গাল টানছেন কেন? আমি এখনো বাচ্চা নই। '
উচ্ছ্বাস মৃদু স্বরে বলে,
' সেটা ঠিক। অনেক বড় হয়ে গেছ তুমি। কিন্তু আগের চেয়ে কিছুটা মোটা হওয়ায় তোমার গাল দুটো ফুলে বড্ড কিউট লাগছে। বারবার টানতে মন চাচ্ছে। আ'ম হেল্পল্যাস। '
কুসুম হেসে উঠে উচ্ছ্বাসের কথা শুনে। কুসুমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্ছ্বাসও হাসে। কুসুম তার উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সুন্দর হাসির দিকে অপলক চেয়ে থাকে। আচ্ছা, উচ্ছ্বাস ভাইকে কি এখনো ভাই বলবে কুসুম। স্বামীকে কেউ বুঝি ভাই ডাকে? কিন্তু ভাই না বললে কি বলে ডাকবে কুসুম তাকে। নাম ধরে? ছিঃ, ছিঃ! কেমন শোনাবে। তাহলে কি বলে ডাকবে তাকে? কুসুম আজকে রাতে বসে উচ্ছ্বাস ভাইয়ের নতুন নাম তৈরি করবে। সুন্দর এবং তার সুদর্শন উচ্ছ্বাস ভাইয়ের সঙ্গে মানানসই নাম।
দুজন বহুদিন পর এক হয়েছে। কুসুমের কথার ফুলঝুরি ছুটেছে উচ্ছ্বাসের সামনে। উচ্ছ্বাসও বেশ ধৈর্য্য সহকারে কুসুমের সব কথা শুনছে এবং উত্তর দিচ্ছে। দরজায় টোকার শব্দে দুজনের ধ্যান ভেঙে যায়। কুসুম সোজা হয়ে বসে। উচ্ছ্বাস বসে থাকা অবস্থায় বলে,
' টোকা দিতে হবে না। দরজা খোলা আছে। ভেতরে আসো। ''
দেখা গেল শিউলি ঘরে ঢুকছে। মুখে চোখে দুষ্টুমি নিয়ে একবার কুসুমের দিকে চাইছে তো আরেকবার উচ্ছ্বাসের দিকে চাইছে। কুসুম শিউলির এমন দুষ্টু চাহনি দেখে লজ্জায় ঝিমিয়ে গেল। উচ্ছ্বাস অবশ্য নিরুত্তর। সে সূক্ষ চোখে বাম হাতের নখ দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল, ' কি রে! আম্মা ডেকেছে? '
শিউলি এসে কুসুমের পাশে বসল। উচ্ছ্বাসের গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলল, ' হ্যাঁ ডেকেছে। প্রথমদিনেই যেভাবে চিপকে আছো। ডাকবে না? আম্মার তো লজ্জা আছে। '
উচ্ছ্বাস ভ্রু কুচকে চায় শিউলির দিকে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। গায়ের ফকফকা সফেদ রঙের টিশার্ট টেনে ঠিক করে। এগিয়ে এসে শিউলির মাথায় চপাট করে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,
' বেয়াদব মেয়ে। তোর বড় ভাই না আমি? বড় ভাইয়ের সঙ্গে কেউ এমন মজা করে? আরেকবার দেখলে ধরে ঠাটিয়ে চড় বসাব। '
শিউলি মুখ ফুলে তাকায়। উচ্ছ্বাসের দিকে অভিমান নিয়ে চেয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। উচ্ছ্বাস কুসুমের দিকে একপল চেয়েই বেরিয়ে যায় কুসুমের ঘর থেকে।
কুসুম শিউলির গালে হাত রাখল। শিউলির টলমলে চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে বলল, ' থাক। দুঃখ পেও না। জন্মের সময় মধু খাওয়ানো হয়নি তাই সবসময় এমন তেতো কথা বলে। এসব ছোটখাটো কথায় রাগ করতে নেই। '
শিউলি উত্তর দেয়, ' এত বছর পর এসে প্রথমদিনেই থাপ্পড় দিল। বাসায় গিয়ে ওকে আমি দেখো কি করি। আমাকে চেনে না! '
কুসুম দীর্ঘশ্বাস চোখে শিউলির দিকে তাকায়। ভাই-বোন কেউ কারোর চেয়ে কম না।
রাতে খাবার টেবিলে বসে বড়দের মধ্যে কুসুম-উচ্ছ্বাস এর বিয়ের কথা উঠল। সাহেদার ভাষ্যমতে, এখনি মেয়ে তুলে দেবে না। কুসুমের ভার্সিটি শেষ হলে তবেই উচ্ছ্বাসদের ঘরে তুলে দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু পারুল এই বিষয়টা মানতে নারাজ। তার মতে, উচ্ছ্বাসের বয়সের হয়ে যাচ্ছে। এখনি সংসার করবে না তো কখন করবে? সাহেদা এই কথা শুনে কাচুমাচু করছেন। বিয়ে করে উঠিয়ে দেওয়া মানে, বছর ঘুরতেই কুসুমের গর্ভধারণ। আর সাহেদা এই বিষয়েই ভয় পাচ্ছেন। কুসুম এখনি ফিজিক্যালি অনেক দূর্বল। এই বয়সে বিয়ে করে বাচ্চা নেওয়া ঝুঁকির ব্যাপার তার জন্য। মা হয়ে মেয়ের জীবনে ঝুঁকি তো আর সাহেদা নিতে পারেন না। কিন্তু লজ্জার কারণে সবার সম্মুখে এই কথা তুলতে পারছেন না সাহেদা। এদিকে পারুল এবং তার স্বামী দুজনেই কুসুমকে এই মাসের মধ্যে ঘরে তোলার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কি করবেন সাহেদা। বুঝতে পারছেন না কিছুই। খাবার টেবিলে দুই বোনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা দেখে উচ্ছ্বাস বিরক্ত হয়ে বলে,
' আম্মা, খালামনির সঙ্গে আলাদা করে তুমি কথা বলো। দুজনের মধ্যে সমস্যা মিটমাট হয়ে গেলে তবেই আমি কুসুমকে ঘরে তুলব। একজনের অসন্তুষ্টি নিয়ে আমার বউ আমি ঘরে তুলব না। এবার শান্তিতে সবাইকে খেতে দাও। '
উচ্ছ্বাসের কথা শুনে বড়রা চুপ হয়ে গেলেন। সাহেদার মনের মধ্যে তবুও খচখচানি থেকেই গেল। পারুল যেভাবে চেপে ধরে আছে সাহেদাকে। সেভাবে মনে হচ্ছে কুসুমকে ঘরে তুলে তবেই সে নিস্তার দেবে। এদিকে মেয়েকে স্বামীর ঘরে তুলে দেবেন না সাহেদা। হয়ত এই বিষয় নিয়ে দুই বোনের মধ্যে ছোটখাটো মনোমালিন্যও হয়ে যেতে পারে। সাহেদা এই বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন! মেয়ের জীবনের উপর তিনি কোনরূপ ঝুঁকি নেবেন না মানে নেবেন না।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি কমেন্ট বক্সে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে.....
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন